নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আহমদ জসিম জার্নাল

নিজের ভাবনা অন্যকে জানাতে ভালো লাগে।

আহমদ জসিম

মূলত গল্প ও প্রবন্ধ লিখি।

আহমদ জসিম › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমরা যা হারাচ্ছি, মার্কিন কুকুররা যা পাচ্ছে!

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ২:৩৩

অন্ন,বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা কিংবা চিকিৎসারমতো মানুষের সমস্ত মৌলিক অধিকারই আজ এই পুঁজির দুনিয়াতে পণ্যে রূপান্তর হয়েছে। তাই একজন মানুষ চিকিৎসা পাবে কি পাবে না, শিক্ষা পাবে কি পাবে না এই প্রশ্নের থেকেও বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে মানুষের এই অধিকারগুলো নিয়ে কে কত বেশি মুনাফা করতে পারে, কত বেশি বিনিয়োগ হচ্ছে এই খাতগুলোতে!

এটা শুধু আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিত নয়, বরং বিশ্বপ্রেক্ষিত হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে সমাজব্যবস্থা মানুষের এই অধিকারের প্রশ্নগুলোকে সামনে এনেছিল, তারা আজ পরাজিত শক্তি। আজকের দুনিয়া হচ্ছে পুঁজি পণ্য আর মুনাফার দুনিয়া। তাই আজ মানবাধিকার শব্দটা হয়ে দাঁড়িয়েছে, একটা তাৎপর্যহীন নির্বিষ শব্দমাত্র। তথাপি মানবাধিকারের প্রশ্নটা যখন সামনে আসে তখন উন্নত বিশ্বের মানুষ তার রাষ্ট্রের কাছ থেকে যে অধিকারগুলো ভোগ করে, আর আমরা আমাদের দেশের জনগণের প্রতি রাষ্ট্রের যে আচরণগুলো দেখি, তার মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।

পার্থক্যটা এত প্রকট যে তৃতীয় বিশ্বের নাগরিক হিসেবে কখনও কখনও আমরা নিজেদের পশুর থেকেও অধম ভাবতে বাধ্য হই। এই মনে হওয়াটা শুধুমাত্র অধিকার হারানোর বঞ্চনা থেকে নয়, বরং বাস্তবতার নিরিখে। তথ্য প্রযুক্তি আর মিডিয়ার এই যুগে আজ সারাবিশ্ব আমাদের হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। সেই মিডিয়ার বদৌলতেই আমরা জানতে পারি উন্নত পুঁজিবাদী দেশে পশু অধিকারের প্রশ্নটা পর্যন্ত কত গুরুত্ব দিয়ে ভাবা হয়।

ন্যাশনাল জিওগ্রাফি নামে একটা বিদেশি চ্যানেলে দেখলাম, আমেরিকাতে পুলিশের একটা বিশেষ ফোর্স আছে। যাদের কাজ হচ্ছে গৃহপালিত পশুগুলো তাদের মালিক কর্তৃক কোন রকম অবহেলা-বঞ্চনার শিকার হচ্ছে কিনা, এ-বিষয়গুলো দেখভাল করা। এই বিষয়ের উপর সমপ্রচারিত অনুষ্ঠানে আমরা আরো দেখছি, একদল পুলিশ নানাভাবে খোঁজ-খবর নিচ্ছে: মালিক তার কুকুরকে যে ঘরে রাখেন, সেটা কতটা স্বাস্থ্যসম্মত? কুকুরের সাথে মালিকের আচরণটা কেমন? যে খাবার দিচ্ছে সেটা পুষ্টিমান সম্পন্ন কিনা? কিংবা বাসি পচা কিনা? ইত্যাদি।

আজ আমরা ফরমালিন যুক্ত ভেজাল খাবার খেতে খেতে পুরো জাতি যখন রোগাক্রান্ত অসুস্থ জাতিতে পরিণত হচ্ছি এবং চোখের সামনে অতি-মুনাফালোভী খাদ্য ব্যবসায়ী নীরব ঘাতকদের নিবৃত্ত করার জন্য রাষ্ট্রের কোন বিশেষ উদ্যোগ দেখি না, তখন উন্নত বিশ্বের কুকুরদের প্রতি এমন দায়িত্বশীল আচরণ দেখে সত্যিই আমরা নিজেকে পশুরও অধম ভাবতে বাধ্য হই! শুধু তাই নয়, একসময় আমেরিকার সবচেয়ে বড় বিনোদন ছিল মোরগ লড়াই, আজ সেই লড়াই আইন করে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কারণ, তাদের কাছে দুইটি পাখির এই আমৃত্যু লড়াই অমানবিক, নির্দয় ও নিষ্ঠুরতার প্রতীক।

আর আমাদের দেশে দুই দলের ক্ষমতা-কেন্দ্রিক লড়াই সেই সাথে হত্যা, গুম এগুলোতো খুবই স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে!

একইভাবে উন্নত বিশ্বের অনেকগুলো দেশেই গোল অ্যাকুরিয়ামে গোল্ডফিশ পোষা আইনসিদ্ধ নয়, কারণ বিশেষজ্ঞদের মতে: গোল অ্যাকুরিয়াম থেকে নাকি গোল্ডফিশ পৃথিবীকে বিকৃতভাবে দেখে। উন্নত বিশ্ব তার দেশে পোষা মাছকেও পৃথিবী সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাবার অধিকারটুকু নিশ্চিত করেছে। আর আমরা নিজের দেশ সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাবার অধিকার থেকে বার বার বঞ্চিত হচ্ছি। এখন আমাদের মনে স্বাভাবিক নিয়মেই প্রশ্ন জাগে: একই অর্থনৈতিক বিশ্বব্যবস্থায় বসবাস করার পরও মানবাধিকারের প্রশ্নে এমন পার্থক্য কেন? এই কেন এর উত্তর খুঁজতে হবে আমাদের ইতিহাসজ্ঞান দিয়ে। মনে রাখতে হবে পুঁজিবাদের চূড়ান্ত বিকাশের সাথে সাথে উন্নত বিশ্বে প্রসার ঘটেছে শিক্ষার, আবার দুই দুইটা বিশ্বযুদ্ধের অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যাবার ফলে তাদের রাজনৈতিক চেতনার বিকাশও হয়েছে সমান গতিতে।

সেসব দেশে রাজনৈতিক চেতনার প্রশ্নে একজন ছাত্রের সাথে একজন কৃষকের, কিংবা একজন শ্রমিকের সাথে একজন অধ্যাপকের খুব বেশি পার্থক্য তৈরি হয় না। নাগরিকের সচেতনতা রাষ্ট্র থেকে তাঁর প্রাপ্য অধিকারের নিশ্চয়তা দেয়।

আজ আমরা গোল্ডফিশের কথা বললাম। কিন্তু আমরা কি এই ইতিহাস জানি, গোল অ্যাকুরিয়ামে গোল্ডফিশ পালন নিষিদ্ধ করে আইন করার জন্য, উন্নত বিশ্বের পরিবেশবাদীরা কত বড় বড় আন্দোলন-সংগ্রাম পরিচালনা করেছেন।

কিংবা বলি না কেন আমেরিকার একসময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় বিনোদনের উৎস, মোড়গ লড়াইয়ের কথা, আর স্পেনের ষাঁড় হত্যা উৎসবের কথা। এই দুইটি খেলাই আজ নিজ নিজ দেশে নিষিদ্ধ হয়েছে। সেসব দেশে জন-রুচি পরাস্ত হয়েছে, সচেতন মানুষের মানবিক উদ্যোগের কাছে।

ব্যাপারটা মোটেও এমন নয় যে, উন্নত বিশ্বের সকল সুশীল কিংবা পরিবেশবাদীরা চলমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বিপক্ষে দাঁড়িয়েছে, বরং রাষ্ট্রের কাছ থেকে জনগণ কীভাবে সর্বোচ্চ দায় আদায় করে নিতে পারে সেই উপায় খুঁজেই তারা বের করেছে। যে জায়গাতে আমরা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছি। আর ব্যর্থ হয়েছি বলেই রক্ষক আজ আমাদের কাছে সবচেয়ে বড় ভক্ষকে পরিণত হয়েছে।

আমাদের দেশের রক্ষকরা যে কতটা ভক্ষক তার একটা ছোট্ট পরিসংখ্যান দিলেই বুঝতে পারা যাবে: শুধুমাত্র চলিত বছরের ৪১ দিনে বিচার বহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন ৪৪ জন মানুষ। এই সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে নানা সময় অপহরণ হওয়া মানুষের মধ্যে সাত জনের লাশ পাওয়া গেছে। নিয়ে একটু গভীর ভাবে ভাবলে বিস্ময়ে হতবিহ্বল হতে হয়। কারণ একটাই, আর সেটা হলো এই আমাদের দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতি আর অসংঘটিত জনতার অসচেতনতা।

সত্যি কথা বলতে কি, সমস্ত অন্যায় অন্যায্যতা আর অবক্ষয়ে আমরা কেমন যেন অভ্যস্ত হয়ে গেছি। আজ সমাজে সমস্ত অনাচারই যেন আচারে পরিণত হয়েছে! সমাজে কারোরই কোন জবাবদিহিতার দরকার পড়ছে না।

বরং উলটোভাবে দেখছি সমাজে বড় ক্ষমতাধররাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় অনাচারকারী। এখন দেশের নাগরিক হিসেবে এই অনাচার থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে চাই কিনা? রাষ্ট্রের কাছ থেকে নিজের অধিকারগুলো নিশ্চিত বিধান করে আত্মমর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকার অধিকারগুলো নিশ্চিত করতে চাই কিনা? এটা একটা প্রশ্ন হতে পারে। যদি সত্যি চাই, তবে এই দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসা ছাড়া আমাদের সামনে কোন বিকল্প নেই, এই সত্য নিয়ে কোন প্রশ্ন থাকতে পারে না।

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ ভোর ৬:২০

সীমানা ছাড়িয়ে বলেছেন: আমেরিকা পশুর অধিকার নিয়ে যতই সচেতন হোক, মানুষের অধিকার নিয়ে সচেতন না। এখানে অনেক মানুষ টাকার অভাবে ভাল চিকিৎসা পায় না। কিংবা চিকিৎসা পেলেও তার ঋনের ভারে জর্জরিত হয়ে বাকি জীবন কাটায়। ওবামার হেলথ কেয়ার বিল নিয়ে রিপাবলিকানরা এবং হেলথ ইনসুরেন্স কোম্পানীগুলো যে খেল দেখালো তা তো সবারই জানা।

আমেরিকায় টাকা না থাকলে পড়াশুনার চিন্তা ভুলে যান। শুধুমাত্র টুয়েলভ ইয়ার পর্যন্ত যেতে পারবেন। ইউরোপের অনেক দেশ শিক্ষা নিয়ে বানিজ্য সমর্থন করে না। কিন্তু আমেরিকা এখনও এতটা সভ্য হয়ে উঠতে পারে নি।

ফরমালিন মাছের কথা বললেন? টাকা না থাকলে আমেরিকায় বিষ খেয়ে জীবন যাপন করতে হয়। সস্তা মুরগীতে গ্রোথ হরমোন ব্যবহার করে, যা ক্যান্সার ঘটায়। সস্তা বেকারীতে ট্রান্সফ্যাট ভর্তি থাকে। ট্রান্সফ্যাট একবার শরীরে একুমুলেট হলে অপারেশন ছাড়া সেটা বের করা যায় না। সেজন্য আমেরিকাতে অনেক বেঢপ সাইজের মোটা মানুষ দেখবেন। ইউরোপের অনেক দেশেই কিন্তু এইসব উপাদান ব্যবহার করা নিষিদ্ধ।

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:০২

আহমদ জসিম বলেছেন: আপনার মহামূল্যবান তথ্যগুলোর জন্য ধন্যবাদ। সংকট আসলে আমেরিকা কিংবা বাংলাদেশের নয়, এই সংকট পুজিঁবাদের তাই আমরা পজিঁবাদের ধ্বংস কামনা করতে পারি।

২| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:৪৯

পাঠক১৯৭১ বলেছেন: একটা জাতিকে 'কুকুর' ডাকছেন?
আপনি নিজেই কুকুর, কোন মার্কিন নাগরিক আপনাকে কুকুর হিসেবে পালনের জন্য যদি ভিসা দেয়, আপনি মার্কিন দেশে চলে যাবেন।

০১ লা মার্চ, ২০১৪ রাত ১:৫০

আহমদ জসিম বলেছেন: আমি না গেলেও আমার মতো অনেকেই যাচ্ছেন, এটা মজা করার বিষয় না। বড় দুঃখের বিষয়।

৩| ০১ লা মার্চ, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৪৮

মুহাম্মাদ মাহফুজুর রহমান শরীফ বলেছেন: আমেরিকা আসলে একটা বিশ্বসন্ত্রাসী দেশ।

০২ রা মার্চ, ২০১৪ রাত ২:১৯

আহমদ জসিম বলেছেন: একদম ঠিক বলেছেন।

৪| ০১ লা মার্চ, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:২৭

বেলা শেষে বলেছেন: All & every Thing is right but we have Need them for education , Job , Hightech. If india can use them - why not "We"?

০২ রা মার্চ, ২০১৪ রাত ২:২০

আহমদ জসিম বলেছেন: ভাই ইংরেজি বুঝি না।

৫| ০৮ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ৮:২২

কালীদাস বলেছেন: Click This Link

০৯ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১:২১

আহমদ জসিম বলেছেন: আপনার লিংকের জন্য ধন্যবাদ।

৬| ০৯ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১:২৮

মেকগাইভার বলেছেন: http://www.suprobhat.com/?p=134166

প্রথমেই সার্চ করে নিলাম লেখাটা অরিজিনাল আপনার কিনা। আজকাল অরিজিনাল পোস্ট খুব রেয়ার।

ব্রিলিয়ান্ট একটা লেখা। আপনাকে হাজার সালাম। আপনি হচ্ছেন একালের কলমের মুক্তিযোদ্ধা । আপনার যুদ্ধ / লেখা চালিয়ে যান। এখন এটা আমাদের খুব দরকার।

২৭ শে মার্চ, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১৭

আহমদ জসিম বলেছেন: ভাই, আপনার এমন মন্তব্য আমাকে অনুপ্রাণীত করবে নিশ্চিত। তবে লেখার আসল-নকল বিষয়টা ঠিক বুঝলাম না।

৭| ২৫ শে মে, ২০১৪ সকাল ৭:৪৪

ইসটুপিড বলেছেন: .....এখানেগুতান

৮| ২০ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১১:৪২

ইসটুপিড বলেছেন: তর তো লজ্জাশরম বইলা কিছু নাই, নেক্সট টাইম যখনই ব্লগে আসবি, আইসাই তো এই বালপুস্টের রিপোস্ট চুদাবি ফাস্ট পেজে। তরে তাই এডভান্স গাইল দিয়া গেলাম, তুই একটা নিল্লজ্জ আবাল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.