![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শিক্ষাকতা বা গবেষণা যাদের পেশা তাদের জন্য লেখা এবং তা প্রকাশ করা একটা নিয়মিত ব্যাপার। পেশাগত সফলতার জন্য তাদের তা করতে হয়। লেখাটা কেমন, লেখার মান কোন উচ্চতার বেশিরভাগ সময় তা নিয়ে ভাবা হয় না। শিক্ষক বা গবেষকেরা এ বিষয়ে তেমন চিন্তিত এমনও মনে হয় না। অনেকের কাছে ছাপার অক্ষরে নিজের নাম দেখতে পারাটাই মুখ্য। ফলে বর্তমান কালের সঞ্চয়ে রয়েছে অগনিত লিখিত বিষয়। অবশ্য এমন কিছু জার্নাল আছে যেগুলোর গুণগত মান সারা পৃথিবীতে প্রশংসিত।
একই ভাবে সাহিত্য জগতও ভারী হয়ে উঠেছে অগণিত গুণহীন লেখার ভারে। এর মধ্যে গুণহীন লেখকের গুণহীন লেখা যেমন আছে তেমনি আছে গুণী লেখকের গুণহীন লেখা। গুণহীন লেখকের গুণহীন লেখা মহাকাল গ্রাস করে ফেলে। বিপত্তি বাঁধে গুণী লেখকের গুণহীন লেখা নিয়ে। তাদের গুণের কারনে তারা একটা আদর্শে পরিণত হন। তাদের গুণহীন লেখা যুগ যুগ ধরে অনেক মানুষের অনেক সময়, মনোযোগ ও অর্থ নষ্ট করে। এ কারনে গুণী লেখকের গুণহীন লেখা গুণহীন লেখকের গুণহীন লেখার থেকে বেশি ক্ষতিকর।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, লেখকেরা নিজেদের লেখাকে কি বিচারকের দৃষ্টিতে দেখেন? অন্যভাবে বললে, প্রতিটি লেখা শুরুর সময় এবং তা শেষ করে লেখক কি নিজেকে এ প্রশ্ন করেন, কি কাজে আসবে এ লেখা? এ লেখার ভবিষ্যত কি? অথবা, আমরা কেনো লিখি? বা, কখন আমাদের লেখা অনুচিত? বাংলা ভাষার অত্যন্ত গুণী লেখক মানিক বন্দোপাধ্যায় ’কেন লিখি’র উত্তরে বলেছেন যে পাঠককে তার অনুভূতি পাইয়ে দিতে তিনি লেখেন। অর্থাৎ, লেখার বিষয়ে তার নিজস্ব দর্শন রয়েছে। তার নিজের ভাষায়, ’জীবনকে আমি যেভাবে ও যতভাবে উপলব্ধি করেছি অন্যকে তার ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ ভাগ দেয়ার তাগিদে আমি লিখি।’ তাঁর মতে, ’তাকে উপলব্ধি করাই। আমার লেখাকে অশ্রয় করে সে কতকগুলি মানসিক অভিজ্ঞতা লাভ করে - আমি লিখে পাইয়ে না দিলে বেচারী যা কোনদিন পেতো না।’ [ ’কেন লিখি’ - মানিক বন্দোপাধ্যায়]
তাঁর বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে তিনি মহত্তর লেখক। অর্থ উপার্জন বা নাম অর্জন তার লক্ষ্য নয়। এ কারনে বাঙলা ভাষাভাষী মানুষ তার কাছ পেয়েছেন অনন্য সাধারন অনেক লেখা।
মানিক বলেছেন তিনি কেন লেখেন। এখন আমরা যদি নিজেদের কাছে জানতে চাই, কেন সবার লেখা উচিত নয়? কখনই বা একজন লেখকেরও লেখা অনুচিত।
মাস্টার্সের থিসিস শেষ হলে আমার সুপারভাইজার বললেন, এটা পাবলিশ করেন। জার্নালে পাঠান। আমর মনে হলো, এ একটা যেন তেন কাজ। এ প্রকাশ করে কি হবে? এ লেখা কি মানুষের জ্ঞান ভা-ারে নতুন কিছু যোগ করবে? এর মাধ্যমে কি কারও কিছু উপকার হবে?
মন থেকে আমি সাড়া পেলাম না। আমার মতে, একটা লেখা প্রকাশিত হওয়া আর না-হওয়ার মধ্যে যদি কোনো পার্থক্য না থাকে তাহলে লেখাটা প্রকাশ না করাই ভালো। তা ছাড়া কোন একটা বিষয়ে যদি কেউ একজন আমার মতো বা আমার থেকে ভালো লিখে থাকেন তাহলে আমার লেখারই বা কি দরকার! ইংরেজি ১৯০৫ সালে সুইস পেটেন্ট অফিসের একজন কেরানী জার্মান ভাষায় ৩ টি প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। পরবর্তীতে এই প্রবন্ধ তিনটি বিশ্ববিখ্যাত আপেক্ষিকতার তত্ত্ব (Theory of Relativity) প্রতিষ্ঠিত করে। আর্বিভাব ঘটে এলবার্ট আইনস্টাইনের।
সন্দেহ নেই, এরকম লেখা প্রতি শতব্দীতে হাতে গোনা কয়েকটা মাত্র প্রকাশিত হয়। তাই বলে অন্যরা কি লিখবেন না? সব গবেষণালব্ধ লেখনীকে আপেক্ষিকতার তত্ত্বেও মতো হতে হবে এমন নয়। কিন্তু প্রতিটি প্রকাশিত লেখাই যদি ন্যূনতম একটা মানের হয় তাহলে তা স্বার্থক প্রকাশ।
সাহিত্যের প্রেক্ষাপটে বলা যায়, সব কবিতাকে যে পারস্য কবি হাফিজ বা ওমর খৈয়ামের কবিতার মতো হবে এমন কোন কথা নেই। ঔপন্যাসিকেরা যে সব কাফকার মতো ’মেটামরফোসিস’ অথবা আলবিয়ের কামুর মতো ’দ্য প্লেগ’ প্রকাশ করবেন এমনও নয়। শিল্পের মানদ-ে যে কোন প্রধান বা গুরুত্বপূর্ণ শিল্পী অবশ্যই এমন কাজ করবেন যা আগের আর সবার থেকে আলাদা। যেমন ভ্যান গগ যে ছবি আঁকলেন তা চিত্রকলার ইতিহাসে এক নতুন মাত্রা যোগ করে। শিল্পী সুলতান বা শাহাবুদ্দিনও তাদের চিত্রকর্মে এনেছেন নতুন মাত্রা। তাদের এসব কাজ শব্দ দিয়ে নির্মিত নয়, এসবের নির্মাণ ছবি দিয়ে। কিন্তু এসবও প্রকাশিত গদ্য বা কবিতার মতো।
সব লেখক কবি বা শিল্পী যে তাদের কাজে নিজস্ব মাত্রা যোগ করতে পারবেন তাও নয়। তবে তাদের হাত দিয়ে এক বা একাধিক তাৎপর্যপূর্ণ লেখা উঠে আসতে পারে। যেমন, কুসুমকুমারী দাশ। তাঁর লেখা, ’আমাদের দেশে কবে সেই ছেলে হবে/ কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে’ আজও আমাদের মনের কথা বলে। অনেকের অবশ্যই জানা আছে যে তিনি বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান কবি জীবনান্দ দাশের মা।
সৃজনশীলতা মানব মননের এক স্বতস্ফুর্ত বিকাশ। সৃজনশীল কাজ করার অধিকার তাই সব মানুষের রয়েছে। কোনভাবে একথা বলার অধিকার আমাদের নেই যে এই মানদ-ের না হলে লেখা বা শিল্পকর্ম বা অন্য ধরনের সৃজনশীল কাজ করা যাবে না। এছাড়া যথেষ্ট অনুশীলন না করে কিভাবে কেউ ভালো লেখক বা শিল্পী হতে পারেন? অনেক বছর ধরে হাজার হাজার শব্দ লিখে, নিজেকে বার বার সংশোধন ও পরিশুদ্ধ করেই কেবল কারও পক্ষে ভালো লেখক হওয়া সম্ভব। ভালো লেখক বা স্বার্থক শিল্পী হওয়া তাই এক নিরন্তর সাধনা। যে কেউ এ সাধনায় ব্রতী হতে পারেন। তবে প্রকাশের ক্ষেত্রে আমাদের আরও সতর্ক হওয়ার সুযোগ আছে। লেখা তৈরি আর তা প্রকাশের ক্ষেত্রে লেখকের বিবেকই তাই চূড়ান্ত নির্দেশ দাতা। তাদের ওপর সব কালের বেশির ভাগ মানুষের গভীর আস্থা।
২| ২৬ শে জুলাই, ২০১৪ সকাল ৯:৫০
রাগিব নিযাম বলেছেন: অতি মূল্যবান পোস্ট। ধন্যবাদ পোস্টের জন্য। +++++
৩| ২৬ শে জুলাই, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১৪
আবু সিদ বলেছেন: ধন্যবাদ ।
©somewhere in net ltd.
১|
২৫ শে জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৪:০১
আজমান আন্দালিব বলেছেন: মূল্যবান কথা।