নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন জেনারেল ব্লগারের নিজের সম্পর্কে বলার কিছু থাকে না ।

আবদুর রব শরীফ

যদি তোর লেখা পড়ে কেউ না হাসে তবে একলা হাসো রে!

আবদুর রব শরীফ › বিস্তারিত পোস্টঃ

নোবেল যেখানে ফেইল করেছে

০১ লা জুন, ২০২০ সকাল ১১:০০

গল্পটা লিখবো বলে রাতে ঘুম আসছিলো না, সকালে উঠে দেখি চশমা খুঁজে পাচ্ছি না ৷ ভয় লাগলো কারণ আমি কেমনে গল্পটি ফুটিয়ে তুলবো? আজ তো হুমায়ুন আহমেদও বেঁচে নেই! থাকলে তাকে বাস্তব ঘটনাটি বলে একটা অনুরোধের গল্প লিখতে বলতাম ৷
.
জোবরা এলাকা সংলগ্ন চবি দুই নং গেইটের মাথা থেকে রিক্সায় উঠলাম ৷ বললাম ভাড়া কত? সে বললো, উঠেন ৷ ভাড়া লাগবো না ৷ যা দেন্ ৷
.
করোনাকালে একজন রিক্সাচালকের ভাড়া নিয়ে টেনশন নেই দেখে আরও অবাক হলাম ৷ দেশ কি সত্যিই সিঙ্গাপুর হয়ে গেলো কি না ৷আজ দেখি রিক্সা থেকে লস্ এঞ্জেলস দেখা যাচ্ছে ৷
.
জীবনের প্রথম মানবিক রিক্সাচালক দেখলাম ৷ হয়তো সে ও বুঝেছে করোনাকালে আমাদেরও বেতন হাফ্ ৷ সবাই তো মানুষ ৷ তারদিকে তাকিয়ে এখন নিজের ই বড্ড মায়া লাগছে ৷ কঠিন মায়া ৷
.
বললাম, চাচা, করোনার খবর কি? চাচা বললো, তিনমাস পর বের হয়েছি ৷ এবার পায়ের উপর থেকে পা নামিয়ে ভ্যাবাচাকা হয়ে টেনশনে পরে গেলাম ৷ আজ নিশ্চিত নামার সময় বিশ টাকার ভাড়া মানবিকতার খাতিরে একশ টাকা দাবী করবে ৷ ভাবছিলাম ভাড়া ই দিমু না ৷
.
পাল্টা প্রশ্ন করলাম, তো চাচা শুকায় যাওয়ার কথা, এতো মোটা থাকলেন কেমনে ৷ হিহি এর বদলে খিকখিক্ করে হাসি দিলো ৷ চাচা এক হাতে স্টিয়ারিং আরেক হাতে আঙ্গুল গুণে বলা শুরু করলো, ৩০০ কেজির উপ্রে চাল ডাল পাইছি ৷ বাংলা সাবান থেকে শুরু করে আরো কি কি লিস্ট বলতে থাকলো ৷
.
তারপর বললো, তিন মাস পায়ের উপ্রে পা বসিয়ে খেয়েছি ৷ জোবরা এলাকা এবং তার আশেপাশে এমন কোন সংগঠন নেই যে এগিয়ে আসেনি ৷ সকাল বিকাল রাতে এসে এসে এটা ওটা দিয়ে গেছে ৷
.
খালি দরজায় বারি দেয় ৷ আর খবর নেয় ৷ এক একজন দশবার করে এসে খবর নিয়েছে ৷
.
এখন আর বসে, ঘুমিয়ে থাকতে ভালো লাগে না তাই বের হয়ছি তবে মামা অভাবে না ৷ এখনো দুই মাস খেতে পারবো ৷ টাকার কথা কি বলবো ৷ যে যা পারে দিয়ে গেছে ৷
.
জিমি ফ্যাক্টেরি আছে না? জিমি ফ্যাক্টেরি! বললাম, মরা ফ্যাক্টেরি এটা? বললো, তারা এমন কোন গরিব পরিবার নেই যে পাঁচ হাজার টাকা করে দেয়নি ৷ বললাম, 'কোন খবর তো পেলাম না ৷ এমন একটা মানবিক ফ্যাক্টেরির মালিকের কথা ৷ ঘর হতে মাত্র কয়েক ক্রোশ পরে ফ্যাক্টেরিটা ৷' হঠাৎ করে নোংরা দেয়ালটার ছবি ভেসে আসলো ৷ খুব কিউট মনে হচ্ছে পাউরুটির ফ্যাক্টেরিটাকে!
.
ছোটকালে ওদের পাউরুটি খেয়ে বড় হয়েছি, এখন জানিও না কি বানায় ৷ তবুও সন্দ্বীপ স্টোরে গেলাম, মিজান ভাইকে বললাম, বদ্দা জিমি ফ্যাক্টেরির কোন বন্ টন্ নেই? ভাই বললো, আরো ভালো কোম্পানীরটা আছে! আরে মিয়ে রাখেন আপনার ভালো কোম্পানী ৷
.
মেজাজটা খারাপ ৷ জিমি কোম্পানীর পাউরুটি পাচ্ছি না ৷
.
একজন রিক্সাচালকের হাসিমুখ একটি এলাকার প্রতি তার কৃতজ্ঞতা খুব ভাবিয়ে তুলেছে ৷ এই সেই এলাকা যেখানে নোবেলজয়ী ডক্টর ইউনুসকে ঢুকতে দেওয়া হয় না ৷ লাঠিসোঠা দা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতো ৷
.
এই তেভাগা থেকে একজন নোবেল জয়ীর উত্থান ৷ অথচ এদের দাবী ঋণ পরিশোধ করতে না পারলে একটা নোবেল শান্তি পুরষ্কার পাওয়া প্রতিষ্ঠান ঘরের টিন খুলে নিয়ে যেতো ৷ গরীব মানুষ আবেগে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে গরু না কিনে টিভি কিনে পেলেছিলো বলে ৷
.
বুকে হাত দিয়ে বলতেছি ৷ এখানে নোবেল ফেইল করেছে ৷ পাশ করেছে এলাকার মানুষের ভালবাসা ৷ প্রফেসর ইউনুস আমার অর্থনীতির স্যার ৷ সরি স্যার! আমি মিথ্যে বলতে না পরার জন্য ৷ এখানে আসেন ৷ দেখেন একটা রিক্সা চালকের মুখের হাসি কেমন চকচক্ করছে ৷
.
হয়তো কাল নিউজ হবে, ডক্টর ইউনুসের নোবেলে হাসি ফুটেছে ৷ হাসছে কৃষক ৷ আনন্দ ভাসছে দিন মজুর ৷ কেউ জানতে চেষ্টা করবে না, মূল গল্পটির ৷
.
যখন করোনাকালে একজন রিক্সাচালক বলে, তার এলাকা মানুষগুলো সেরা তখন গর্বে বুক ভরে যায় ৷
.
সরকারের দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে যে যার মতো এগিয়ে আসার গল্পগুলো, একটি সমাজ গড়ে দেয় ৷ করোনায় কোন রোগী মারা গেলে নিজে মরলেও নাকি সে সবার আগে এগিয়ে আসবে ৷ এই যে তার শিক্ষা সে এটা করোনাকালের সমাজ থেকে পেয়েছে ৷
.
আমাকে বারবার বলে যাচ্ছিলো, সমাজ এক্কান জিনিস ভাই ৷ এতোদিন বুঝিনি ৷ এখন বুঝেছি সমাজের কি দরকার ৷ সমাজের উছিলায় আল্লাহ তিনটা মাস আমাদের বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াছে ৷
.
যাদের সমাজ নেই তারা না খেয়ে মারা যাচ্ছে ৷ এসব গল্প শুনলে তারা হয়তো আপসোস্ করে বলবে, ইশ্ আজকে একটা এমন সমাজ নেই বলে ৷
.
করোনাকালে মানুষ মারা গেলে নাকি সৎকারের মানুষ পাওয়া যায় না ৷ আমার শোভাকলোণী একজন নানা মারা গেছে বার্ধক্যে ৷ লোক বেশী হওয়ায় তিনজনকে আমার রেস্টে রেখেছি ৷ রিজার্ভ বেঞ্চ ৷ পরবর্তী কেউ মরলে তুমিও সৎকারে অংশ নিতে পারবে ৷ মন খারাপ করো না ৷
.
ইদানিং খুব গর্ব হয় ৷ নিজের এবং পাশের এলাকাগুলো নিয়ে ৷ আমার বিশ্বাস হয় না, কিভাবে অনেক এলাকার মানুষ এতো পাষাণ হয় ৷ প্রতিবেশী না খেয়ে মরে, না কবরে যেতে পেরে আবারো মরে ৷

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা জুন, ২০২০ সকাল ১১:২১

দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: ইশ্ ! এমন সমাজ যদি বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামে গ্রামে থাকতো তাহলে কতইনা ভালো হতো!

২| ০১ লা জুন, ২০২০ সকাল ১১:৩৯

মুজিব রহমান বলেছেন: হুমায়ুন আহমেদ বলতেন অন্যের গল্প শুনে তিনি কখনোই গল্প লিখতেন না। তিনি সবই কল্পনা করে লিখতেন।

আপনি যে চিত্র এঁকেছেন তা কল্পনাতেই আঁকা যায়। আমি গ্রামে থাকি। মুন্সিগঞ্জ বাংলাদেশের দ্বিতীয় ধনী জেলা। সেখানেই মানুষ সংকটে রয়েছে। ঘোষণা দিয়েও মানুষের সংখ্যা বেশি দেখে ঘোষণা প্রত্যাহার হয়েছে। কজন ঠিকমতো সংসার চালাতে পারছে। আর কুড়িগ্রাম যেখানে ৭০ শতাংশের বেশি হতদরিদ্র মানুষ সেখানে কে কাকে সাহায্য করছে। সাভারে দেখলাম খাদ্যের অভাবে বহু পরিবার হাড্ডিসার হয়ে গেছে। সারা দেশে বহু মানুষই যখন খাদ্য সংকটে রয়েছে তখন আপনার এমন কাল্পনিক গল্প মানুষকে মানুষের পাশে দাঁড়াতে নিরুৎসাহিত করবে। গরিবগণ সামান্য সাহায্য পাক এটাও অনেকে ভাল চোখে দেখে না। কত কথা রটায় রে মানুষ।

৩| ০১ লা জুন, ২০২০ সকাল ১১:৪২

সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: আপনার এলাকায় গিয়া থাকুম ভাই , আহা! ভাল মানুষ কতো দিন দেখিনা !

৪| ০১ লা জুন, ২০২০ সকাল ১১:৪৮

স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: করোনা গল্প লিখতে থাকুন , জীবনের সংগ্রাম গুলি লিখিত থাক ।

৫| ০১ লা জুন, ২০২০ দুপুর ১২:৩৮

রাজীব নুর বলেছেন: যাক রিকশাওয়ালা ত্রান পেয়েছে।

৬| ০১ লা জুন, ২০২০ দুপুর ১:১০

সাইন বোর্ড বলেছেন: আপনার গল্পের পটভূমির বর্ণনানুযায়ী ভাল লাগারই কথা, আমিও পুলকিত হলাম ।

৭| ০১ লা জুন, ২০২০ দুপুর ১:৫২

নেওয়াজ আলি বলেছেন: ত্রাণের সুষম বণ্টন হয়েছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.