নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

খুব সাধারণ একজন মানুষ। বিনয়ে বলা সাধারণ নয়, সত্যিকারের সাধারণ। রূঢ় ভাষায় বললে \"গুড ফর নাথিং\"।

বিষাদ সময়

বিষাদ সময় › বিস্তারিত পোস্টঃ

রামপাল: গুরু বিষয়ে লঘু কথা (রম্য)

১৮ ই মার্চ, ২০১৭ দুপুর ২:২৩

বিঃ দ্রঃ- প্রবাদ আছে “১৮ মাসে বছর“ আমি ইহা বিশ্বাস করিনা, আমার ক্ষেত্রে ৩৬ মাসে বছর। না হইলে রামপাল যখন হটকেক তখন এই লেখা শুরু করিয়া ছিলাম আর এখন শেষ করিতে পারিবো কেন! সে যাহাই হোক লেখাটি বাসি হইলেও এখনও ইহাতে কিছু রস,স্বাদ রহিয়াছে মনে হয়, তাই পরিবেশন করিলাম



রামপাল বিদুৎ কেন্দ্র লইয়া চারিদিকে রাম-রাম, পাল-পাল রব উঠিতেছে। এক দল এর নাম শুনিলেই রাম-রাম বলিয়া জিহ্বায় কামড় দেন, বলেন রাম কোথায় এতো আস্ত রাক্ষস! ভস্ম উড়াইবে, গন্ধক নির্গমন করিবে, পশুর নদি হইতে পিপা, পিপা জল গিলিয়া আবার পশুর নদিতেই গরম পেচ্ছাব করিবে। ইহাতে আমাদের সতী সাদ্ধী সুন্দরবনের সতীত্ব শেষ হইয়া যাইবে। আরেক দল বলিতেছে, তোমরা শুধু রাম-রাম করিলে! ইহার পালটি দেখিলে না। ইহা যে পাল তুলিয়া নৌকায় করিয়া কাঁড়ি কাঁড়ি লক্ষী আনিবে তাহা দেখিলে না! যে রাক্ষস কে দেখিয়া তোমরা মূর্ছা যা্ইতেছ, কলি কালে তাহাকে দেখিয়া এত ভীত হইবার কোনরূপ কারণ নাই। আমরা উহার মূখে সাইলেন্সার লাগাইব, নাসিকায় ২০০ শত ফুট চিমনি লাগাইবো, সে আর আসে পাশে ভস্ম নির্গত করিতে পারিবে না। আমরা উহাকে চুচু ডায়াপার পরাইয়া দিব ইহাতে সে গরম পেচ্ছাব করিয়া পশুর নদী নোংরা করিতে পারিবে না, তাহা ছাড়া ইহাকে সুন্দরীর (সুন্দরবন) নিকট হইতে ১৪ ক্রোশ দূরে রাখিবো যাহাতে সুন্দরীর প্রতি উহার কু-দৃষ্টি না পড়ে।

অপর দল ইহা শুনিয়া হা হা করিয়া উঠিলেন! মাত্র ১৪ ক্রোশ! এমন রাক্ষস কে বিশ্বশাস্ত্র অনুযায়ী ২৫ ক্রোশ দূরে রাখিবার নিয়ম রহিয়াছে। এ পক্ষের উত্তরও রেডি , দেখো বাপু ইহা আধুনিক রাক্ষস ঢালিউড, বলিউডের সুন্দরীদের সাথে মিশিয়া অভ্যস্ত, তোমাদের আদি যুগের গেঁয়ো সুন্দরীকে দেখিয়া তাহার মেশিন পত্র গরম হইয়া যাইবে না। তাহা ছাড়া ইহা কিছু সভ্যতা, ভদ্রতা শিখিয়াছে, তোমাদের সুন্দরীর কোন বস্ত্র ধরিয়া টানাটানি করিবে না।



দু্ই দলেই ধেড়ে ধেড়ে পণ্ডিত রহিয়াছেন। কেহ শাস্ত্রের (কর্মে নহে) জ্বোরে বলিয়ান, কেহ বা বলিয়ান দক্ষিনার জোরে। একদল বলিতেছেন, রাক্ষস কে এ গ্রামে আনার উদ্দেশ্য কি বুঝিনা ? ও গ্রামে বাসি পচা খাদ্য মজুদ রহিয়াছে। সে সব বাসি পচা খাদ্য রাক্ষসকে এ গ্রামে আনিয়া খাওয়াইবে, তারপর রাক্ষস পেট নামাইয়া, বমন করিয়া এ গ্রামের সুন্দরীর বেশ-ভুষা নষ্ট করিবে আর কলির ভাগের অর্ধেক লইবে ঐ গ্রামবাসী। তাহাছাড়া ঐ গ্রামের সব বাসি পচা খাবার শানকিতে ভরিয়া, তলাফাটা নৌকায় করিয়া সুন্দরীর বুকের মধ্যে দিয়া রাক্ষসের জন্য আনিবে। ওসব বাসি পচা খাবারের গন্ধে আমাদের সুন্দরীর ওলাওঠা হইয়া যাইবে।

অপর দলের পণ্ডিতেরা এর জন্য প্রস্তুত ছিলেন। তাহারা বলিলেন, তোমরা সব মুর্খের দল। আমরা রক্ষসের খাবার আনিব অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা হইতে আর সে সব ফ্রেশ খাবার হটপটে ভরিয়া ডুবোজাহাজে করিয়া লইয়া আসিব। তোমাদের সুন্দরী টেরও পাইবে না আর যদিবা পাই তবে এসব খাদ্যের জন্য লোল পড়িবে।



শাস্ত্রীয় পণ্ডিতেরা তাহাদের এসব কথ মানেনও না বিশ্বাস ও করেন না। এরা এ্ও বুঝেন না যে ইহা সত্য যুগ নহে, কলি যুগ। এ যুগে অনেক কিছুর সাথে আপোস করিতে হয়। তাহাছাড়া সুন্দরী এখন আর সতি বা যুবতী নাই। মৌয়াল তাহার মৌ খাইয়াছে, বাওয়ালীরা খাইয়াছে অলঙ্কার আর যে হনুর দলকে সুন্দরী রক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হইয়াছে তাহারাই সুন্দরীকে রাবণের হাতে তুলিয়া দিয়া গাড়ি, বাড়ি করিয়াছে আবার কেহ বা মালকড়ি তোষকের তলে রাখিয়া ধরা খাইয়াছে। অপরদিকে দাদা বাবুরা জল বন্ধ করিয়া সুন্দরীকে নেমক জলে স্নান করাইয়াছেন। সর্বশেষ আইলা, সিডর লীলা করিয়াছে তাহার সঙ্গে। এখন সুন্দরী তাহার রূপ, লাবন্য, যৌবন হারাইয়া ভগ্ন স্বাস্থের প্রৌঢ়া।


সে যাহাহোক শস্ত্রীয় পণ্ডিত আর সুন্দরীর প্লেটোনিক প্রেমিকেরা কয়দিন আর ঘরের খাইয়া বনের মোষ তাড়াইবেন। তাহাছাড়া রাক্ষসের দলে রহিয়াছেন দাদাবাবুরা আর দিদিমনি এবং তার পাইক, পেয়াদা. তীরন্দাজ আর বরকন্দাজরা। অতএব দ্বিতীয় সীতা বিসর্জনের কাহিনি যে আমাদেরকে চোখের জলে লিখিতে হইবে তাহা বুঝা যাইতেছে।



পুনশ্চঃ একটি অপ্রাসঙ্গিক কথা বলি। মায়ের মুখে শোনা। ছোট বেলায় আমার মামার টিটানাস হয়েছিল । জমে মানুষে টানাটানির চোটে চামড়া আর হাড্ডি ছাড়া তখন মামার শরীরে আর কিছুই ছিল না। সে সময় নানীকে গৃহস্থালী কাজে সাহায্য করিতেন সনাতন ধর্মের এক প্রৌঢ়া মহিলা। তিনি প্রতিদিন সন্ধায় ভগবানের কাছে এই বলে চোখের জল ফেলতেন “ হে ভগবান তুমি কলাটা খাইয়া কলার ছিলকাটি ফেলাইয়া দাও“। উল্লেখ্য যে ভগবান তার চোখের জলের মূল্য দিয়েছিলেন। বোধ করি আমাদেরও এখন সুন্দরবনের জন্য এমন প্রার্থনা করা ছাড়া আর কিছু করার নাই।

ছবি সূত্রঃ ইন্টারনেট

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৩:২২

হাসান জাকির ৭১৭১ বলেছেন: দারুন হইয়াছে, ব্যাপক মজা লইয়াছি ভাই.................

১৮ ই মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৫:৫৫

বিষাদ সময় বলেছেন: পোস্টের হিউমারের স্বাদটুকু পেয়েছেন জেনে খুশি হলাম। সঙ্গে যদি এর ট্রাজেডিটা বুকে ধারণ করতেন তবে আরও খুশি হতাম। ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য।

২| ১৮ ই মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৩:৩১

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: হুম।
সুন্দরীকে নিয়ে মজা করাই বাকি আছে। ওটা তো যাবে।

১৮ ই মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৫:৫৮

বিষাদ সময় বলেছেন: সঙ্গে পেয়ে খুশি হলাম। শিরোনামে রম্য লেখা হলেও মূলতঃ এটি একটি স্যাটায়ার................মনে হয় ঠিকমত প্রকাশ করতে পারিনি।

৩| ১৮ ই মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৪:৪১

চাঁদগাজী বলেছেন:


৪ বছর পর পোস্ট দিলেন; এবার কমেন্ট যদি না করি, আরও ৪/৫ বছর অপেক্ষা করতে হবে!

১৮ ই মার্চ, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:০১

বিষাদ সময় বলেছেন: পোস্টে আসায় স্বাগতম। এই চার বছর কিভাবে পার করেছি তা শুধু আল্লাহই জানেন। উৎসাহ দেয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা।

৪| ১৮ ই মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৫:৪২

করুণাধারা বলেছেন:

ঠিকই বলেছেন। এখন কেবল চোখের জলে দ্বিতীয় সীতা বিসর্জনের কাহিনী।লেখার অপেক্ষা। পোস্টে +

১৮ ই মার্চ, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:০৬

বিষাদ সময় বলেছেন: এখন কেবল চোখের জলে দ্বিতীয় সীতা বিসর্জনের কাহিনী লেখার অপেক্ষা।।
কথাটি ভুল প্রমান হলেই খুশি হতাম। কিন্তু মনে হয় বিধি বাম। ধন্যবাদ সহমর্মী হওয়ার জন্য। আর পোস্টে + এর জন্য কৃতজ্ঞতা।

৫| ১৮ ই মার্চ, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৪৩

শেয়াল বলেছেন: খেক খেক :P =p~ :-P

১৮ ই মার্চ, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৫৩

বিষাদ সময় বলেছেন: খেক খেক না । আমার মনে হয় এখন এটার :-< প্রয়োজন। ভাল থাকুন।

৬| ১৮ ই মার্চ, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৪২

ইউনিয়ন বলেছেন: B-)) যারা সুন্দরি সুন্দরি গেল বলে হায় হায় রব তুলছেন তারা ভিলেনের পা চাটা ছাড়ান দিতে পারেনি। সেজন্য সুন্দরবন রক্ষায় জনমত থাকলেও জনগণ তাদের সাথে সায় দেয়নি বা সম্পৃক্ত হয়নি। আপনি এক এক জনের আচলের নিচে থেকে বলবেন, আচল ফুটা ইহা চেঞ্চ করেন।
আপনার কথা অনুযায়ী সে কি কাপড় চেঞ্চ করিতে বাধ্য!

২০ শে মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৩:৪০

বিষাদ সময় বলেছেন: ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য। সাধারণ মানুষের মধ্যে কেমন একটা গা বাঁচানোর প্রবনতা চলে এসেছে। নিজের ঘাড়ে এসে না পড়লে কেউ কোন ব্যপারে ইনভল্ভ হতে চায় না।

৭| ১৯ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ১:১৭

আখেনাটেন বলেছেন: বুঝেও এখন না বুঝার ভান করে থাকলেই দেশের তথা নিজের উন্নতি এখন। তাই চুপ থাকায় শ্রেয়।

২০ শে মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৩:৪৩

বিষাদ সময় বলেছেন: ধন্যবাদ সাথে থাকায়।

বুঝেও এখন না বুঝার ভান করে থাকলেই দেশের তথা নিজের উন্নতি এখন। তাই চুপ থাকায় শ্রেয়।
খুব বিপদ জনক প্রবনতা, দেশের জন্য এমনকি নিজের জন্যও।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.