নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আবু সিদ

আবু সিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

যে কারনে আমি আত্মহত্যা করছি - ১ম পর্ব

১৬ ই অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ১:০২

“বাতাসে মধু বয়, নদীর জলে মধু ক্ষরে। ওষধীরা মধুময় হোক। দিবা এবং উষা মধুময় হোক। পৃথিবীর ধূলি মধু। আমাদের পিতা আকাশ মধুময় হোক। বনস্পতি, সূর্য এবং গভীগুলি সকলই আমাদের নিকট মধুময় হোক”। [উপনিষদ;বৃহদারণ্যকঃ ২,৫,১১]

তিন তলার ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে ক্ষুধার তীব্রতা চরমভাবে উপলদ্ধি করি। দৃষ্টি আমার নিচের বাঁধানো রাস্তার ওপর। চারধারের শহরে বাতি জ্বলছে। থেমে এসেছে মানুষের কোলাহল। রাত যথেষ্ট হলো। ঘরের ভেতরকার ঘড়িটা বলে উঠল, এখন সময় রাত দুটো। ‘আমি হতাশ হব না’ ভাবলেও হতাশার একটা সুদীর্ঘ শরীর আমার পাকস্থলী আর হৃৎপিন্ড ভেদ করে পৃথিবীর বাতাসে এসে মিশল।

‘ঠিক সোজা লাফিয়ে পড়ব কালো রাস্তার বুকে। এমনভাবে পড়তে হবে যেন মাথাটা পড়ে একেবারে রাস্তার ওপর যেমন একটা পুতুলকে ছুড়ে দিলে তার মাথাটা গিয়ে ঠোকর খায় মাটিতে ঠিক সেইভাবে’, ভাবলাম আমি।

একটা অর্ধনগ্ন লোক আস্তাকুড় ঘেটে খেয়ে দেয়ে পুরনো হোটেলটার পাশে ঘুমিয়ে পড়েছে। ‘কিন্তু আর কোনদিন ঘুমনোর অবকাশ হবে না আমার। যেহেতু অন্য কেউ আমার শান্তির ব্যবস্থা করতে পারবে না তাই নিজের পথ আমার নিজেকেই দেখতে হবে। ঠিক চারটের সময় লাফিয়ে পড়ব এখান থেকে।’

আমি কল্পনায় দেখতে পাচ্ছি, অতঃপর সকাল হলে লাশ নিয়ে হুলুস্থল বেঁধে গেছে। সুর্যের আলোর নিচে মানুষের পোশাক-পরিচ্ছদ তাদের লজ্জা ঢাকতে পারছে না। আমার তিন রুমের এই ফ্ল্যাটটাতে আত্মীয় আর বন্ধুরা ঢুকে ঘেটে ঘুটে দেখছে কী আছে সেখানে। আমার কোন ব্যাঙ্ক একাউন্ট নেই, কাজেই তারা হতাশ হবে। কিন্তু জাফরিন নামে আমার যে বন্ধুটা ছবি বানাবার কাজে নেমেছে সে খুঁজে বের করবে আমার আঁকা সেই ছবিটা। সেখানে শয়তান এসে আদমের কাছে তার আত্মা দাবী করছে আর আদম কাঁপছে যুদ্ধ ভয়ে ভীত মরদের মতো। ছবিটার পাশে সে পাবে বাঁধানো একটা কবিতা। কবিতাটা বিশেষ প্রিয় আমার। জনৈক এক কবির কবিতা এটি। এটা পত্রিকার পাতা থেকে কেটে চমৎকার একটা কাঠের ফ্রেমে বাঁধিয়ে রেখেছি আমি। কবিতাটা মা-কে নিয়ে লেখা। এর প্রতি লাইনে ফুটে উঠেছে মায়ের প্রতি সন্তানের অকৃত্রিম অনুরাগ। বিশ্ব ভূবনে তাঁর অদ্বিতীয় অবস্থান। মা-র কথা মনে পড়লে কবিতাটি পড়ি আমি। জাফরিন হয়তো কবিতাটি দেখে অবাক হবে। কিন্তু আমি নিশ্চিত যে কবিতাটা মন কাড়বে তারও। হয়তো সে আপন মনে অনেকক্ষণ ধরে পড়বে সেটা:
মা তুমি কি ফিরলে এখন?

সন্ধ্যা হলো-
মা তুমি কি ফিরলে এখন
অফিস থেকে?
তোমার মোহন শাড়ির
গন্ধে ব্যাকুল দিনটি বুঝি
ফুরিয়ে এল সন্ধ্যা রাতে?
তোমার রঙীন গাড়িতে চেপে
আজও বুঝি ফিরলে তুমি
অনেক রাতে?
সেই সে কবে শিশু আমি
খেলে খেলে আপন মনে
ঘুমিয়ে গেছি ঘরের কোণে-
এসেছ তুমি হঠাৎ রাতে.....
একটা কেবল চুমু দিয়ে বলেছ আমায়,
বাবা আমার!
জীবন যে আজ কর্মভরা -
যেতে আমায় হবেই যে রে
অনেক দূরে..... অনেক দূরে....
কী জানি মা কত দূরে চেয়েছ যেতে!
দেখেছিলাম বছর বছর
যাচ্ছ তুমি সরে সরে আমার থেকে কোন সুদূরে!
মামণি আজ, পৌঁছলে কি চাঁদের চূড়োয়?
হাতছানি কি দেয় আজও
দূর গ্রহের স্বপ্নখানি?
তোমার ছোঁয়া চেয়ে চেয়ে
কাটল আমার শিশুবেলা,
কিশোর হয়ে দেখি আমি
মা বা বাবা কেউ নেই আর -
দুজনেরই নতুন জীবন ঘরকন্না।
আমার পরে আরো যেসব
বোন এলো আর ভাই এলো,
কেমন আছে তারা সবাই?
আজ বুঝিবা তারাও জাগে
মধ্যরাতে মামণিকে পাবে ব’লে?

সেদিন তোমায় দেখেছিলাম,
প্রিয় আমার মামণিগো,
পত্রিকার রঙীন পাতায়।
বুঝেছিলাম হয়েছ তুমি অনেক বড়,
গিয়েছ তুমি অনেক দূর .....
হয়ত গেছ সেই সুদূরে
যেখানে যেতে চেয়েছিলে!
জানিনা আজ মনে তোমার পড়ে কিনা
একটা অবোধ ছেলে তোমার
জন্মেছিল ভোর প্রভাতে
মধ্যবিত্ত সংসারে! সে আজ কোথায়?
আছে কিনা জগতপারে জান কি তা?
হয়ত আবার ভাব কী যে, ও ছিলই
আমার পথের কাঁটা।
যা কিছুই ভাব তুমি
ক্ষণে ক্ষণে মনের মাঝে
জেগে ওঠে তোমার ছবি;
ভাবি তখন একলা বসে,
নিছক কেবল যুক্তি দিয়ে যায়না মাপা
বিজ্ঞ আমার মামণিগো,
মানব-জনম আবেগে বাঁধা।


কবিতাটা পড়ে জাফরিন কি বুঝতে পারবে কোন অবেগ থেকে কবি লিখেছেন কবিতাটা? অথবা সে কি ধারনা করতে পারবে কোন আবেগের কারনে কবিতাটা এত প্রিয় আমার? কবিতাটিতে যে মা-র ছবি আঁকা হয়েছে সে যে আমারই মায়ের মতো তা কে জানবে?

হয়ত আমার প্রিয় কবিতাটা নজর কাড়বে না কারো। হয়ত সেটাকে আমার সমাধিতে দেয়ার কথাও ভাববেনা কেউ। সেটা হয়ত ময়লা আবর্জনার সাথে স্থান করে নেবে কোনো ডাস্টবিনে।
ছবিটা হয়ত জাফরিন নিয়ে রাখবে নিজের কাছে। হয়ত এই ছবিটার স্থান হবে ‘উপর্যুপরি’ ছবিটার পাশে।

‘উপর্যুপরি’ একটা প্রতীকী ছবি। আমার আঁকা এই ছবিটা উপহার হিসেবে তার বিয়েতে আমি তাকে দিই। ছবিটাতে বর্ণিত হয়েছে কীভাবে সমাজপতি-ধনপতি-ধর্মপতি-সেনাপতি এবং কবি-শিল্পী-বিজ্ঞানীরা সমাজকে ধর্ষণ করেন। এ প্রসঙ্গে কোন প্রমাণ পেশ না করে ‘মহান’ দু’এক জনের জীবন থেকে সামান্য বলতে পারি।

শুনেছিলাম যে ইউরোপীয় রেনেসাঁসের শ্রেষ্ঠ পুরুষ লিওনার্দো দ্য. ভিঞ্চি নাকি একজনের প্রতি শত্র“তা পোষণ করতেন। তিনি তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে একটা আপেল গাছ লাগান। গাছটিতে তিনি নিয়মিত পরিমিত পরিমানে বিষ প্রয়োগ করতে থাকেন। অতঃপর গাছটাতে আপেল ধরলে উদ্দিষ্ট মানুষকে একঝুড়ি আপেল পাঠান তিনি উপহার হিসাবে। আর তা খেয়ে নাকি লোকটার মৃত্যু হয়।

ইউরোপীয় সমাজ জগদীশচন্দ্র বসু-কে তো মাথা উঁচু করে দাঁড়াতেই দিলনা। অথচ ওদের ভাঁড়ারে তাঁর সমকক্ষ একজনও ছিলনা। আর অতি প্রতিভাবান জাতিগোষ্ঠীরা তো ‘এ্যটম বোমা’ তৈরি করে মানব জাতির অশেষ উপকার করে যাচ্ছে। থাক সেসব কথা। আমি বরং আমার হৃদয়ের পুরোটাই উৎসর্গ করব শয়তানের নামে, যেমন করতে চেয়েছিলেন শার্ল বোদলেয়ার তাঁর ‘শয়তান-স্তোত্র’ পদ্যে। আর সেই শয়তান, যে অদৃশ্য ঈশ্বরেরই মতো, তার কথা ভেবে আমি সাহসী হয়েছি এমন কাজে।

বছর দুই আগে আমার কলেজ জীবনের এক সহপাঠী আত্মহত্যা করে। তখন আমার মনে হয় যে জীবনের দুঃখ সহ্য করতে না পেরে যে কাপুরুষের মতো নিজেকে হত্যা করল। অথচ আজকের এই ম্লান রাতে আমি বাঁচবার মতো একটাও কারণ খুঁজে পাচ্ছি না। এমন কোন আগ্রহ নেই এমন কোন আকর্ষণ নেই যা আমাকে এই সংসারে বাঁধতে পারে।

বুক থেকে আরও একটি হতাশা বেরিয়ে এল আমার, ‘আহা! যদি তার সাথে মিলনে মিলনে মুখর করে তুলতাম দিন!’ তবুওতো একটা আকর্ষণ থাকত বাঁচার।

সুন্দরী সিনথিয়া আমাকে আবেগ ভরে চুম্বন করেছিল। আমারও ইচ্ছা হয়েছিল তাকে নিয়ে খেলতে, গড়াগড়ি দিতে আর তারপর কষ্টকর সুখে নিজেকে ভরিয়ে তুলতে। তার এক বছরের বাচ্চাটার কথা ভেবে সেসব পারিনি আমি। তার স্বামী আর সন্তানের প্রতি মনোযোগ কমে যাক এটা চাইনি আমি। তাহলে আমাদের সমাজের জীবন ব্যবস্থায় সে দুরাবস্থায় পড়ত।

সে যখন আমাকে একটা নগ্ন পত্রিকা দেখতে দিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে আমাকে পর্যবেক্ষণ করছিল তখন আমার মনে প্রার্থনা এসে দাড়াল, ক্ষমা কর প্রভু। আমাকে শক্তি দাও খোদা।’ আমি জানতাম এবং বিশ্বাস করতাম যে প্রার্থনার মতো শক্তি আর কোথাও নেই। আমি যদি আমার ভিতরকার শক্তিকে জাগিয়ে তুলতে পারি তবে কিছুতে আর হতাশা আসবে না। কিন্তু আমার প্রার্থনা শোনবার অবকাশ নেই স্রষ্টার। যেহেতু তিনি এবং জগতের আর কেউ আমার জীবনের অর্থহীনতা মুছে দিতে অপারগ তাই নিজের পথ আমার নিজেকে দেখতে হলো। এই মুহুর্তে সেসব তুচ্ছ আর অর্থহীন। বরং মনে পড়ছে সেই বুদ্ধিমানের কথা যে বলেছিল, প্রার্থনা + কর্ম= ফল। কর্ম=ফল। তাহলে, প্রার্থনা= শূন্য।

একজনও ঘনিষ্ঠ বন্ধু নেই আমার জনকয় সহপাঠী ছাড়া। আমি যেখানে কাজ করি সেখানেও কারও সাথে সখ্যতা হয়নি। পুরনো দিনের কলেজের ওই বন্ধু কজন কেবল মাঝে মাঝে আসে এই ফ্ল্যাটে। তাদের মধ্যে একজন, সরু মুখ প্রশস্ত কপাল, চোখ দুটো যেন জীবন্ত সর্বদা। প্রায়ই আমাকে বলে, ‘তোমাকে সমাজে মেশা শিখতে হবে। কথা বলা জানতে হবে।’ সে আমাকে বোঝায় যে সমাজে মেশার অর্থটা কী। আমি সেসব শুনতে চাইনা। আমি জানি ‘জোর যার মুল্লুক তার’ এছাড়া কোন সমাজ নেই। আর কথা বলতে জানার অর্থ যখন যেভাবে পার ধান্দা কর। অন্যকে ধোঁকা দিয়ে স্বার্থ সিদ্ধি কর। ‘আল্লা নিজেই গরীবগো দ্যাকতে পারেনা’, সে বলে।

আমি আমার মথিত হৃদয় নিয়ে দাঁড়াবার মতো একজন মানুষও পেলাম না। একজন নারীকেও আমি চিন্তার সমস্ত আবরণ খুলে দেখাতে পারিনি। আমার আবেগ! আমার জীবন! আমি যে প্রাইভেট ফার্মটাতে কাজ করি যেখানকার এক মেয়ের সাথে অবশ্য আমার ভাব হয়েছে কিন্তু তার ওপর ভরসা হয়নি। ‘হয়ত তাকে নিয়ে কাটাব জীবন’, এমন ভেবেছি আমি। এসব কথা মনে হতে মা-বাবার কথা মনে পড়ে আমার। আমার বাবা মিস্টার চৌধুরী তৃতীয় বারের মতো বিয়ে করেছেন। আমার মা লিভিংটুগেদারে ব্যস্ত আজকাল। আমি তাদের একমাত্র সন্তান।

‘যদি জন্মটা আমার না হতো।’ এই অতৃপ্তির সাথে মনে পড়ে আমার নানার কথা। তার সাথে থেকে এ-জীবন আমার অসার হয়ে গেল। সেই বুড়ো আমাকে প্লেটো আর বার্ট্রান্ড রাসেল পড়তে বলত। বলত উপনিষদের শ্লোকগুলো কতটা মূল্যবান। তারপর সে কোরানের নির্বাচিত কিছু অংশ পাঠ করে বলত, ‘এরপর পড়তে হবে রুশোর সোশাল কন্ট্রাক্ট।’

রুশোর কথা মনে হতে তার একটা ভ্রান্ত বক্তব্য আমার স্মৃতিতে ফিরে এল। কোন ব্যক্তিকে তার নিজের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য একাকী সংগ্রাম করতে হয়না।’ নিশ্চয় ওঁর মাথায় একটা পোকা ঘুরছিল তখন। তা না হলে জীবনের জন্যে একক সংগ্রামও যে কতটা প্রয়োজনীয় সেটা ভাববার অবকাশ পায়নি সে। যাক। রুশো চুলোয় যাক। সে বরং অন্যপথ দেখুক। আমি বুড়ো বদমাশটার ছেরাদ্দ করি। সে আমার প্রার্থনা করতে শিখিয়েছিল। বলেছিল, এটা একটা মহৎ কর্ম।

আসলে বুড়োর তখন ভীমরতি হয়েছিল। তা না হলে তার মেয়ে যে ন্যাক্কারজনক জীবন যাপন করছিল তাতে সে উদাসীন ছিল কেন? ওই বুড়োটাকেই আমার শয়তান বলে মনে হয়। বইয়ের স্তপের দিকে ঠেলে দিয়ে বাকি জগত থেকে সে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে আমায়।

ও আমার চড়–ই পাখিরা। নদীর জল আর রূপোলী পুঁটি মাছেরা! ওগো বেলী-চন্দ্রমল্লিকা-জুঁই! অনন্ত ভূবন ছিল ভুবন জুড়ে অথচ আমার জন্য এই নিবিড় নিষ্পৃহতা। ‘হায়!’ আরও একটা দীর্ঘশ্বাস আমার বুক থেকে জন্ম নিয়ে এই পৃথিবীতে এসে ম'রে গেল।

না, এভাবে আর কতক্ষণ! পেটের নাড়িভুড়ি যেন ছিড়ে গেছে! অবিরাম ক্ষুধার জ্বালা যেন খুবলে খাচ্ছে আমায়। আমি ভাবলাম, ভাত খাব। না, ভাত খেয়ে আর কাজ নেই। মদের বোতলটা বরং শূন্য করি। মানুষের জীবনে কখনো কখনো এমন সময় আসে যখন তার ভাতের প্রয়োজন ফুরিয়ে যায় কিন্তু প্রয়োজন পড়ে মদের।

ফ্রিজ থেকে বোতলটা বের ক'রে ঘেন্না হ'লো আমার; এহ্ শুধু তলানিটুকু বাকি! তাই ভালো। আমি তলানিটুকু গিলে বোতলটা উড়িয়ে দিলাম শূন্যে। কিছুক্ষণ বাদে রাস্তার ওপর পড়ল সেটা, ঝন ঝন ঝনাৎ। একটা রোঁয়া-ওঠা কুকুর, যেন মানব সন্তান, তার ঘায়েভরা পাছাটা দুলিয়ে শয়তানের চোখে তাকাল। নাহ্, বড্ড মশা। কী রসিকতা। মশার মতো বেজন্মা কীট মেয়রের মতো অভিজাত মানুষের কুপো কাত ক'রে দিয়েছে। একেই বলে একতার শক্তি। দলবদ্ধ ভাবে কাজ করে নির্বোধ আর ওচাঁ মশক স¤প্রদায় কিনা ‘হোমোসেপিয়েন্স’ বুদ্ধিমান মানুষকে হারিয়ে দিলো!

মা-বাপের ঠিক নেই সেই মশারা যদি এতটা পারে তাহলে মানুষেরা তাদের বঞ্চনা-লাঞ্চনা-দারিদ্র দূর করতে পারছে না কেন? নাকি দারিদ্র কোন ফেরেশতা! বঞ্চনা-লাঞ্চনা কোন ভূত!-নাহ্, আরেক বোতল হলে জমতো ভালো। নেই যখন কী আর করা!

এর মধ্যে পা টেসে এল আমার। ঘর থেকে চেয়ারটা টেনে বসে দেখি এক নেড়ি হারামি বাতাসের বেগে গাড়ি হাঁকিয়ে ফুটপাথে উঠিয়ে দিলো। একটা পরিবার ঘুমিয়ে ছিল সেখানে।আমার নেশা টুটে গেল। কতগুলো আর্তনাদ, যেন ছুঁচোর ডাকাডাকি, বাতাসে মিলিয়ে গেল। কোথায় যেন পড়েছিলাম হিটলারের এক অনুগত বান্দা সটান গাড়ি চালিয়ে বার্লিন থেকে ফেরার পথে এক বর্ষিয়সী যাজককে গাড়ির তলায় ‘ক্যাক’ ক'রে দিয়েছিল। সেই মুনাফেক পরে নাকি বলেছিল যে ওটা ছিল তার জীবনের শ্রেষ্ঠ মোটর ড্রাইভিং। আমার চোখের সামনে ওই ঘোৎ ঘোৎ করা শুয়োরটা এখন রক্তে গড়াগড়ি যাচ্ছে।

আমার মনে হলো ঐ দুস্থদের সেবা করা নৈতিক দায়িত্ব। ‘কিন্তু একটু পরেই আমি আত্মহত্যা করব’। আমার ভিতরকার পশুটা বলে উঠল।

চিন্তাগুলো ভাসিয়ে নিলো দূরের বাতাসে ভেসে আসা গজল,

‘থোড়ি থোড়ি পিয়া করো...
পিয়ো লেকিন রাখো হিছাব
[ কম কম করে পান করো...
পান করো কিন্তু হিসাব রেখো।]

ওরে মুর্র্খ, পান করবই যদি তাহলে হিসাব করব কেন? পান করি কি ফুর্তিতে? আমি তো পান করেছি ক্ষুধায়। জাহান্নামে যাক এসব। এ জাতীয় গজলের কোন দরকার নেই আমার।

‘শরাব চিজ হি এইছি হে না ছড়ি যায়’
[ মদ এমনই বস্তু যা ছাড়া যায় না ]
ঠিক আছে।
‘শরাব জিসে বানায়ি উছে হামারি সালাম’
[ মদ যে বানিয়েছে তাকে আমার সালাম ]
ঠিক আছে।
কিন্তু ‘থোড়ি থোড়ি পিয়া করো’ এসব কথা কেন?
ইচ্ছা মতন পান করো, জীবন তো রগরগে মদ!
আচ্ছা করে পান করো। বরং ওমর খৈয়াম ভালোঃ

পান্থশালার দুয়ার থেকে ডাকছে কে যে ভোরে,
পূর্ণ ক'রে পাত্র-খানা বেকুফ বন্ধু মদপিয়াসী ওরে।
ভাগ্য দেবীর নিমন্ত্রণে জীবন-পাত্র পূর্ণ হওয়ার আগে
ভোগ করে নাও জীবনটাকে কানায় কানায় ভরে।*

শুধু কি তাই? তিনি একনিষ্ঠ প্রেমিক। তীব্র অনুরাগী মদের মতো বন্ধুর। তাই তো বলেছেন কষ্ট ছেড়েঃ

শাস্ত্র বিধান এই যদি হয় হাজির হব রোজ হাসরে
সঙ্গে নিয়ে যা কিছু সব থাকবে যাহা মোর কবরে,
দিয়ো আমার লাশের, রেখো আমার ঐ মিনতি
লাস্যময়ী তন্বী বধু, লাল-শিরাজী পাত্র ভরে। *

সিনথিয়া যেন আমার মদ। তার মুখটা ভেসে উঠল আবার। প্রিয় আমার! কোথায় কোন অন্ধকারে বিনিদ্র জেগে তুমি! আমি সেই অন্ধকার থেকে তুলে আনব তোমায়। তোমার কণ্ঠে পরিয়ে দেব হাজার সূর্যে গাঁথা মালা। পৃথিবীর সবকিছু আবর্তিত হবে তখন তোমাকে কেন্দ্রে করে।

নাহ্। আত্মহত্যার কোন দারকার নেই। সিন্থিয়ার বুক মুখ বাহু আর স্বগীয় পরর্শ সবই চাই আমার। মেতে উঠব আমি জীবনের মৌতাতে। জেগে উঠব পদ্মের মতো এঁদো সরোবরেও। জীবনে জীবনে নিমেষে নিমেষে ছড়াব আমি জীবনের বাণী।

পন্ডিতেরা এমন বেহুশ হয় না। তারা বাজে কথা বলে না। বুড়ো বদমাশটা বলেছিল আমায়, ‘কল্পনায় তুমি এমনিভাবে ভেসে যেতে পার না। দার্শনিকের থাকতে হবে অনন্ত চিন্তা আর প্রয়োজনীয় সংযম।’ বুড়োর কথায় আমি বলেছিলাম, ‘তাহলে কবিরা মূর্খ? তাঁরা বাজে-বকার দল!’ সেই যাদুকর তার জ্ঞানের জাল পেতে আমায় বন্দী ক'রে বলেছিল,

‘ন তেন পন্ডিতো হোতি যাবতা বহু ভাসতি।
ঘেমী আবেরী অভযোগ পন্ডিতো’তি পরুচ্চতি’
[ বহুভাষণের দ্বারা কেউ পন্ডিত হয় না।
যিনি শত্র“হীন, সহিষ্ণু, ভয়মুক্ত ও উদার তিনিই পন্ডিত। ]
[ ত্রিপিটক, ধর্শস্থবর্গ শ্লোক: ২৫৮]

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ২:১৮

এমএম মিন্টু বলেছেন: হুম পড়তে পড়তে ক্লা্ত হয়ে গেছি পরের পর্ব একটু ছোট করে দিয়েন ভালো হয়েছে +++++

এবং প্রথম লাইক

১৬ ই অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৪:১১

আবু সিদ বলেছেন: প্রিয় মিন্টু ভাই, আপনার মতামতের জন্য ধন্যবাদ। পরামর্শটি কাজে আসবে।

২| ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ১২:৫১

কামরুল ইসলাম রুবেল বলেছেন: এন্টেনার উপর দিয়া গেছে, ক্যাচ করতে পারি নাই।

১৭ ই অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ২:৩৯

আবু সিদ বলেছেন: প্রিয় রুবেল ভাই, আপনার মতামতের জন্য ধন্যবাদ। সম্ভবত লেখাটা বেশ কঠিন হয়ে গেছে। সংক্ষেপে বললে, এই লেখাটার মূল বিষয় পৃথিবীর দুটো প্রধান দর্শনের মধ্যকার দ্বন্দ্ব। প্রাচ্যের মানুষেরা এমন ভাবে জীবন যাপন করেন যাতে জীবনের দুঃখ-কষ্ট কমে আসে। অন্যদিকে, পাশ্চাত্যের মানুষ তাদের জীবনের আনন্দ বাড়ানোর চেষ্টা করেন। আমাদের এই উপ মহাদেশ, এবং মূলত এশিয়ার মানুষ ধর্মীয় বোধ ও বিচার নিয়ে জীবন যাপন করেন। ইউরোপ ও আমেরিকায় মানুষের জীবন যাপন নিয়ে সমাজ অফুরন্ত স্বাধীনতা দিয়েছে। তারা শুধু দায়বদ্ধ রাষ্ট্রের আইনের কাছে। বিশ্বায়নের এই কালে আমরা প্রাচ্যের মানুষেরা পাশ্চাত্যের জীবন ও মূল্যবোধ থেকে অনেক কিছু গ্রহণ করেছি। যার ফলে পাশ্চাতের ভেগী এবং প্রাচ্যের যোগী জীবনের মধ্যের দ্বন্দ্বটা অনেকের জীবনে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। কাহিনীটির কেন্দ্রিয় চরিত্র মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত। তার ভিতর সিজোফ্রেনিয়ার লক্ষণও রয়েছে। কেন্দ্রিয় চরিত্রটি মানসিক ভাবে সুস্থ হলে তাকে হয়ত মরতে হতো না। আশাকরি, লেখার বাকি পর্বগুলো পড়লে সব সহজ হয়ে যাবে।

৩| ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১১:৩৭

কামরুল ইসলাম রুবেল বলেছেন: ওয়াও চমতকার, এবার পুরোটা পড়ব।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.