নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মাঝে মাঝে দুরন্ত হই!! প্রকৃতির রূপ,রস,গন্ধ খোঁজতে যে দিকে চোখ যায় সেদিকেই বেরিয়ে পড়ি। খুঁজে ফিরি আপন গন্তব্য!!! তবে,প্রতিটা ক্ষনেই ব্যর্থতার সম্মুখীন হতে হয় তথাকথিত কিছু স্বার্থপরদের কাছে!!

Akm Khokon

অপ্রাপ্তিতেই পূর্ণতা পাক বিষম জ্বালা। বরং দূরেই থাকি, নীরবে দেখি লুকোনোই থাক ভালবাসা।

Akm Khokon › বিস্তারিত পোস্টঃ

অপ্রত্যাশিত স্বপ্ন

০৮ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ২:৫৭

গ্রামের মধ্যবিত্ত কোন এক কৃষক পরিবারে জন্ম নেই নিপু। পরিবারের প্রথম সন্তান বলে সবাই অনেক বেশি আদর করতো। যেন সবার একমাত্র আদর তার জন্যই রাখা। তার জন্মের সময় তার পরিবারের অবস্থা ছিল গোলা ভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু, মাঠ ভরা ফসল! কিছুটা এমন। তার ওপর পরিবারের একমাত্র সন্তান। কিছুতেই অপূর্ণতা ছিল না তার। আস্তে আস্তে সবার আদর আর মমতায় বেড়ে উঠছে নিপু। শিশু থেকে কিশোর! ঠিক তখন, আস্তে আস্তে তাদের পরিবারে নেমে আসে কালো দিন। নিপুর বাবা অনেক সৎ ও ধার্মিক। শত ব্যস্ততার মাঝেও তিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতেন। কিন্তু,তিনি সবসময় তার শৈশবকালের বন্ধুদের সময় দিতেন। কিন্তু, কিছু বাজে বন্ধুদের পরোচনায় তার বাবা নেশায় আসক্ত হন। আস্তে আস্তে হারিয়ে যায় কাজের মানসিকতা,আকড়ে ধরে অলসতা। ফলে,তাদের সংসারে নেমে আসে অভাব। তিনি নিপুকে মানুষের মতো মানুষ করার স্বপ্ন দেখতেন। অনেক স্বপ্ন ছিল নিপুকে ডাক্তার বানাবে। সেই স্বপ্ন নিয়ে নিপুকে একটা কিন্ডার গার্ডেন স্কুলে ভর্তি করলেন। কিন্তু, তখন ঠিক সময়ে স্কুলের বেতন দিতে পারছিল না নিপুর বাবা। খুব কষ্টে ছেলের স্কুলের বেতন যোগান দিতে হতো নিপুর বাবাকে। অভাবে সংসার আর চলে না। তখন, নতুন এক কষ্টের সূচনা হলো নিপুর। স্কুল থেকে ফিরেই দেখতে হচ্ছে মা-বাবার দিনভর ঝগড়া। যা কিনা সে আগে কখনোই দেখেনি। এখন আর নিপু আগের মতো আদর পাইনা, কেউ আগের মতো নিপু বাবা আমার বলে বুকেও টেনে নেয় না। সবাই যেন নিপুর পর হয়ে গেছে। মুখের সেই মায়াবী হাঁসিটাও কেমন জানি হাঁরিয়ে গেছে।
আগামি পরশু থেকে নিপুর পরীক্ষা!! আর এদিকে মা-বাবার ঝগড়া। যাই হোক, নিপু মন খারাপ নিয়েও খুব ভালই পরীক্ষা দিল। পরীক্ষায় সে প্রথম স্থান অধিকার করেছে। সকল শিক্ষক-শিক্ষিকারা নিপুকে নিয়ে গর্ব করে। তাদেরও তাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন। তারপর থেকে প্রতিবারই সে প্রথম হয়েছে।

এবার নিপু সমাপনী পরীক্ষা দিবে। কিন্তু, তার পরিবারের আর্থিক সংকট দেখে নিপু স্কুল পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিলো। অনেক প্রতিবন্ধকতা আর বাবার অনিচ্ছায় নিপু একটা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হলো। কেমন জানি,অভাবের তাড়নায় নিপুর বাবা পাগলের মতো হয়ে গেছে। আর সবসময় সংসারে ঝগড়া লেগেই আছে। এরকম প্রতিবন্ধকতা আর ঝগড়া-বিবাদের মাঝে নিপু সমাপনী পরীক্ষা দিল। নিপু প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছে।

নিপুর সব বন্ধুরা হাই স্কুলে ভর্তি হয়ে গেছে। টাকার অভাবে তার পড়ালেখা বন্ধের উপক্রম। তবে, অবশেষে নিপুর বাবা তাকে একটা নিম্ন শ্রেণীর হাই স্কুলে ভর্তি করে দিলেন। সেখানে আরও দুটি বছর কেটে গেল নিপুর। দারিদ্রের নির্মম কষাগাতে নিপু লেখাপড়া থেকে একটু পিছিয়ে পড়েছে। নিপুর এই অবস্থা দেখে তার বাবা তার পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি করে তাকে একটা ভাল স্কুলে ভর্তি করালেন। সেখানে ভালই লেখাপড়া হচ্ছিল তার। সামনে নিপুর জে.এস.সি পরীক্ষা। পরীক্ষার জন্য ভালই প্রস্তুতি চলছে। জে.এস.সি পরীক্ষায়ও নিপু ভাল রেজাল্ট করলো। এখন নিপু অনেক স্বপ্ন। সে তার বাবার স্বপ্ন পূরন করতে চাই।

নবম শ্রেনীর প্রথম ক্লাস। সে তার বাবার স্বপ্ন পূরনের জন্য সায়েন্স নিলো। যথরীতি সায়েন্সের ক্লাস চলছে। কিছুদিন ক্লাস করতেই সে লক্ষ্য করলো একটা মেয়ে তার দিকে বার বার তাঁকাচ্ছে। সে মুখ ফিরিয়ে নিলেও তাঁকাচ্ছে। এখন,নিপুও এর রহস্য খুঁজে। পড়ায় বসলেই ঐ মেয়েটার কথা মনে পড়ে। কেমন জানি,নিপু মেয়েটার প্রতি একটু আবেগ প্রবণ হয়ে পড়লো। সারাক্ষণ শুধু মেয়েটাকেই ভাবে। খুব তাড়াতাড়ি স্কুলে চলে যায় মেয়েটাকে দেখার জন্য। এভাবেই ১বছর কেটে যায়।
নবম শ্রেনীর বার্ষিক পরীক্ষায় নিপু ভাল রেজাল্ট করতে পারেনি। সে দশম শ্রেনীতে উঠলো। কিন্তু, মেয়েটার প্রতি নিপু আরও বেশি আবেগ প্রবন হতে শুরু করলো। মেয়েটাকে অনেক বেশি ভালবেসে ফেলেছে নিপু। তখন, নিপু ভূলে গিয়েছিল বাবার স্বপ্ন,পরিবারের ভবিষ্যৎ। মাত্র ক'দিন পরেই এস.এস.সি পরীক্ষা। কিন্তু, তার পড়ালেখায় কোন মন নেই। ঠিক ঐ মূহূর্তে, কারো মাধ্যমে সে মেয়েটাকে তার ভালবাসার প্রস্তাব পাঠালো। মেয়েটা বলছি এখন নাকি প্রেমের সময় নয়। সামনে পরীক্ষা!!!
আর এই ব্যর্থতায় নিপু অনেকটা ভেঙ্গে পড়লো। কোনভাবেই সে পড়ায় মন বসাতে পারছিল না। কেমন জানি, আগের সেই নিপু হাঁরিয়ে গেছে,ভূলে গেছে মা-বাবার স্বপ্ন। কাল থেকে নিপুর পরীক্ষা। কিন্তু, এখনো পড়ার টেবিলে বসতে ইচ্ছে করছেনা। আর ওইদিকে তো বাবা-মার ঝগড়া বিভেদ লেগেই আছে। সবমিলেই নিপু খুব ভাল পরীক্ষা দিতে পারেনি। নিপুর এস.এস.সি রেজাল্টও বেশি ভাল হয়নি,যা অপ্রত্যাশিত তার মা-বাবার। এভাবেই কাঁচের মতো ভেঙ্গে গেল মা-বাবার বুকভরা স্বপ্নগুলো। কাঁন্নায় ভেঙ্গে পড়লো তার পরিবার। অবশেষে অপ্রাপ্তিই থেকে গেল নিপুর তথা তার মা-বাবার স্বপ্নগুলো।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই আগস্ট, ২০১৬ সকাল ৮:০৪

টাইম টিউনার বলেছেন: বাস্তবিক ........

২| ০৮ ই আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১১:৪৫

Akm Khokon বলেছেন: অবশ্যই বাস্তবিক!! এভাবেই আমাদের চারপাশের নিপুরা অচিরেই হারিয়ে যাচ্ছে...
ভেঙ্গে যাচ্ছে মা-বাবার স্বপ্ন!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.