![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পৃথিবীটাকে দর্শন করি, একটু আলাদা ভাবে।
"বাবা, আমি একটা মেয়ে পছন্দ করেছি, বিয়ে করলে আমি ওকেই করবো।"
.
সাহস করে বাবাকে কথাটা বলতেই বাবা হাসিমুখে বললো,
- "তা মেয়েটা কে শুনি?"
-"ওই যে পাশের মহল্লার মিজানুর সাহেবের মেয়ে।"
-"কোন মিজানুর? ইঞ্জিনিয়ার মিজানুর নয়তো?"
-"হ্যা বাবা হ্যা, উনারই মেয়ে, এবার এইচ এস সি পাশ করেছে।"
.
বাবা কিছুক্ষণ চুপ থেকে জবাব দিলেন,
-"পৃথিবীতে আর মেয়ে পাইলিনা।"
-"না বাবা,আমি কিছু বুঝিনা, তুমি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাবে।"
-"সেটা কখনও হবার নয় রে।"
-"মানে? তুমি কি বলতে চাইছো?
-"বিয়ে করতে হয় নিজের থেকে একটু কম স্ট্যাটাস না হয় সমান স্ট্যাটাস এর ঘরের মেয়েকে।"
-"বাবা এখানে স্ট্যাটাস আসছে কেনো? তুমিই তো বলেছিলে কাউকে পছন্দ হলে উল্টাপাল্টা কিছু না করে আমাকে বলিস,আমি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাব। আর আমি তো বেকারই নই, চোটখাট হলেও একটা চাকরী তো করছি।"
-"তা বলেছিলাম ঠিকি কিন্তু মিজানুর সাহেব নামকরা ইঞ্জিনিয়ার আর আমি সামান্য টিচার; ওদের স্ট্যাটাস এর সাথে আমাদের স্ট্যাটাস মিলেনারে বাবা। তুই অন্য মেয়ে দেখ।"
-"নামকরা ইঞ্জিনিয়ার তো কি হয়েছে, ওমন ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার তো তোমার মত টিচাররাই তৈরি করেছে।"
-"ব্যাপারটা ভেতর থেকে না নিয়ে বাইরে থেকে নে, যেটা হবার নয় সেটা কখনও হবারই নয়।"
-"কিন্তু বাবা মীমকে তো আমি হৃদয়ের ভেতর থেকে পছন্দ করেছি, সেটার কি হবে?"
-"গাধা কোথাকার, পছন্দ অপছন্দ কখনও হৃদয় হৃৎপিন্ড থেকে হয়না। সেটা হয় মস্তিষ্ক থেকে। হৃৎপিন্ডে তো দূষিত রক্ত, বিশুদ্ধ রক্ত, অলিন্দ আর নিলয় ইত্যাদি থাকে। সব ধরনের পছন্দ অপছন্দ, আবেগ, ভালবাসা আর স্মৃতি এই মাথায় থাকে মাথায় বুঝলি?"
-"বা তুমি কিন্তু কথা এড়াচ্ছো।"
-"হ্যা তুইও ওই মেয়েকে এড়িয়ে যা। আমার কলিগ আফজাল সাহেবের মেয়েকে কাল একবার দেখে আসিস।"
-"পারবনা যেতে কাউকে দেখতে, এমন করলে বিয়েই করবনা তখন বুঝবে মজাটা, হুম।"
.
আমার কথা শেষ হতে না হতেই মা চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলতে লাগলো,
-"কে বিয়ে করবেনা শুনি? আমার পুত্রধন?" বিয়ে করেনা কারা জানিস? কাপুরুষ আর হাফ লেডিস রা।"
-"মা, চুপ করো তো, কিসের মধ্যে কি পান্তা ভাতে ঘি।"
-"পান্তা ঘি আমি কিছু বুঝিনা, আমার ফুটফুটে চাঁদের মত বউমা পেলেই হলো।"
-"তোমরা সবাই যে কাহিনী লাগিয়েছো তাতে আর চাঁন্দের মত না, কয়লার মত বউ বিয়ে করতে হবে।"
.
মোটামুটি রাগে ফোস ফোস করতে বাসা থেকে বের হয়ে এলাম। এতদিন পর একটা মেয়ে চোখে ধরলো তার সাথে নাকি আমার স্ট্যাটাস মেলেনা। কেন যে খানদানি হয়ে সমাজে আমদানি হইনি! ভাবতেই আফসোস হয়। সিগারেট খাবারও অভ্যাস নেই, থাকলে এই মূহুর্তে সেটা ভাল সঙ্গ দিতে পারতো।
.
রাস্তায় হাটছি, হাতে একটা নুড়িপাথর। নুড়িপাথরটা দিয়ে বোলিং এর কসরত করছি, এমন সময় ফোন বেজে উঠলো। দেখলাম বাবার ফোন। ইচ্ছে করেই একটু দেরীতে রিসিভ করলাম।
-"ফোনটা এত দেরীতে রিসিভ করলি? রাগ করেছিস নাকি মন খারাপ?"
-"আমার কোনো রাগ নাই।"
-"কন্ঠ শুনেই বোঝা যাচ্ছে তোর কি আছে আর কি নাই, তা আজ রাতটা কি রাস্তায় রাস্তায় কাটাবি?"
-"নাহ রাস্তায় না, ইঞ্জিনিয়ার মিজানুর সাহেবের বাসাতে থাকবো"
-"তা ওদের বাসার রাস্তা তো ওইদিকে না বাপজান।"
-"বাবা! তুমি আমাকে ফলো করছো!?"
.
কথাটা বলেই পিছনে ঘুরলাম, দেখি বাবা আমার থেকে কয়েক গজ সামনেই। বাবা ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে আমার কাছে এলো। ঘাড়ে হাত দিয়ে বললো,
-"তুই ইঞ্জিনিয়ার সাহেবকে এখনও মনে রেখেছিস?"
-"হুম রেখেছি, কিন্তু উনার যে একটা মেয়ে আছে সে কথা চিরতরে ভুলে গেছি।"
.
এই বলে বাবা ছেলে হা হা করে হাসতে লাগলাম। আমাদের হাসি শুনে ঝিঁঝিঁ পোকাগুলোর ডাকও কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ হয়ে গেলো। হাসি থামালাম। বাবা বললো,
-"কিরে তুই তো হাসলি, কিন্তু তোর চোখে পানি কেন?"
-"বাবা তোমার চোখেও তো পানি।"
-"তাড়াতাড়ি মুছে ফেল। আর বাসায় চল তোর মা ভাত নিয়ে বসে আছে, দেরী হলে খবর আছে।"
.
বাবা-ছেলে গলা ধরাধরি করে নিড়ে ফিরলাম। শান্তির নীড়ে।
.
খেতে বসে আবার বিয়ে আর কনে নিয়ে কথা। মা বলছে,
-"তা আফজাল সাহেবের মেয়েকে কালকেই দেখতে যাইরে অমি?"
আমি "না না" বলতেই বাবা মাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
-"শ্বাশুড়ি হবার এত শখ তোমার?"
-"তো শখ হবেনা, প্রতিটা মা ই তো চায় তার ভাল একটা ছেলের বউ হোক।"
-"তা তো চায় বুঝলাম। কিন্তু এটাও তো বুঝতে হবে যে বিয়ে সাধির ব্যাপারে তড়িঘড়ি করতে নেই।"
আমি বাবার কথায় সায় দিলাম। মা একটু মন খারাপই করলেন আমাদের দল ভারি হবার জন্য।
.
এমন করে প্রায় তিন মাস কেটে গেলো কিন্তু আমার জীবনে বিয়ের ফুল ফুটলোনা। আর এই বিয়ের ফুল ফুটাতেই বাবা মা একদল হয়ে গেলো। কালকেই নাকি আফজাল আংকেল এর গুণধর মেয়েকে দেখতে যেতে হবে। যেতেই হবে আর অন্য কোনো অপশন নেই।
.
যথাসময়ে যথাস্থানে উপস্থিত হলাম সবাই। আমার সামনে নানান আইটেমের খাবার আর তার সামনে আফজাল আংকেল এর দ্বিতীয় মেয়ে মিমি। নামটা শুনে কেন জানি ভাল লাগলো। মেয়ে দেখতে এসেছি ঠিকই কিন্তু এ পর্যন্তও মুখ তুলে দেখতে পারলাম না। বাবা ঘাড়ে হাত রাখলো। বাবা যেনো বলে উঠলো "অমি, তোর সাহস এত কম তা তো আমার জানা ছিলোনা।"
.
আঁৎকে উঠলাম। গলা পুরোপুরি ৯০ ডিগ্রি সোজা করে মিমির দিকে তাকালাম। সবুজ রঙের হিজাব এর মাঝখানে সুন্দর একটা মুখ দেখতে পেলাম। কিছু সেকেন্ডের জন্য চোখাচোখি হলো, মিমি চোখ নামিয়ে নিলো। আমার সাহস হটাৎ করে বেড়ে গেলো। আফজাল আংকেল কে বললাম,
-"আংকেল কিছু না মনে করলে আপনার মেয়ের পাশে একটু বসতে পারি?"
.
সবাই অবাক হয়ে একে অন্যের দিকে চাওয়া চাওয়ি করে আমাকে অনুমতি দিলেন। আমি মিমির পাশে ভাল করে বসে উপস্থিত সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললাম,
-"আচ্ছা আমাদের দুজনকে কেমন মানিয়েছে?"
.
সবাই আরেকটু অবাক হয়ে হাসতে হাসতে বললো,
-"ভালই মানিয়েছে তোমাদের, একেবারে পার্ফেক্ট জুটি, খুব সুখী হবে তোমরা। চাইলে তোমরা দুজনে পার্সোনালি আলাপও করতে পারো।"
.
আমি বললাম, "পার্সোনাল আলাপ যত বিয়ের পর হবে, এখন সব আলাপ সবার সামনে।"
সবাই হো হো করে হেসে উঠলো তবে মিমি হাসলো কিঞ্চিত।
.
বাবা আমার দিকে তাকালো। চোখ দিয়ে যেনো বলতে লাগলো, "কি অমি? বলেছিলাম না, মেয়ে পছন্দ হবেই।"
.
আমি একটু লজ্জা পেতেই আফজাল আংকেল বলে উঠলো,
-"তা অমি? তোমাকে কি জামাই বলে ডাকতে পারবো?"
আমি উত্তর না দিয়ে একটু মুচকি হাসলাম। সবাই হাসলো। এরপর সবাই একটু নিজেদের নিজেদের আলাপচারিতা আর খাওয়া দাওয়ায় ব্যস্ত হয়ে উঠলো। এর ফাঁকে মিমির সাথে চোখে চোখেও একটু আলাপ করে নিলাম।
.
নানান কথাবার্তার মধ্য দিয়ে অবশেষে আমাদের বিয়ের দিন ঠিক হলো। ১০-১০-২০২০ইং তারিখে আমাদের শুভ বিবাহ।
.
.
~সমাপ্ত~
.
.
.
লিখাঃ আমিম এহসান.
২| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১০:১০
আমিম এহসান বলেছেন: ভাসানোর জন্য একটা ধন্যবাদ তো পেতে পারি?
©somewhere in net ltd.
১|
২০ শে অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ২:১০
অাব্দুল্লাহ অাল কাফি বলেছেন: অামাদের এভাবে সময়ের স্রোতে ভাসিয়ে দিতে পারলেন অাপনি?