নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লন্ডন মেট্রপলিটন এলাকাকে বত্রিশটি বরো (Borough)-তে ভাগ করা হয়েছে।
নাইজেলের চাকরী তাদের একটিতে, লন্ডন বরো অফ টাওয়ার হ্যামলেটস্। গোটা লন্ডনে প্রায় সাড়ে তিন হাজার অফিসার শুধু রেসপন্স করার জন্য ২৪ ঘন্টা এ্যাকটিভ থাকে। প্রতিটি বরো-তে আরো আছে নেইবারহুড টাস্ক ফোর্স, সেইফ নেইবারহুড টিম, চাইল্ড এ্যাবিউজ এন্ড এক্সপ্লয়টেশন ইউনিট, গ্যাং ইউনিট, পাবলিক অর্ডার ইউনিট (দাঙ্গা-ফ্যাসাদ ডিফিউজ করার জন্য), সি.আই.ডি, এয়ার ইউনিট, ডগ ইউনিট, হর্স রাইডার্স, ফরেনসিকস, স্পেশালস (বিনা বেতনে শখের পুলিশ), আরো কত কি। বৃটিশ পুলিশ অস্ত্র বহন করেনা। তবে ফায়ার আর্মস ইউনিট আছে বিশেষ প্রয়োজনের জন্য। এই দুর্ধর্ষ ফায়ার আর্মস অফিসারেরা সব সময় বি এম ডাব্লিউ এক্স-ফাইভ নিয়ে চলাফেরা করে। বাইরে থেকে কারো অস্ত্র দেখা যায় না। ওরা ট্রোজান নামে পরিচিত। শুট করা সিরিয়াস বিষয়, প্রতিটি বুলেটের হিসেব দিতে হয়। ব্যাপারটা ভয়াবহ, অর্থাৎ শুট করলে নিশ্চিত হয়ে শুট করতে হবে যে বুলেটটার অপচয় হয় নি। বুলেটের অনেক দাম। কারো না কারো মাথা বা হৃৎপিন্ড ভেদ না করা মানে ট্যাক্স পেয়ারদের অর্থের অপচয়। সুতরাং একটি শুট মানে কারো না করো মৃত্যু। ফায়ার আর্মস টিমে কন্টিনিউয়াস শট (ব্রাশ ফায়ার)-এর প্রচলন নেই। মহামান্য রাজার এই (ব্রিটিশ) রাজ্য সরকারের নাম ‘হিজ ম্যাজেস্টিজ গভার্ণমেন্ট অফ ইউনাইটেড কিংডম এন্ড নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড।’ হিজ ম্যাজেস্টি ‘দ্য কিং’-এর কড়া নির্দেশ তাঁর প্রজাদের শান্তি বিঘ্নিত করা যাবেনা। শব্দ দুষণ তার মধ্যে অন্যতম। মহামান্য রাজধিরাজ তাঁর প্রজাদের দ্য 'সাবজেক্ট' বলে ডাকেন।
প্রথমে কল করে পোষ্টিং দেওয়া হয়। প্রতিটি ইউনিটে দুজন অফিসার। প্রতিটা পুলিশ কার একেকটা ইউনিট। এছাড়া আছে আট জনের মিনিবাস, বারো জনের ভ্যান ইত্যাদি। রেসপন্স অফিসাররা সবসময় পুলিশ কার নিয়ে চলাফেরা করে যাতে করে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে ইমিডিয়েট এ্যাকশন নেয়া যায়। যদি আরো অফিসার দরকার পড়ে, রেডিওতে সাপোর্ট চাইতেই মিনিটের মধ্যে কাকের মত কা কা করতে করতে সাইরেন বাজিয়ে দুনিয়ার পুলিশ এসে সয়লাব হয়ে যায়। কলিগদের একের প্রতি অন্যের এই গভীর টান নাইজেলকে মাঝেমাঝে অপরাধী করে, “তারপরও কেন আমি চাকরী ছাড়তে চাই?”
বেশ কিছুদিন আগের কথা, নাইজেল তখন নতুন। ফলো করতে করতে ইষ্ট লন্ডনের মাইল এন্ড পার্কের (Mile End Park) দক্ষিন দিকে রেইলওয়ে আর্চের নীচে একটা নীল রংয়ের ফোর্ড গাড়ী থামালো নাইজেল আর পিসি ফ্লেচার। ড্রাইভার এশিয়ান ছেলে। (এখানে একটা কথা বলে রাখা প্রয়োজন, বৃটেনে এশিয়ান বলতে দক্ষিন এশিয়ান বোঝায়, যেমন বাংলাদেশী বা বেংগলিজ, ইন্ডিয়ান, পাকিস্তানি, শ্রী-লংকান ইত্যাদি। আর আমেরিকায় এশিয়ান মানেই বার্মিজ, থাই, লাও, কম্বোডিয়ান, ভিয়েতনামিজ, চায়নীজ, জাপানীজ, কোরিয়ান ইত্যাদি।) গাড়ি থামিয়ে ওকে বের হতে বলা হল। বের হয়েই গাড়ী রেখে সে ভোঁ-দৌড়। নাইজেল আর ফ্লেচার বার্ডেট রোড হয়ে সেন্ট পলস্ ওয়ে পর্যন্ত পিছু ধাওয়া করে ওকে হারিয়ে ফেললো। সেন্ট পলস্ ওয়েতে একটা ভ্যানে এক দল স্পেশালস্ ছিলো। ওরাও খুঁজলো, পেলো না। ফেরার পথে নাইজেল টের পেলো ওর ফোন হারিয়ে ফেলেছে। ফ্লেচার বললো সে দেখেছে নাইজেলের পকেট থেকে মোবাইল ফোন পড়েছে বার্ডেট রোডের মাঝখানে, ডিভাইডারের উপর।
“তোমার উচিত ছিলো আসামীর পেছনে না ছুটে যত দ্রুত সম্ভব ফোন তুলে নেওয়া। ওটা তোমার প্রপার্টি, আসামী আজ পালাবে কাল ধরা পড়বে। পালিয়ে আর কোথায় যাবে?”
এটা ঠিক, পালিয়ে বেশীদুর যেতে পারবেনা। আজ নাহয় কাল, নয়তো পরশু ধরা তাকে পড়তেই হবে। এখন কথা হচ্ছে পুলিশ আদৌ তাকে ধরতে চায় কি না সেটা নির্ভর করবে তার ক্রাইম কতখানি সিরিয়াস। পৃথিবীর আর কোন সিটিতে এত ক্যামেরা নেই যত ক্যামেরা আছে সিটি অফ লন্ডনে। ইলেক্ট্রনিক চোখ সবখানে, সর্বদা।
আসল কথা হচ্ছে নাইজেল টেরই পায় নি কখন সে ফোন হারিয়েছে। ফ্লেচার ঠিকই দেখেছে, সব সময় চোখ কান খোলা, অভিজ্ঞতা একেই বলে। ফিরে এসে তন্ন তন্ন করেও ফোনের হদিস পেলোনা তখন ফ্লেচারের ফোনে ‘ফাইন্ড মাই আইফোন’ এ্যাপে লগ-ইন করে দেখে ওর আইফোন ইতস্ততঃ নড়েচড়ে বেড়াচ্ছে মাইল এন্ড পার্কের দক্ষিন-পূর্ব কোন বরাবর। এর মধ্যে দেখা গেলো মুহুর্তের মধ্যে একটি দুটি করে ইউনিট এসে গোটা মাইল এন্ড পার্ক ঘিরে ফেলেছে। ‘স্টপ এন্ড সার্চ’ অপারেশন শুরু হয়ে গেছে। আকাশে মোটামুটি উঁচুতে ‘এয়ার-ওয়ান’ হেলিকাপ্টার ইউনিট। পুরো মাইল এন্ড পার্ক জুড়ে সাদাকালো ইউনিফর্ম ছাড়া যেন আর কিছু দেখা যাচ্ছেনা। রাস্তাগুলোর এখানো ওখানে পুলিশ কারগুলো থেকে ফ্লাশিং লাইটগুলোর তীক্ষ্ম আলো দিনের আলোর উজ্জ্বল্য ছাপিয়ে চোখ ধাঁধিয়ে দিচ্ছে। নাইজেল যখন লেইজার সেন্টার কার পার্কে একজনকে সার্চ করছে ফ্লেচার তাকে রেডিওতে ডাকলো। পার্কের দক্ষিনে রেসিং কার্ট পেরিয়ে একটা স্কেটবোর্ড পার্ক আছে ওটা পার হলেই ফ্লেচারকে দেখতে পাবে। লোকেশন পর্যন্ত দৌঁড়ে যেতে যেতে প্রায় চার পাঁচ মিনিট লেগে গেলো। ওখানে গিয়ে দেখে সেইন্ট পলস্ ওয়ে থেকে রোডশওয়েল রোড পর্যন্ত পুলিশ গাড়ির লাইন, একটা প্রিজনভ্যানও উপস্থিত। তারমানে কেউ না কেউ এ্যারেষ্ট ও হয়ে গেছে। নাইজেল টেরও পায় নি! রেডিও ম্যাসেজের প্রতি আরো মনোযগী হতে হবে।
গত পর্ব
পরবর্তী পর্ব
১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৪৫
আফলাতুন হায়দার চৌধুরী বলেছেন: আপনি ঠিক বলেছেন। দেখা যায় না বলতে বুঝিয়েছি যখন ওরা গড়ীর ভেতর থাকে। কষ্ট করে পড়েছেন, ধন্যবাদ।
২| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৫:৩৬
সোনালি কাবিন বলেছেন: এই পটভূমির সাথে পরিচিত নই বলে মানসপটে দেখে নিতে একটু কস্ট হচ্ছে অবশ্য । সামনে জমবে মনে হচ্ছে ।
১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৪৬
আফলাতুন হায়দার চৌধুরী বলেছেন: সত্যি পটভূমি অন্য রকম। তবু কষ্ট করে পড়েছেন, কমেন্ট করেছেন। ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানাই।
৩| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১:৩০
রাজীব নুর বলেছেন: অবশ্যই সত্য ঘটনা।
মানুষ তার অভিজ্ঞতার বাইরে লিখতে পারে না।
©somewhere in net ltd.
১| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৩:২৯
ভুয়া মফিজ বলেছেন: তবে ফায়ার আর্মস ইউনিট আছে বিশেষ প্রয়োজনের জন্য। এই দুর্ধর্ষ ফায়ার আর্মস অফিসারেরা সব সময় বি এম ডাব্লিউ এক্স-ফাইভ নিয়ে চলাফেরা করে। বাইরে থেকে কারো অস্ত্র দেখা যায় না। আপনার এই কথা কি ঠিক? ARV ইউনিটের সবার পিস্তল উরুর সাথে ঝোলানো থাকে, যা পুরাই দৃশ্যমান।
যাইহোক, লেখাটা মনে হয় জমবে। দেখা যাক!!!