নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন জেনারেল ব্লগারের নিজের সম্পর্কে বলার কিছু থাকে না ।

আবদুর রব শরীফ

যদি তোর লেখা পড়ে কেউ না হাসে তবে একলা হাসো রে!

আবদুর রব শরীফ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মা

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৯ দুপুর ১২:৫৪

শেষ যখন আমার আম্মু আমার সাথে ডিম দুধ না খাওয়ার জন্য রাগ করেছিলো তখন আমি ক্লাশ সেভেন কিংবা এইটে পড়ি,
.
তারপর থেকে আম্মু মানসিকভাবে অসুস্থ হতে শুরু করে....!
.
কয়েক মাস আগে বহুত বছর পর আম্মু আমার সাথে ডিম খাওয়ার জন্য রাগ করেছে এখন আমি চাকরি করি,
.
মাঝখানের প্রতিটি মুহুর্ত আমি আম্মুর সাথে ছিলাম ধরতে গেলে সারাদিন ই, আম্মু কিচ্ছু জানে না!
.
কয়েকদিন আগে জিজ্ঞেস করে বাবা তুমি চাকরি করো! টিটুর বাবা নাকি মারা গেছে! জানো আমার বোন নাহিদা চাকরি করে! কত কষ্ট করে বোনটা! ভাইয়ের বউটা ও চাকরি করে...!
.
মনে মনে বললাম, মা ওরা শুধু চাকরি করে না দুদিন পর রিটায়ার্ডও করবে!
.
সেদিন আমাকে বলে, 'তুমি তো ছোট ছিলে, মেয়ে খুঁজতেছো বিয়ের জন্য, এতো বড় হলে কখন!'
.
হাউ কিউট! একটা মানুষ প্রায় বার চৌদ্দ বছর কোথায় ছিলো সে জানে ই না আমি চৌদ্দ বছর তার পাশে ছিলাম সকাল, বিকাল, রাত....!
.
আম্মু নিজে নিজে বকতো! চিৎকার করতো! চেঁচামেচি করতো! ঘরের বাহিরে গেলে আমি ধরে নিয়ে আসতাম! ঔষুধ দিলে খেতে চাইতো না! ভয় দেখালে খেয়ে 'তুই আমার ছেলে না' বলে ঘুমিয়ে থাকতো,
.
বছরের পর বছর সকালে ঘুম থেকে উঠলে আমি দেখতাম আব্বু ফ্লাক্সে চা বানিয়ে রেখে অফিসে গেছে, আমি চায়ের সাথে রেডিমেট নাস্তা খেয়ে বের হয়েছি....এই জীবনে আমি অভ্যস্ত!
.
এখন প্রতিদিন সকালে উঠে আম্মুর নাস্তার জন্য প্যারা, সন্ধ্যায় ফিরলে এক রাশ নাস্তা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা, রাতে খাবরের উপ্রে খাবার....প্যারার উপ্রে প্যারা!
.
বেপারটা এমন, 'গত চৌদ্দ বছর কি খাইছোস না খাইছোস! শরীরের কি অবস্থা হয়েছে! সারাদিন মার্কেটিং জব! কি খাস না খাস! এই লও, কমলালেবুর সাথে গাজরের টুকরো....!'
.
আমি প্রায় এক যুগ আম্মুর মুখে কখনো হাসি দেখিনি! যেদিন এক মাস পর ক্লিনিক থেকে আনলাম উনি ঘুমের ঘোরে হেসে হেসে কথা বলতেছিলো!
.
সেদিন বুঝলাম পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান জিনিস প্রিয় মানুষের হাসি যা দুষ্প্রাপ্য হয়নি বলে সম্পত্তি হিসেবে ঘোষিত হয়নি!
.
একবার আমার স্যার আমাকে বলেছিলো মার্কেটিং জবে অনেক ধৈর্য লাগে আমি তখন ভাবছিলাম 'স্যার ধৈর্যের আর দেখছেন কি' তারপর ব্যবসা কমে গেলে স্যার প্রতিদিন বলে 'ব্যবসা চাই, আমার ব্যবসা চাই, ব্যবসা চাই' আমি ইনিয়ে বিনিয়ে বলতে থাকে স্যার ধৈর্য ধরেন, আসবে, সময় এখন বর্ষাকাল!
.
এইই!
.
এই গল্প আমার জীবনের, আমার বন্ধুর জীবনে এমন গল্প আছে, তারে সেদিন বললাম, দেখিস্ একদিন তোর বাবা শোয়া থেকে লাফ্ দিয়ে উঠে দৌড়ানো শুরু করবে!
.
কিছু কিছু বেপার আছে, যদিও পাম্প তবুও আরাম,
.
ভারতে চিকিৎসা নিতে গেছে জনৈক ভাই! অনেকগুলো হাড় ভেঙ্গে গেছে! ডাক্তার তাকে দেখে বললো, কয়েক মাস পর আপনি দৌড়াতে পারবেন! কথাটি শুনে তার নাকি মনে হচ্ছিলো, সে আসলে দৌড়াচ্ছে! ছয় মাস পর সে কেডিএস এক্সেসোরিজের একটু সামনে মউর দোকানে বসে গল্পটি করতেছিলো!
.
এর আগে তাকে এক বাঙ্গালী ডাক্তার এমন ভাবে বলেছিলো সে তারপর কাঁদতে কাঁদতে বিশ্বাস করতে শিখছিলো, আমি পঙ্গু হতে যাচ্ছি!
.
পরে তার অবশ্য ভালো লাগতো, প্রাইভেট চাকরির মতো পঙ্গু জীবনে প্যারা নেই, বার মাস ছুটি....!
.
খোদার কসম, আমি এতোবার আল্লাহকে বলেছিলাম যে হে আল্লাহ লোকে বলে তুমি অনেক অনেক ক্ষমতাবান কিন্তু ক্ষমতা দেখিয়ে আম্মুকে সুস্থ করে দাওনা কিল্লাই!
.
হঠাৎ একদিন মনে হলো, আসলে কি সৃষ্টিকর্তা আছে! থাকলে সাড়া দেয় না কেনু! ডাকতে ডাকতে হয়রান!
.
তারপর এতো সাড়া দিয়েছে যে আম্মুর হাতে খাওয়াইতে খাওয়াইতে ওজন ৬৭ থেকে ৭৬ ছুঁই! ছুঁই!
.
বাঁচাও আল্লাহ! এতো সুখ! এতো প্যারা! কপালে সহে না!
.
আমি জানি জীবন কঠিন! প্রতি ইয়ার্কার বল শুধু তোমার দিকে ই আসে! অন্যদিকে কারো ভাগ্যে কেবলি হাফ্ পিচ্ বাউঞ্চার বল! সে কেবলি ছক্কা মারে, আর তুমি জীবন দিয়ে স্টাম্প বাঁচাও!
.
ইয়ে মানে ,তুমি বরং মিডল স্টাম্পটা বাঁচিয়ে রাখো! তোমার দ্বারা ই আগামী প্রজন্মের সৃষ্টি হবে!
.
আবারও বলছি, লাইফ ইজ হার্ড! নো নো! লাইফ ইজ হার্ডেস্ট! তোমাকে টিকে থাকতেই হবে! টিকে থাকাটা তোমার জীবনের সবচেয়ে বড় সফলতা! আপাতত টিকে থাকো! বেঁচে থাকো!

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৯ বিকাল ৪:৫৭

আরাফআহনাফ বলেছেন: অনেক কস্টের অনুভূতি।
আপনার মায়ের সুস্থতা কামনা করছি।

ভালো থাকুন।

২| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:১২

আরোগ্য বলেছেন: একটু বলবেন আপনার আম্মুকে কোন হাসপাতালেে চিকিৎসা করিয়েছিলেন? আমার আম্মুরও মানসিক সমস্যা।

৩| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৯ রাত ৯:২৭

রাজীব নুর বলেছেন: খেয়ে-পড়ে টিকে থাকাই তো খুব কঠিন হয়ে গেছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.