নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আবু সিদ

আবু সিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মানুষের বিশ্বাস - (পর্ব-১ঃ বিশ্বাসের মহিমা)

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ৯:২২

বিশ্বাস মানব জীবনের প্রয়োজনীয় এক অঙ্গস্বরূপ। মানব-মনলোকে এর ভূমিকা প্রবল। বিশ্বাসের রয়েছে নানান দিক ও প্রকরণ। ক্ষেত্রবিশেষে ‘বিশ্বাস’ গ্রহণ করে বিভিন্ন মহিমা। যেমন, কোন মানুষ যদি বিশ্বাস করতে শুরু করেন যে তিনি সাঁতার শিখতে পারবেন না এবং পানিতে গেলে ডুবে যাবেন তবে তাকে সাঁতার শেখানো অতি কষ্টকর (এবং অনেকক্ষেত্রে প্রায় অসম্ভব)। আবার দুর্বল কোন মানুষ বা জাতির মনেও যদি এই বিশ্বাস জেগে ওঠে যে আমি বা আমরা পারব তবে তাদেরকে বেঁধে রাখা কঠিন।

একথার সাথে এটাও আমাদের মনে রাখতে হবে যে ‘বিশ্বাস’ সবক্ষেত্রে প্রয়োগের মতো কোন শব্দ বা মানসিক ক্রিয়া নয়। যেমন, সাপে কাটলে আমার বিশ্বাস আমাকে রক্ষা করতে পারবে না; কারণ আদৌ তা বিশ্বাসের কোন বিষয় নয়। ‘বিশ্বাস’ এর রয়েছে দুুটি প্রধান রূপ। এর একটি জ্ঞানগত বা তথ্যগত বিশ্বাস। যেমন, গতকাল চাঁদ উঠেছিল। খুব সরাসরি এই বিশ্বাস আমাদের জীবনকে প্রভাবিত করে না। অন্যটি প্রয়োগিক (চৎধসসধঃরপ)। যেমন, কাকেই বা বিশ্বাস করবে! মিষ্টিতে ভেজাল, চালে ভেজাল, এমনকি বাচ্চাদের দুধে পর্যন্ত ভেজাল। আবার তিনি খুব বেশি দুর্নীতিবাজ বলে সরকার তার মতো একজন পন্ডিত লোককেও একটা প্রতিষ্ঠানের প্রধান করছে না। এই প্রবন্ধে মানবজীবনে বিশ্বাসের মহিমা আলোচনা করা হয়েছে দুটি পর্বে।

পর্ব-১ঃ বিশ্বাসের মহিমা

ভালোবাসার কথা মনে হলে আমাদের অধিকাংশের মনে নারী-পুরুষের প্রণয়ের কথা উদয় হয়। আমরা ভুলেই থাকি জগতের আর সব ভালোবাসা যেমন, ভ্রাতৃত্বের পিতৃত্বের বন্ধুত্বের এবং সৃষ্টিলোকের সবার ভালোবাসা সব সময় আমাদের সাথে আছে। ঠিক তেমনি ‘বিশ্বাস’ শব্দটির দেখা পেলে আমরা ধরে নিই ধর্মবিশ্বাসকে। কিন্তু আরও অজস্র অগণিত বিশ্বাস যে আমাদের প্রতিদিনের জীবনকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছে আমরা তা ভুলে যাই। আমরা বুঝতে পারি না যে এই বিশ্বাস আমাদের নিত্যদিনের সামাজিক সমৃদ্ধি স্থিতি ও সুখের জন্য এক অপরিহার্য লবণ। খুব সকালে ঘুম ভেঙে জেগে কাজে যাবার জন্যে আমরা যাই বাস-স্ট্যান্ডে। আমরা জানি বা বিশ্বাস করি যে সেখানে বাস মিলবে, এবং আমি সময় মতো কাজে যেতে পারব। যদি সপ্তাহে তিন দিন নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে সময় মতো বাস না পাই তবে মনে বিশ্বাস জন্মাবে যে এই বাস বা বাসস্ট্যান্ডের ওপর বিশ্বাস বা আস্থা রেখে লাভ নেই।

আবার যদি সপ্তাহে তিনটি সুুনির্দিষ্ট দিনে সেখানে আমরা বাস পাই তবে এই বিশ্বাস হবে যে কেবল এই তিনদিন এই বাস বা বাসস্ট্যান্ডের ওপর আস্থা রাখা যায়। একইভাবে যদি সপ্তাহের এক এক দিন এক এক রকম অভিজ্ঞতা হয় আমাদের তাহলে আমরা মোটেও ওই বাস বা বাসস্ট্যান্ডের ওপর বিশ্বাস রেখে কাজে পা বাড়াব না, এক্ষেত্রে আমরা খুঁজব এমন কোন উপায়ের যাতে প্রতিদিন সময় মতো কাজে যাওয়া যায়।

আমাদের মাতা-পিতারা আমাদেরকে স্কুলে পাঠান এই আশা বা বিশ্বাসে যে তাদের সন্তানেরা সুশিক্ষিত হবে, আয়-উপার্জন করবে এবং সুখী সুন্দর জীবনের অধিকারী হবে একদিন। আমরা আমাদের অফিসে কাউকে নিয়োগ দিই এই বিশ্বাসে যে তার নির্ধারিত কাজটি তিনি করবেন। একইভাবে, একজন সরকারী কর্মকর্তা বা কর্মচারী কিংবা একজন বিচারক তাদের নিজ নিজ পেশাগত দায়িত্ব সততার সাথে পালন করবেন। এই বিশ্বাসে রাষ্ট্র তাদের নিয়োগ দেন সমস্ত জনতার পক্ষ থেকে। যখন এই বিশ্বাসের ব্যত্যয় হয় তখন সামাজিক স্বস্তি, শৃঙ্খলা এবং সমৃদ্ধি বাধাগ্রস্থ হয় প্রতিপদে। যখন হাসপাতালে গিয়ে দেখি যে গরীব রোগীর জন্য রখা ওষুধ পাচার হয়ে গেছে, তখন কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে রাষ্ট্রের প্রতি আমাদের আস্থা? এভাবে মানুষ অন্য মানুষ ও প্রতিষ্ঠানের ওপর তার বিশ্বাস হারায়।

প্রকৃতিগতভাবে মানুষ তার আতœীয়-স্বজন বন্ধু পরিজন, সমাজ রাষ্ট্র ধর্ম প্রভৃতির ওপর বিশ্বাস ও আস্থা রেখে আশ্বস্ত হতে চায়। সে সংশয়ে ভূগতে চায় না। কারণ সংশয় বা অবিশ্বাস তা আশ্বস্ত হতে দেয় না, শান্তির দিন যাপন করতে দেয় না। তাই অন্য মানুষ বা প্রতিষ্ঠানের ওপর আস্থা বা বিশ্বাস হারিয়ে গেলে সচেতন ও অবচেতনে সে বিকল্প কিছুর সন্ধান করে যার ওপর ভর করে সে নিশ্চিন্ত হতে পারে। বর্তমানে বাংলাদেশ এবং পৃথিবী ব্যাপী মানুষের সব চেয়ে বিশ্বস্ত জিনিস হচ্ছে অর্থ বা টাকা। দেখা গেছে ন্যায় নীতি পরিশ্রম প্রার্থনা যেখানে কাজ করতে পারে না, আত্মীয় বন্ধু বা অন্যেরা যেখানে পৌঁছতে পারে না টাকা সেখানে পৌঁছে যায় অবলীলায়। ন্যায় নীতি বা সামাজিক মূল্যবোধের ওপর আমাদের হারানো আস্থা মূলত তার আশ্রয় খুঁজে পেয়েছে অর্থের কাছে। কোন অফিসে গিয়ে কাজ হচ্ছে না, নিজের ফাইলটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না (!) আমাদের হয়ত উচিত সেই প্রতিষ্ঠানের নিয়মকানুন এবং সেখানকার কর্মচারী বা কর্মকর্তাদের কর্তব্যবোধ ও নীতি-পরায়ণতার ওপর আস্থা রেখে অপেক্ষা করা। কিন্তু বিশ্বাস যেহেতু আগেই ভেঙে গেছে, ঝামেলা এড়াতে আমরা তাই কিছু টাকা তাদের পকেটে গুঁজে দিই। মনে আমাদের বিশ্বাস, টাকা যখন নিয়েছে কাজ তখন হবে!

বিশ্বাস একবার হারিয়ে গেলে তাকে পুণরুদ্ধার ও প্রতিষ্ঠা করা যে কত কঠিন আমরা তা মর্মে মর্মে উপলদ্ধি করছি! বিশ্বাস হারাবার ফলে আমাদের কাজ-কর্মে যেমন নিয়ম-শৃঙ্খলা থাকছে না তেমনি বিনষ্ট হচ্ছে পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা ভক্তি ভালোবাসা। আর তাই যে সমাজ যত বেশি অবিশ্বাসী সেখানকার জনগণ ততবেশি বঞ্চিত ও অনুতাপকারী।

বিশ্বাস নেই তাই যেখানে সেখানে ঘুষ দেয়ার কথা মনে উদয় হয়, বিশ্বাস নেই তাই লেখাপড়া শেষে হতাশা, বিশ্বাস নেই তাই পরস্পরের প্রতি হানাহানি বিদ্বেষ, বিশ্বাস নেই বলে কাউকে ধার দিয়ে উপকার করতে দ্বিধা-সন্দেহ। বিশ্বাস নেই শুধু সে কারণে পথের পরে বিপদগ্রস্ত কোন মানুষের সাহায্যে এগিয়ে না আসা, মনে আশঙ্কা কী জানি কোন বিপদে পড়ি! লোকটা নিজে প্রতারক না হলেও পুলিশ এসে কী ঝামেলা বাধাবে আবার। বিশ্বাস নেই তাই একই রক্ত মাংসের মানুষ পরস্পরের থেকে বিচ্ছিন্ন। এই বিশ্বাসহীনতা ও বিশ্বাসঘাতকতার কারণে মানব সমাজের ঘোরতর দুযোর্গ। যার পক্ষে সম্ভব সে সর্ব-বিনাশী পারমাণবিক বোমা তৈরি করে আগলে রেখেছে ঘরে, বাড়িয়ে তুলছে প্রতিদিন সে সভ্যতা-বিনাশী অস্ত্রের মজুদ! একে অন্যের প্রতি মানুষের এই অবিশ্বাস তার প্রগতিকে রুদ্ধ করছে, মনুষ্যত্বকে প্রতিনিয়ত করছে অপমান।

আবার অন্যদিকে বিশ্বাস আছে তাই প্রতিদিন কাজে যাই যে সেখান থেকে আয়-উপার্জন হবে; ঘরে ফিরি যে সেখানে রয়েছে আমাদের প্রিয়-পরিজন ও বিশ্রামের স্থান; বাজারে যায় যে সেখানে পাব জীবন যাপনের প্রয়োজনীয় উপকরণ। শরীর অসুস্থ হলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হই যে তার পরামর্শ কাজে লাগিয়ে আরোগ্য লাভ করব। যদি এই বিশ্বাসগুলো নষ্ট হয়ে যায় তাহলে কি হবে আমাদের? যদি দেখি যেখানে কাজ করি সেখানে নিয়মিত ও ঠিকমতো টাকা-পয়সা পাচ্ছি না, ঘরে আমি স্বাগত নই এবং আমার জন্য নেই কোন বিশ্রামস্থল! বাজার অবিশ্বাসী, তার দ্রব্যমূল্যের নেই কোন ঠিক, আবার ডাক্তারের পরামর্শ কোন কাজেই আসছে না তাহলে জীবন কেমন হবে আমাদের? সে-কি নরক আর দোজখ হয়ে উঠবে না?

পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস ভিন্ন মানুষ, যে খুব সামাজিক জীব, কখনো যাপন করতে পারে না সুস্থ সুন্দর জীবন। বিশ্বাসহীন জীবন, এক কথায়, অভিশপ্ত জীবন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.