কেবল ভালবাসার মানুষটির কাছে সুন্দর হলেই যথেষ্ট

০১ লা মে, ২০১৫ সকাল ৮:০৪

কথিত আছে প্রকৃতি এবং নারী রূপ পৃথিবীর সৌন্দর্য্যের প্রথম দুইটি স্থান দখল করে আছে। প্রত্যেক মানুষই চায় যে তার ভালবাসার মানুষটি, জীবন সঙ্গিনীটি শুধু মনের দিক দিয়েই নয় চেহেরার দিক দিয়েও সুন্দর হোক। কিন্তু আমার কুসুম কেবলমাত্র মনের দিক দিয়েই সুন্দর। তার মনের সৌন্দর্য্য তার চেহেরাতে প্রতিফলিত হওয়ার কারনে তার কালো চেহেরা আমার কাছে কালো মনে হয়না। ভালবাসার পরম আবেশে যখন তার দিকে তাকাই কালো মেয়েটিকেই অপ্সরীর মত সুন্দর লাগে তখন।

আমি হাসান, ক্লাস নাইনে পড়ছি। এ স্কুলে ক্লাস এইট থেকে কুসুমের সাথে পড়ছি কিন্তু একদিনও কথা হয়নি তার সাথে। প্রথম সারির ছাত্র হওয়ায় প্রথম সারির সুন্দরী মেয়েদের সাথেই খাতির ছিল। কিন্তু পিছনে বসা কৃষ্ণ বর্নের কুসুম নামের মেয়েটি যে আমাকে নিয়ে তিলে তিলে ভালবাসার স্বপ্ন বুনছে এটা কখনও বুঝতেই পারিনি।

বুঝতে পারলাম কিছুদিন পর। ভালবাসার মানুষটিকে কাছে পেতে বিভিন্ন জন বিভিন্ন ধরনের ফন্দি আটে। কুসুম তার পবিত্র ভালবাসাকে পেতে একটু অপবিত্র ফন্দি আটলো। ক্লাস টিচারের কাছে সে অভিযোগ দিলো আমার নামে যে আমি তার দিকে তাকিয়ে হাসা হাসি করি, চোখ মারি ইত্যাদি। স্যার আমায় ডেকে ওয়ার্নিং দিয়ে দিলেন। ছুটি শেষে তাকে ডাকলাম। আমার যেখানে মিথ্যে অভিযোগে মেজাজ পুরোপুরি গরম ঠিক সেই মূহুর্তে কুসুমের ঠোটে হাসির আভা দেখতে পাচ্ছিলাম। আমার সাথে কথা বলার সুযোগ পেয়েই হয়তো। কোনওকিছু বাদ রাখিনি সেদিন ইচ্ছেমত বকে দিয়েছি, কালো রূপের প্রশংসাও করেছি। এমনভাবে ঝাড়ি ফার্স্ট টাইম কাউকে দিলাম। সেদিন সে একটাও কথা বলেনি আমার অশ্রাব্য কথা শুনে অঝোর ধারায় কেঁদেছিলো শুধু। কিন্তু তার চোখের পানি দেখে তার প্রতি কোনও মায়া জন্মেনি সেদিন।

রাতে কিছুতেই ঘুম আসছিলোনা, সারাক্ষন কুসুমের কান্নারত মায়াবী চেহেরাটা চোখে ভাসছে। নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে, কেনো তাকে এভাবে কাঁদালাম। নাহ সেদিন আর ঘুমুতে পারিনি। তার সাথে কথা বলার দরকার, মাফ চাওয়া দরকার।

পরদিন সবার আগে স্কুলে গিয়ে কুসুমের অপেক্ষায় বসে আছি, কিন্তু কুসুম নেই। তিন দিন হলো তবুও কুসুম নেই। ওর এক বান্ধবির কাছে শুনলাম কুসুম অসুস্থ, খুব জ্বর তার। তার বান্ধবিকেই ম্যানেজ করে কুসুমের কাছে গেলাম। চোখ বন্ধ করে আছে সে, মলিন চেহেরা কিন্তু তার দিকে কেনো জানি তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে, তাকিয়েও ছিলাম অনেক্ষন। হটাৎ নিজের অজান্তেই আমার হাত তার কপাল স্পর্শ করলো। সে একটু কেপে উঠে আমার হাতের উপর হাত রাখলো। আস্তে করে চোখ টা খুললো, আমি কয়েকবার সরি বললাম। কিন্তু সে সাথে সাথে আমার হাত টা সরিয়ে দিয়ে অন্যপাশে ঘুরে গেলো একটু রাগী ভাব নিয়ে। জানিনা কেনো জানি সেদিন তাকে আরও ছুঁতে ইচ্ছে করছিলো। সুস্থ হলেই আমার সাথে দেখা করিও এই বলে চলে আসলাম।

কুসুমের কল্পনা সর্বদা আমাকে ঘিরে আছে। কৃষ্ণবর্ণের মেয়েটিকে আমি ভাল বেসে ফেলেছি। অদ্ভুত অন্যরকম ভাল লাগা কাজ করছিলো কয়েকদিন ধরে। এখন শুধু তার অপেক্ষায় আছি।

কুসুম স্কুলে এসেছে আজ, আজ আমি সত্যিই তার দিকে বারবার তাকাচ্ছি হাসছি বেশ কয়েকবার চোখও মেরে দিলাম। সে শুধু মুচকি হাসছে আবার চোখ বড় করে রাগের অভিনয় করছে। উফ কি যে ভাল লাগছে আজ।

ছুটির অপেক্ষা করলাম না, টিফিন টাইমেই তার কাছে গেলাম। সামনা সামনি দাঁড়িয়ে আছি কিন্তু কেউই কিছু বলছিনা। কুসুম মুখ নিচু করে আছে আর আমি তার দিকে তাকিয়ে আছি। ভালবাসা দিয়ে তাকালে কালো মেয়েটিকেও এত সুন্দর লাগতে পারে কেবল সেদিনই বুঝেছিলাম। নিস্তব্ধতা কে কাটিয়ে সেই বলে উঠলো- কিছু বলবা?
আমিঃ হুম, অনেক কিছু বলবো।
কুসুমঃ তো বলো
আমিঃ সরি সরি সরি
কুসুমঃ আমিও সরি
আমিঃ তুমি সরি কেনো?
কুসুমঃ স্যারের কাছে তোমার নামে মিথ্যে বলেছি। তবে মিথ্যে বলে তোমায় যে পেয়েছি তাই মিথ্যেটা কিছু মনে হচ্ছেনা(হাসিমুখে)
আমিঃ আমাকে পেয়েছো তুমি? কিভাবে পেলে?
কুসুমঃ জানিনা (কষ্ট পেলো মনে হয়)
আমিঃ উহু, কষ্ট পেলে গো...
কুসুমঃ গো আবার কি? কি হই আমি তোমার?(রাগের অভিনয়)
আমিঃ তোমাকে ভালবেসে ফেলেছি কুসুম। আমাকেও একটু ভালবাসবে?
কুসুমঃ এই ছেলে খালি হাতে কেউ প্রপজ করে?
আমিঃ এই দাড়াও,
ব্যাগ থেকে দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া একটি গোলাপ বের করে তার হাতে দিলাম- এই নাও, আই লাভ ইউ
কুসুমঃ আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি হাসান, আমি তোমায় গত এক বছর ধরে ভালবেসে আসছি কিন্তু প্রকাশ করিনি কোনওদিন। আর তুমি তো কেবল এই কয়েকদিন ধরে ভালবাসতে শুরু করেছো। চুপ করে থাকলে তুমি হারিয়ে যেতে তাই একটু মিথ্যের আশ্রয় নিয়েছিলাম। আই লাভ ইউ টু

ইচ্ছে করছে সিনেমার মত কুসুমকে জড়িয়ে ধরি ভালবাসার পরম বাহুডোরে, কিন্তু স্কুলে এটা সম্ভব না। আমি পেলাম কুসুম কে, খুব আনন্দ লাগছে আজকে।

ভালবাসার মানুষটিকে যে সুন্দরী হতে হবে এর কোনও মানে নেই, বরঞ্চ ভালবাসার মানুষটির কাছে কেবল ভালবাসার মানুষটি সুন্দর হলেই যথেষ্ট। ছুটি শেষে বেশ কিছুক্ষন গল্প করে বাসায় আসলাম। আবার কালকের জন্য অপেক্ষা করছি, ধুরো সময় কাটেনা কেনো...

০ টি +০/-০