![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কথোপকথন ১
কি করছো?
– ছবি আকঁছি।
- ওটা তো একটা বিন্দু।
– তুমি ছুঁয়ে দিলেই বৃত্ত হবে। কেন্দ্র হবে তুমি। আর আমি হবো বৃত্তাবর্ত।
- কিন্তু আমি যে বৃত্তে আবদ্ধ হতে চাই না। আমি চাই অসীমের অধিকার।
– একটু অপেক্ষা করো। . . . এবার দেখো।
- ওটা কি? ওটা তো মেঘ।
– তুমি ছুঁয়ে দিলেই আকাশ হবে। তুমি হবে নি:সীম দিগন্ত। আর আমি হবো দিগন্তরেখা।
- কিন্তু সে তো অন্ধকার হলেই মিলিয়ে যাবে। আমি চিরন্তন হতে চাই।
– আচ্ছা, এবার দেখো।
- একি! এ তো জল।
– তুমি ছুঁয়ে দিলেই সাগর হবে। তিনভাগ জলের তুমি হবে জলকন্যা। আর আমি হবো জলাধার।
- আমার যে খন্ডিতে বিশ্বাস নেই। আমার দাবী সমগ্রের।
– একটু অপেক্ষা করো। এবার চোখ খোল।
- ওটা কি আঁকলে? ওটা তো একটা হৃদয়।
– হ্যাঁ, এটা হৃদয়। যেখানে তুমি আছো অসীম মমতায়, চিরন্তন ভালোবাসায়। এবার বলো আর কি চাই তোমার?
- সারাজীবন শুধু ওখানেই থাকতে চাই।
কথোপকথন-২
এতো দেরী করলে কেন? সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছি।
– কি করবো বলুন ম্যাডাম? টিউশনি শেষ করে বাইরে তখন ঝুম বৃষ্টি। আমার জন্যে তো আর গেইটের বাইরে মার্সিডিজ দাঁড়িয়ে থাকে না যে ড্রাইভারের কুর্নিশ নিতে নিতে হুট করে ঢুকে পড়বো। তাই ঝুম বৃষ্টি মাথায় নিয়ে, কাদা-জল ভেঙ্গে, গরীবের গাড়ি মানে দু’পায়ের উপর ভরসা করেই আসতে হয় আপনারআমন্ত্রণ রক্ষা করতে। তবে আজ রিক্সায়করে এসেছি নইলে একেবারে কাকভেজা হয়ে যেতাম। রিক্সা খুঁজে পেতেই যা দেরী হলো।
: ইস্ বেশ ভিজে গেছো দেখছি। কাছে এসো তো, রুমাল দিয়ে মুছে দিই।
– ওহো, আমি তো ভেবেছিলাম তোমার শাড়ির আঁচল দিয়ে মুছিয়ে দেবে। ঠিক আছে, রুমালই সই।
: না মিস্টার, ওটা ভবিষ্যতের জন্য জমা থাকুক। যখন তোমার বউ হবো তখন ইচ্ছেটা পূরণ হবে।
– আচ্ছা। আর যদি তা না হও, তবে আমি বুড়ো বয়েসে পান চিবোতে চিবোতে কোন এক বাদলঘন দিনে বসে বসে রোমন্থন করবো আজকের এই রুমালি ভালোবাসাময় সময়টাকে।নাতিপুতিকে তখন প্রথম প্রেমিকা আর এইরুমালটার গল্প শোনাবো।
: প্লিজ, এভাবে বলো না। কেন আমি তোমাকেপাবো না? তুমি কি আমাকে চাও না? আমাকেভালোবাসো না?
– উত্তরটা আসলে একটু কঠিন। তোমাকে চাই আবার চাই না। ভালোবাসি আবার বাসি না।
: হেয়াঁলি রাখো। আমি স্পষ্ট জানতে চাই।
– তবে শোন। আমার প্রতিদিনের জীবন সংগ্রামের নির্মম বাস্তবতা তোমার জানা নেই। সেই জীবনে তুমি কখনো অভ্যস্ত হতে পারবেও না। তোমাকে একটা প্রশ্ন করি?
: হ্যাঁ, করো।
– একটু আগে একটা টং-এর দোকানের ছাউনিতে গা বাচিয়ে রিক্সা খুঁজছিলাম।খুব শীত শীত লাগছিলো, তখন চা খেয়েছিলাম ভাঙ্গা কাপে। আধধোয়া সে কাপে লেগেছিলো অনেক মেহনতি মানুষের ঠোঁটের ছোঁয়া, লেগেছিলো থুতুও যা এখনোআমার ঠোঁটে লেগে আছে। তুমি কি পারবে সেই ঠোঁটে চুমু খেতে?
কথোপকথন – ৩
তোমার বন্ধু কে ? দীর্ঘশ্বাস ?
আমার ও তাই ।
আমার শূন্যতা গননাহীন ।
তোমার ও তাই ?
দুরের পথ দিয়ে ঋতুরা যায়
ডাকলে দরোজায় আসে না কেউ ।
অযথা বাশি শুনে বাইরে যাই
বাতাসে হাসাহাসি বিদ্রুপের ।
তোমার সাজি ছিল, বাগান নেই
আমার ও তাই ।
আমার নদী ছিল, নৌকা নেই
তোমার ও তাই ?
তোমার বিছানায় বৃষ্টিপাত
আমার ঘরদোরে ধুলার ঝড় ।
তোমার ঘরদোরে আমার মেঘ
আমার বিছানায় তোমার হিম ।
কথোপকথন – ৪
যে কোন একটা ফুলের নাম বল
- দুঃখ ।
- যে কোন একটা নদীর নাম বল
- বেদনা ।
- যে কোন একটা গাছের নাম বল
- দীর্ঘশ্বাস ।
- যে কোন একটা নক্ষত্রের নাম বল
- অশ্রু ।
- এবার আমি তোমার ভবিষ্যত বলে দিতে পারি ।
- বলো ।
- খুব সুখী হবে জীবনে ।
শ্বেত পাথরে পা ।
সোনার পালঙ্কে গা ।
এগুতে সাতমহল
পিছোতে সাতমহল ।
ঝর্ণার জলে স্নান
ফোয়ারার জলে কুলকুচি ।
তুমি বলবে, সাজবো ।
বাগানে মালিণীরা গাঁথবে মালা
ঘরে দাসিরা বাটবে চন্দন ।
তুমি বলবে, ঘুমবো ।
অমনি গাছে গাছে পাখোয়াজ তানপুরা,
অমনি জোৎস্নার ভিতরে এক লক্ষ নর্তকী ।
সুখের নাগর দোলায় এইভাবে অনেকদিন ।
তারপর
বুকের ডান পাঁজরে গর্ত খুঁড়ে খুঁড়ে
রক্তের রাঙ্গা মাটির পথে সুড়ঙ্গ কেটে কেটে
একটা সাপ
পায়ে বালুচরীর নকশা
নদীর বুকে ঝুঁকে-পড়া লাল গোধূলি তার চোখ
বিয়েবাড়ির ব্যাকুল নহবত তার হাসি,
দাঁতে মুক্তোর দানার মত বিষ,
পাকে পাকে জড়িয়ে ধরবে তোমাকে
যেন বটের শিকড়
মাটিকে ভেদ করে যার আলিঙ্গন ।
ধীরে ধীরে তোমার সমস্ত হাসির রং হলুদ
ধীরে ধীরে তোমার সমস্ত গয়নায় শ্যাওলা
ধীরে ধীরে তোমার মখমল বিছানা
ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টিতে, ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টিতে সাদা ।
- সেই সাপটা বুঝি তুমি ?
- না ।
- তবে ?
- স্মৃতি ।
বাসর ঘরে ঢুকার সময় যাকে ফেলে এসেছিলে
পোড়া ধুপের পাশে ।
কথোপকথন – ৫
আমি তোমার পান্থপাদপ
তুমি আমার অতিথশালা ।
হঠাৎ কেন মেঘ চেঁচালো
– দরজাটা কই, মস্ত তালা ?
তুমি আমার সমুদ্রতীর
আমি তোমার উড়ন্ত চুল ।
হঠাৎ কেন মেঘ চেঁচালো
– সমস্ত ভুল , সমস্ত ভুল ?
আমি তোমার হস্তরেখা
তুমি আমার ভর্তি মুঠো ।
হঠাৎ কেন মেঘ চেঁচালো
– কোথায় যাবি, নৌকো ফুটো ?
কথোপকথন – ৬
কালকে এলে না, আজ চলে গেল দিন
এখন মেঘলা, বৃষ্টি অনতি দূরে !
ভয়াল বৃষ্টি, কলকাতা ডুবে যাবে ।
এখনো কি তুমি খুঁজছো নেলপলিশ ?
শাড়ি পরা ছিল ? তাহলে এলে না কেন ?
জুতো ছেঁড়া ছিল ? জুতো ছেঁড়া ছিল নাকো ?
কাজল ছিল না ? কি হবে কাজল পরে
তোমার চোখের হরিণকে আমি চিনি ।
কালকে এলে না, আজ চলে গেল দিন
এখন গোধূলি, এখুনি বোরখা পরে
কলকাতা ডুবে যাবে গাঢ়তর হিমে ।
এখনো কি তুমি খুঁজছো সেফটিপিন ?
©somewhere in net ltd.