![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শহরটা ছোটখাট, অপরিচ্ছন্ন ও অগোছালো। এখানে বিজলি বাতির নেই কোনো ঠিক। হাতে ঘড়ি আর আকাশে চাঁদ-তারা না থাকলে সে বুঝতে পারত না ঠিক বাজল কটা। সে তার ঘড়ির লাইট জ্বালিয়ে রাত দশটাকে অনুধাবন করল। গত (প্রায়) দুই ঘণ্টা সে চরকির মতো শহরটার ছেঁড়া-খোঁড়া রাস্তা ধরে হেঁটেছে সঠিত ঠিকানায় পৌঁছতে। কিন্তু সবই বেকার! অবেশেষে ইলেকট্রিসিটি ফিরে এল আর সে এক নিমিষে ভাঙা বাড়িটার নম্বর পড়ে ফেলল প্রায় এক নিঃশ্বাসে। তার কাঁধের ঝোলানো ব্যাগ থেকে বিরাটকায় বাক্সটা বের করে ঠিকানা মেলাতে মেলাতে বিদ্যুৎ আবার পালাল। ‘ওহ! তবু বাঁচা গেল! স্বস্তি অনুভব করল সে।
বাড়িটার সদর দরজা বলতে কিছু নেই। শোয়ার ঘরটার পাশে ছোট একটা বসবার ঘর, সে ঘরের সংলগ্ন একটা দুয়ার। বদ্ধ সেই দুয়ারের সামনে সামান্য একটুকরো ঘাসে ঘেরা জমি। সেই জমিটার ঘেরা দেয়ালের সঙ্গে একটা ছোটখাট লোহার দরজা তালা দিয়ে শক্ত করে আটকানো।
এদিক-ওদিক তাকিয়ে সে কাউকে পেল না। অগত্যা সে ডাকতে শুরু করল, কেউ কি আছেন?
কেউ কি আছেন এখানে?
আপনাদের নামে একটা পার্সেল।
কয়েক মিনিট সে নীরবে অপেক্ষা করল কিন্তু কারও কোনো সাড়া পাওয়া গেল না। এবার সে আগের চেয়ে অপেক্ষাকৃত উঁচু গলায় ডাকল,
কেউ কি আছেন?
কেউ কি আছেন বাড়িতে?
আমি কুরিয়ার সার্ভিসের লোক;
আপনাদের জন্য একটা পার্সেল।
চারধারের ঘুটঘুটে অন্ধকারের ভিতর তার মুখের ওপর সহসা একটা আলো এসে পড়ল। আলোটা নিভল। আলোটা আবার জ্বলল। ঘরের ভিতরকার মানুষটা তার হাতের টর্চ নাড়াতে নাড়াতে বলল, কি ব্যাপার? ‘আমি কুরিয়ার সার্ভিসের লোক; আহমাদ আশফাকের নামে কুরিয়ার, তিনি কি বাড়িতে নেই?’ লোকটা এক নিঃশ্বাসে বলল।
আপনি কি করে জানলেন যে এটা আহমাদ আশফাকের বাড়ি আর এত রাতেই বা কেন দরকার আপনার? বরং কাল সকালে আসবেন।
আমি কুরিয়ার সার্ভিসের লোক; অনেক দূর থেকে আসছি। কাল সকালে সেখানে আমার রিপোর্ট করতে হবে যে পার্সেলটা আমি পৌঁছে দিতে পেরেছি, লোকটা ব্যাকুল হয়ে বলল, আপনি যদি তার পক্ষ হয়ে এটা গ্রহণ করেন!
ব্যাটা বলে কি? ঘরের ভিতর থেকে লোকটা বিস্ময় প্রকাশ করল। কে জানে কী আছে ওর ভিতর! আর এছাড়া আপনাকে দিয়ে বিশ্বাস কি? আমি এই রাতের বেলা দরজা খুলি আর তুমি আমার গলা কেটে ঘরের জিনিসপত্তর সব নিয়ে ভেগে পড়ো আর কি! তা ভালোই বুদ্ধি! বলি ব্যবসাটা চলছে কবে থেকে?
আপনি আমায় ভুল বুঝছেন, লোকটা অনুনয় করল। যদি আহমাদ আশফাক এখানে না থাকেন তবে তার ঠিকানাটা বলে দেন, আমি বরং তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে দেখি।
টর্চটা নিভছে আর জ্বলছে... জ্বলছে আর নিভছে...। এখন সেটা একেবারে নিভে গেল। এবার অন্ধকারের মধ্যেই হতে থাকল তাদের কথোপকথন। আমি আপনার কাছে মিনতি করছি। অন্তত ঘরের দরজাটা খুলে বাইরে আসুন, আমার পরিচয়পত্র দেখে আমার সত্যতাটা একবার যাচাই করে দেখুন। আমি একজন সাধারণ মানুষ। আমার কাছে কোনো ছুরি বা পিস্তল নেই। সে তার কাঁধের ব্যাগটা উপুড় করে সবকিছু সেটার থেকে বের করে বলল, এবার টর্চটা জ্বালালে আপনি দেখতে পাবেন আসলেই আমি কোনো হন্তারক নই।
টর্চের আলো ফেলে লোকটা সবকিছু দেখল তবু নিশীথ রাতের এই আগন্তুককে সে বিশ্বাস করতে পারল না। সে বলল, মানুষকে দিয়ে বিশ্বাস কি? আমি আহমাদ আশফাকের ঠিকানাটা তোমায় বলি আর তুমি তোমার দলবল নিয়ে তাকে গিয়ে খুন করে এসো। বলি, ভালোই ফন্দি এঁটেছো দেখছি।
নিশীথের এই আগন্তুক আর কোনো আশা দেখতে পেল না। এখন সে কি করবে এটা ভাবতে ভাবতে তালাবদ্ধ দরজার সামনে থেকে তার জিনিসপত্র সব ব্যাগে ভরে সামনের রাস্তার দিকে এগোতে থাকল। তার এই নিস্পৃহতা ঘরের ভিতরকার লোকটার হৃদয়ে গিয়ে লাগল। আগন্তুককে তার অসহায় বলে মনে হলো। বুকের ভিতর তার এক ফালি দয়াও লাফিয়ে উঠল কিন্তু সে সাহস করতে পারল না। তবু সে ডাকল, একটু শোনেন? লোকটা পিছন ফিরে পাল্টা প্রশ্ন করল, কি ব্যাপার? অন্ধকারে আপনার অনেক অসুবিধা হবে, আপনি বরং এই টর্চটা নিয়ে যান। আগন্তুক আবার সেই বদ্ধ দরজার সামনে এসে দাঁড়াল। ঘরের দরজা খুলে লোকটা আস্তে জ্বলন্ত টর্চটা গড়িয়ে দিলো যাতে সেটা বাইরের বন্ধ দরজা পর্যন্ত পৌঁছায়। সঙ্গে সঙ্গেই আবার সে দরজা বন্ধ করল। জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আগন্তুকের টর্চ তোলার দৃশ্যটা সে দেখল।
আগন্তুক লোকটা তখন টর্চটা কুড়িয়ে নিয়েছে। জানালার ওপর থেকে অপর মানুষটা বলল, একান্ত প্রয়োজন ছাড়া ওটা জ্বালাবেন না। আপনি যেখানে বাস থেকে নেমেছেন সেখানে আহমাদ আশফাকের একটা দোকান আছে। দোকানটা প্রায় সারারাত খোলা থাকে! হয়তো সেখানে আপনি তার খবর পাবেন।
‘আপনি কি আসলেই তার কথা জানেন না?’ জানালার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটাকে সে বলল। আমি যা কিছু বলেছি তা কি যথেষ্ট নয়? জানা সত্যটা বলবার সাহস সে সঞ্চয় করতে পারল না।
‘ধন্যবাদ!’ আগন্তুক লোকটা যেমন অন্ধকারে এসেছিল তেমনি অন্ধকারে মিলিয়ে গেল। আগন্তুক তার উদ্দেশ্যের পথে এগিয়ে গেল। যেতে যেতে তার বিস্ময় জাগল; এমন অদ্ভুত শহর সে আগে কখনও দেখেনি। সে ভাবতেই পারে না যে, মানুষ মানুষকে সত্য কথাটা বলতে ভীত! তার অবাক লাগে, প্রত্যেক মানুষ তার নিজের কাজে ব্যস্ত। কে গলা কেটে রেখে যাবে সেই ভয়ে আহমাদ আশফাক কি না বাড়ি থাকে না। আর লোকটাই বা বলল কি? আমি তার গলা কেটে রেখে যাব। কিন্তু কেন? সে অসমতল ভাঙাচোরা পথে টর্চের ম্রিয়মাণ আলো ফেলে এগিয়ে যেতে থাকল।
বাসস্ট্যান্ডে এসে সে দেখল এখনও কমপক্ষে তিনটে দোকানে আলো জ্বলছে। সে দ্বিধার মধ্যে পড়ল। তার আর ইচ্ছা হলো না কোনো দোকানে গিয়ে খোঁজ করার। সে রাস্তার একপাশে ইট বাঁধানো অশ্বত্থ তলায় বসল। ভাবল, যে দোকানটা শেষ পর্যন্ত খোলা থাকবে আমি সেখানে যাব।
সেখানে কিছুক্ষণ না বসতে তার মাথায় অন্য চিন্তা ভর করল। তার মনে হলো, এখানে এভাবে বসে থাকতে দেখলে এই সন্দেহপ্রবণ মানুষগুলো আমাকে জেরার ফাঁদে ফেলতে পাওে, এমনকি মারধোর করাটাও অস্বাভাবিক নয়। সে হাঁটতে শুরু করল। একবার হেঁটে এদিকে আরবার ওদিকে। এভাবে হেঁটে হেঁটে সে ক্লান্ত না হওয়া পর্যন্ত সবগুলো দোকানে তাস, জুয়ার আসর, চিৎকার আর শিষ শুনতে পেল।
একে একে বাকি সব দোকানের বাতি নিভে গেল। মানুষেরা যে যার মতো দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ল। আগন্তুক এবার সম্ভাব্য সব বিপদের কথা ভেবে একমাত্র খোলা দোকানটায় এগিয়ে গেল। সেখানে তার আগমন যেন স্বর্গের ভিতর স্বয়ং শয়তানের দাঁড়িয়ে থাকা! গোটা পাঁচেক লোক সেখানে তাদের জুয়া তাস আর মদ চালিয়ে যচ্ছে। তাকে দেখে তারা পিট পিট চোখে তাকাল। বলল, তুমি আবার কে হে? কোন জাহান্নাম থেকে আসছো বলতে পারো? সে বলল, আহমাদ আশফাকের নামে একটা পার্সেল। আপনারা যদি সেটা রাখেন! ‘আহমাদ আশফাক’ উচ্চারিত হবার সঙ্গে সঙ্গে কয়েকজন ছুটে এসে তাকে পাকড়াও করল। ‘বল, কোন দলের লোক তুই?’ তার উত্তরের প্রতীক্ষা না করে তারা তার ব্যাগ ছিনিয়ে নিল। সেটা খুলে একে একে তারা বের করল একটা চিরুনি, তার পরিচয়পত্র, একটা বিদেশি পত্রিকা, একটা ছাতা এবং বিশাল সেই বাক্স যাতে ঠিকানাসমেত বড় বড় হরফে লেখা ‘আহমাদ আশফাক’।
এর মধ্যে তাগড়া এক লোক তার গলা চেপে ধরে দুই হাত পিছনে বেঁধে ফেলল। অন্য দুজন বাক্সটা ছিঁড়ে-ফেঁড়ে ওর ভিতর থেকে বের করে আনল অনাকাক্সিক্ষত বস্তু। বন্দি লোকটা চোখভরা বেদনা নিয়ে হায় হায় করে উঠল, কি করছেন? করছেন কি আপনারা? অন্যের জিনিস এভাবে আপনারা নষ্ট করছেন! সেই দুজনের একজনের হাত থেমে গেল। সে এক নিমেষে ছুটে এসে সামনে দাঁড়াল। তার অভিব্যক্তিতে ছড়িয়ে পড়ছে সন্ত্রাস! সে জোরে বন্দির মুখে আঘাত করল। এতক্ষণ হাত পিছনে বেঁধে যে লোকটা দাঁড়িয়ে ছিল তাকে সরিয়ে দিয়ে সে বলল, এত বড় সাহস, আমার কাজের ওপর কথা!
মোড়কের ভিতর থেকে এতক্ষণে বেরিয়ে এসেছে একটা মাটির পুতুল। পুতুলটা বেশ বলিষ্ঠ, সুন্দর। তাতে সাদা রঙ। পুতুল হয়ে থাকা মানুষটা অপরূপ আবেশে তার বাঁশিতে সুর তুলে চলেছে।
উদ্ধত সেই লোকটা বলল, ভেঙে ফ্যাল! দেখ কী আছে ওর মধ্যে। কুরিয়ার সার্ভিসের লোকটা অত্যন্ত কাতর হয়ে বলল, অনুগ্রহ করেন আপনারা। ওটা আমার জিনিস নয়। ওটা আহমাদ আশফাকের। তার বাড়িতে গিয়েছিলাম আমি, সেখানকার একজন আমাকে এখানে আসতে বললেন।
যে পুতুলটা ভাঙতে উদ্যোগী হয়েছিল সেও এবার থেমে গেল। উদ্ধত লোকটা তাতে ক্ষেপে উঠল, ওরে নাদানচণ্ডী! সে ত্বরিৎ এগিয়ে নিজের হাতেই পুতুলটা উঁচু করে মেঝের ওপর আছড়ে ফেলল। টুকরো টুকরো সাদারঙের বহখণ্ডিত পুতুল এদিক-সেদিক ছড়িয়ে পড়ল। তারা তার ভিতর কোনো বারুদ, মাদকদ্রব্য বা বহু মূল্যবান হীরক কী স্বর্ণ কিছুই পাওয়া গেল না। নিজের কাজকে সঠিক প্রমাণ করতে লোকটা বলল, মানুষকে দেখামাত্রই অবিশ্বাস করবি। যদি এর মধ্যে খারাপ কিছু থাকত!
হারাবার মতো আর কোনো আশা তার রইল না, তবু সেই উদ্ধত মানুষগুলো তার কথার সত্যতা যাচাই করতে তাকে আহমাদ আশফাকের বাড়িতে নিয়ে যেতে চায়। সে তাতে রাজি না হওয়ার কিছু দেখল না। শুধু বলল, তবু যার জিনিস তার কাছে বলা অন্তত দরকার। সে বহুখণ্ডিত পুতুল আর ঠিকানাসমেত ছিন্ন মোড়ক পরম যতেœ তার ব্যাগে ভরল। বলল, আপনারা আমায় অবিশ্বাস করছেন ঠিক আছে কিন্তু কোনো মানুষ, যদি সে আসলে মানুষ হয়, অন্যের জিনিস এভাবে নষ্ট করতে পারে না।
তারা যেন তার কথা শোনেনি এমনি ক্ষিপ্রতায় তার হাতের টর্চ কেড়ে নিল। বলল, বাহ, জিনিসটা তো বেশ! দোকানের চারজন লোক তাকে নিয়ে চলল আহমাদ আশফাকের বাড়ির দিকে। দোকানে থেকে যাওয়া বাকি দুজনের একজন বলল, আমারই কপাল খারাপ, আজকে আমি কেবল জিততে শুরু করলাম আর তখন এই অঘটন।
টর্চটা ওরা নিরবচ্ছিন্ন জ্বালিয়ে চলতে লাগল। আগন্তুক বলল, ওতে বেশি চার্জ নেই, উনি এটা কম জ্বালাবার পরামর্শ দিয়েছিলেন। ‘অই হারামি, বকবকানি থামা।’ একজন উত্তর দিলো। পাঁচজনের দলটা ছোট ছোট গলিপথে আগেকার থেকে অল্প সময়ে তর তর এগিয়ে চলল। টর্চটা নিভে গেল। উত্তেজিত একজন বলল, ফেলে দে। শালা ঠিকমতো ব্যাটারি নেই! কিন্তু যার হাতে টর্চ ছিল সে সেটা না ফেলে তার বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার ফন্দি আঁটছে। অপরদিকে যে বলছিল ফেলে দিতে সে সেটা তার হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে ছুড়ে মারল রাস্তার পাশের একটা দেয়ালে। ভাঙা কাচের শব্দ ধাতব অস্তিত্বের শব্দ বেজে উঠল বাতাসে। কিছুক্ষণ বাদে তারা পৌঁছল আহমাদ আশফাকের বাড়িতে।
ওদের হাকডাক শুরু হবার আগেই ঘরের ভিতর থেকে বেরিয়ে এল সেই লোকটা। ‘কি ব্যাপার?’ সে বলল। ‘এই কুত্তার বাচ্চা ফেরেবববাজ! আপনি চেনেন একে?’ তারা টর্চের কথাটা এড়িয়ে গেল। হ্যাঁ, আমি তাকে চিনি। তাকে এভাবে পাঁকড়াও রাখার কোনো দরকার নেই, তোমরা যাও।’ তাকে কেন পথিমধ্যে আরও ধোলাই দেয়া হলো না এই আফসোস করতে করতে সেই চারজন অন্ধকারে মিলিয়ে গেল। ঘরের ভিতরে এবার আমন্ত্রণ জানানো হলো কুরিয়ার সার্ভিসের লোকটাকে। কিন্তু সে গেল না। সে বলল, একটু আলোর ব্যবস্থা কি করা যায়? ঘরের ভিতর থেকে লোকটা তার দ্বিতীয় টর্চটা জ্বালিয়ে আঁতকে উঠল। লোকটার ঠোঁটের কোনায় জমাট রক্তের দাগ, নষ্ট হয়ে যাওয়া বাক্স মোড়ক আর বহুখণ্ডিত পুতুল। ‘আহা! আহা!’ তার বুকের ভিতর থেকে অনুতাপ আর সমবেদনা উথলে উঠল। ভালো করে দেখে বুঝল কোনোভাবে এসব আর জোড়া দেয়া সম্ভব নয়। তবু রাতের সেই আগন্তুক পরম মমতায় পুতুলের খণ্ডিত টুকরোগুলো কাগজের মোড়কে বেঁধে নিল। ঠিকানা লেখা বাক্সটা ঠিক করতে করতে সে দেখতে পেল, আহমাদ আশফাক এ/বি/সি, ১২৪। কিন্তু এটা তো এ/বি/১২৪! তাহলে এই ভুলটা ঘটল কি করে? নিজেই প্রশ্ন করল গৃহবাসী লোকটা। মনে তার ফিরে এল পুরনো সন্দেহ। কিন্তু তার সামনের লোকটা একেবারে যেন বিপর্যস্ত আশাহত। সে বলল, যদি এই ভুলটা না করতেন! আসলে আলোর অভাবে ঠিকমতো বুঝতে পারিনি, লোকটা বলল। এ/বি/সি ১২৪ হবে এখান থেকে আরও দুই কি.মি. পশ্চিমেÑ কিন্তু নামটাও মিলে গেছে, কী অদ্ভুত!
নিজেকে কোনোরকম গুছিয়ে রাতের এই আগন্তুক উঠে পড়ল। ‘আপনাকে বিরক্ত করার জন্য সত্যিই আমি দুঃখিত’, সে বলল। গৃহবাসী মানুষটা বিভ্রান্ত অনুভব করল। সে কী বলবে বুঝে ওঠার আগেই আগন্তুক লোকটা চলতে শুরু করল। পিছন থেকে সেও উঠল, এগিয়ে গেল তার পাশে। বলল, এই টর্চটা নিয়ে যান। অনুগ্রহ করে ‘ন’া বলবেন না। অনেক সময় আমরা নিজেরাও জানি না আমরা কী করি কিন্তু সেসব আমরা আমাদের অভ্যাসের বশে তা করি। কিছু মনে করবেন না, আমিই আহমাদ আশফাক। লোকটা ঘাড় ঘুড়িয়ে তাকাল আহমাদ আশফাকের দিকে। টর্চটা নিতে নিতে সে বলল, কেন? কিসের জন্যে এই অবিশ্বাস?
সে সামনের এলোমেলো পথ অন্ধকারে ঘুমন্ত পথ আর অজস্র মানুষের অপরিসীম অবিশ্বাসের পথ পাড়ি দিয়ে এগিয়ে যেতে থাকল আরেকজন আহমাদ আশফাকের খোঁজে।
©somewhere in net ltd.