নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আবু সিদ

আবু সিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

যাদুর আয়না (উপন্যাস) - ৭ম র্পব

২৪ শে জুন, ২০১৪ দুপুর ১২:২৮

সততা আর নৈতিকতা থাক বা না-থাক বিষয়টা মানুষের কাছে দারুন মনে হলো। দেখি তো ব্যাপারটা কি? মানুষ জন সব লাফ দিয়ে উঠল। নব্বই বছরের এক বুড়ো তার রোগ শয্যা থেকে তড়াক করে লাফ দিলো। তার ত্রিশ বছরের নাতনীকে সে বলল, চল তো দেখে আসি মজাটা একবার! তোর দাদী তো সারা জীবন আমাকে ‘বদ বুড়ো’ বলে বাতিল করে রাখল। মরার আগে নিজের সুন্দর মনটাকে তোদের একটু দেখিয়ে যাই! তাতে আমার মরেও শান্তি। সে বকে চলল, তা যেই এটার আবিষ্কারক হোক এ খুব ভালো জিনিস। অপবাদ আর দোষ মানুষ এখন আর অন্যের ঘাড়ে চাপাতে পারবেনা। সে রাত দশটার সময় তার জামা প্যান্ট আর জুতো পরে নিউমার্কেটে যাবার জন্য তৈরি হয়ে গেল।



বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি পদপ্রাথী দুই শিক্ষকের দ্বন্দ্ব চরমে উঠেছে। তাদের দু’জনের আছে দুটি ভিন্ন গ্রুপ। এক গ্রুপ এটা করে তো ওই গ্রুপ আরেকটা কিছু করে। এই গ্রুপ অপর গ্র“পের নামে অপপ্রচার চালায়, অন্য গ্রুপও উত্তর দেয়। জালিম’‘পা-চাটা’ নির্বোধের শিরোমণি’ ‘জ্ঞান-পাপী’ ইত্যাদি সব নামকরন আজকাল বহুল প্রচলিত। যখন অপূর্ব এই আয়নাটির কথা প্রচারিত হয়ে পড়ল, শিক্ষকদের এক গ্রুপ তাদের ভিসি পদপ্রার্থীকে বলল, স্যার, চলেন।

আমরা সবাই তো জানি আপনি কতো ভালো আপনি নিজেও জানেন। এখন চলেন আমরা আয়নার সামনে যাই। সারা জাতি দেখতে পাবে আপনার ভালত্ব। ভিসি পদে জিততে এতে আপনার সুবিধা হবে। কেউ কেউ প্রস্তাব করল এখনই যেতে। অনেক চিন্তা করে তিনি রাজি হলেন। মনে একটু আশঙ্কা, খারাপ কিছু যদি ফুটে ওঠে আয়নায়! সাংবাদপত্রেও ব্যাপারটা ফ্লাশ হতে পারে ভেবে মনের মধ্যে তার একটা ‘কিন্তু’ ‘কিন্তু’ হচ্ছে। অনেক ভাবনার পর তার মাথায একটা বুদ্ধি খেলে গেল। তিনি ঠিক করলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদের ইমামকে সাথে নিয়ে যাবেন। যদি উল্টোপাল্টা কিছু দেখা যায় তাহলে ইমাম তার পক্ষ নিয়ে বলবে। মানুষের ধর্মপ্রীতি তো সবদেশে আছে, আর এখানে তো আরও বেশি। ওসব আয়না ফায়ানায় কি দেখা গেল সে সব জিনিসে আর মানুষ গুরুত্ব দেবেনা। মনে তার একটা খুশীর ঝিলিক।



অনেক আয়োজনের পর গলায় একটা মালা পরানো হলো। অনুসারীরা এবার তাকে নিয়ে আয়নার সামনে এসে চমকে উঠল। আয়নায় অদ্ভুত অনেক চেহারার মাঝখানে হাফ প্যান্ট পরা উদভ্রান্ত একজন মানুষকে দেখা যাচ্ছে গলায় তার ফুলের মালা। এই দৃশ্য দেখে ভিসি পদপ্রার্থী দিলেন এক দৌড়। এতে ইমাম সাহেব খুব অবাক। উনি পালালেন কেন? আমি তাহলে আসছি কিসের জন্য? তার কয়েকজন সমর্থক তাকে ফিরিয়ে আনল। এবার তিনি দাড়ালেন সবার পিছনে যেন আয়নায় তার একটা চুলও দেখা না যায়। ইমাম সাহেব বলতে শুরু করলেন, একজন মানী লোককে অপমান করছে যে আয়না সেটা কোন ভালো জিনিস নয়। এটা একটা যাদুর আয়না। আপনারা সবাই ভালো করে দেখেন আমার মতো একজন লোক যে কিনা আল্লহর ধ্যানে দিন কাটায় তাকে কিনা আয়নায় লাগছে বাদরের মতো। এ হলো নাপাক আয়না, যাদুর আয়না। আর আপনারা জানেন, যাদু টোনা ইসলামে নিষিদ্ধ্। এসব কাজে যারা সময় কাটায় দোজখের আগুন তাদের গিলে খাবে।



আজকাল যাদুর আয়নায় কী দেখা গেল তা নিয়ে নিউমার্কেটে আলাপ আলোচনার শেষ নেই। দু’একটা দৈনিক পত্রিকায়ও এ নিয়ে ফিচার লেখা হচ্ছে। অমিয় রহমানকে ভিসি পদপ্রার্থী এ গ্রপটির কেউ দেখেনি। আর দেখলেও কি, চিনতে নিশ্চয় পারেনি যে সে অমিয় রহমান বা কোন একজন সাংবাদিক। অমিয় রহমান তার পত্রিকায় চমৎকার একটা ফিচার লিখল ভিসি পদপ্রাথীতার দ্বন্দ্ব নিয়ে। সে লেখাটার শিরোনাম হলো ‘রাতভর প্রস্তুতি অবশেষে পলায়ন’।



নিজের বৌকে নিয়ে ঘোরতর সন্দেহে ছিল মালেক। গত ছয় মাস সে কেবল তাকে সন্দেহ করেছে। অনেক কষ্ট করেছে সে বউকে সেই কল্পিত পুরুষটির সাথে হাতে নাতে ধরবে কিন্তু সব ব্যর্থ। আজ সকাল থেকে বৌর অনেক প্রশংসা করেছে সে। শাড়ি কিনে দেয়ার কথা বলে বৌকে সাথে করে এখন নিউমার্কেটে। আয়নাটার কথা পত্রিকায় পড়ার পর মালেক ঠিক করেছে বৌর সততা সে পরীক্ষা করবে। এদিক ওদিক একটু সময় পার করে বৌকে নিয়ে মালেক এখন সোজা আয়নার সামনে। চারদিকে অনেক লোকজন থাকলেও কথাবার্তা তেমন শোনা যাচ্ছেনা। সবাই যার যার মতো দেখে চুপেচাপে সরে পড়ছে; পাছে পরিচিত কেউ মনের করুন অবস্থাটা দেখে ফেলে! আর মালেক এসেছে তার বৌর মনের অবস্থা দেখতে। সে যখন তার বৌর মনের ছবি আয়নায় দেখবে বৌও যে তার মনের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাবে এটা সে ভুলে গেছে। ভিড় ঠেলে বউকে সামনে এগিয়ে দিয়ে সে তার পাশে জায়গা করে নিলো।



বৌর ছবি আয়নায় তেমন ভালো দেখাল না। মালেক হায় হায় করে উঠল। দেখছ! আজ তুমি হাতে নাতে ধরা। কার সাথে কি আকাম করছো! ব্যভিচারের এই দোকান কত দিন ধরে চালাচ্ছ? মালেকের কথাটা শুনে শরীরের সব রক্ত বৌর মাথার তালুতে গিয়ে ঠেকল। অনেক কষ্টে নিজেকে সে সামলাল। বাড়ি হলে নির্ঘাত সে মালেকের মুখে চড় বসাত! দাঁতে দাঁত চেপে নিচু গলায় সে বলল, গবেট ব্যাটা! আয়নায় তোর চেহারা দেখ। আমি যদি একদিনের ব্যভিচারিণী হয় তুই হলি হাজার দিনের ব্যাভিচারী। কেমন নোঙরা শুয়োরের মতো লাগছেনা তোকে? স্বামীকে সে যথেষ্ট শ্রদ্ধাভক্তি করত। কিন্তু নিজের বউকে যে লোক সবার সামনে ব্যাভিচারিণী প্রমাণ করতে আসে আজ থেকে তাকে সে কোনভাবে ছাড় দেবেনা।



আয়নাটার প্রতি মানুষের বিশেষ আগ্রহ দেখে আলতাফ খুশী হয়ে উঠেছে। তার চিন্তা, এবার যদি লাইন দিয়ে টিকেট কেটে আয়না দেখানোর ব্যবস্থা করা যায় তাইলে তো লাভের শেষ নেই! জনপ্রতি টিকেটের দাম কত রাখা যায় এ নিয়েও সে চিন্তা ভাবনা শুরু করেছে। তার চিন্তায় বাদ সাধল রমিজ। সে বলল, বছ। যদি বড় কোন মানুষের আয়না হয় তাহলে তো বিপদ। আপনি ব্যবসায়ী সমিতির প্রেসিডেন্ট, সবাই আপনাকে মানে। কিন্তু মানুষ যখন দেখবে আয়না দেখায়ে আমরা পয়সা আয় করছি তখন কিন্তু ব্যাপারটা জটিল হয়ে যাবে। এতদিনে আয়নাটার পিছনে তার শুধু খরচই হলো! লাভ করতে তো পারলাম না! বিরক্ত হলো সে। রমিজকে সে ধমক দিলো, খালি বড় কোন মানুষের ভয় দেখাইতেচিস। সে হারমি আসেনা ক্যান? আয়নাটা নেয়না ক্যান? রাগছেন কেন, স্যার? আপনি তো জানেন, এদেশে বড় মানুষেরা নিয়ম কানুনের পরোয়া করেনা, আইন কানুনকে বুড়ো আঙুল দেখায়।



রমিজের কথায় আবার বিরক্ত আলতাফ। ক্যান? আমি বড় মানুষ না ? স্যার আপনার কথা আলাদা, রমিজ বলল, আপনার ইমেজটা একবার দেখেন! সৎ ব্যবসায়ী হিসাবে আপনার একটা সুনাম আছে। অন্য যাদের কথা বলছেন দিন- রাত মানুষ তাদের গালি দেয়। অনেকদিন পর রমিজের মুখে নিজের প্রশংসা শুনে আলতাফের খুব ভালো লাগছে। সে জানে, রমিজ কোন তোষামোদকারী নয়। তার কাছ থেকে টাকা পয়সা টেনে নেয়ার কোন মতলব রমিজের নেই। তার কথাটা খাঁটি কথা, কথার কথা নয়।



রমিজের সাথে পরামর্শ করেছে আলতাফ। কোন লাভ না হলেও সে আয়নাটাকে সুরক্ষিত রাখবে। আবার আয়না দেখতে মানুষের ভিড় বেড়ে গেছে। ভিড়টা যেন নিউমার্কেটের মধ্যে চলে না যায়!এসব ভেবে আয়নাটা নিউমার্কেটের এক কোনায় রাখা হচ্ছে। সবাই যেন আয়নায় নিজেকে দেখার সুযোগ পায়! আলতাফ একজন কর্মচারী নিয়োগ দেবে। কর্মচারীর কাজ হবে ভিড় ঠেলাঠেলি এসব যেন না হয় তা দেখা। লাইনে দাড়িয়ে সুন্দর মতো মানুষ যেন দেখার সুযোগ পায়, আবার এর কারনে নিউমার্কেটে কেনা বেচার কাজে যেন অসুবিধা না হয় তা নিশ্চিত করা। এমনভাবে রমিজ সব পরিকল্পনা করেছে যাতে করে যে কেউ যেকোন সময় আয়নায় সামনে আসতে পারবে।



একে একে মানুষ জন নিজেকে দেখে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষ যেকোন সময় আসে। বড় বড় মানুষ আসে রাতের আধারে; পাছে মনের কালিমা তাদের কারও চোখে পড়ে। সাংবাদিক আর গণমাধ্যমের লোকেরাও কম না। তাদের কেউ কেউ দরিদ্র ভিক্ষুক বা ভবঘুরের বেশে আয়নায় আশেপাশে রাত কাটাতে শুরু করেছে।



দু’একজন সাংবাদিক রাতেও আসে এমনটা ভাবতে পারেনি শিল্পী মাহমুদ মোর্শেদ। সে ভাবেনি যে এখানে রাতভর থাকার চিন্তা কোন সাংবাদিক করতে পারে। আজ রাতে সে আয়নার সামনে দাড়িয়ে থমকে যাচ্ছে। তাকে লাগছে কোন দস্যুর মতো। তার মনে পড়ল, কাল রাতে সে তার বউকে আচ্ছা রকম লাঠিপেটা করেছে। কেউ দেখলো নাতো!



পিছনে ঘুরতে সে তার পরিচিত এক সাংবাদিককে দেখতে পেল। রীতিমতো আৎকে উঠল সে। নিজেকে সামলে নিলো আবার। হাসতে হাসতে বলল মাহমুদ, এই একটু দেখতে আসলাম! সে তার পকেট থেকে হাজার খানেক টাকা বের করল। কথায় কথায় বলল, ভাবী বাচ্চারা সব ভালো তো! কতদিন দেখা নেই। গত বছর ব্যাংককে দেখা হলো। তারা এটা সেটা কথা বলতে শুরু করল। মাহমুদ ভাই, তাহলে আসি? আরে বলছেন কি? মনে মাহমুদের ভয়- না জানি কাল আবার পত্রিকায় কি লিখে দেয়। সে হাতের টাকাটা সাংবাদিকের পকেটে গুজে দিয়ে বলল, আপনার বাচ্চাদের দেখতে যাব কতদিন থেকে ভাবছি! তা ওদের জন্য কিছু কিনে নিয়ে যাবেন। আর আসেন একদিন বাসায়-আমাদের সাথে কিছু সময় কাটান!



সাংবাদিক অমিয় পুরো ঘটনাটা দেখল। পত্রিকায় সে আয়নাটা নিয়ে নতুন একটা ধারাবাহিক কলাম লেখা শুরু করেছে। কলামটির নাম ‘মনের ছায়া’। ‘মনের ছায়া’র আগামী সংখ্যার উপাদান সে পেয়ে গেল। শিরোনাম সে ঠিক করল ‘দস্যু মাহমুদ মোর্শেদ এবং একজন তথাকথিত সাংবাদিক!’



কয়েক মাস হলো মরিয়ম যাদুর আয়নায় নিজেকে দেখেছিল। আয়নায় আপনাকে দেখার সেই স্মৃতি মনে তার এখনও অমলিন। সেই অনিন্দ্য অপরূপ রূপ লাবন্য এখনও তাকে বিভোর করে। সে শায়ারকে নিউমার্কেটে যাবার কথা বলতে শায়ার রাজি হয়ে গেল। গত বার সকালে বের হলেও এবার তারা সেটা পারলনা। শায়ারের নিউমার্কেটে এসে খাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও মরিয়মের পীড়াপিড়িতে বাড়ি থেকে খেয়ে বের হলো তারা। ‘এমনি এমনি টাকাগুলান নষ্ট। এভাবে টাকা নষ্ট মরিয়মের মোটেও পছন্দ নয়। বিশ টাকার জিনিস বাইরে দাম নেয় সত্তর আশি টাকা। যাত্তোসব!’



এখনও সন্ধ্যা শুরু হয়নি। শেষ বিকেলের অলো ছড়িয়ে পড়েছে সমস্ত এলাকা জুড়ে। নিউমার্কেট ঘিরে মানুষের ভিড় বাড়ছে ধীরে। আয়নাটা এখন ভিড়ে একাকার। মানুষেরা যেন ছোট কোন হাড়িতে রান্নাকরা ভাত, উপচে পড়ছে আয়নার চারধারে। মরিময় খবরের কাগজ পড়েনা তেমন। শায়ার মাঝে মাঝে পড়লেও অমিয় রহমানের কোন কলাম সে পড়েনি! মরিয়ম কল্পনা করে নিয়েছিল যে আয়নাটা হয়ত এখন আর নেই। আয়নাটায় নিজের চেহারা আরেকবার দেখার দুরাশা কেবল সে করেছিল।



বাস্তকে এখানে এসে এখন সে দেখতে পাচ্ছে যে আয়নাটা আর আগের জায়গায় নেই। স্বামীর সামনে নিজেকে ছোট করতে পারবেনা তাই জিজ্ঞেসও করছেনা আয়নাটার ব্যাপারে। তবু কুকের ভিতর দুরাশাটা তাকে তাড়াচ্ছে আর তাড়াচ্ছে। সে দুর দুর দুরাশা নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে ভিড়ে ছয়লাব জায়গাটায় এসে পড়েছে। এখনে লম্বা লাইন দেখা যাচ্ছে। সামনে তার সুবিশাল সুরক্ষিত আয়নাটা ।



লাইনে তরুন অল্পবয়সীরা বেশি। এদের মনে কোন দ্বিধা নেই। বয়স্কদের মতো সমাজের চোখকে এরা ভয় পায়না। ওপর ওয়ালা, বউ বা আর কেউ কি ভাববে তা নিয়ে এদের পরোয়া নেই। এরা নিজেদের চেহারা আয়নায় দেখছে আর এদের বন্ধুবান্ধবরা হাসিতে লুটোপুটি খাচ্ছে। মনে মরিয়মের সংকোচ, লাইনে দাঁড়াব না দাঁড়াবনা? দাড়াব না দাড়াবনা? মরিয়মের মনের কথা শায়ার বুঝেছে না বোঝেনি মরিয়মে সে কথা ভাবার আগেই শায়ার তাকে নিয়ে লাইনে দাড়িয়ে গেল। আস। আসছি যখন দেইখা যাই- সেদিন তোমারে যা লাগতাছিল না? ওরা লাইনে দাড়িয়ে পড়ল।



মনে মরিয়মের দ্বিধা, এত মানুষের সামনে! একটু লজ্জাও লাগছে তার। চলো, যাইগা। এত মানুষের সামনে! তার স্বামীকে বলল সে। সেই বৃষ্টির রাতের কথা ভোলেনি শায়ার। তার বৌর মনে যে আনন্দের খই ফুটেছিল তা তার খুব ভালো লেগেছিল। বৌকে সে একই আনন্দ আবার দিতে চায়।



তাদের ঠিক সামনে এক জোড়া প্রেমিক প্রেমিকা।মেয়েটা আয়নার সামনে দাড়াতে ফুটে উঠল খুব সাজগোজ করা একজন মডেলের মুখ। ছেলেটার মনে চিন্তা এর ব্যাখ্যা কি? তাকে তো কখনোই খুব একটা সাজগোজ করতে দেখিনি। নাকি সে আমাকে ধোকা দিচ্ছে? নাকি আরও কয়েকজন প্রেমিক আছে তার? মনে তার বিভ্রান্তি। নিজের চেহারাও ভালো করে দেখা হলোনা তার, সে মেয়েটার পিছনে হাটা শুরু করল।



মরিয়মের অন্তর ধুক ধুক। সবার সামনে না জানি নিজেকে তার কেমন দেখা যায়। সেবার তো অন্ধকারে দেখছিলাম, তার মনে হলো। পিছনে আরও অনেক লোক লাইনে দাড়িয়ে। তাদের মধ্যে একজন উঁচু গলায় বলল, কি আপা, সামনে যান! আমরা সব লাইনে দাড়ায় আছি তো।



মরিয়ম কয়েক কদম হেঁটে আয়নার সামনে এসে দাড়াল। চারদিকে নীরবতা। তার পিছনে থাকা লোকেরা তার কমদামী শাড়ী দেখতে পেল। সামনে আর আশ পাশের লোকেরা দেখল এক অনিন্দ্য কান্তি তরুনীর স্বর্গীয় রূপ সুধা। মরিয়ম ও আচ্ছন্ন কিছুক্ষণ এই সৌন্দর্য্যরে মায়ায়। সহসা তার সম্বিৎ ফিরে এল। মুখ কাপড়ে ঢেকে সে দ্রুত হাঁটতে শুরু করল। শায়ার নিজেকে আর দেখল না আয়নায়। সে তার বৌর পিছু নিলো। মরিয়ম! মরিয়ম! মরিয়মের কোন দিকে খেয়াল নেই। সে রাস্তায় দাড়িয়ে থাকা বাসগুলোর একটাতে উঠে পড়ল।



আশপাশের লোকেরা সব হতভম্ব। এমন রূপলাবণ্য তারা এর আগে কখনো দেখেনি। দু’একজন সাংবাদিকও আছে এখানে তারা ফটো তোলবার অবসর পায়নি। এক কিশোর ছুটেছিল মরিয়মের পিছু, কিন্তু ততক্ষণে তাকে বহনকারী বাস বহুদূরে চলে গেছে। চারদিকের সবার মনে বিম্ময়। অনেকে হুরপরীর সাথে তাকে তুলনা করছে। সাংবাদিক একজন ভেবে নিয়েছে লেখার শিরোনাম ‘ নিউমার্কেটের অপরূপ রূপ লাবণ্যময়ী’।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.