নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আবু সিদ

আবু সিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

যদি আলাদিনের প্রদীপ পাই!

১৭ ই জুন, ২০১৪ সকাল ৯:৪১



যদি আমাদের সবার কানে কানে বলা হয়, আলাদিনের প্রদীপ চাই? নির্দি¦ধায় (প্রায়) প্রত্যেকে এদিক ওদিক তাকাবেন। ভাববেন, কেউ শুনে ফেললো নাতো! ফিস ফিস করে হয়ত বলবেন, চাই বটে, খুব চাই। কিন্তু এমন কড়কড়ে দিনের আলোয় নয়। রাতের অন্ধকারে ৫৩৬ সেকেন্ডের জন্য হলেই আমার চলে যাবে। তারপর কাজকর্ম ছুড়ে ফেলে শুধু সারাদিন ভাবনা মনে মনে, কি চাইব যখন প্রদীপের ভিতর থেকে দৈত্যটা বেরিয়ে আসবে? যখন দৈত্যটা বলবে, আমার প্রভু! আমি তোমার চির-দাস। কি সেবা চাই তোমার? তখন?

সেই তখনের চিন্তায় দিন রাত সপ্তাহ পেরিয়ে গেলো। ঘরের বাইরের সব কাজ রাশি রাশি জমে উঠলো। ঘরে ঘরে পথে পথে উচ্ছিট্ট আর আবর্জনা। মানুষ সব নিষ্ক্রিয়। কাজে মন নেই। শুধু এক চিন্তা, কি চাইব তখন? এরই ফাঁকে সব নাগরিকের কানে কানে ওই কথাটা, ’আলাদিনের প্রদীপ চাই?’ বলা হয়ে গেলো। সবাই বললেন, খুব চাই। একান্ত নিজের করে রাত গভীরে অত্যন্ত গোপনে চাই। সবার চাওয়াতে ৮শ ১২ দিন আর ৫৩ মিনিট ৫৯ সেকেন্ডের সমান দীর্ঘ এক রাত নামল।

কেউ কেউ বলল, আমার সোনা মণি পান্না হীরে জহরত চাই। কেউ বলল, কাড়ি কাড়ি টাকা চাই। কারও বা আবার বক্তব্য হলো, বাড়ি গাড়ি আর সুন্দর সুঠাম পুরুষ চাই। কেউ কেউ আবার একটুও সময় অপচয় না করে এক নিঃশ্বাসে বলে গেলো, সুন্দরী ফর্সা নারী ডাগর চোখ খাড়া নাক লম্বা যথেষ্ট ধনপতির কন্যা সুশিক্ষিতা সুকেশিনী চিত্তহরিণী নয়নাভিরাম অপ্সরী, তার সাথে চাই জগতের সর্বোৎকৃষ্ট বাড়ি সুইমিংপুল সহ, ডিসকোবার সমেত গ্যারেজ, অনন্য সাধারন গাড়ি - আর আর বেহেস্ত যাবার সুনিশ্চিত সনদপত্র স্বয়ং ¯্রষ্টার হাতের স্বাক্ষর সহ!

একে একে পালাক্রমে চাইলো সবাই। চাইতে চাইতে সেই হাজার রাত অতিক্রান্ত হয়ে গেলো। যারা এই পালায় আগে ছিলেন তারা ভাবলেন, কি হলো? ব্যাপার কি? সূর্য নেই, আলো নেই। যাই কোথায়? করি কি? হীরে জহরত চাইতে তো কম করিনি! কিন্তু সূর্যের আলো চাইনি, বিশুদ্ধ বায়ু চাইনি, জল ও আহার চাইনি, সুসাস্থ আর উত্তম নিদ্রা চাইনি। চাইনি শান্তি-স্বস্তি-সান্ত¦না।

অনেকের মনে হলো, নাহ! চাওয়া ভুল হয়ে গেলো। অপরিসীম আয়ু চাওয়া দরকার ছিলো। কারওবা মনে হলো, কী যে বললাম! যদি বলতাম চিরকালের জন্য আলাদিনের প্রদীপটাই আমার চাই! আফসোস করল কেউ কেউ, আহা! শুধু বললাম নুরুদ্দিন খুন হয়ে যাক। কেন যে পাশের বাড়ির হারামিটার কথা বললাম না? চশমখোরটা আমার বৌর দিকে ট্যারা চোখে তাকায়।

সময় বয়ে গেলে, হাজার বছরের সে রাত পেরলে, মানুষের চাওয়া শেষ হলে স্বাভাবিক নিয়মের দিন-রাত্রি ফিরে এলো আবার। দেখা গেলো পৃথিবীতে কোনো শূন্য জমি নেই। নদী পর্বত পশুপাখি আর প্রাণি নেই। শুধু প্রাসাদের পর প্রাসাদ। বিলাসবহুল গাড়ি, চোখ ধাঁধাঁনো সুইমিংপুল, ডিসকো বার, সোনার পাহাড়, হীরকের স্তুপ, চুনি পান্না রুবিতে মোড়ানো পথঘাট। সেসবের ভিতর হাজার রাতের হাজার হাজার মৃত দেহের হাড়গোড়, জীবানু আচ্ছাদিত কঙ্কাল আর জীবনের কালো কলঙ্ক। বাতাসে জীবণুরা আর জীবাণুতে বাতাস হেসে খেলে বেড়াচ্ছে। আর এসবের মাঝে সূর্যের আলো মানুষের আকাশ ছোঁয়া প্রাসাদ আর মণি-মাণিক্যের দিকে তাকিয়ে উপহাস করছে।



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.