![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পৃথিবীটাকে দর্শন করি, একটু আলাদা ভাবে।
আমি রুহী আর আমার বন্ধু রাফি, দুইজনেরি
আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার খুবি শখ। তাইতো
আমরা যখন একসাথে থাকি তখন শুধু উপায়-বুদ্ধি
খুজতে থাকি যে কিভাবে অল্পদিনে অগাধ
টাকার মালিক হওয়া যাবে। তো একদিন
রাফি হুট করে বলে উঠলো কিডন্যাপ করতে
হবে কাউকে।
.
আইডিয়াটা খারাপ না, কিডন্যাপ করে
মুক্তিপণ চাওয়া, এতে করে দুই তিনদিনের
মধ্যেই লাখ টাকার মালিক। ব্যাপারটা
যদিও রিস্কি তবুও বড়লোক হতে এইটুকুন রিস্ক এ
কিছু আসে যায়না।
.
আমাদের এলাকা বাদ, পাশের এলাকার
সর্বোচ্চ ধনী ব্যক্তিবর্গের নাম লিস্ট করলাম।
ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার, পুলিশ, গেজেটেড
অফিসার এরকম দশজনের নাম লিস্টে আসলো।
টাকা, বাড়ি, গাড়ি সব বিবেচনা করে
লিস্টের টপে আসলো ড. সাদাত সাহেব।
.
আমাদের টার্গেট সাদিয়া বিনতে লিয়া,
ক্লাস টেনে পড়ে, সাদাত সাহেবের
একমাত্র কন্যা। প্লানিং করতে বসে পড়লাম
দুজনে। আমরা যেহেতু প্রফেশনাল না সেহেতু
হুট হাট করে কাউকে কিডন্যাপ করাটা ঠিক
হবেনা। সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো যে
সাদিয়াকে প্রেমের ফাঁদে আটকানো, তার
বিশ্বাসটুকু অর্জন করে তাকে রাফিদের
খামার বাড়িতে নিয়ে যাওয়া তারপর
সাদাত সাহেবকে দেখানোর জন্য তার
মেয়েকে একটু শারীরিক টর্চার এরপর মুক্তিপন
চাওয়া ব্যস, এরপর আমাদের পায় কে!
.
কোচিং এর সুবাদে সাদিয়ার সাথে আগে
থেকেই পরিচয় ছিলো, কিন্তু ফোন নাম্বার
ছিলোনা। নাম্বার যোগাড় করে দিলাম
ফোন,
.
- সাদিয়া বলছো
- হুম, কে আপনি?
- আমি রুহী
- রুহী মানে কোচিং এর রুহী ভাইয়া?
- এইতো চিনতে পেরেছো, কেমন আছো?
- এইতো ভালই, আপনি ভাইয়া?
- ভালই
- ভাইয়া আপনি তো আমার খোজ খবরই নেন
না, আম্মু বাসায় এসে পড়াতে বললো তবুও
পড়ালেন না। আপনি যে কি একটা না..
- এখন পড়াবো, পড়বা?
- ভাইয়া সত্যি বলছেন?
- হ্যা সত্যি তবে ক্লাসের পড়া না, হৃদয়ের
পড়া, আবেগ অনুভুতি ভালবাসার পড়া
- ভাইয়া আপনি কিন্তু ফ্লার্ট করছেন
- আরে নাহ, সত্যি বলছি
- আপনি তো কোচিং এ আমার দিকে নজর ই
দেন না, আর ক্লাসের পড়া বাদ দিয়ে এসব
পড়া বুঝাতে পারবেন বলে আমার মনে হয়না।
- পারি কিনা পরীক্ষা করে দেখো, কালকে
দেখা করতে চাই তোমার সাথে খুব জরুরি
কথা আছে
- কালকে তো কোচিং এ আপনার ক্লাস নাই
- কোচিং এ না, পার্কে আসো
- আ, আচ্ছা ভাইয়া
- এখন রাখি সুইট বেবি, বাই বাই
- কি কি?
ফোন কেটে দিয়ে একটা ভিলেনি হাসি
দিলাম। রাফিকেও গ্রীন সিগন্যাল এর কথা
জানিয়ে দিলাম।
.
শুরু হয়ে গেলো সাদিয়া আর আমার প্রেম
খেলা। আবেগপ্রবন মেয়েটাকে খুব সহজেই
বশে আনতে পারলাম। সাত দিনের মাথায়
প্রপজ করলাম সাথে সাথেই এক্সেপ্ট করলো।
আমাকে ছাড়া এখন কিছুই বোঝেনা
সাদিয়া। ক্লাস ফাকি দিয়ে আমার সাথে
ঘন ঘন দেখা করা,রাতে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা
বলা, প্রেম, রাগ, অভিমান, খুনসুটি সব
মিলিয়ে পার্ফেক্ট রিলেশন। এগুলো সব
ফেইক তবুও সাদিয়ার জন্য খুব টান অনুভব করতাম,
কিন্তু আমার তথা আমাদের লক্ষ্য সাদিয়ার
বাবার টাকা, সাদিয়া তো আমাদের
টাকার চাবি স্বরুপ।
.
বেশ কিছুদিন পর সাদিয়াকে বাইরে ঘুরতে
যাওয়ার জন্য অফার করলাম। প্রথমে রাজি
হতে চাচ্ছিলোনা একটু দূরে হওয়ায়, কিন্তু
আমার দিকে তাকিয়ে রাজি হয়ে গেলো,
তারাতারি ফিরে আসতে হবে এই শর্তে।
.
আমাদের স্পেশাল কোনও অস্ত্র নেই, শুধু দুটো
ছুড়ি আর একটা হক স্টিক। খামার বাড়ির
কোনের ঘরটাতে চেয়ারের সাথে
সাদিয়া বাধা; মুখে কস্টেপ, আমার দিকে
অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, চোখে
ভালবাসা, বিশ্বাস, প্রেম সবকিছু অশ্রু হয়ে
অঝরে নেমে আসছে। যা করার জলদি করতে
হবে। তাকে আঘাত করার একটুও ইচ্ছে হচ্ছেনা,
নিজেরি হাত অল্প একটু কেটে কিছু রক্ত
সাদিয়ার ঠোটের কোনে আর কিছু রক্ত তার
কপালে লাগিয়ে সুন্দর করে ফটো তুলে ড.
সাদাত সাহেবকে এম এম এস করলাম। ফোন
দিয়ে বিশ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ চাইলাম, এবং
একা খামার বাড়ি থেকে একটু দূরে টাকা
নিয়ে আসতে বললাম, তিনি রাজিও হলেন।
আধঘন্টা পর চারিদিকে পুলিশের
সাইরেনের শব্দ আর হ্যান্ড মাইকের শব্দ।
আমাদের আত্মসমর্পণ করতে বলা হলো ব্যস।
.
ছয়মাস হয়ে গেলো আজকে আমি ছাড়া
পাবো। রাফির বাবা টাকা দিয়ে তিন
মাসেই রাফিকে ছাড়িয়ে নিয়েছেন।
কিন্তু আমাকে আমার বাবা ছাড়ানোর জন্য
একটু চেষ্টাও করেননি। সাদিয়ার অনুরোধে
ড. সাদাত সাহেবই উকিল ধরে আমাকে
ছাড়ানোর ব্যবস্থা করেছেন।
.
কি শান্তি জেলখানা থেকে বের হয়ে।
ভাবছিলাম বের হয়ে বাবা মা ভাই বোনকে
দেখবো, কিন্তু তারা কেউ আসেনি, তারা
কেউ এখনও আমাকে ক্ষমা করতে পারেনি,
না পারারই কথা। বাইরে শুধু সাদিয়া
দাঁড়িয়ে।
.
সাদিয়াকে খুব সুন্দর লাগছে আজকে, কিছু
ফিরে পাওয়ার খুশি তার চোখে মুখে
প্রকাশ পাচ্ছে। তার চোখে নেই কোনও রাগ
নেই কোনও ক্ষোভ, চোখে শুধু ক্ষমা আর অগাধ
ভালবাসা।
.
সেখান থেকে সোজাসুজি কাজি অফিসে
গিয়ে রেজিস্ট্রি টা করে ফেললাম। এখান
থেকে অনেক দূরে চলে যাবো অনেক দূরে,
যেখানে কোনও চেনা পরিচিত নেই। মৃত্যু
পর্যন্ত হাতটা ধরে রাখবো এই প্রতিশ্রুতিতে
শক্ত করে হাতটা ধরলাম, ভালবাসার পরম
আবেশে আমার কাঁধে সাদিয়া মাথা
এলিয়ে দিলো।
.
লিখাঃ আমিম এহসান
©somewhere in net ltd.
১|
১২ ই জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৪:২৬
আজমান আন্দালিব বলেছেন: ব্যাতিক্রমধর্মী গল্প। প্লাস।