নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলোকসন্ধানী

মন থেকে বা্ঁচার চেষ্টা করে চলেছি......

আলোকসন্ধানী › বিস্তারিত পোস্টঃ

হঠাৎ বৃষ্টি

০১ লা এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১১:৫৬

ঝড়। আকাশের রঙ যেন ক্ষণে ক্ষণে পালটে যায়। ঠাণ্ডা বাতাস নিয়ে আসে বৃষ্টির সুসংবাদ এই ধরায়। প্রচণ্ড বাতাসে সব এলোমেলো। কারো ঘর ভাঙে, কেউ কেউ নতুন স্বপ্ন বনে আরও সুন্দর, বড় ঘর গড়ার। ঝড়ের তাণ্ডবে যখন সব এলোমেলো, ঠিক তখনই ঘুম ভাঙল রিনার। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস নেই রিনার। তাছাড়া আজকে সকাল থেকেই ঝড়, বৃষ্টি। তাই ভাবছে সকালের ক্লাসে আজ আর যাবেনা। মা ডেকেই চলেছে " তোর না আজকে সকালে ক্লাস, মা যাবিনা?" মায়ের এই একটা কাজই প্রচণ্ড অপছন্দের রিনার। "না আজ যাবনা মা" আধো ঘুম আধো জাগরণে উত্তর রিনার। প্রচণ্ড শব্দে হঠাৎ কোথায় যেন বাজ পড়লো। রিনার ঘুম পুরোপুরি ভেঙে গেলো। মনে মনে ভাবল, "হায় আল্লাহ্‌ আজ সকালের ঘুমটাই মাটি হল, না জানি আজ কপালে কী আছে!" ঘড়িতে সকাল দশটা বাজে। রিনার ঘরের জানালা দিয়ে আকাশটা স্পষ্ট দেখা যায়। এজন্যই এই ঘরটা ওর কাছে এত প্রিয়। আকাশে কালো মেঘ। চারিদিকে অন্ধকার। জানালার কাঁচে বাতাসের শোঁ শোঁ শব্দ। হঠাৎ অজানা আশংকায় রিনা কেঁপে উঠলো। খাটের উপর মোবাইলটা বেজেই চলেছে। মিলি ফোন করেছে। "কিরে আজ ভার্সিটি যাবি না? কামাল স্যারের একটা জরুরী ক্লাস আছে না আজকে?" মিলিরা বড়লোক। ওদের বাসায় পাঁচ, ছয়টা গাড়ি সবসময় পড়ে থাকে। মিলির বাবা, মা দুজনের অফিসের জন্য দুটি করে গাড়ি রয়েছে। বাসার গাড়িগুলো মিলি আর ওর একমাত্র ছোট ভাই মারুফের ব্যবহারের জন্য। মাঝে মাঝে রিনার একটু হিংসা হয় মিলির অবস্তা দেখে। রিনা না বলে ফোনটা কেটে দিল। প্রচণ্ড মাথা ধরেছে। মাইগ্রেনের ব্যাথাটা মনে হয় আবার উঠেছে। ঔষধ খেয়ে রিনা শুয়ে পড়লো। বিকালে হাসপাতালে যেতে হবে। ওর দাদুর শরীরটা কয়েক মাস ধরেই খুব অসুস্থ। দুপুরে ভাত খেয়ে বাসে করে রওনা হল রিনা। হাসপাতাল ওর বাসা থেকে বেশ খানিকটা দূরে। আর আজকে রাস্তায় প্রচণ্ড ট্রাফিক জ্যাম। আকাশ এখনো কালো। বৃষ্টি নেই। তবে বেশ বাতাস বাইরে। ধৈর্যের শেষ সীমায় পৌঁছে ও মোবাইলে গান শুনতে লাগলো। ওর একটা খুব পছন্দের গান। “এই মেঘলা দিনে একলা ঘরে থাকে না তো মন, কাছে যাব কবে পাব ...............” অবশেষে বাস পৌছালো। সন্ধ্যার কাছাকাছি সময়টা। রিনার আশঙ্কাই সত্যি হল। হঠাৎ প্রচণ্ড বাতাস বইতে লাগল আর সেই সাথে শহরের ধুলাবালি। রিনা মুখ ঢেকে কোনমতে রাস্তা পার হল। বড় বড় কয়েক ফোঁটা বৃষ্টি পড়ল ওর গায়ে। এবার তুমুল বাতাস আর সেই সাথে অঝোর বৃষ্টি শুরু হল। একটা জায়গায় রিনা দাঁড়ালো। বৃষ্টির তোড়ে যেন সব উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে। রিনার গায়ে বৃষ্টির ছোঁয়া লাগলো। কয়েকটা বাচ্চা ছেলে বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে ভিজছে। রিনা রুমার কাছে ফোন করলো। "কীরে কোথায় তুই? তোর না হাসপাতালে আসার কথা সেই বিকেলে।" রিনা রুমার কাছ থেকে হাসপাতালের নামটা জেনে নিলো। বলল ও বৃষ্টিতে আটকা পড়েছে কাছেই আছে। প্রায় ২ ঘণ্টা হয়ে গেল বৃষ্টি থামার কোন লক্ষণই নেই। নানা রকম দুশ্চিন্তা ওর মনে আসছে। "আজ সারা রাত কী এখানেই কাটবে?" কোন রিকশাও যেতে চাচ্ছে না। অবশেষে বৃষ্টি কিছুটা কমলো। তবে বাতাস এখনো আছে। রিনা রওনা হল। বৃষ্টিতে রাস্তায় পানি জমে গেছে। কয়েকটা বাজে লোক ঘোরাফেরা করছে। ওর দিকে কেমন করে তাকিয়ে রয়েছে। রিনার হঠাৎ খুব ভয় হল। রাস্তা প্রায় ফাঁকা। একজন বা দুইজন দেখা যায়। রিনা কী করবে বুঝে উঠতে পারল না। একজনকে জিজ্ঞাসা করলো হাসপাতালের ঠিকানাটা। সে বলল, "আপনি আমার সাথে আসেন, আমি যাচ্ছি।" একে ঝড়ের সময় অনিচ্ছাসত্ত্বেও রিনা রওনা হল। ভাবল ছেলেটার অন্য কোন মতলব নাইতো। বেশ খানিকটা দূর থেকে ও পিছনে আসতে থাকলো। কিছুক্ষণ পর সেই হাসপাতালের সামনে পৌঁছে গেলো রিনা। তাড়াতাড়ি ভিতরে ঢুকে গেল রিনা। হঠাৎ ছেলেটির কথা মনে পড়লো ওর। কিন্তু কোথাও তাকে আর পাওয়া গেলনা। ভাবল হঠাৎ বৃষ্টিতে এই ঘুণে ধরা যান্ত্রিক শহরে একজন মানুষের দেখা পেল। রুমার ফোনে রিনার ভাবনার জগত থেকে ফিরে এলো। "উপরে আয় দাদু তোকে দেখতে চাইছে।" রিনা তার ভাগ্যকে মনে মনে ধন্যবাদ দিয়ে উপরে রওনা হল।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.