![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আজ নিজের বৌর পিছু নিতে হলো শায়ারের। এগাড়ি সে-গাড়ি ঘুরে সে দেখল বৌ তার দাড়িয়ে আছে বোটানিক্যাল গার্ডেনের সামনে। নিজের স্বামীকে দেখতে পেয়ে সে টুক করে উদ্যানের ভিতরে ঢুকে পড়ল। মাঝে মাঝে তারা দুজন উদ্যানের এক কোনায় একটা পলাশ গাছের নিচে গিয়ে বসে। আজও সে-পথে গেল সে। মরিয়ম অজানা গাড়িতে উঠে পড়ায় শায়ার ঘাবড়ে গিয়েছিল। আশঙ্কা ছিল তার, আমার ওপর রাগ- অভিমান করল না তো!
মরিয়ম কে এখন উদ্যানের সামনে দেখতে পেয়ে সে যেন প্রাণ ফিরে পেল। এতক্ষণ যেন নিজের অচেতন দেহটাকে বহন করে এত দূর এনেছে সে! মরিয়মকে দেখতে পেয়ে যেন সে চেতনা ফিরে পেল। উদ্যানের ভিতরে সে ঢুকে পড়ল এবার, বাইরে থেকে কিনে নিলো গোটা কয় লটকন।
পলাশ আর শিমুলের গাছগুলো সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে এখানে। বসন্তের শেষে আজ খুব বেশি ফুল আর টিকে নেই। তবুও দু’চারটা পলাশ ও শিমুল দুলছে গাছে। কয়েকটা তাদের ফুল-জীবন পূর্ণ করে ঝরে পড়েছে মাটিতে। এর পাশে মরিয়মকে দেখতে পাচ্ছে শায়ার। সে সোজা এগিয়ে গিয়ে বসল তার পাশে। দু’জনের ভিতর কোন শূন্য জায়গা নেই। রাগ-অভিমান অনুতাপ বা দুঃখ কোন কিছু নেই। এভাবে চইলা আসলা যে? শায়ার বলল, আমি তো ভয়ে শেষ। কোথায় গেলা, কোন গাড়িতেই বা উঠলা।
নিজেরে বাঁচানোর জন্য লাফ দিয়া গাড়িতে উঠছি, মরিয়ম বলল। কথাটা শায়ার বোঝেনি। শায়ারের না- বোঝাটা বুঝল মরিয়ম। সে বলতে লাগল, আমি নিজেই ভয় পাইছি এমন সুন্দর চেহারা দেইখা। আরকটু থাকলে মনেকর মানুষ পিছু নিত। একটা কেলেঙ্কারি! শায়ার হাসল, কেলেঙ্কারি কি? তোমার ছবি খবরের কাগজে ছাপত। সাংবাদিকরা তোমার ইন্টারভু নিতো। কিছু টাকা পয়সা আয় হইত তোমার। তুমি কত কষ্ট কর টাকা জমানোর লিগা!
আমি টাকা জমাই যেন কার কাছে হাত পাতা না লাগে। তুমি আমারে কৃপণ ভাব কিন্তু আমি কৃপণ না, আমি হিসাবী। এই ধর তোমার একটা পোলা মাইয়া হইলে টাকা লাগব না ? আর তুমি যে টাকার কথা কইতেচ এই টাকায় অ-সুখ। মানুষ টানা টানি করবো। টাকা হয়ত হইব কিন্তু সুখটা যাইব। এইভাবে আমরা অনেক সুখে আছি। আমার অনেক টাকা চাই না, আমরা যেমন সুখে আছি এমনিভাবে যেন জীবন পার করতে পারি!
শায়ার অবাক হচ্ছে তার বৌর কথায়। তার মরিয়মের বুঝ যে এত ভালো তা সে এতদিন বুঝতে পারেনি। টাকার ওপর লোভ নেই তার বৌর। লোভ লালসা নেই বইলাই মনে হয় আয়নায় এত সুন্দর লাগতে ছিল! শায়ারের মনে হয়। বৌকে সে সে-কথা বলল না। বসন্তের শেষ কোকিলগুলোর কোন একটা ডাকল মধুর স্বরে। একটা বৌ-কথাকও পাখি উড়ে গেল উদ্যানের মাঝ দিয়ে। কাছের কোন মসজিদ থেকে বিশ্বাসীদের জন্য ডাক এলো নামাজের। মরিয়ম শায়ারের হাতটা তার হাতে তুলে নিলো। বলল, তুমি বাপ হইবা।
মনার মনে আফসোস, এমন সুন্দর মানুষটারে দেখতে পারলাম না ! এই পৃথিবীতে মরিয়মের মতো সুন্দর মানুষ যে আছে সেটা জেনে মনার আনন্দ হচ্ছিল। কিন্তু সবার কাছে সব কথা শুনে এখন দুঃখ হচ্ছে তার কত চোর বাটপার আর বান্দররে দেখলাম আর শালা, পরীর মতো মানুষটারে দেখতে পালাম না! রাগ হলো তার মালিকের ওপর। এক লোভী বেটি, আর তার জন্য পাঠালো আমার গুলশান। মালিকের বউ একদিন বোরখা পরে চুরি করে তার চেহারা দেখতে এসেছিল আয়নায়। ঘটনাটা শুধু মনা জানত। মনাই এনেছিল তাকে সাথে করে। আয়নায় তার চেহারা দেখে মনা তো অবাক। আয়নায় দেখা গেল তার জিহবা এক হাত লম্বা হয়ে মুখ থেকে ঝুলে পড়েছে পেটে। মহিলাও শিউরে উঠেছিল তা দেখে। কোনরকম সে মনাকে বলেছিল, কাউকে বলিস না।
পরে মনা তার মালিকের বউকে খেয়াল করতে শুরু করেছে। সে দেখতে পেল, যে দোকানে সে যায় সেখান থেকেই চুরি করে। মনা তো তাজুব। এ কি কাজ? এত বড় লোকের বউ, এত বড় লোকের মাইয়া - আর কিনা এত লোভ! আয়নাটাকে তার বোঝবার ইচ্ছা তার পর থেকে আরও বেড়ে গেছে। এখন সে প্রতিদিন কয়েকটা খবরের কাগজ পড়ে। খুঁজে খুঁজে দেখে আয়নাটার ওপর কেউ কিছু লিখল কিনা। আয়নাটার ওপর লেখা যেকোন কথা বা মন্তব্য সে মন দিয়ে পড়ে। মরিয়মের নাম সে না জানলেও তার আফসোসের শেষ নেই। সে পত্রিকায় প্রকাশিত নিউমার্কেটের অপরূপ রূপ লাবন্যময়ী’ লেখাটা মন দিয়ে পড়েছে। লেখাটা তার এত ভালো লেগেছে যে সে পত্রিকার অংশটুকু যতœ করে কেটে তার জামা কাপড়ের ছোট্ট পুটুলিটার মধ্যে রেখে দিয়েছে।
লেখাটা আরও অনেকে পড়েছে। যারা সেদিন নিউমার্কেটে আয়নার লাইনে ছিলনা তাদের আফসোস হলো, মানুষটাকে যদি দেখতে পারতাম! আর যারা ছিলো তারা ভাবছে, মানুষটার আয়নার চেহারাটা দেখলাম আসল চেহারাটা তো দেখা হলোনা। আয়নায় দেখা অপ্সরীর কাহিনী ছড়িয়ে পড়েছে দেশ ময়। তার প্রতি মানুষের কৌতূহলের যেন শেষ নেই! খবরের কাগজে এবার বের হলো বিজ্ঞাপন। বিজ্ঞাপনের শিরোনাম হলো ’হে সুন্দরীতমা! আপনাকে বলছি।’ বিজ্ঞাপনটার মধ্যে চমৎকারভাবে বন্দনা করা হয়েছে এক সুন্দরী নারীরূপের। সেখানে আরো বলা হয়েছে যে সুন্দরীতমা যদি নিজে এসে আয়নার সামনে দেখা দেন তবে পাবেন মূল্যবান পুরষ্কার। এছাড়া যে কেউ তার সম্পর্কে কোন তথ্য দিতে পারলে তার জন্যও আছে পুরষ্কার। সেদিন আয়নায় সে-রূপ যারা দেখেছিলেন তাদের কারও কারও আফসোস হচ্ছে, এক লাফে যদি গাড়িটাতে উঠে পড়তাম! নাহ, তাহলেও কি চিনতে পারতাম? সবাই আয়নাটার চোখে মরিয়ম কেমন তাই দেখেছিল, মানব চোখে তার চেহারা কেউ খেয়াল করেনি সেদিন। কেউ ভাবেওনি এমন অপূর্ব চেহারার মানুষকে দেখতে পাবে তারা!
খবরের কাগজের বিজ্ঞাপন চলল কয়েক সপ্তাহ। শায়ারেরও চোখে পড়েছে খবরটা। আজ সে খবরের কাগজটা তাদের বাসায় নিয়ে এল। খবরটা পড়ে শিউরে উঠল মরিয়ম। ভাগ্যিস, গাড়িতে উঠছিলাম এক লাফে! স্বস্তি খুঁজে পেল সে। শায়ার বউকে রাগিয়ে দিতে চায়ল। মূল্যবান পুরষ্কার কিন্তু, হ্যাঁ। যদি পাইতে চাও এখনও সময় আছে কিন্তু। মরিয়ম রাগল না, অভিমান করলনা। খবরের কাগজটা একপাশে সরিয়ে রাখল সে। ছোট্ট জানালার ফাঁক দিয়ে দেখা যাচ্ছে একখন্ড চলন্ত মেঘ। তার শাশুড়ি বা আর কেউ আশপাশে আছে কিনা তা দেখে নিলো সে। এবার সে শায়ারকে বুকে জড়িয়ে ধরল। বলল, তুমিই আমার পুরষ্কার, তুমিই আমার অনন্দ! আর পুরষ্কার লাগবনা আমার।
আর কয়েক মাস পর সিটি কর্পোরেসনের নির্বাচন। মেয়র আর কমিশনার পদপ্রার্থীদের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। মেয়র পদপ্রার্থীরা ইতোমধ্যে পরিকল্পনা করে ফেলেছেন। মনে তাদের তবু দুঃচিন্তা। জিততে পারব তো? কিভাবে কি করলে জেতা যাবে? তিনজন তাদের প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছেন। এদের মধ্যে অনেকের ধারনা, প্রতিদ্বন্দ্বীতা হবে ’হাসমত ভাই’ আর ’মফিজ ভাই’ এর মধ্যে। ’মফিজ ভাই’ যখন শুনলেন যে ’হাসমত ভাই’ খরগোশ প্রতীক নেবেন তখন তার মনে হলো, আমি নেব শেয়াল প্রতীক। শেয়াল খরগোশকে চিবিয়ে খায়। তার সেক্রেটারি একথা শুনে লাফ দিয়ে উঠল। বলছেন কি স্যার? শেয়াল প্রাণীটাকে তো মানুষ তেমন পছন্দ করেনা! শেয়াল তো মুরগী চুরি করে খাওয়ার ওস্তাদ। তাহলে নেবটা কি? কোন প্রতীক নিলে মানুষ খুশী হবে সেটা বল। সেক্রেটারি চটপট জবাব দিলো, আপনি কচ্ছপ প্রতীক নেন।
সেক্রেটারির কথায় মফিজ রেগে আগুন। বেয়াক্কল’! খরগোশের সাথে কচ্ছপ কোনদিন দৌড়ে পারে? স্যার! মজাটাতো এখানে, সেক্রেটারি বলল, ঈশপের গল্পে আছে না খরগোশকে হারিয়ে কচ্ছপ দৌড়ে জিতে গেল! আর তাছাড়া কচ্ছপ একটা শান্ত নিরীহ প্রাণী।
রাখ তোর ঈশপ, মফিজ বলল, এর নাম তো আগে কখনও শুনিনি। বেটাডা কেডা? বাড়ি কই এর? আর ওই বেকুফ একথা বলছে ক্যান? তার সেক্রেটারি তাকে বলল, স্যার বছ! ঈশপ একটা শিক্ষণীয় গল্প হিসাবে এটা বলেছে। তার আসল কথা হচ্ছে, যে পরিশ্রমী আর ধৈর্য্যশীল সে বিজয়ী হয়। অন্যদিকে পরিশ্রম না করলে মেধাবী মানুষের দ্বারাও ভালো কিছু অর্জন করা সম্ভব নয়। রাখ তোর চাপাবাজি! গর্জে ওঠে মফিজ। অবস্থা সুবিধার নয় দেখে সেক্রেটারি বলল, স্যার! একটু টয়লেট করে আসি। সে বাড়ির ভিতরে চলে গেল।
বাড়ির ভিতরে গিয়ে সে সোজা মফিজের স্ত্রীর কাছে হাজির। ভাবী আসসালামো ওয়ালাইকুম। আপনি এত ভালো যে স্যারের কাছে আসলে আপনার সাথে দেখা না করে থাকা যায় না। সেক্রেটারি বলল। আপনি আমায় বড় বোনের মতো। সেদিনও আপনার হাতের পায়েস খেলাম। আমার মুখে আপনার প্রশংসা শুনে আমার ওয়াইফ তো আপনাকে দেখার জন্য পাগল। ভাবী, স্যার বলছিলো যে সে শেয়াল মার্কা নিয়ে ভোটে দাড়াবে। আমি বললাম, ভাবী এটা পছন্দ করবেনা - একটু আসেন তো ভাবী।
মফিজের বৌকে নিয়ে সে সোজা ড্রয়ং রুমে চলে এসেছে। সেক্রেটারির কিছু বলা লাগলনা আর। মফিজের বৌ বলল এবার, তা কি মার্কা নিচ্ছ তুমি? মুখ বাকা করে সে বলে গেল, ওইসব শিয়াল ফিয়াল বাদ দাও। লেখাপড়া তো কিছু করছিলা ছোট বেলায়। রুচি টুচি কিছু নেই, না কি? নেবেন উনি শেয়াল মার্কা! ভাবী আমি বলছিলাম কি কচ্ছপ মার্কা হলে ভালো হয়, সেক্রেটারি বলল। দেখেছ এই ছেলেটার বুদ্ধি আদব! কত বড় বংশের ছেলে! ভাবী কচ্ছপ এই জন্যে যে সে ধীর স্থির প্রাণী। পরিশ্রম করে সে বিজয় ছিনিয়ে নেবে। মফিজের বৌ একটা ধমক কষল তার স্বামীকে, ওসব উল্টো পাল্টা বাদ দাও। মফিজ বিয়ের আগে ছিল এক ধরনের ভবঘুরে। বিয়ের পর শ্বশুর তার থাকা খাওয়ার বন্দোবস্ত করে দেয়। ঘর সাজানো আসবাবপত্র গোছানো সব তিনিই করে দেন। এমনকি মফিজ যে সোফাটায় বসে সেটিও এসেছে শ্বশুর বাড়ি থেকে। বউ এর কথায় অবাধ্য হওয়ার শক্তি তার একদম নেই। অগত্যা সে সুবোধ বালক এখন। মিনমিন করে বলে উঠল, তাই ভালো। আমিও অবশ্য কচ্ছপের কথা বলছিলাম। একটু ভেবে নিচ্ছিলাম আর কি! তা তুমি যখন বলছ, কচ্ছপই আমার র্মাকা হবে।
প্রতীক বা মার্কা নিয়ে হাসমতের মনে কোন দ্বিধা নেই। মার্কা হলো মার্কা, সে মনে করে, তা সে খরগোশ হোক কি খেকশিয়াল। মাথা ব্যথা তার নির্বাচনী প্রচারণা নিয়ে। কিভাবে প্রচারণা চালালে ভালো ভোট পড়বে তার মার্কায় এটাই তার চিন্তা। সে এজন্য একটা কমিটি তৈরি করে ফেলেছে। কমিটির প্রধানকে সে বলল, আচ্ছা ওই যাদুর আয়না নিয়ে একটা প্রচারণা চালানো যায় না? মনে করো ওইটা তো এখন হট কেক। পেপার পত্রিকা টিভি চ্যানেল সবাই ওইটা নিয়ে দেখাইতেছে।
কমিটি প্রধান উত্তেজিত হয়ে উঠল এ-কথায়। ক্ষেপছেন নাকি আপনি? নিউমার্কেট থিকা যে চাঁদা নিছেন ভোটের লিগা তা ধরা খাইয়া যাইবেন তো ! আয়নার সামনে খাড়া হইলেই আপনার সব গোমর ফাঁস! কমিটির এক অল্পবয়সী তরুন বলে উঠল, বছ উপায় কিন্তু একটা আছে! দাড়াইবেন আপনি আয়নার সামনে কিন্তু আয়নার মধ্যের ছবিটা হইব অন্য লোকের!
হাসমত ধমক দিয়ে থামিয়ে দিলো তাকে। এই বিচ্ছু, তুই থাম। মফিজ্জা তো আরো খারাপ লোক। আমি অনেক লোকের থিকা ভালো। চল আজ রাতে আয়নায় দেখুম। কমিটি প্রধান হায় হায় করে উঠল, বস! বলেন কি? কেউ দেইখা ফেললে? হাসমত হেসে উঠল, তাইলে তোরা আছোছ ক্যা? কেউ দেখতে আইলে ওগুলারে তোরা সাইজ করবি। আর যামু তো রাত বারোটার পর।
©somewhere in net ltd.