নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কখনও আমি অথবা আমার মন অথবা আমরা দুজন মিলে অনুসন্ধান করে বেড়াই সত্য ও সুন্দরের; যা শুধু গুটিকয় মানুষের স্বার্থের জন্য নয়, বরঞ্চ এই সমগ্র মানবতার জন্য।

আবীরের ঘোড়া

আবীরের ঘোড়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

বন্ধুত্বের বেড়ে ওঠা!!!

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ৩:০৩



একেবারে ছোট্টবেলায় আমার বন্ধু ছিল তারা যারা আমার সাথে বা আমি যাদের সাথে হয়ে অন্যকে মারতাম। সেই অধ্যায়টা আবছা আবছা মনে আছে, তাও যদি না আমার খালাতো ভাই বিষয়টা মনে করিয়ে দিত, তবে হয়তো ভুলেই যেতাম। ওরাই তখন আমার বেস্ট দোস্ত। 
যাদের সাথে খেলি, যাদের সাথে স্কুলে যাই, টিফিন আর রিকশা ভাড়া বাঁচিয়ে স্কুল শেষে একসাথে রেস্টুরেন্টে খাই, বিকেল বেলা ´হাম দিল দে চুকে সনাম´ (ঐ ছবির নায়িকার মতন দেখতে একজন, যার নাম আমরা জানতে পারিনি আজও) এর বাড়ির পাশ দিয়ে নিয়মিত নদীর পারে আড্ডা দিই, একসাথে প্রাইভেট পড়ি, পড়া শেষে মাগরিবের টাইম পেরিয়ে রাস্তার মোড়ে বা গোপাল দা´র চায়ের দোকানে আড্ডা দিই। শুক্রবার সকালে বাজারে গিয়ে গরম গরম পরোটা খাওয়া। সবই স্বপ্নের মতন মনে হয়। সেই সময়টাতে যারা পাশে ছিল তাদের মতন আপন আর কাউকেই করতে পারিনি । 

আমরা তখন কলেজ ১ম বর্ষের ছাত্র। একটা ছেলে হঠাত করে বলল, দোস্ত চল যাই তোকে একটা জিনিস দেখাই, কিন্তু ব্যপারটা প্রাইভেট। তখনও ওর সাথে আমার তেমন একটা খাতির নাই। একই এলাকায় থাকি এই যা। আমরা একটা খালি ক্লাসরুমে ঢুকলাম। ও আমাকে ও´র ৯০/৯১ তম প্রেমের চিঠি দেখালো। আমরা ঐ বয়সে প্রেমের কাঙাল আর তার ঝুলিতে ইতিমধ্যে এতোগুলা টাটকা প্রেমের চিঠি। ভাবতেই বুকটা ভরে গেলো। মনে হলো আমরা না পারি, ও তো পেরেছে। ও আমাকে বিশ্বাস করে চিঠিটা দেখালো। একই স্কুল-কলেজ হবার কারণে নতুন ছেলেমেয়েদের সাথে আমাদের তেমন একটা দহরম-মহরম ছিল না। তাই নতুনদের সাথে বন্ধুত্ব গড়ার প্রয়োজনীয়তাও অনুভব করিনি। তবে এই ছেলেটার ক্ষেত্রে তেমন ঘটলো না। বিশ্বাসের জায়গাটাতে পৌঁছাতে অনেক সময় লাগে। সে এতো সহজে আমাকে বিশ্বাস করলো বলে তাকে সেদিন থেকেই মনের ভেতর স্থান দিয়েছিলাম। তাকে বিশ্বাস করলাম তুইও আমার বন্ধু। সেই থেকে আমরা বন্ধু। বন্ধুত্ব তৈরিই হয় হয়তো বিশ্বাসের জায়গা থেকে। বিশ্বাস এমন একটা জিনিস, যা ইন্দ্রিয়ের বাইরে গিয়ে দেখে। ইন্দ্রিয়ের বাইরে থেকেই বুঝে; অনুভব করে। ইন্দ্রিয়ের সুস্পষ্ট দেখাকেও মেনে নিতে নারাজ যদি না ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় হ্যাঁ বলে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে এক নতুন সত্য আবিষ্কার করলাম। বন্ধুত্ব গড়বার জন্য বিশ্বাসের বাইরেও আরও একটা কিছু জরুরী, তা হচ্ছে চিন্তা ও চেতনার ঐক্য। গোটা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আমার হাতে গোনা কয়েকটা নতুন বন্ধু ছিল, সেইটা ঐ নির্দিষ্ট মানদণ্ডের কারণে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষের দিকে আমার সেই হাতে গোনা কয়জনের মধ্যে একজনের সাথে আমার একটা দূরত্ব তৈরি হলো। দূরত্বটা তৈরি হয়েছিল দর্শনের বৈপরীত্যের কারণে। তখন বুঝতে পারলাম দর্শনের সামঞ্জস্যতা খুবই জরুরী একটা টেকসই বন্ধুত্বের জন্য। 
বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে যখন বাইরে এলাম, তখন আবিষ্কার করলাম দর্শনগত দিক থেকে যে যত কাছের সে তত কাছের বন্ধু। তাই একই দর্শনে বিশ্বাসীদের সাথেই বেশ জমে উঠলো বন্ধুত্ব। পুরাতন বন্ধুদের সাথে যখন বসে আড্ডা দেই তখন বলতাম তোরা ছাড়া আর কেউ বন্ধুত্বের জায়গাটা নিতে পারবে না। তখন সেইটা ভেতরকার বিশ্বাসের জায়গা থেকেই বলতাম। কিন্তু এতদিনে বুঝতে পারলাম বন্ধুত্বের পরিসীমাটাও নেহাত ছোট কিছু নয়। 

জীবন চলার এই পথে অনেক বন্ধু হয়, কারো সাথে হয়তো শত্রুতাও তৈরি হয়। সবকিছু ছাপিয়ে বন্ধুত্ব টিকে থাকে। এই এতো বছরে শুধু বন্ধুত্বের তালিকায় যোগ করেছি, কাউকে কখনও বিয়োগ করিনি, আমি ফেসবুক বন্ধুত্বের বিষয়টা ধর্তব্যের মধ্যে আনছি না। মাঝে মাঝে নিজেকে খুব সৌভাগ্যবান মনে হয় এই কারণে যে - আমার কিছু বন্ধু আছে যাদের সাথে আমার শৈশব-কৈশোর দুই-ই কেটেছে , আমাদের বিশ্বাসটা একই রকম আর দর্শনের জায়গাটাও এক। আমরা এখনও দেশ, কালের সীমাবদ্ধতাকে ডিঙিয়ে সেই আদি আর অকৃত্রিম ভালোবাসায় সিক্ত। 

আজকাল মনে হচ্ছে কিছু বন্ধুত্ব থেকে যায় সাহচর্য, বিশ্বাস, দর্শনের বাইরেও। তারা হয়তো আমার পরিচিত নয়, আমার বিশ্বাসে বিশ্বাসী নয়, আমার দর্শনের সাথে হয়তো রয়েছে বিরোধ- তবু তারা আমার বন্ধু। কেননা মানুষের ব্যথায় তারা ঘরে বসে থাকতে পারে না, কারো বিপদ দেখলে এখনও ঝাঁপিয়ে পরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, রাজপথে দাঁড়িয়ে লড়াই করে ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য, নিজের ঘরে হয়তো ভালো কাপড় নেই কিন্তু শীতে কাউকে কাঁপতে দেখলে নিজের কষ্ট ভুলে গিয়ে নিজের শীতের কাপড়টা বিলিয়ে দিতে সামান্য জড়তায় ভুগে না। এখনও স্বপ্ন দেখে সাম্য আর ন্যায় প্রতিষ্ঠার। লড়াই করে যায় সত্যের জন্য কতো নাম না জানা প্রান্ত থেকে, প্রতিটা মুহূর্তে। সে সকল বন্ধুদের শুধু ভালোই বাসি না, শ্রদ্ধা করি অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে, চেষ্টা করি অনুসরণ করার। কাল বা দেশের সীমারেখা পেরিয়ে। সালাম ফিদেল কিংবা ওমর মোখতারের মতন আমার সকল অদেখা বন্ধুদের!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.