![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
হাসমত যে রাতের আঁধারে তার নেমকহারাম আত্মাটাকে দেখে এসেছে এ খবর মফিজের জানা নেই। কিন্তু সেই একই চিন্তা তার মাথায়ও ঘুরপাক খাচ্ছে। এক গোয়ালের গরু বলে কথা! জনতার দাবীর কাছে মাথা নোয়ানোর বিকল্প নেই। মফিজ আর কোন উপায় দেখতে পাচ্ছে না। তার ধারনা, আয়নার সামনে দাড়ানোই লাগবে। সে আগে একবার গিয়ে দেখতে চায় যাতে করে তাকে ঘাবড়াতে না হয়! এছাড়া উল্টোপাল্টা বা এদিক সে দিক কিছু করতে হলে আয়নাটা একটু দেখে রাখা দরকার।
আজ শেষ রাতে সে তার সেক্রেটারি সহ হাজির। এখন সে দাড়িয়ে নিউমার্কেটে। কেউ যেন তাকে চিনতে না পারে এজন্য সে মুখোশ পরে নিয়েছে। হেটে সে এগিয়ে আসছে আয়নার কাছে। আয়নার সামনে দাড়িয়ে ভয়ে শিউরে উঠল সে। চিৎকার করতে ইচ্ছে হচ্ছে তার। চোখ দুটো তার কুত কুতে কালো। শরীরটা জীর্ণ। সিগারেট সে দিনে গোটা ত্রিশ খায় - ‘কিন্তু তাই বলে’ মনে তার বিস্ময়, ‘আমি কি এত খারাপ’? চেহারাটা লাগছে তার পিশাচের মতো। মনটা তার খারাপ হয়ে গেল। কত মানুষের উপকারও তো সে করেছে! সেগুলা আয়নায় আইল না ক্যান? ধনী হবার লোভ তার আছে। ক্ষমতার যাদু দ-ও তার চাই। তাই বলে অন্যের সম্পদ হাতিয়ে নেয়ার চিন্তা কি সে করে? নিজের গোপন মনের মুখোমুখি দাড়িয়ে আজ সে বিব্রত। কিংকর্তব্য বিমূঢ়। তার থেকে বেশি হতাশ এই মুহুর্তে আর কেউ নয়।
তার সেক্রেটারি তাকে সান্ত¡না দিতে চাইছে। স্যার, এ কিছু না! অন্য সময় হলে সেক্রেটারিকে সে ব্যঙ্গ করত। রসিকতাও সে করে মাঝে মধ্যে। কিন্তু ব্যঙ্গ বা রসিকতা কোন কিছুতে মন লাগল না তার। নিজের সম্বন্ধে তার একটা উঁচু ধারনা ছিল। ‘পরোপকারী’ বলে তার যে একটা সুনাম আছে তাহলে সেটা কি মিথ্যে? নিজের মনে ঘোরতর ভাবনা তার। সে কিছুতে মনে করতে পারছে না যে দশ জনের ক্ষতি করে দু’জনের ভালো করেছে সে। যাই হোক, নিজের সম্পর্কে করা উঁচু ধারনাটা তার হোঁচট খেল। সেক্রেটারি তাকে ধরে নিউমার্কেটের বাইরে নিয়ে এল। গাড়ির ড্রাইভার মফিজের মুখোশ পরা মুখ দেখে অবাক। বিষয়টা তার কাছে অদ্ভুত বলে মনে হলো। সেক্রেটারি তাকে তুলে গাড়ির দরজা বন্ধ করে দিলো। স্যার, মুখোশটা খোলেন। আলো বাতাস পাবেন। আপনার ভালো লাগবে। মফিজ দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল, আর ভালো! মুখোশ খুলল সে। এখন বুকভরা হতাশা তার!
মনাকে নিয়ে খবর বের হয়েছে কয়েকাটা দৈনিক পত্রিকায়। খবরটা পড়ে অনেকে অবাক। অনেকে আবার বোঝার চেষ্টা করছে, ব্যাপারটা কি? মানুষের মনে সন্দেহ, ঘটনা অন্যখাতে প্রবাহিত করার প্লান নাতো! যে যাই ভাবুক জনমত এখনো আগের মতো অটুট আছে। যাদুর আয়নায় চেহারা দেখে তবে দেব ভোট।
ঘটনা যাই ঘটুক আসছে সপ্তাহে মানুষ মেয়র পদপ্রার্থীদের আয়নার সামনে দেখতে চায়। এ জন্য একটা ছুটির দিন পছন্দ তাদের। এতে ধনী দারিদ্র নারী পুরুষ নির্বিশেষে সবাই সরাসরি দেখার সুযোগ পাবে। শুধু মুখের চেহারা দেখে মানুষ চেনা যায়না। কেবল বাইরেটা দেখে গরু বাঘ বা মহিষ গাধা চেনা যায়। কিন্তু মানুষ? তার মনটা না জানলে তাকে জানাই হলোনা।
মেয়র পদপ্রার্থীরা রাজি এতে। হাসমত এক কথাতে রাজি। তবে তার শর্ত হলো যে সে আসবে সবার আগে এবং সেদিন সাধারণ জনগণ যাদুর আয়নায় নিজেদের দেখতে পারবেনা। পারবে, হাসমত বললেন, নেতাদের দেখা শেষ হলে পরে।
আজ সরকারি ছুটির দিন। আজ সকাল থেকে নিউমার্কেট লোকে লোকারণ্য। আয়নার কাছাকাছি এসে আসন নিয়েছেন কিছু সংখ্যক সচেতন নাগরিক। আয়নাটার সামনে তৈরি করা হয়েছে একটা গেট। গেটটি ফুল মালায় সজ্জিত।
‘হাসমত ভাই জিন্দাবান্দ’ ধ্বনি শোনা যাচ্ছে। তার দলবল সহ হাসমত ঢুকে পড়েছে মার্কেটের ভিতর। সাংবাদিকেরা দাড়িয়ে সব। নিরাপত্তারক্ষীরাও আছে। ‘হাসমত ভাই’ ফুলের মালা গলায় দিয়ে ধোপ দুরস্ত সাদা পাজামা পাঞ্জাবি পরে হাজির। আবারও ধ্বনিত হচ্ছে, হাসমত ভাই জিন্দাবাদ। হাসমত একপা দু’পা করে এগোলেন। ফুল মালায় সজ্জিত গেটটা পেরচ্ছেন তিনি। সবার হৃৎকম্পন বেড়ে গেছে। সাংবাদিকেরা সব প্রস্তুত ক্যামেরা নিয়ে। সচেতন নাগরিকেরা দিচ্ছেন তাদের সতর্ক দৃষ্টি। আয়নায় সামনে এখন হাসমত। আয়নায় ফুটে উঠল অবিকল আরেক হাসমত। সকালে বিউটি পার্লারে গিয়ে তিনি যে আরও সুন্দর হয়ে উঠেছেন সেই সৌন্দর্যও প্রতিফলিত এখন আয়নায়। চারদিক মথিত করে ধ্বনিত ও প্রতিধ্বনিত হচ্ছে -
হাসমত ভাই জিন্দাবাদ
মেহনতি মানুষ জিন্দাবাদ
নগরিকদের জ- অ- য়।
উপস্থিত জনতার মনে অনেক আশা ছিল যে তারা মেয়র পদ প্রার্থীদের মনের বক্রতা নিজ চোখে দেখবেন। তারা তা দেখতে পেলেন না। তবে যা দেখলেন তাও তারা বিশ্বাস করতে পারছেন না। হাসমত বিজয়ীর বেশে মুর্হুমুহু করতালি আর জিন্দাবাদ ধ্বনি দিয়ে পরিবেষ্টিত হয়ে নিউমার্কেট ত্যাগ করছেন। তার কর্মীরা, অনুসারীরা হাসমত ভাই আর গণতন্ত্রের জয়গান করছে। দূর থেকে দূরে ছড়িয়ে পড়ছে তাদের ধ্বনি-
জনগনের নেতা
হাসমত! হাসমত!
নগরের পিতা-
হবেই হবে
হাসমত! হাসমত!
যে সব মানুষ হাসমতের কারনে কখনো না কখনো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এ সকাল তাদের বিষাদের। জনকল্যাণের ইচ্ছায় ব্যাকুল যেসব মানুষ সাংবাদিক, শিল্পী, শিক্ষক, আরও অনেকে মন তাদের দুঃখে কালো। যাদুর আয়নাটা তাদের একজন ন্যায় পরায়ণ নেতার স্বপ্ন দেখিয়েছিল। এখন সব বেকার।
হতাশ সমাবেশ ভেঙে যেতে শুরু করেছে। সাংবাদিক অমিয় কী লিখবে ভেবে পাচ্ছে না। একপাশে একটা দোকানের গায়ে হেলান দিয়ে বসে পড়েছে সে। এইভাবে সে বসে থাকল আরও কিছুক্ষণ। এখন কেউ নেই আর। আয়নাটার প্রতি মানুষের অনুরাগ বা কৌতূহল যেন সব শেষ। একাকী বিধ্বস্ত অমিয় ঠাঁই দাঁড়িয়ে এখন আয়নার সামনে। পিছনে তার মনা। কখন যে সে এসে দাড়িয়েছে অমিয় খেয়াল করেনি। হঠাৎ খেয়াল হলো মনার, আয়নার অমিয়র অবিকল চেহারা ফুটে উঠেছে যেটা হওয়ার কথা নয়। আবার ভালো করে লক্ষ্য করল মনা। না, ঠিক আছে। আয়নাটা কাজ করছেনা। সে ভালোভাবে আয়নাটা দেখল। সেই সব এক। ফ্রেম। কাঠ। উচ্চতা। আয়তন। কিন্তু কাচটা আলাদা। সে উত্তেজিত হয়ে উঠল, এতো সে আয়না না। এইডা তো যে- কোন আয়না। এতো যাদুর আয়না না। আমাদের সে যাদুর আয়না কই? এতক্ষণে সম্বিৎ ফিরে পেয়েছে অমিয়। এটা যে যাদুর আয়না না তা বোঝার জন্য মনা আশপাশ থেকে কয়েকজনকে ডেকে আনল। সবাই দেখল যে যাদুর আয়নায় তাদের যেমন দেখাত তা একেবারে আলাদা। সবার মনে প্রশ্ন। সবার মনে বিস্ময়।
অমিয় জিজ্ঞেস করল মনাকে, তুই তো সব সময় নিউমার্কেটে থাকিস তুই জানিস কাজটা কে করল? আমি কেমনে কমু? মনা বলল। হাসমতকে কি তুই সন্দেহ করিস? হেই তো কাল বিকালে আসছিল। আমার লগে সুন্দর সুন্দর কথা কইল। যারা আমারে ধরতে আসছিলো তাগো শায়েস্তা করব কইছিলো। আমার পকেটে যাওনের সময় একশ টাকা গুইজা দিছিল। হেই এই কাম করছে বিশ্বাস হইতাছেনা। বুজবার পারতাছিনা। তয় যে হালারপুতই কামডা করুক সে হালা ভালো করে নাই। জনগণের লগে সে বিশ্বাসঘাতকতা করল।
--------------------------সমাপ্ত-------------------------------
০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:১৮
আবু সিদ বলেছেন: প্রিয় আহসান, দশটি পর্ব পড়েছেন জেনে খুব ভালো লাগছে। অনেক ধন্যবাদ। আপনাদের ভালোলাগা আমার অনুপ্রেরণা। শুভ কামনা। দেরিতে উত্তর দেয়ার জন্য দুঃখিত।
২| ২৮ শে জুন, ২০১৪ রাত ১২:৪১
এম. এ. হায়দার বলেছেন: টানা দশদিনে লিখে শেষ করলেন! ভাল লাগল খুব।
অবশ্যই পড়ব।
০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:১৯
আবু সিদ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। আসলে লেখাটা বেশ আগে তৈরি করা, ১০ দিন ধরে পোস্ট করা হয়েছে। এ বছর বই মেলায় শুদ্ধস্বর প্রকাশনী থেকে বইটা বের হয়েছিলো। শেষ দিন বইটা মেলায় এসেছিলো।
আপনাদের ভালোলাগা আমার অনুপ্রেরণা। শুভ কামনা। দেরিতে উত্তর দেয়ার জন্য দুঃখিত।
৩| ২৮ শে জুন, ২০১৪ রাত ১:১৬
তানি তানিশা বলেছেন: ভাল লাগলো পড়ে। ওয়েল ডান
০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:১৯
আবু সিদ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। আপনাদের ভালোলাগা আমার অনুপ্রেরণা। শুভ কামনা। দেরিতে উত্তর দেয়ার জন্য দুঃখিত।
৪| ২৯ শে জুন, ২০১৪ সকাল ১০:১৯
আবু সিদ বলেছেন: মতামতের জন্য ধন্যবাদ। আসলে লেখাটা বেশ আগে তৈরি করা, ১০ দিন ধরে পোস্ট করা হয়েছে। এ বছর বই মেলায় শুদ্ধস্বর প্রকাশনী থেকে বইটা বের হয়েছিলো। শেষ দিন বইটা মেলায় এসেছিলো।
©somewhere in net ltd.
১|
২৮ শে জুন, ২০১৪ রাত ১২:৪০
আহসানের ব্লগ বলেছেন: দশটা পর্বই পড়লাম ।
ওয়েল ডান