![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
[লেখাটি Nicholas Schmidle এর Ten Borders থেকে অনুপ্রাণিত। সূত্র: Click This Link
সীমান্ত পুলিশঃ তোমরা মুসলিমরা কেন ইউরোপে আসতে চাও? খ্রিস্টানরা তোমাদের পছন্দ করে না।
অভিবাসন প্রত্যাশীঃ প্রথমত, তুমি আমাকে মানুষ হিসাবে দেখছ না। আমার বহু পরিচয়ের একটাকে তুমি প্রধান পরিচয় করে তুলেছ। তুমি কেবল ধর্ম আর বাসস্থানের পরিচয়ে মানুষকে দেখ তাই তোমার কাছে আমি এক এশীয় মুসলমান আর তুমি একজন ইউরোপীয় খ্রিস্টান। তুমি জান, এই পরিচয় নির্ধারণের ব্যাপারে আমাদের কারও কোন হাত ছিল না। তুমিও মুসলিম পরিবারে জন্ম নিতে পারতে, হতে পারতে যুদ্ধ-বিক্ষুব্ধ কোনো দেশের অধিবাসী। আমাদের নাগরিকত্ব বা ধর্ম নির্ধারণে আমরা কেউই কোনো মতামত দিতে পারিনি। আমরা ধর্ম ও রাষ্ট্র পেয়েছি মানব সমাজের প্রথাগত এক উত্তরাধিকারের ভিত্তিতে। তাই তুমি যখন আমাদের রাষ্ট্রীয় আর ধর্মীয় উত্তরাধিকারের কারনে আমাদেরকে ঘৃণা কর তখন তা নহায়েত অযৌক্তিক। অন্যদিকে, তোমার ধর্ম আর রাষ্ট্র নিয়ে যখন তুমি বড়াই করো তখন তা বাতুলতা মাত্র! নিজেকে যদি প্রশ্ন কর তবে দেখবে তোমার এই পরিচয় কোনো যোগ্যতা বলে তুমি অর্জন করনি।
সীমান্ত পুলিশঃ সে যাই হোক, আমরা আমাদের দেশে কোনো বাইরের লোক চাই না । আমাদের নিজেদেরই হাজারটা সমস্যা।
অভিবাসন প্রত্যাশীঃ তুমি কেন বলছো যে এই দেশ শুধু তোমাদের বা এ দেশে আমি বাইরের লোক?
সীমান্ত পুলিশঃ কারন আমরা শত শত বছর ধরে এখানে বসবাস করছি। এর ভালো-মন্দ আমরা নির্ধারণ করেছি।
অভিবাসন প্রত্যাশীঃ চাঁদ সূর্য তারা আকাশ বাতাস এসবও কি কেবল তোমাদের?
সীমান্ত পুলিশঃ চাঁদ সূর্য তারা আকাশ বাতাস এসব পৃথিবীর সব মানুষের। তা কেন শুধু আমাদের হতে যাবে?
অভিবাসন প্রত্যাশীঃ চাঁদ সূর্য তারা আকাশ বাতাস এসবের ওপর যেমন পৃথিবীর সব মানুষের অধিকার আছে তেমনি এই পৃথিবীর জল-স্থলের ওপরও সব মানুষের অধিকার রয়েছে। মহাসাগরের মাছ ভাবে না তার দেশ নিয়ে। পরিযায়ী পাখিরা জানে না কোনো সীমানা, উড়ে চলে তারা দেশ মহাদেশ পেরিয়ে। আমরা মানুষ কেন তাহলে বন্দ্বী করে ফেলছি নিজেদের?
সীমান্ত পুলিশঃ তোমার ওসব চালবাজি কথা রাখ। তুমি এখানে বন্দ্বী থাকবে বা তোমার দেশে ফিরে যাবে। তুমি এখানে থাকতে পারবে না কোনোভাবে কারন তা বেআইনী। তাছাড়া আমাদের থাকার জায়গা, খাবার এসবের ওপর কি কঠিন চাপ পড়বে!
অভিবাসন প্রত্যাশীঃ আইন কি? আইনের মানদ-ই বা কোনটা? তোমাদের এ আইন কেবল দেশ-ভিত্তিক আইন, মানবিক আইন নয়। অর্থাৎ, এ আইন মানব জাতির এক বা একাধিক ক্ষুদ্র জাতি গোষ্ঠীর জন্য তৈরি - তা মানব জাতির সব সদস্যের জন্য নয়। এ আইন সর্ব মানবের কল্যাণের কথা ভেবে করা হয়নি। আরও অনেক আইনের মতো তোমাদের আইনও হাজার বছরের হীনমন্যতার চর্বিত চর্বন। এ হলো মানবাধিকারের এক দেশীয় বা মহাদেশীয় সংস্করন, তা সামগ্রিক অর্থে ’মানবাধিকারের সার্বজনীন স্বীকৃতি’ নয় যেমনটা জাতিসংঘ দাবি করে।
আর তুমি যে স্থান সংকুলানের কথা বলছ সেই স্থান মানে এ পৃথিবীর ভূমি তো কোনো মানুষের তৈরি নয়। যে জমিতে তোমরা ফসল ফলাও তাও তোমাদের সৃষ্টি নয়। হাজার হাজার বছর ধরে এই ধরণীর মানুষ তা ব্যবহার করে আসছে। এই পৃথিবীর যে কোনো জায়গায় তাই যে কোনো মানুষের বসবাসের অধিকার আছে। তোমরা মানুষে মানুষে বিভেদ গড়তে চাও তাই ভিসা পাসপোর্ট আর রাষ্ট্র-সীমার বাড়বাড়ন্ত করে ছেড়েছ। তা না হলে কোনো একজন মানুষ বিনা বাধায় যে কোনো জায়গায় যেতে পারত, কাজ করে খেয়ে পরে থাকতে পারত, স্বপ্ন দেখতে পারত। এতে কারও কোনো ক্ষতি নেই বরং সমস্ত মানব জাতি উপকৃত হতে পারে তা থেকে। তবে যারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী, অনিষ্টকারী তাদেরকে তো অবশ্যই দমাতে হবে সব মানুষের কল্যাণের কথা ভেবে।
সীমান্ত পুলিশঃ তুমি যাই বল না কেন এ রাত তোমাকে এখানেই কাটাতে হবে। কাল সকাল নাগাদ ওপরের কোনো নির্দেশও আসতে পারে।
অভিবাসন প্রত্যাশীঃ ধন্যবাদ যে আমার কথাগুলো অন্তত তুমি শুনলে। এমনও হতে পারে যে একদিন কোনো অবসরে তুমি এটা নিয়ে ভাবছ! হতে পারে সব মানুষের জন্য এক উদার পৃথিবীর স্বপ্ন দেখছ তুমিও এক দিন।
©somewhere in net ltd.