![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মিলাদ-কিয়ামকে জায়েজ বানাতে কিছু অমূলক প্রশ্নের অবতারণা ও তার খণ্ডন
.
প্রশ্ন: ইমানে মুজমাল, মুফাচ্ছাল, পবিত্র কুরানে প্রচলিত হরকত, নামায রোজা ও ইফতারিতে আরবীতে নিয়ত করার প্রচলিত নিয়ত, খতমে বুখারি, সিহাহ সিত্তার সংকলন, বিশ রাকাত তারাবি, জুমার ছানী আযান, প্রচলিত চার মাযহাব, নাহু-ছরফ ইত্যাদি বিদয়াত হবে কিনা? যদি বিদয়াত না হয়, তবে কেনা হবেনা?
.
আমার জবাব : না, আপনার উত্থাপিত প্রশ্নের বিষয়াদি বিদয়াত হবেনা। কারণ, ইমানে মুজমাল এবং ইমানে মুফাসসাল (যেখানে ইমানের মূল বিষয় আলোচিত হয়েছে) এ গুলোকে আজ পর্যন্ত কেউ বিদয়াত বলতে পারেনি, বলার সুযোগও নেই। কারণ এগুলোর বিষয়বস্তু সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।
.
এরপর কালেমা তায়্যেবা আর কালেমায়ে শাহাদত এগুলোও সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। সুতরাং আপনাদের দৃষ্টিতে এগুলো বিদয়াত হলে আমাদের আফসোস করা ছাড়া আর কিবা করার আছে!!
.
তারপর নামাজ, রোজা আর ইফতারীতে আরবীতে নিয়ত করা। এটাও বিদয়াত হবে কেন? যেহেতু এসবের মৌলিকত্ব খাইরুল কুরূনের সময়ও বিদ্যমান ছিল। সাহাবায়ে কেরামের ভাষা ছিল আরবি। কাজেই উনারা কি নিয়ত বাংলায় করবেন? নিশ্চয় আরবীতেই তো করবেন, তাই নয় কি? সুতরাং যে আমলের মৌলিকত্ব খাইরুল কুরূনে থাকা প্রমাণিত সেটি বিদয়াত হবে কেন?
.
তারপর কুরআনে হরকত সন্নিবেশিত হওয়া, এটিও বিদয়াত নয়। কেননা, এটি তাবেয়ী হাজ্জাজ বিন ইউসুফ দিয়েছিলেন। যিনি খাইরুল কুরূনের সময়কালীন প্রসিদ্ধ ব্যক্তিত্ব । তার এ খেদমতকে উম্মাহ'র সবাই সর্বসম্মত ভাবে গ্রহণ করেছেন। সুতরাং এটিও বিদয়াত হবেনা ।
.
বাকি থাকল, সিয়াহ সিত্তাহ'র হাদীসগ্রন্থ। সিহাহ সিত্তার হাদিস সহ অন্যান্য হাদিসের কিতাবগুলো খাইরুল কুরূনের পরে সংকলিত হয়েছে বলে তা পরিত্যাজ্য হবেনা এজন্যই যে, সাহাবাদের যুগেও হাদিস লিপিবদ্ধ হয়েছিল। কিন্তু কুরানের সাথে মিলে যাওয়ার আশংকায় ওহী'র সমসাময়িক কালে হাদিস লিপিবদ্ধকে নিষিদ্ধ করা হয়। হযরত আবু বকর (রা) নিজের অনেকগুলো হাদিসের কপি পুড়িয়ে ফেলেছিলেন শুধু এজন্যই।
.
সুতরাং বুঝা গেল, হাদিস গ্রন্থবদ্ধ করার প্রচলন খাইরুল কুরূনের যুগেও ছিল। এছাড়াও উম্মাহ'র সকলে দ্বীনের জন্য সেগুলোকে বিনাবাক্যে গ্রহণ করেছেন। সেগুলোর গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করার জন্য অসংখ্য রিজাল শাস্ত্রের কিতাব পর্যন্ত লিপিবদ্ধ হয়েছে। যাতে সনদের বিচারে হাদিসের বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করা যেতে পারে। কিন্তু মিলাদ-কিয়াম এসব ধর্মের মধ্যে নতুন উদ্ভাবিত হওয়ার কারণে বাতিল হয়ে গেছে দু কারণে।
.
১-
খাইরুল কুরূনের (সর্বোত্তম তিন স্বর্ণ যুগ) অনেক পরে ও ৬০৪ হিজরীতে এটি সর্বপ্রথম উদ্ভাবিত হয়েছিল নতুন দ্বীনি আমল রূপে। এমনকি উম্মাহ'র বিশিষ্ট নেতৃবৃন্দগণ প্রথম থেকেই এর বিরুধিতা করে আসছেন।
২-
এটি বিদয়াত ফিদ্দীন তথা দ্বীনের মধ্যে নতুন সংযোজন হওয়ায় পরিত্যাজ্য হবে। কারণ, বুখারির হাদিসে হযরত আয়েশা (রা) হতে বর্ণিত আছে, "দ্বীনের মধ্যে নতুন উদ্ভাবিত বিষয় পরিত্যাজ্য।"
.
এরপর খতমে বুখারী'র প্রচলিত আমল সম্পর্কে উলামায়ে কেরামের মাঝে অবশ্যই দ্বিমত রয়েছে। কেউ কেউ একে বিদয়াত বলেছেন আবার কেউ কেউ একে স্বাধারণ দোয়ার স্থানে রেখে জায়েজ বলতে চেয়েছেন।
.
এরপর সহীহ আর দ্বয়িফ হাদিস। এসব মুহাদ্দিসীনে কেরামের গবেষণালব্ধ কিছু ঊসূলে হাদিসের পরিভাষা। এসব পরিভাষাগত চর্চা খাইরুল কুরূনের যুগ থেকেই চলে আসছে। ইমামে আ'জম (রহ) বলেছেন : ﺍﺫﺍ ﺻﺢ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﻓﻬﻮ ﻣﺬﻫﺒﻲ অর্থাৎ যখন হাদিস সহীহ হয়, (তাহলে বুঝতে হবে) সেটাই আমার মাযহাব।" (সূত্র : ইবনে আবেদীনের হাশিয়া , ১/৩৬)। এখানে হাদিসের পরিভাষা "সহিহ" শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। অথচ ইমামে আ'জম ছিলেন একজন তাবেয়ী। সুতরাং এসব বিদয়াতের গণ্ডির বাহিরে।
.
বিশ রাকাত তারাবীর সালাত—এটি ইজমায়ে ছাহাবা দ্বারা সাব্যস্ত। আর ইজমা হল, শরিয়তের দলিল। সুতরাং এসব বিদয়াত হওয়ার দাবি মুর্খেরই দাবি।
.
তারপর নাহু সরফ। এগুলো হযরত আলী (রা)-এর নির্দেশনায় আবুল আসওয়াদ আদ-দুয়াইলী (রহ) এর মাধ্যমে উদ্ভাবিত হয়েছিল। হযরত আলী (রা) নাহু-ছরফ এর কিছু নিয়মনীতি লেখার পর তাঁর ছাত্র আবুল আসওয়াদকে বলেছিলেন : أقصد نحوه অর্থাৎ এভাবে লিখে যাও। হযরত আবুল আসওয়াদ তাঁর কথামত আরো কিছু নিয়মনীতি লেখে তাঁকে দেখান। তখন তিনি খুশি হয়ে বলেন : ما احسن هذا النحو الذي نحوته অর্থাৎ তুমি যে পদ্ধতি গ্রহণ করেছ তা কতইনা সুন্দর!
কাজেই প্রমাণিত হল যে, এগুলোও সাহাবীর যুগে ছিল। তাই এটি বিদয়াত হওয়ার দাবি অবান্তর।
.
তারপর জুম'আর ছানী আযান। এটি হযরত উসমান (রা)'র খেলাফত আমলে চালু হয়েছিল। আর যেহেতু এ ব্যাপারে শরিয়তের অন্যতম দলিল "ইজমায়ে সাহাবা" সাব্যস্ত, সেহেতু এটিও বিদয়াত হওয়ার দাবি মুর্খেরই দাবি।
©somewhere in net ltd.