![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ভাড়া বাসায় বসবাসের অভিজ্ঞতা অনেক দিনের। মা-বাবার বাড়ির বাইরে এলাম যেদিন সেদিন এর শুরু। এসে উঠেছি লালমাটিয়ায়। পাঁচ-সাত কাঠা মতো জায়গায় দুটো একতলা বাড়ি। দেখতে ইংরেজি এল এর মতো। খোলা জায়গায় আম গাছ। কাঁঠালচাপা আর অন্য দু’একটা ফুল গাছ। বাকি জায়গাটা সবুজ ঘাসে ঘেরা। এমন সুন্দও খোলামেলা জায়গা দেখে মন ভরে গেলো। ইংরেজি ১৯৯১ সাল তখন। লালমাটিয়া থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যেতে রিক্সাভাড়া লাগে আট থেকে দশ টাকা। কিছুদিন আগে সেখানে গিয়ে দেখি যে আকাশ, বাতাস ও আলোর ওপর সব মানুষের অধিকার সেই আকাশ-বাতাস-আলোককে বন্দী করে সেখানে উঠেছে মস্ত অট্রালিকা।
সে বাসার পর এদিক সেদিক আর অনেক কোনা কানচিতে অনেক বছর পেরল। বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট ব্যাগে ভরে আবার শুরু বাসা খোঁজা। একবার মোহাম্মদপুরে এক বাসায় উঠে ভুতের খপ্পরে পড়া গেলো। ঘর দুটো একটা বাড়ির নিচ তলায়। বাড়ির চারদিক আবর্জনায় ভরা। তার দুর্গন্ধে ছয়লাব সারা ঘর। দিনের বেলায়ও পোকা মাকড়ের আনাগোনা। বিছা আর কেঁচো যখন তখন পায়ের তলে পড়ে। মাকড়সা আর মশার কমতি নেই। আমার ভাই একদিন দুপুরে ঘুম থেকে লাফ দিয়ে উঠলো। ঘুমের মধ্যে এক শিংওলা দানব নাকি তার গলা চেপে ধরেছিলো। ও নিশ্বাসও নিতে পারছিলো না। অগত্যা দু’মাসের মধ্যে সে-ঘর ছাড়তে হলো। বাড়িওলা বললেন, ব্যাচেলে মানুষ! এর থেকে ভালো বাসা আর কোথায় পাবেন? আমার পরিচিতরা বলল, তুমি নাকি ভালোবাসা খুঁজছো? আমি বললাম, ’ভালোবাসা’ নয়, ’ভালো বাসা’ খুঁজছি।
অবিবাহিত জীবনে ভালো বাসা আর পাওয়া গেলো না।
বিয়ের পর ভাবলাম, এবার নিশ্চয় কপাল খুলবে। ভালোবাসা পাবার নিশ্চয়তা না থাকলেও ভালো বাসা অন্তত পাব। কে একজন বলল, নিজের বাড়ি মানে কেবল একটা বাড়িতে থাকা। আর ভাড়াবাড়ি মানে শহরের সব বাড়ি তোমার! যখন যেটাতে ইচ্ছা থাকার চেষ্টা করতে পার! তাই নিজের বাড়ি না থাকার জন্য আফসোস করোনা।
অনেক খুঁজে দেখেশুনে এবার সুন্দর টাইলস লাগানো বাসা পাওয়া গেলো। ঘরের টাইলস যেমন তেমন টয়লেটের টাইলস অপরূপা। সেখানে ঢুকলে আত্মীয়-স্বজন তো পরের কথা অপরিচিত লোকও বের হতে চায়না। এমন সুন্দর বাসায় গরম কালে দেখা দিলো পানির আকাল। শুরু হলো কেনা পানিতে জীবন যাপন। আমার এক বন্ধু সব শুনে বলল, অনেক ভালো আছো! তার বাসার পানিতে নাকি নিয়মিত মলমূত্রের আনাগোনা। বাসার দুর্গন্ধ দূর করতে তাকে নিয়মিত আতর লোবান কিনতে হয়!
অভিযোগ জানানোর লোক এ বাড়িতে কেবল গেটের দারোয়ান। বুড়ো দিন-রাত যখন সময় পায় তখনই ঘুমায়। শব্দ বলতে শোনা যায় শুধু তার কাশির ’খক খক’ আর ঘুমের ’ভোঁস ভোঁস’। তাকে কিছু বলতে গেলে বলে, ম্যানেজাররে কন। ম্যানেজার সারাদিন এদিক সেদিক ঘুরে বেড়ায়। সপ্তায় একদিন তাকে ধরা যায়। বাড়ির মালিক বিদেশে লাপাত্তা।
খুঁজে খুঁজে এবার মালিকওয়ালা বাসা নিলাম। সেখানে ওঠার পর শুনি ভাড়াটের সাথে তিনি দেখা করেন না। ভাড়াটে ’বেয়াদব’দেও কথা শোনার জন্য আছে ম্যানেজার। ম্যানেজারের সাথে কথা বলে বুঝলাম, সুন্দরবন থেকে পালিয়ে আমি চিড়িয়াখানায় বাঘের খাঁচায় ঢুকে পড়েছি! একদিন আমাদের ছোটো বাচ্চাটাসহ আমার স্ত্রী কারেন্টের খপ্পরে পড়ল। সব ঘরে কারেন্ট ছড়িয়ে পড়ল। ওরা কোনোক্রমে বাসার বাইরে বেরিয়ে এলো। এই দুর্ঘটনার ফলে বাড়িওয়ালার সাথে কথা বলার সুযোগ পাওয়া গেলো। তিনি তার কাঁচা-পাকা চুল আচড়াতে আচড়াতে বললেন, আমি ইঞ্জিনিয়ার মানুষ। আমার বাড়িতে তো । এরকম হওয়ার কথা না! আমার বাড়ি এ মহল্লার শ্রেষ্ঠ বাড়ি। বাড়ির ম্যানেজার বলল, স্যার! আমি উকিল মানুষ - আমরে দেয় ধোঁকা! গব চাপাবাজি স্যার। বাড়ির দারোয়ান মিউ মিউ করে বলল, ম্যানেজার হালায় মিছা কতা কইতাচে। নিচ পযোন্ত কারেন্ট আইয়ে পড়ছিলো।
আবার বাসা বদল করতে হলো। নেহায়েত ভাড়া বাসা তাই বদল করা গেলো!
এবার উঠলাম খুব ভদ্র দেখে এক বাড়িওয়ালার বাড়িতে। হাতে হাত মিলিয়ে নাস্তা পানি খাইয়ে প্রথম দিনই তিনি আমাদের আপন করে নিলেন। তার ড্রয়িং রুমে মাওলানা ভাসানীর একটা বাধাঁই করা ছবি। ছবির ওপর লেখা, খামোশ, তাবেদার! মাত্র বিশ দিনে বাড়িওয়ালার ভোল গেলো পাল্টে। বললেন, আমার এক আত্মীয় থাকবে; এ বাসা ছাড়তে হবে। বাড়িটা যখন তার আর ছাড়ার কথা যখন তিনি বলছেন তখন ছাড়তে হবে বৈকি!
বাকি দশ দিনের মধ্যে আমাদের কাপড়-চোপড় কে যেন কেটে দিলো! ওগুলো শুকতে দেয়া হয়েছিলো ছাদে। ত্রিশ দিন না পেরতে বাসা ছাড়তে হলো। ভদ্রতা একটি সামাজিক বোধ আর নৈতিকতা এক ধরনের নীতিবোধ। একজন খুব ভদ্র মানুষও অত্যন্ত অনৈতিক হতে পারেন।
এবার আরো দেখেশুনে আরেকটা বাসায় ওঠা গেলো। এ বাসা অতীতের সব বাসার থেকে সুন্দর। এখানে থাকা গেলো তিন বছরের মতো। বাড়িওয়ালা দু’বছর পর পর ভাড়া বাড়ানোর কথা বলেছিলেন। দু’বছর পর ভাড়া বাড়লো। ভাড়া বাড়লো তৃতীয় বছরেও। জানা গেলো এখন থেকে প্রতি বছর ১০% করে ভাড়া বাড়বে। জ্ঞানীজন বলেন, আয়ের বেশি ব্যয় করোনা। কথাটা বাস্তব কারনে মানতে হলো। আবার বাসা ছাড়লাম।
বাসা ছেড়ে মনে হলো, আহা! মুক্তি পেলাম। বাসার দারোয়ানের হাত থেকে তো বাঁচা গেলো! সে বাজারের ব্যাগে উঁকি দেয়। সুযোগ পেলে টাকা চায়। খবরের কাগজ দরজা দিয়ে বাসায় দিলে তার জন্যও তার কিছু না কিছু চায়। তার চাওয়ার খপ্পর থেকে অন্তত মুক্তি পাওয়া গেলো।
এখন আছি আরেকটা বাসায়। দেখা যাক কতদিন থাকা যায়।
২| ০৮ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ১:১৪
কোর্পরে্ট শয়তান বলেছেন: ভালো লিখেছেন..
৩| ০৮ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ১:১৬
তুষার মানব বলেছেন: যেভাবে বাসা বদলাইতাছেন বাসা নিয়া একটা উপন্যাস লেইখা ফেলান
৪| ০৮ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ১:৪৬
সময়ের ডানায় বলেছেন: ভাল লিখেছেন।
৫| ০৮ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ১:৪৮
বোকামানুষ বলেছেন: ঢাকা শহরে বাসা পাওয়া আর বদলানোর মত কঠিন কাজ আর নেই
৬| ০৮ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ২:২৬
বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন: বোকামানুষ বলেছেন: ঢাকা শহরে বাসা পাওয়া আর বদলানোর মত কঠিন কাজ আর নেই
৭| ০৮ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ২:৫৩
মিনুল বলেছেন: ভালো লাগলো আপনার ভাড়া বাসার কাহিনী।
৮| ০৮ ই জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৩৬
মামুন রশিদ বলেছেন: নিজের বাড়ি মানে কেবল একটা বাড়িতে থাকা। আর ভাড়াবাড়ি মানে শহরের সব বাড়ি তোমার! যখন যেটাতে ইচ্ছা থাকার চেষ্টা করতে পার!
কথাটা খারাপ না ।
৯| ০৯ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ১২:২৫
আবু সিদ বলেছেন: মতামতের জন্য ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
০৮ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ১:০৯
শ্লোগান০০৭ বলেছেন: হুম.....। ভালোলাগল