নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমিম প্রচন্ড রকমের খারাপ একটা মানুষ।\" আমিম চিরদুর্দম, দুর্বিনীত, নৃশংস, মহাপ্রলয়ের আমিম নটরাজ, আমিম সাইক্লোন, আমিম ধ্বংস।\"

আমিম এহসান

পৃথিবীটাকে দর্শন করি, একটু আলাদা ভাবে।

আমিম এহসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

রোমান্টিক গল্প

২৩ শে অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ৯:৪৬

গল্পটা বছর খানেক আগের।
ভার্সিটি ভর্তি যুদ্ধের সময় শিক্ষার্থীরা যখন মেধা আর কলম হাতে সমরাস্ত্রে ঠিক তখনকার। বছরঘুরে এ গল্পের উপস্থাপন, রহস্যের কিছুই নয়, তখন নিজেকে আর ওকে নিয়ে এতটাই ব্যতিব্যস্ত আর বিভোর ছিলাম যে গল্পটি প্রকাশ করার ফুরসৎ ই পাইনি। হ্যা গল্পটা আমাকে আর ওকে নিয়ে।
.
গল্পের নাম 'আমার এবং ওর গল্প'।
.
.
আমি তখন অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে। বাড়ির পাশের ভার্সিটি রেখে সরকারি কলেজে পড়ি। কথায় বলেনা বাড়ির গরু আঙিনার ঘাস খায়না, ঠিক সেরকম। যদিও আমি চারপায়া কোনো প্রাণী নই, আমি দুপায়া একজন নিরীহ মানুষ।
লাইক কমেন্ট কম পেলেও ফেসবুকে স্বাস্থবান একটা একাউন্ট আমার এখনও আছে। যেখানে পরিচিত অপরিচিত হাজারো ফ্রেন্ডের নিবাস। আর এই হাজারো ফ্রেন্ডের মধ্য থেকে একজনের সাথে দুইদিন ধরে মোটামুটি ভালই চ্যাটিং চলছিলো, কারণটা আর কিছুই নয়। দিন তিনেক পরে আমার বাড়ির পাশে হাজি মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা আর সে একজন পরীক্ষার্থিনী।
.
তা পরিক্ষার্থিনীর নাম ছিলো সামিরা, বাড়ি ছিলো ঢাকায়। তার সাথে চ্যাটিং করে তার কথার মূলভাব বুঝতে পারলাম যে, সে পরীক্ষার একদিন আগেই আমাদের দিনাজপুরে আসবে আর আমি যেনো তাকে সর্বোপরি সাহায্য করি। আমি ভাবছিলাম একদিনরই তো ব্যাপার 'ছাত্রী হল' না হয় আত্মীয় স্বজনের বাসায় কোনো না কোনোভাবে ম্যানেজ করে নিবো।
.
কিন্তু টেনশন এ পড়লাম তখন যখন সে ফোন করে বললো, "আমু ভাইয়া, আব্বুও তো আমার সঙ্গে যাবে, আর ওখানে তো আমাদের পরিচিত তেমন কেউ নেই, যদি আপনাদের বাসাতেই....।"
আমি ভদ্রতার বশে বলে দিলাম, "আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে, সমস্যা নেই, এসো।"
সে বলল, "ভাইয়া, আব্বুর সাথে একটু কথা বলেন।"
.
আমি সামিরার বাবার সাথে কথা বলা শেষ করলাম। আমার টেনশন সুষম গতিতে বাড়তেই থাকলো, কেননা এই মেয়ে যে চারটা ইউনিটে পরীক্ষা দিবে,যার শিডিউল অনুযায়ী তাকে পরপর তিনদিন থাকতে হবে। যদিও পরীক্ষার আগে পরে মিলে সাতদিন তারা আমার বাড়িতে ছিলো।
.
ছেলে হলে তো কোনও ব্যাপার ছিলোনা কিন্তু মেয়ে!
বাসায় কি বলবো!
অনেক ভেবেচিন্তে কথাটা বাড়ির গুরুজনদের সাথে শেয়ার করলাম। কেউ কোনো আপত্তি করলোনা, তবে কেউ খুশিও হলোনা। আগে আসুক তখন দেখা যাবে এমন একটা মন্তব্য পেলাম সবার কাছ থেকে।
.
.
রেল স্টেশনে অপেক্ষা করছি, সামিরা এবং তার বাবা শামিম আহসান আসবেন। যথাসময়ের আধঘন্টা লেইট করে ট্রেন আসলো। আমি সামিরার ছবি কখনও দেখিনি তবে ফেসবুকে রাখা আমার কিছু পঁচা ছবি সে দেখেছে আর তারই উপর নির্ভর করে আর ফোনাফোনিতে আমরা একে অপরকে খুঁজে পেলাম। সামিরাকে দেখে তো আমার চক্ষু চড়কগাছ, এমন সুন্দর মেয়ে আমি এর আগে কেবল একবারই দেখেছি যেটা দেখেছিলাম কিছুদিন আগে রংপুর যাওয়ার পথে, বাসে, আমার পাশের সিটে। আমি মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তাদের অভিবাদন করলাম। আমার যাবতীয় অন্ন আর বাসস্থান নিয়ে চিন্তাভাবনা গুলো খুশিতে রুপান্তর হলো। আর তার কারণ সামিরা,শুধুই সামিরা।
.
বাসায় আসলাম। শামিম আংকেল হয়তো একটু বুঝতে পেরেছেন যে মেয়ের কথায় আমার মতন ছেলের সহযোগিতা নেওয়াটা বুঝি ঠিক হয়নি। মেয়ে রেখে খালি হাতে ঢাকায় ফিরে যেতে হয় নাকি এই ভেবে। কেননা সামিরা প্রতিটা সময় ধন্যবাদ মাখা আদূরে গলায় কথা বলতো আমার সাথে।
.
বাসার সবাই তো আমার প্রতি খুব খুশি, সবাই ভাবতেলাগলো এতদিন বুঝি ফেসবুকে এই মেয়ের সাথে আমার ইয়ে চলছিলো। যদিও অনেক বুঝাতে চেয়েও তাদের ভুল ভাঙাতে পারিনি।
.
পরীক্ষার প্রথম দিন সামিরার পরীক্ষা ছিল বিকেলে, আমি সকালে তাকে নিয়ে ভার্সিটির ক্যাম্পাস ঘুরিয়ে দেখাতে লাগলাম। রাস্তায় কোনো জ্যাম না থাকলে গন্তব্যে যেমন খুব কম সময়ে পৌছানো যায় ঠিক তেমনি আমিও পুরো আবেগের সাথে প্রেমের নগরে পৌছাচ্ছিলাম।
.
পরীক্ষার হলে ঢুকিয়ে দেওয়া, পরীক্ষা শেষ অবধি অপেক্ষা করা, প্রশ্ন সমাধান নিয়ে ছোট ছোট জ্ঞান, রাগ গুলো সে ভাল করেই বুঝতে পারতো। সে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকতো। বুঝতে পারলাম শুধু আমি একাই না, দুর্বল আমরা দুইজনই দুজনার প্রতি। বাবা মেয়ের সাথে আমার ফ্যামিলির খুব বনে গেলো। সামিরার বাবাও আমার প্রতি পুর্ণ বিশ্বাসে মেয়েকে ছেড়ে দিতেন আমার সাথে। আমি তাই পরীক্ষার পরে, আমাদের দিনাজপুরের সব দর্শনীয় স্থান ঘুড়ে বেড়ালাম তাকে নিয়ে। তবে হ্যা খরচ যে শুধু আমিই করেছি তা না, বেশিরভাগ খরচ সামিরার বাবাই দিতো। কিন্তু পরে যে এই বাবা এতটাই চ্যাঞ্জ হয়ে যাবে ভাবতে পারিনি।
.
রামসাগর, কান্তজিউ মন্দির, সুখ সাগর, মাতা সাগর, রাজবাটি স্বপ্নপুরী সব ঘুরে বেড়িয়েছি। সে এতটাই আমার প্রতি সন্তুষ্ট ছিলো যে প্রতিবার ফিরার পথে কেঁদে দিতো আর সেটা আমার ঘাড়ে মাথা রেখে। আসলে এ কয়েকদিনেই আমাদের মাঝে প্রেম না হয়ে গেলেও প্রেমের কাছাকাছি কিছু একটা হয়ে গিয়েছিলো।
.
ভাল গান গুলো প্রায়ই ছোট হয়, তেমনই ভাল সময়ও খুব কম সময়ের জন্য স্থায়ী থাকে। সামিরাদের বিদায় ঘন্টা বাজলো, তারা চলে যাবে কাল, আমি অনেক চেষ্টা করেছিলাম যাতে তাদের বিদায় ঘন্টা না বাজে, কিন্তু বেজে গেছে আর এত জোরে বেজেছে যে আমার হৃদয়ের ভেতরটাতে অনেক বড় একটা ভূমিকম্পের সৃষ্টি করে দিয়েছে।
.
মনে মনে ভাবলাম আজ রাতেই মনের কথা সব গুছিয়ে বলবো। কিন্তু তাদের ব্যাগ গুছানো হয়ে গেছে কিন্তু আমার ভালবাসার কথাই গুছানো হয়নি। আশেপাশে কেউ না থাকলেই সামিরা বলে উঠছে, "আমু তুমি কি কিছু বলবা?"
আমি গর্দভের মত বলেছিলাম,"আমি আবার কি বলবো। তোমার কিছু বলার থাকলে বলো।"
.
সে রাগ করে বলেছিলো, "তোমার কিছু বলার না থাকলে আমারও কিছু বলার নাই।"
.
রাত গভীর, আমি ঘুমাতে পারছিলাম না। সামিরাকে ফোন দিলাম, রিসিভ করতে সময় লাগলোনা, বুঝলাম সেও ঘুমায়নি। হয়তো সেইম কাহিনি, প্রেম কাহিনী।
.
ফোনটা ধরার সাথে সামিরা বলে উঠলো, "আমু কিছু বলবা?"
আমি তড়িঘড়ি করে বললাম, "হ্যা বলবো, বাইরে আসো, খুব সুন্দর চাঁদউঠেছে।"
সে দৌড়ে বাইরে এলো। দুজন মানব মানবী জোস্নার আলোতে অবগাহন করছিলাম। নাটক না করে সব এলোমেলোভাবেই বলে দিলাম। কোনো কথাই মনের মধ্যে অবশিষ্ট রাখলাম না। এত সাহস যে সেদিন কোথায় পেয়েছিলাম নিজেও বুঝিনি, হয়তো হারাবার ভয়ে। নাকি মুরগি জবেহ করতে পারার সাহস থেকে তা জানিনা।
.
পরেরদিন সামিরারা চলে যাবে, তার বাবা হয়তো বুঝতে পেরেছিলেন যে সামিরা আর আমার মাঝে বড় কিছু একটা ঘটে গেছে যেটা আর বাড়তে দেওয়া যায়না। কেননা তিনি তার মেয়েকে নিয়েই বাড়ি ফিরতে চান খালি হাতে নয়।
.
.
জীবনের সবচেয়ে বড় খুশিটা হলাম তখন, যখন দেখলাম সামিরা হাবিপ্রবিতে চান্স পেয়েছে। তাহলে সে আমার কাছেই থাকবে। কিন্তু কথায় আছেনা কপালওয়ালার কপাল আর ডিমওয়ালার ডিম। আর ডিমওয়ালাটা আমিই হলাম, সামিরা চারটা ইউনিটের মধ্যে চান্স পেয়েছিলো এ ইউনিটে অর্থাৎ এগ্রিকালচার এ, আর তার বাবা এ সাবজেক্টে মেয়েকে পড়াবেন না। মেয়েকে ভর্তি করালেন প্রাইভেটে, ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটিতে।
.
সামিরা দুই তিন দিন কেঁদেছিলো, ব্যস। এরপরের সবটুকুই ইতিহাস। ধীরে ধীরে যোগাযোগ কমে যেতে লাগলো।
.
তবে আমি হাল ছাড়িনি, প্রতিশোধের পাল তুলে ঢাকায় গিয়েছিলাম। পুরো সাতদিন থেকে গিয়েছিলাম তাদের বাড়িতে। জামাই আদর নিয়ে ফিরে এসেছিলাম। তবে সামিরাকে দিয়ে এসেছিলাম দামী একটা জিনিস, যেটা হলো দশ সেকেন্ডের দীর্ঘ একটা চুম্বন। যেটা আমাদের দুটি হৃদয়ের সেতু বন্ধন হয়ে আছে আজোও।
বিশ্বাস, থাকবে আজীবন।
.
.
লিখাঃ আমিম এহসান.

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:২৮

অতঃপর হৃদয় বলেছেন: চমৎকার ছিল। তবে তাকে পেলে অনেক মজার হতো!

২৪ শে অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১০:০৮

আমিম এহসান বলেছেন: ও আচ্ছা।

২| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ৯:০৭

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন:
প্রেম কাহিনী ভাল।

গল্প হিসেব বলব খুব একটা ভাল হয়নি।

২৪ শে অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১০:০৮

আমিম এহসান বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.