![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শিক্ষা কী তা নিয়ে অগণিত মতামত রয়েছে। সহজ ভাষায় বলা যেতে পারে, শিক্ষা হলো কোন বিষয়ে জ্ঞান অর্জন এবং অর্জিত জ্ঞান প্রয়োগের একটা পদ্ধতি। এখানে কেউ হয়ত বলবেন, জ্ঞান বস্তুটা কি? সহজ কথায়, জ্ঞান হলো চেতনা। অর্থাৎ, যে কোন বিষয় সম্পর্কিত যে-কোন চেতনাই জ্ঞান। যেমন, একজন মানুষ যখন চেতনা হারান তখন আমরা বলি, লোকটা অজ্ঞান হয়ে গেছে। আবার তার চেতনা ফিরে আসলে আমরা সেটাকে ’জ্ঞান ফিরেছে’ বলি। আরও সুনির্দিষ্ট করে বললে, এই বিশ্বলোকের যেকোন কিছু সম্পর্কিত যেকোন চেতনাই জ্ঞান। তাই জ্ঞান যেমন ভালো হতে পারে তেমনি তা খারাপ হতে পারে। তা যেমন অসম্পূর্ণ হতে পারে তেমনি তা সম্পূর্ণও হতে পারে। একই ভাবে শিক্ষাও হয়ে থাকে সুশিক্ষা, কুশিক্ষা, অশিক্ষা ইত্যাদি ধরনের।
আবার এমন হতে পারে যে অর্জিত শিক্ষা বা জ্ঞান যথাযথ হয়নি। অর্থাৎ, তার ভিতর ভুল রয়ে গেছে। শিক্ষার এই রূপকে আমরা বলতে পারি, ভুল শিক্ষা। একটা প্রচলিত গল্পের ভিতর ’ভুল শিক্ষা’কে উপস্থাপন করা যায় -
জন্ম থেকে অন্ধ এমন একজন লোককে একবার ডাক্তার বললেন, আপনি দুধ খাবেন। লোকটা ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করলেন, দুধ কেমন? দুধ সাদা এক ধরনের তরল, ডাক্তার বললেন। কেমন সাদা? লোকটার প্রশ্ন। বকের মতো। বক কেমন? লাঙলের মতো।
লাঙল কেমন? ডাক্তার তার হাতটা একটু বাঁকা করে অন্ধ মানুষটাকে স্পর্শ করালে তিনি চমকে উঠলেন, ও বা-বা! আমি দুধ খাব না।
এখানে দেখা যাচ্ছে যে সঠিক ধারনা না পাওয়ার কারনে অন্ধ লোকটির দুধ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান হলো না। এর কারনে দুধ সম্পর্কে তিনি যে শিক্ষা পেলেন তা ভুল শিক্ষা।
আবার দৈনন্দিন জীবনে আমরা কারও ওপর ক্রুদ্ধ হলে বলি, ’ওকে এমন শিক্ষা দেব যে ও জীবনেও ভুলবে না’। কথাটার ভিতর এটা স্পষ্ট যে শিক্ষা মনে রাখতে হয়। অন্য ভাবে বলা যায়, কোন শিক্ষা ভুলে যাওয়া মানুষের জন্য একটা সাধারন ঘটনা। অর্থাৎ, শিক্ষার বিষয়টাকে চর্চার ভিতর রাখতে হয়, তা না করলে তা বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যায়। অবশ্য এমন কিছু শিক্ষা আছে যা একবার শেখার পর মানুষ বাকী জীবন মনে রাখতে পারে। এ ধরনের শিক্ষাগুলো সাধারণত কৌশলগত হয়ে থাকে। যেমন, সাঁতার কাটা, সাইকেল চালনা, নৌকা বাওয়া ইত্যাদি।
আবার এমন শিক্ষাও রয়েছে যা কেবল চর্চা বা ব্যবহারের মাধ্যমে মনে রাখতে হয়। এ ধরনের শিক্ষাকে আমরা ব্যবহারিক শিক্ষা বলতে পারি। কৌশলগত শিক্ষার সাথে ব্যবহারিক শিক্ষার তফাৎ এইটুকু যে ব্যবহারিক শিক্ষা ব্যবহারিক শিক্ষা চর্চার ভিতর না রাখলে তার অনেক কিছু আমরা ভুলে যাই। অর্থাৎ, ব্যবহারিক শিক্ষায় মেধা ও মননশীলতার প্রয়োগ কৌশলগত শিক্ষার থেকে বেশি। তবে এই দুই ধরনের শিক্ষাই দীর্ঘকাল মনে থাকে মানুষের। আবার, ব্যবহারিক শিক্ষার অনেক কিছু ভুলে গেলেও সেটার সবটুকু ভুলি না আমরা। যেমন, কোনো বিশেষ রান্নার পদ্ধতি, ছবি আঁকার কৌশল, ঠিক ঠিক তাল লয় মেনে গান গাওয়া ইত্যাদি।
এই দুই ধারার শিক্ষার বাইরে আরও এক ধরনের শিক্ষা মানব জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শিক্ষার এই রূপকে আমরা ’প্রায়োগিক শিক্ষা’ নাম দিতে পারি। প্রায়োগিক শিক্ষা হলো সেই পর্যায়ের শিক্ষা যা প্রয়োগ করতে তত্ত্বের সাথে বাস্তব জীবনের তথ্যের মিলন ঘটাতে হয়। একবার শিখলেও এই শিক্ষাকে সর্বদা সময়োপযোগী করে ব্যবহার করতে হয়। যেমন, একজন ছুতোর মিস্ত্রী বা রাজমিস্ত্রী, কোনো ব্যাংক কর্মচারী বা রসায়নবিদ বা একজন শিক্ষকের কাজ।
একজন ছুতোর মিস্ত্রী বা রাজমিস্ত্রী বা ব্যবসায়িকে তাদের কাজের মূল বিষয়গুলো আগে জানতে ও শিখতে হয়। পরে তারা যখন এই শিক্ষা প্রয়োগ করতে শুরু করেন তখন দেখা যায় যে সময়ের সাথে মানুষের চাহিদা যুগের অবস্থা সব বদলেছে। সময়ের সাথে তাদের শিক্ষাকে কালোপযোগী করে প্রয়োগ করতে হয়। আর ব্যাংক কর্মকর্তা নতুন কোনো সমস্যার সমাধানে বা ভোক্তার চাহিদায় আরো উৎকৃষ্ট যোগান দিতে সব সময় তার চিন্তাকে ব্যবহার করে চলেন। অর্থাৎ, প্রায়োগিক শিক্ষা হচ্ছে সেই ধরনের শিক্ষা যেখানে প্রতিদিনের গৎবাধাঁ চিন্তার বাইরে এসে আমাদেরকে মেধা ও মননশীলতার চর্চা করতে হয়। অবশ্য পৃথিবীর অনেক দেশে কৌশলগত, ব্যবহারিক ও প্রায়োগিক সব ধরনের শিক্ষাকে কৌশলগত হিসাবে দেখা হয়। কবে কোন অন্ধকার রাতে প্রদীপের শিখার ছায়ায় বসে কী শিখেছিলাম সেই শিক্ষা নিয়ে আমরা অনেকে জীবনের সবটা পথ পাড়ি দিতে চাই! বেশিরভাগ সময় নতুন কিছু শিখতে অনীহা আমাদের।
কৌশলগত, পদ্ধতিগত এবং প্রায়োগিক শিক্ষা ছাড়াও আরও এক পর্যায়ের শিক্ষা আছে যেখানে প্রতিনিয়ত মেধা ও মননশীলতার চর্চা করতে হয়। এই শিক্ষাকে আমরা ’সার্বক্ষণিক শিক্ষা’ হিসাবে অভিহিত করতে পারি। ধরা যাক, একজন মানুষ সত্য বলা শিখবেন। এই সত্য বলা শেখার জন্য নিজের মেধাকে তার আপন কণ্ঠ হতে উচ্চারিত প্রতিটা কথায় নিয়োজিত করতে হবে। কোনো কথা যখন মিথ্যে বলে ধরা পড়বে তখন তাকে খুঁজে বের করতে হবে ঠিক কী কারনে মিথ্যা উচ্চারিত হলো। এভাবে মিথ্যা বলার কারন উদ্ঘাটন এবং তা দূর করতে থাকলে দিনে দিনে তার কথার ভিতর সত্য প্রতিষ্ঠিত হবে। সত্য বলার এ সাধনে তিনি চালিয়ে গেলে এমন দিন আসবে যখন মিথ্যা বলাটা তার জন্য কষ্টকর হয়ে উঠবে।
আবার যখন তিনি মিথ্যে বলেনই না তখনও সত্য চর্চার প্রতি তাকে রাখতে হবে অবিচল দৃষ্টি - কী জানি কোন ভুলে কখন মিথ্যে বলে ফেলি! সত্য বলতে শেখার মতো সব ধরনের সার্বক্ষণিক শিক্ষা তাই সর্বক্ষণ চর্চার ফল। তবে যে কোনো প্রায়োগিক শিক্ষাকে সার্বক্ষণিক শিক্ষার পর্যায়ে উন্নীত করা ।সম্ভব। যখন প্রায়োগিক শিক্ষা সার্বক্ষণিক পর্যায়ে উন্নীত হয় তখন তা মননশীলতার এক উৎকৃষ্ট উপমা হয়ে দাঁড়ায়। যেমন, একজন গবেষক বা বিজ্ঞানী, কবি বা শিল্পী বা দার্শনিক, কৃষ কবা মোটর মেকানিক তখনই কেবল তার কর্মক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারেন যখন তিনি প্রায়গিক শিক্ষাকে সার্বক্ষণিক করে তোলেন।
©somewhere in net ltd.