![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আগের অংশ
১২.
বই হাতে চলে এলাম মিসির আলির বাসায়। মিসির আলি তখনো ফেরেন নাই। বাকের ভাই গান শুনছেন। রূপা নেই। শুভ্র বসে বসে রুবিক্স কিউব মিলাচ্ছে। আমি "How to think like sherlock holmes" বইটা তার কাছে দিয়ে চেয়ারে বসলাম। মাথায় শুধু ধাঁধা ঘুরছে।
শুভ্র বইটা নেড়েচেড়ে বলল, এই বইটা তো আমি আগে পড়েছি। আবার পড়ব?
'হুম, পড়। ওখানে একটা ধাঁধা লুকানো আছে। খুঁজে বের কর।
শুভ্র বিছানায় শুয়ে শুয়ে পড়তে লাগলো। আমি বাকের ভাইকে বললাম, 'একটা কৌতুক শুনবেন?
'এটা কি কৌতুক শোনার মতো পরিবেশ?'
'তাহলে বাহিরে চলেন, কৌতুক শোনার পরিবেশ খুঁজি। বুড়িগঙ্গার পাড়ে বসে শুনলে কেমন হয়?'
'ফাজলামো না করে, বলে চুপ হউ। টেল, দেন কিপ সাইলেন্স।'
'এক ছেলে খুব বজ্জাদ। পাড়ার সবাই তার অত্যাচারে খুব অতিষ্ঠ। পারলে তাকে ধরে সবাই পিটায়। একদিন তার ক্যান্সার হল। সে মারা যাওয়ার আগে সবাইকে ডেকে বলল, আমি তো আপনাদের প্রতি অনেক অন্যায় করেছি, আপনাদের অনেক জ্বালিয়েছি। তাই আমার মৃত্যুর পর আমার মৃতদেহকে বাঁশে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখবেন। তাতে যদি আমার উপর আপনাদের রাগ কমে আমার আত্মা শান্তি পাবে।
ছেলেটা মারা যাওয়ার পর তার অন্তিম ইচ্ছা পূরণ করতে পাড়ার সবাই তার মৃতদেহকে বাঁশে ঝুলিয়ে রেখে দিল। দুইদিন পরই সেটা পচে গন্ধ বের হতে লাগল। পুলিশ এল। এসে পাড়ার সবাইকে ধরে নিয়ে গেল। পাড়ার লোকেরা বলতে লাগল, শালার ব্যাটা শালা। মরার পরও তোর শয়তানি শেষ হল না। বেঁচে থাকতেও জ্বালিয়েছিস, মরে গিয়েও জ্বালালি।'
আমি একটা বিকট হাসি দিলাম। কিন্তু বাকের ভাই নির্বাক। তিনি চুপ করে রইলেন। প্রিয়জন হারানোর শোক সবচেয়ে বড় শোক। এই শোকে মানুষ পাথর হয়ে যায়। বাকের ভাইও সেই পথে। হিমুদের তাই প্রিয়জন থাকতে নেই। হিমুরা একা।
শুভ্র চেঁচিয়ে উঠে বলল, ''ভাইয়া আমি ধাঁধাটা পেয়েছি।'
'কোথায়? কি ধাঁধা?'
শুভ্র শোয়া থেকে উঠে বসল। বইয়ের পেজ নাম্বারের কাছে কিছু ডট দেখিয়ে বলল, এগুলো ব্রেইল পদ্ধতিতে লেখা। আমি ব্রেইল পদ্ধতি জানি। ব্রেইল পদ্ধতিতে একটি চতুর্ভুজ আকৃতির বক্স-এ ছয়টি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিদ্র থাকবে ৩ x২ কলামে। অর্থাৎ নিচের দিকে তিনটি এবং পাশাপাশি ২ টি। প্রতিটি ছিদ্র এক একটি বর্ণমালা,সংখ্যা নির্দেশ করবে। এই ছয়টি খালি ছিদ্রের মধ্যে একটু উঁচু বা পূর্ণ যেগুলো থাকবে সেগুলোই হচ্ছে বর্নমালা বা সংখ্যা চেনার নির্দেশক।'
'এখানে তো উঁচু নিচু দেখছি না। শুধু পেন্সিলে ডট দাগ দেখছি।'
'আপনি অন্ধ নন বলেই হয়তো এভাবেই লিখেছে।'
'কি লিখেছে?'
'একেক পাতায় একেক অক্ষর লিখেছে।'
'সব অক্ষর মিলিয়ে বল।'
'C'
'হুম'
'O G X'
'হুম'
'A G D'
'হুম'
'S I E'
'সবমিলিয়ে তাহলে কি হল?'
'COGXAGDSIE'
'এটার মানে কি?'
'এটাকে তো মনে হচ্ছে কোন এনক্রিপ্ট কোড। এটাকে ডিক্রিপ্ট না করলে বোঝা যাবে না।'
'আমি তো করতে পারি না।'
'কে পারে?'
'মিসির আলি আংকেল করতে পারেন।'
'মিসির আলি তো বাইরে।'
ওহ! মিসির আলি, আপনি কোথায়?
বলতে বলতেই মিসির আলি দরজায় উকি দিলেন। বললেন, 'কি সমস্যা? কারো আসার কথা ছিল। এসেছে?'
শুভ্র বলল, না আংকেল, কেউ আসে নাই। আপনি একটা এনক্রিপ্ট কোড ডিক্রিপ্ট করতে পারবেন?'
'এনক্রিপ্ট কোডটা বল।'
'COGXAGDSIE'
মিসির আলি পেন্সিল আর খাতা নিয়ে বসতে বসতে বললেন, '১০ অক্ষরের শব্দ। একে সাজান যাবে ১৮১১৪৪০০ ভাবে। কিন্তু আমাদের দরকার এক বা একাধিক অর্থবোধক শব্দ। শুধু অর্থবোধক হলেই হবে না, যা চাচ্ছি তাই পেতে হবে।'
মিসির আলি চুপচাপ কাজ করতে লাগলেন। আমি আবার বেড়িয়ে পড়লাম। তীব্র রোদ উঠেছে। এই রোদে গা ভেজাতে হবে। আমাকে সবিতাকে খুঁজে পেতে হবে। আমি তার মুখ থেকেই সব জানতে চাই। একজন মৃত মানুষের কাছে থেকে। জানতে চাই, সে কি চায়?
২০.১১.১৪
(চলবে)
©somewhere in net ltd.