নাম না জানা কারোর কাছে আমার খোলা চিঠি

১৯ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ১১:৫৯

প্রিয় বন্ধুবরেষু,



জীবনের প্রথম চিঠি আপনাকেই লিখছি । হয়তো পাঠাবোও না কোনোদিন। হয়তো চেষ্টা করলেও আর লিখতে পারবো না। সেই ক্লাস নাইনে থাকতে কাঁচা হাতে চিঠি লিখেছিলাম। যদিও সংকোচ ও লজ্জায় চিঠিগুলো দিতে পারিনি। কত চিঠি লিখেছি আর ছিঁড়ে ফেলেছি তা হয়তো গুনে শেষ করা যাবে না।

যেকোনো চিঠি শুরুর আগে কুশল জিজ্ঞেস করে। আর আমি শুধু বকবক করেই যাচ্ছি। যাইহোক, ভালো আছেন তো আপনি? আমি ভালো না খারাপ বুঝতে পারছি না। হঠাৎ ঘুম ভাঙার পর সেন্স আসতে যেমন একটু সময় লাগে, আমারও মনে হয় তাই হয়েছে। যদিও ঘুম ভেঙেছে সন্ধ্যে ৭ টার দিকে। জানিনা কেন এই ঘুমের উদাহরণ দিলাম। সারাটা দিন ঘুমালাম বলেই হবে হয়তো।

আপনার সাথে কথা বলে যখন ঘুমাতে যাই ততক্ষণে দেখি ভোর হয়ে গেছে। ওহ! একটু একটু করে ভোর হওয়া দেখাটা যে কি দারুণ ব্যাপার তা এতদিন আমি বুঝতেই পারিনি। মনে হচ্ছিল আমার এই দীর্ঘ ২২ বছরের জীবনে যা দেখেছি তা থেকে না দেখেছিই বেশি। সেই না দেখাগুলোই বুঝি আমার আসল দেখা ছিল। আপনার জন্য অন্ধকার থেকে একটা কালচে নীল আর তারপর ধীরে ধীরে ওই নীলটা হালকা হয়ে এসে মেঘ গুলোকে সাদা করে দিলো, আমি ভোরের আলো দেখলাম, বাতাস আমাকে ছুঁয়ে দিলো, আমার মন হালকা হয়ে গেলে আমি আপনাকে ধন্যবাদ জানালাম,আমার সৃষ্টিকর্তার আগে।



অন্ধকার রাতের ভয়াবহ যন্ত্রণাকে মিথ্যা করে যখন একটু একটু করে সূর্যটা ওঠে আসে, যখন ভোরের পাখিরা চারিদিকে ডেকে যায়, তখন হৃদয়মাঝে কি যেন রিন্ রিন করে বেজে ওঠে, আমি ভেবেই পায় না। মনে হয় প্রত্যেক মানুষের জীবনেই কখনো কখনো এমন ভীষণ ভাল-লাগা হঠাৎ এসে ভীরু বৃষ্টির মত মনের জানালায় কড়া নাড়ে। এই সময় আমি আমার সমস্ত দুঃখ ভুলে যাই। কোন্ প্রিয় মানুষ আমাকে কষ্ট দিয়েছিল। কে, কবে আমাকে অপমান করেছিল তা একটুও মনে পড়ে না। তখন ছোটবেলার স্মৃতিগুলো চোখের ক্যানভাসে অবিরত খেলা করে যায়। আহা! সেই সব দিন। নকশী কাঁথার মত এক বিচিত্র পৃথিবী ছিল আমাদের শৈশবে। এই সময় সেইসব পুরনো বাধাবন্ধনহীন দিনগুলোর কথা খুব মনে পড়ে যায়। আর তখন বুকের ভিতরটা ভীষণ মুচড়ে উঠে।

আমার মনে হয় আমি নিজেকে নিজে সম্পূর্ণ। এমনি একা একা ভেবেই সারাটা জীবন কাটিয়ে দিতে পারব, জীবনের মানে খুঁজে। মনে হয় আমার জীবনে কোন পরিপূরকের দরকার নেই।

চিঠিটা বড়ো দীর্ঘ হয়ে যাচ্ছে। মনে করেছিলাম অল্প কথায় শেষ করব। যাইহোক, আচ্ছা আমি শুনেছি চিঠি বেশি দীর্ঘ হলে নাকি পড়ার আগ্রহ তেমন থাকে না? আমি অবশ্য জানি না, আপনি জানলে জানাবেন। আর ভাল থাকবেন সবসময়।



ইতি

হিমিকা



পুনশ্চঃ আমার অপেক্ষা করতে খুব খারাপ লাগে, মনে হয় কেউ কিছু করে আমার অগোচরে। তাই বেশিদিন অপেক্ষা করিয়ে রাখবেন না। জলদি উত্তর দিবেন।

১ টি +০/-০