নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আবু সিদ

আবু সিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

যে কারনে আমি আত্মহত্যা করছি - ৪র্থ পর্ব

২০ শে অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ১২:০০

আমি কি সত্যি ঘাবড়ে গিয়েছি? আমার কি আবারও উচিত জীবনে ফিরে যাওয়া? যে ছবিটা আমি আঁকছিলাম, যে তৈলচিত্রটা এখনও শেষ করে উঠতে পারিনি সেটা সমাপ্ত করাই কি উচিত নয় আমার? আমি ফিরছি ঘরে।



মনের ভিতর নবজন্মের একটি কুড়ি এখনই প্রস্ফুটিত হলো। একরাশ অজানা আনন্দ আমায় ঘিরে নৃত্য করল। আমি ‘ডিসকভারি’ চ্যানেল চালু করলাম। অসমাপ্ত ছবিটা টেনে নামালাম। ঘন্টা তিন লাগবে ওটা শেষ করতে। রঙ এবং তুলি একেবারে আস্তাকুড় হয়ে আছে। রঙের প্যালেটটা দেখছি না কোথাও। বরং ডায়েরিটা খুলে পড়া যাক।



অনেকদিন পর নিজের লেখা পড়তে পড়তে যেন নিজেকে আবিষ্কার করছি নতুন করে। আমার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে যে ওগুলো আমার লেখা। আমি স্বপ্নও লিখে রাখতাম! বাহ্ ঐ লেখাগুলো নতুন করে সাজিয়ে আমি তো ‘স্বপ্নের খেয়া’ নামে একটা বইও ছাপতে পারি। আবিষ্কারের আনন্দ আমার রক্তে ছড়িয়ে পড়ছে। মনে হলো, মাকে একটা ফোন করি। তাকেও অংশীদার করি আমার আনন্দের।



না, তাকে পাওয়া গেলনা। কেউ ধরছেনা টেলিফোন। আমি ‘স্বপ্নের খেয়া’য় চোখ বোলাতে শুরু করলাম Ñ



আষাঢ় ২৮, ১৪০৮।

জুলাই ১২, ২০০১।



একটা ছোট জাহাজে পাড়ি জমিয়েছি আমি। পৃথিবীর কিছু পথ ঘুরে এক ছোট্ট দ্বীপে এসে থামল সেটা। কিছু বসতি ছিল, অল্প মানুষ ছিল। জাহাজ ঘাটের মতো ছোট ঘাট ছিল। শহরতলী ছিল।



বহুক্ষণ প্রতীক্ষা করল সে। আমি ভাবলাম, হেঁটে হেঁটে ঘুরে দেখি। অজানা দ্বীপ, অচেনা মানুষ, আর কখনো দেখা হবে কি? পথে নেমে বন জঙ্গল পাড়ি দিয়ে আমি ঘুরলাম। বনের ও ঘরের পশুদের দেখে দেখে হঠাৎ অনুধাবন করলাম, আমার বুকে ঝুলছে ভালোবাসার বিড়াল- তাকে দূর করে তাড়ানো হয়েছিল আমাদের বাড়ি থেকে আমার শৈশবে।



ঘুরে ফিরে এসে দেখি জাহাজ নেই। নদীটা শান্ত, শহরতলী মুখর। আমার মুখে বিম্ময়, বুকে ভালোবাসার বেড়াল! সবার সামনে আমি আগন্তুক, দেখবার সামগ্রী!

আমার তিনতলার ঘরে এসেছেন মা অসুস্থ শরীরে। তাকে দেখে খুশী হলাম। বললাম, তুমি! আমায় খবর দিলেই তো আমি যেতাম। তুমি তো আমার কাছে যাবেনা, আমিই তাই তোমার কাছে এলাম, বললেন মা।



শ্রাবণ ০২/১৪০৮

জুলাই ১৭/২০০১।



বড় এক বাড়ি থেকে বেরলাম আমি। সম্ভবত ওটা আমার নয়। প্রাসাদের মতো, পুরাকালের কিছু ছবি। চিত্রায়িত কয়েক জন রাজা মলিন হয়ে পড়ে আছেন মেঝেতে। ঘরদোর পরিষ্কার রাখছে অনেক জন মানুষ।



সেখান থেকে বেরিয়ে এক ছোট্ট বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালাম আমি। বাড়িটার সামনে সবুজ ঘাসের এক চিলতে মাঠ। মাঠের ভিতর একটা চীনামাটির সেতু। বাচ্চারা খেলছে সেখানে।



খুব ইচ্ছা আমার ঐ সেতু পেরবার। গৃহস্বামীকে খুঁজতে গেলাম কিন্তু উনি ঘুমন্ত। তার শিশু বাচ্চাটাকে বললাম মনের বাসনা, তারপর বেরিয়ে এলাম।



পথ-ঘাট ঘুরে পরদিনও দেখলাম সেতুটা। আমি খেতে গেলাম এক দামী দোকানে। সামান্য খাবার খেতে দেখে আমার সামনে বসা দু’জন অভিনেত্রীর একজন নূতন করে খাবার আনালেন। বললেন যে ওগুলো আমার।



কোমল অথচ দৃঢ় কন্ঠে প্রত্যাখান করলাম আমি। বেরলাম দোকান থেকে। পিছনে শুনলাম তাদের রাগে গরগর গলা।

আমি এগিয়ে গেলাম সেই বাড়িটার কাছে সেই সেতুটার কাছে। কিন্তু চীনামাটির সেতুতে আজও হাঁটতে পারলামনা আমি। শুধু দেখলাম কতগুলো সাদা হাঁস পাশের নিম্নভূমিতে সাঁতার কাটছে।



শ্রাবন ৯/১৪০৮

জুলাই ২৪/২০০১।

হোস্টেলের ভিতর এক সহপাঠীর ঘরে গেলাম আমি। বাইরে বৃষ্টি নেমেছে অজর ধারায়। আমি গেলাম গোছানো টয়লেটে। টয়লেটের পিছনে আছে এক দরজা। সে দরজা গলে দরজার ওপাশে চোখ রাখলাম আমি। অনেক জন মজুর চেষ্টা করছে এক নূতন বাড়ি বানাতে। পাশের দীঘিতে ফুটে আছে পদ্ম। দুটো চঁড়ুই একটা পেয়ারা গাছে । পেয়ারার শরীরে ওদের গায়ের উষ্ণতা।



এক অপরিচিতাকে পড়াতে গেলাম আমি। স্থানটা সেনা ছত্রীতে। চারধার নিস্তব্ধ, পরিচ্ছন্ন। সেখানে প্রবেশ পথে অতিকায় দুটো মঞ্চ শহরপথের অনেক উঁচুতে। সেই মঞ্চে বসে তাকে পড়াচ্ছি আমি। সহসা দুই মহাজন এসে অধিকার নিলো সে স্থানের। সে মেয়েকে আমি বললাম, একেবারে শেষে যাই। সেখানে নির্জনতা আছে। আমার প্রস্তাবে সম্মত হলো না মেয়ে। তার সাথে ছোট ছোট অনেক মঞ্চ ও উদ্যান দেখলাম। প্রতি মঞ্চে ছোট্ট বনভূমি, এবং প্রত্যেকটাতে একটা করে বন্দী হরিন। পাহারা দিচ্ছে পুলিশ।



আমরা একটা মঞ্চও ফাঁকা পেলাম না। আমরা বসতে পারলাম না। এগিয়ে চলেছি এখন সেনা ছত্রীর শেষ মঞ্চিলে।



না, ক্ষুধার যন্ত্রণা চরম এবার। ‘স্বপ্নের খেয়া’ বন্ধ করে চাল ধুয়ে চুলোয় বসালাম আমি। টেলিভিশন দৃষ্টি কাড়ল আমার। ওরা দেখাচ্ছে সরীসৃপের ওপর প্রামাণ্য চিত্র। তা দেখতে দেখতে মনে আমার ফিরে এল ‘বুড়ো বদমাশ’টা। সে বলত, ইমাম গাজ্জালী (রাঃ) বলেছেন, একটা শস্যের পাহাড় থেকে একটা পাখি যদি প্রতিদিন একটা করে দানা সরায় তাহলেও ওই শস্যের পাহাড় শেষ হয়ে যাবে কিন্তু পরকালের কোন শেষ নেই। আমার বড় খালার ছেলে বলে, ওরে হারামি বুড়ো! করেছিস তো শুধু ভন্ডামি। পরকালের ওপর যদি তোর এতই বিশ্বাস তাহলে জমি-জমা সব ছেলেদের লিখে দিয়ে মরলি কেন? মেয়েদের ভাগ গেল কই? নাকি ভাবতিস, নাতি-নাতনীরা তোর বংশের কেউ না। মাথা গরম হয়ে গেলে সে তার ও আমার মামাদের জেলে ভরার হুমকি দেয়। হুমকি ধামকিতে আজকাল আর কিছু হয় না, আমার বাবা বলতেন, সম্পদ অর্জনের জন্য মানুষ এখন ক্ষেপে গেছে। যে যেভাবে পার আখের গোছাও। বাংকের কোটি কোটি টাকা মেরে দাও তো। জেল জরিমানা আর কত হবে? কয়েক হাজার কোটি টেনে কয়েকশ’ কোটি টাকা ঘুষ দাও; সব ঠিক হয়ে যাবে।



আবার টেনে নিই ‘স্বপ্নের খেয়া’।



শ্রাবণ ১৪/১৪০৮

জুলাই ২৯/২০০১



নিতান্ত ঘোলাটে জলাশয়। জলের প্রবাহে যেন জল নয়, কাদার স্রোত। ছোট এক নৌকায় বসে দুজন খেলছি আমরা। সহসা শুনলাম, ওধারে বড় ব্রীজের নিচে অনেক যাত্রীর সমাবেশ। যাবে তারা অনেক দূর। নৌকাখানা ছিনিয়ে বঞ্চিত করলাম সোহান ভাই কে। ছুটলাম সেই সুদূরের পথে। পথ তো মলিন মসৃন নয়, ঢেউয়ে ঘেরা পথ। চারধারে জীবনের শ্বাপদ।

সব যাত্রীকে সাহায্য করতে পারিনি আমি। সন্দেহ নেই সবার হাতে পৌঁছতে পারব না প্রেমের প্রতিদান। সবাইকে তবু ভালোবাসতে চেয়েছিলাম বলে ভালোবাসতে পেরেছি কাউকে কাউকে। আমি উন্মনা স্রোতের দেশে গা ভাসালাম।



যেতে যেতে ছোট এ নৌকা একসময় একখন্ড কাগজের ঠোঙার মতো ছোট হয়ে এল, দ্রুত দ্রুত চললাম আমরা। নেমে ঘুরলাম পথে পথে বিপথে, নাম- না- জানা পথে। কে বলতে পারে কী আছে ভবিষ্যতে আমার! তবু জানি চলতেই হবে Ñ মৃত্যুর শেষ প্রহর অবধি।



‘ডিসকভারি’ ভালো লাগছে না আর, একটু নাচ গান দেখা যাক। নাচ গান খুঁজে খুঁজে মনের মতো একটাও পেলাম না। ভাবলাম, পৃথিবীর সংবাদ জানা যাক। বি. বি. সি. ছাড়তে দেখি আত্মঘাতী বোমা হামলার দৃশ্য। কয়েকশ মানুষ নিহত।



শীতল দীর্ঘশ্বাস এখন আমার হৃদয়ের সবটা জুড়ে। এই পৃথিবী তে কোটি কোটি মানুষের কোটি কোটি মতামত। তাদের সবার জীবন ও জীবনাদর্শ ভিন্ন। কিন্তু তাই বলে নিজের মত প্রতিষ্ঠার জন্যে অন্যকে হত্যা করতে হবে! পশুপাখিরা পর্যন্ত যেখানে শান্তি পূর্ণ সহাবস্থায় আছে সেখানে মানুষ করছেটা কী! এইসব নির্বিচার হত্যা আর ধ্বংস মানুষে মানুষে বিদ্বেষের ফল। কিন্তু কেন এই তুমুল বিদ্বেষ?



আমার বরং ‘ডিসকভারি’ ভালো, আমি সেখানে ফিরে যাই। খুলি আবার ‘স্বপ্নের খেয়া’।



শ্রাবণ ১৫, ১৪০৮

জুলাই ৩০, ২০০১।



বেশ দীর্ঘ এক নোঙরা হোটেলে খেতে ঢুকেছি আমি। টেবিলে চেয়ারে, মাথার ওপরের ছাদে, পরিবেশনকারীর নাকে-চোখে উপচে পড়ছে দারিদ্র। খাবারের ক্রেতারাও হামেশা হামেশা দরিদ্র। ঝুল ঝুলছে মাথার ওপর । দুর্গন্ধ ছুটছে এখানে সেখানে।



রাঙানো পোস্টার রঙীন ক্রেতা দেখে খেতে থাকলাম আমি রাতের প্রহরে। খাচ্ছি, খেয়েই যাচ্ছি। উঠে যাচ্ছেন কেউ কেউ, বসছেন নতুন অতিথি।



আমি দেখছি তাদের। বেমালুম জীবন সংসার জগত ভুলে অতি ধীরে খাচ্ছি মুরগীর ঠ্যাং। আমায় অমন আনমনা দেখে এক নতুন ক্রেতা আমার মাংসের বাটিতে পানি ফেলে হাত ধুলো। আমি দীন দরিদ্র চোখে তাকালাম তার দিকে। সে এক দরিদ্র মজুর, থতমত খেয়ে গেল। ক্ষমা চাইল সে। নির্দেশ দিল তখনই আরেক প্রস্থ মুরগীর মাংসের।



বিষাদ উপচে উঠেছে মনে। তাহলে ও খাবেটা কি? ও-ও তো আমার মতো দরিদ্র, বাজে খরচের পয়সা কোথায় তার! আমি বললাম, লাগবে না লাগবে না। সে অসহায় চোখে পানিতে ডুবে থাকা ছোট খাট মুরগীর ঠ্যাংটা চেয়ে দেখতে লাগল।



আমি হোটেল ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে এলাম। চারদিকের পৃথিবীতে ধূ ধূ রাত।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ১:০৭

সোহানী বলেছেন: লিখাটা পড়ে বুঝতে পারিনি বলে আপনার ১ম পর্ব পড়ে এখানে ফিরে আসলাম। আবারো পড়তে হবে সবগুলো। তারপর কঠিন মন্তব্য হবে !!!

কিন্তু পুরো লিখা আর শিরোনাম কেমন যেন অদ্ভুতরে.... অনেক কঠিন.... লিখার ভীতরে ঢুকতে পারছি না.... আবার পড়ে ফিরে আসবো।

২০ শে অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ২:০৪

আবু সিদ বলেছেন: প্রিয় সোহানী, আপনার মনোযোগের জন্য ধন্যবাদ। আপনার ’কঠিন’ মন্তব্য পেলে খুশী হব।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.