নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কুরবানীর পশু গণনা

আঁধার রাত

আঁধার রাত › বিস্তারিত পোস্টঃ

কুরবানীর জন্য ছাগলামীময় গরু/ছাগল গননা

১৩ ই মে, ২০২৫ রাত ১০:০৯

কোরবানীর জন্য প্রস্তুত পশুর সংখ্যা প্রকাশ করেছে প্রাণীসম্পদ সংশ্লিষ্টরা। এবার সংখ্যা কমেছে। ঠিক কিভাবে কোরবানীর জন্য প্রস্তুত পশুর সংখ্যা তৈরী করা হয় তা জানার আগ্রহ আমার বহুবছরের। আমার বাড়ি এমন গ্রামে যেখানে প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই দু’একটা গরু/ছাগল কোরবানীর হাটে তোলার জন্য লালনপালন করা হয়। আমার জীবদশায় কখনো কোন অধিদপ্তর থেকে গরু ছাগল গুনতে কাউকে আসতে দেখি নাই।

আমার সে আগ্রহ মিটেছে। জানতে পেরেছি অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা, স্তরায়িত দৈব নমুনায়নের ভিত্তিতে কোরবানীর জন্য প্রস্তুত পশুর সংখ্যা নির্ধারন করেন। প্রতিটি উপজেলার অন্তত ১ শতাংশ নমুনা সংগ্রহ করা হয়। যেমন– একটি উপজেলায় ১০০টি গ্রাম থাকলে তার মধ্যে অন্তত একটি গ্রামে কোরবানি দেওয়া পশুর তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
খুবই সুন্দর হিসেব।

আমি এখন একটা যৌগিক কৌতুক বলব। আরেক জনের বলার গল্পকে যৌগিক গল্প বলাই উত্তম। বহুবছর আগের কথা। আমি তখন বিভিন্ন স্টাফ কলেজ ও বিভাগীয়/এরিয়া অফিসে একটা বিষয়ে কথা বেচি। তারেক মনোয়ারের মত করে বললে বলতে হয়-”ভাল আয়”। রাজশাহী ডিভিশনের জিএম স্যার ট্রেনিং সেশনের উদ্বোধনী বক্তিতায় একটা কৌতুক বলেছিলেন সেইটাই নিজের ভাষায় বলব।

মহান সংসদের একজন সদস্য প্রাণী সম্পদ মন্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েছে আমার দেশে ছাগল কয়টা আছে? পানি সতত নিচের দিকে নামে। প্রশ্নটা উত্তরের খোঁজে চুয়াইয়া চুয়াইয়া নিচের দিকে নামতে থাকলো। মন্ত্রী থেকে সচিব, সচিব থেকে বিভাগীয় কমিশনার, বিভাগীয় কমিশসনার থেকে জেলার ডিসি, ডিসি থেকে ইউএনও, ইউএনও থেকে উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা, তার থেকে প্রশ্নটা এসে পৌছালো মাঠকর্মীর কাছে। মাঠ কর্মী পড়লেন বিপদে। এত বড় উপজেলায় কত কত বাড়ি, তার একার পক্ষে এত অল্প সময়ে উপজেলার সব বাড়ির গোয়াল ঘরে ডুকে ছাগল গোনা তো সম্ভব না।

তারা নিজেদের হোয়াটসএপ গ্রুপে আলোচনা করে ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে ছাগল গোনার একটা পদ্ধতি ঠিক করলেন। তাদের মেথোডোলজী হলো তারা এমন জায়গায় যাবে যেখানে বেশী সংখ্যক ছাগল রয়েছে। ছাগলগুলো তারা গুনবে। যে জায়গা থেকে ছাগল গুনলো তার আয়তন অনুমান করে নেবে। উপজেলার আয়তনের সাথে আনুপাতিক হিসেব করে উপজেলায় মোট ছাগলের সংখ্যা নির্ধারন করবে। অল্প জায়গায় সবচেয়ে বেশী ছাগল থাকে ছাগলের হাটে। হাটের আয়তন এক বর্গকিলোমিটার। ছাগাল পাওয়া গেল দুই হাজার। উপজেলার আয়তন ৩৬৫ বর্গ কিলোমিটার। ছাগলের সংখ্যা ৩৬৫*২০০০=যা হয় তাই। একটা উপজেলার ছাগল পাওয়া গেল। সবগুলো উপজেলার মাঠকর্মী একই ভাবে নিজ নিজ উপজেলার ছাগলের সংখ্যা দাখিল করলো।

জেলার সব উপজেলার ছাগল যোগ করে জেলার ছাগল পাওয়া গেল। বিভাগের সব জেলার ছাগল যোগ করে বিভাগের ছাগল পাওয়া গেল। সব বিভাগের ছাগল যোগ করে দেশের মোট ছাগলের সংখ্যা পাওয়া গেল। মেট্রো পলিট্রন এলাকায় ছাগলগুলো জবাহের জন্য আমদানী ও পূর্বে গুনিত বিবেচনায় তাদের না গোনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো।

মহান সংসদে উপস্থাপন করার আগে নিয়মতান্ত্রিকভাবেই ফাইল গেল সচিব মহোদয়ের দপ্তরে। ছাগলের সংখ্যাটা তার কাছে অনেক বেশী মনে হলো। এত ছাগল বাংলাদেশ তো দুরে থাক পুরো মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে আছে কি না তিনি তা সন্দেহ করে বসলেন। তার মনে হলো ছাগলের যে সংখ্যা তাতে কেউ যদি মাটিতে বসতে চায় তবে যতই দৈবচয়নের মাধ্যমে পাছা রাখুক না কেন, পাছাটা একটা ছাগলের পিঠই পাবে রাখার জন্য। এমন ভয়াবহ ছাগলামী পরিস্থিতি।

তিনি বিভাগীয় কমিশনারের কাছে জানতে চাইলেন ক্যামনে কি? বিভাগীয় কমিশনার ডিসির কাছে জানতে চাইলেন ক্যামনে কি? ডিসি ইউএনও এর কাছে জানতে চাইলেন ক্যামনে কি? ইউএনও প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইলেন ক্যামনে কি? প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা মাঠকর্মীর কাছে জানতে চাইলেন ক্যামনে কি?

সবকিছু জানার পর সচিব সাহেব মাঠকর্মীর মোবাইল নাম্বারটা নিয়ে তাকে কল করে বিনয়ের সাথে বললেন- ছাগলের সংখ্যা প্রায় ঠিকই আছে। তবে ছাগল দুইটা কম আছে। তালিকায় দুইটা নাম এড করতে হবে, সবার উপরে আমার নাম আর শেষে আপনার নাম যোগ করলেই ছাগলের তালিকা সম্পন্ন হবে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.