নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বাপ্নিক এই আমি

আমি কাল্পনিক সজল

আমি মানুষ হিসেবে খুবই সরল কারণ আমার মনে অত্যাধিক প্যাঁচ।

আমি কাল্পনিক সজল › বিস্তারিত পোস্টঃ

অণুগল্প: কাকতাড়ুয়ার জীবন

১০ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১২:৪০

'হ্যালো'

'তোমার ঠোঁটদুটো ভারি সুন্দর, তা কি তুমি জানো?'

আকস্মিক প্রশংসা মানুষকে বিব্রত করে। আমাকেও করলো। সামলে নিয়ে বললাম,
'আমাকে তো সামনাসামনি দেখনি, কি করে বললা?'

'কোনো বিদঘুটে গাছে সুন্দর ফুল ফুটতে দেখেছো?'

'মনে হয় দেখি নি।'

'তাহলে যার এমন সুন্দর কন্ঠ তার ঠোঁট সুন্দর না হয়ে কি পারে?'

একের মধ্যে দুই মিথ্যা প্রশংসা। তারপরও সত্য বলে মেনে নিতে খুব ইচ্ছা হয়। আর ইচ্ছা হলো মিথ্যাকে সত্য বানানোর যন্ত্র।

দ্বিধান্বিত কন্ঠে বললাম, 'কবি তো। কথার মায়াবলে মায়াজালে আটকাতে চাও।'

'তুমিই বলো, তোমার ঠোঁট কি সুন্দর নয়?'

মুঠোফোন কানে রেখেই আয়নায় তাকালাম। চিরকাল যে ঠোঁট রাঙিয়ে এসেছি তাতে কোনো সৌন্দর্য খুঁজে পেলাম না। তারপরও চিরসত্যটাকে মেনে নিতে ইচ্ছা হয় না। ছলনায় ভুলতে ইচ্ছা করে। তাই হয়তো বললাম,
'তাই বুঝি? শুধু আমার ঠোঁটই সুন্দর আমি না?'

'তুমি... ইমমম...
চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,

মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রের’পর

হাল ভেঙে যে নাবিক হারায়েছে দিশা...'


'হি হি হি।'
আমি হেসে ফেলি। কবিরা সুযোগ পেলেই এই কবিতার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করে। আবার শুনতে ভালোই লাগে।

'শুনেছো, কতো সুন্দর করে হাসতে পারো?'

'কী জানি?'

'আচ্ছা, একটা কথা রাখবা?'

'কি কথা?'

'একটা কালো টিপ কপালে দিবা? টিপটা অনেক ছোট্ট, কিন্তু অনেক গভীর কালো। ঠিক দুই ভ্রুর মাঝখানে। যেন এক গভীর মায়া...'

এই কথাগুলো ভেতরের না পাওয়াগুলোকে গভীরভাবে নাড়া দেয়। কবি ছাড়া আর কেউ দিতে পারে না কেনো? বনফুলের নিমগাছটার মতো ইচ্ছে করে কবির সাথে যাওয়ার। কিন্তু পারি না। হয় না।

"মাটির ভেতর শিকড় অনেক দূরে চলে গেছে। বাড়ির পিছনে আবর্জনার স্তূপের মধ্যেই দাঁড়িয়ে...।"

খুব সুন্দর করে দাশ লিখেছেন তার মনের কথা...
"সুরঞ্জনা, ওইখানে যেও নাকো তুমি,
বোলো নাকো কথা ওই যুবকের সাথে;"


কিন্তু সুরঞ্জনের কথা কেনো লিখেনি?

"সুরঞ্জন, ওইখানে যেও নাকো তুমি,
বোলো নাকো কথা ওই যুবতীর সাথে।"

কিংবা সুনীলের আক্ষেপ,
"বিশ্ব সংসার তন্ন তন্ন করে খুঁজে এনেছি ১০৮ টা নিলপদ্ম

তবুও কথা রাখেনি বরুনা।"


শুধু বরুনারাই কথা রাখে না? বরুনদের দোষ দেবার কেউ নেই।

কবির খুব কাছে যেতে চাই। কবিও কাছে নেয়। একদম মুখোমুখি, বনলতার মতো। কিন্তু যখন ছুঁতে যাই, অনুভব করি স্বচ্ছ অথচ দৃঢ় কাঁচের দেয়ালটা। কবিও যেন মুচকি হাসি দেয়। বলে, "তোমার খুব কাছেই রয়েছি অধরা হয়ে।"

একটা সময় সব লজ্জা ভুলে কপিলার মতো বলি, "আমারে নিবা মাঝি লগে?" তারপর হাতুড়ি দিয়ে দেয়ালটা ভাঙতে থাকি। ভাঙ্গা হয়ে গেলে দেখি কবি সেই কবে চলে গিয়েছে। রেখে গিয়েছে জমাট বাঁধা আঁধার। তাতে পড়ে আছে কিছু ধুসর পাণ্ডুলিপি আর হাহাকার ভরা বদ্ধ দীর্ঘশ্বাস...

আমার কিংবা আমাদের জন্য...

অপেক্ষা করি, কেউ আবার আমাকে কাকতাড়ুয়া বানাবে, কোনো ক্ষেতের মাঝে বসিয়ে দেবে। পাখি তাড়াবো, বৃষ্টি -বাদলের সাথে লড়ব। তারপর ফসল তোলা হয়ে গেলে সে আমাকে ফেলে যাবে সেখানেই...

তারপর কোনো আলোকচিত্র শিল্পীর আলোকচিত্রের বিষয় হবো, কোনো চিত্রকরের ক্যানভাসের বস্তু হবো, কিংবা পথে ফেরা কোনো কবির কবিতার লাইন...

আর আমি কিংবা আমরা দিনশেষে সেই কাকতাড়ুয়াই রয়ে যাই, যাবো...

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৯:২৯

সুমন কর বলেছেন: মোটামুটি।

২| ১০ ই অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ২:৪৫

হাসান মাহবুব বলেছেন: কাব্যিক বর্ণনা। ভালো লেগেছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.