ল্যামপোস্টের নিচে

২৮ শে জুন, ২০১৫ বিকাল ৫:১৯

ল্যামপোস্টের নিচে
আবু খায়ের আনিছ

রাত কত হয়েছে?? ঘড়ির কাটা কি তিন এর ঘরে ছুঁই ছুঁই করছে
হবে হয়ত! হাতে ঘড়ি নেই তাই সময় দেখতে পাচ্ছি না,
পশ্চিম আকাশে চাঁদ হেলে পড়েছে, তারার আলোও কমে যাচ্ছে,
দুরন্ত গতিতে ছুটে চলেছে সাদামেঘ আকাশের বুকে,
ঠান্ডা বাতাস বইছে চারিদিকে, শীত আসছে এই আগমনী বার্তা শুনাচ্ছে
মাঝে মাঝে কয়েকটা নিশাচর পাখি উড়ে যাচ্ছে,
অন্ধকারে জোছনার আলোয় কালো দেখাচ্ছে পাখিগুলোকে.
তবু সুন্দর লাগছে, রুপ যাইহোক অন্ধকারে সব এক
এ কোন গ্রামের চেহেরা নয়, আমাদের চিরচেনা রাজধানী ঢাকা
দিনের সমস্ত ক্লান্তি এসে ভর করেছে এই রাতের আধারে.
আমি দাড়ীয়ে আছি ফাকা রাস্তার মাঝ খানে ল্যামপোস্টের নিচে।
নিরব নিস্তব্ধ রাস্তার বুক চিরে মাঝে মাঝে উড়ন্ত গতিতে ছুটে চলে ট্রাক
দূরের পথের কোন এক যাত্রীর যাত্রাকে বহন করে গুটি কয়েক বাস,
অথবা দেশঘুরার পথে কোন পথিকের ছোট্ট প্রাইভেট কার,
হঠাৎ করেই শো শো শব্দ করে ছুটে চলে আমার পাশ দিয়ে
বাতাস লাগিয়ে যায় গায়. শরীর শির শির করে সেই বাতাসে
দিনের ব্যস্ত ঢাকার মাঝে এ যেন এক স্বপ্নবিলাস, তাই মনে হয় কি
হলে হতেও পারে,কিন্তু না বাস্তবেই রাতের ঢাকা আশ্চর্য্য এক শহর।
সারি সারি ল্যামপোস্টের নিচে দাড়িয়ে হয়ত রাত খোঁজা বৃথা
আধুনিক বিজ্ঞানের বৈদুত্যিক আলোয় আলোকিত এই ঢাকায়
অন্ধকার যে এক রিবল বস্তু,খুঁজে পাওয়া সৌভাগ্য ছাড়া আর কি যায় বলা,
রাস্তার পাশ দিয়ে হাটতে গেলে ভয় হয়, চোর কিংবা ছিনতাই এর নয়
অসহায় মানুষগুলোর রাত্রিযাপন দেখতে চাই না এই মন
লক্ষ কোটির এই ঢাকায় মধ্য রাতেও রাস্তার পাশে শুয়ে থাকে
ষাট বছর বয়সের বৃদ্ধ. দেখে মনে হয় কত আরাম করে ঘুমাচ্ছি আমরা
আমাদের পাশেই রেখে এই সব স্বজন, চোখের সামনে ভাসে কিছু পুরুনো ছবি
ষাট বছর বয়সে মোর দাদার মুখখানি ছিল এমনি.
যখন দেখি বার বছর বয়সের এক যুবক ঘুমের যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে
কিন্তু একটু শান্তির খোঁজে,একটু আরামের জন্য ঘুমাতে পারছে না
মনে হয় তখন এই বয়সে কত আদর করে ঘুম পারিয়ে দিত আমার মা.
আরো আছে আমার বাবার বয়সি লোক, চোখে তার হাজার স্বপ্ন
ছেলে বড় হবে, চাকুরী করবে, ঘুচবে আমার সকল দুখ,
স্বপ্নীল এই মানুষ দেখে ভয় হয় আমার বাবার কথা ভেবে,
কি হত যদি থাকত বাবা আমার এই জায়গাটির পরে,
সত্তোর বছর বয়সের কোন এক নারী বসে আছে ল্যামপোস্টের নীচে
ঠান্ডা বাতাসে তার গায়ে শীত লেগেছে, ঘুম কি করে তার চোখে আসে,
ল্যামপোস্টের এই আলোর ছায়ার আড়ালে কি যেন যায় হেটে
চোখ মুখে আমি দেখতে পায়, বয়স সতের এর এক তরুনী যায় বির্মশ মুখে
পেটের দায়ে দেহ বিক্রি করে, যাচ্ছে ফিরে আপন ঘরে
ধনীর দুলাল কিছু তাদের কিনে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে,
আমি ফিরে এসে দাড়ায় আবার সেই ল্যামপোস্টের নিচে,
নিজের ছায়া দেখি অভিশপ্ত আর ঘৃনিত এক আমাকে,
পাব কি মুক্তি এই সব মানুষের আহাজারি থেকে,
বড় অদ্ভুত আর বৈচিত্র্যময় আমাদের এই ঢাকা শহরে,
আমি দিগন্তের পথিক দেখছি শহরটাকে দাড়িয়ে এক ল্যামপোস্টের নিচে।

০ টি +০/-০