নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এই ব্লগের সকল লেখা একান্তই আমার নিজস্ব মতামত ও আমার ভাললাগা। সবার ভাল নাও লাগতে পারে। কারও কিছু খারাপ লাগলে আমি অত্যান্ত দুঃখিত।

আনন্দ ধারা

আমি আনন্দধারা। লিখতে ভালবাসি। ভালবাসি অনলাইনে ঘুরে বেড়াতে।

আনন্দ ধারা › বিস্তারিত পোস্টঃ

২২ বছরের সেই মেয়েটি !

০৬ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ১০:০৯

মেয়েটির বিয়ে হয় ২২ বছর বয়সে। বিয়ের দুইমাস পরেই শুরু হয় পবিত্র রমজান মাস। সেদিন ছিল সাতাইশে রমজান। একটু আগে থেকে বলি তাহলে বুঝতে সুবিধা হবে। মেয়েদের পি-ডে কি তা সবাই জানে, প্রতি মাসের ২৮/৩০ দিন পর পর মেয়েদের জন্য পিরিয়ডের দিন নির্ধারিত থাকে নেক্সট ৭ দিন পর্যন্ত। আর গর্ভধারনের সময়ের হিসাব শুরু হয় শেষবার পিরিয়ডের সময় থেকে হিসাব করে মোট ৪০ সপ্তাহ বা ২৮০ দিন। এটা স্বাভাবিক নিয়ম। মূল প্রসঙ্গে আসি এবার।

মেয়েটির বিয়ে হয় তার পিরিয়ড শেষ হবার ৫ দিন পর। বিয়ের পর শ্বশুর বাড়িতে আসার পর তার আর কোন পিরিয়ড হল না, পি-ডে মিস করে এক সপ্তাহ কেটে গেল কিন্তু কোন লক্ষন দেখল না। সে তার স্বামীকে ব্যাপারটা বলল, কিন্তু কোন গা করল না তার স্বামী। কেটে গেল এক মাস। বিয়ের দিন থেকেই শুরু হয়েছিল অশান্তি দুই পরিবারের মাঝে, যার সমস্ত ঝাল নামছিল মেয়েটির উপর দিয়ে, তার স্বামীও নিজের পরিবারের পক্ষ নিয়ে মেয়েটির সাথে খারাপ ব্যবহার শুরু করল। এসবের চাপে পরে নিজের পি-ডে মিস করার কথা মেয়েটি ভুলেগেল। শুরু হল রমজান মাস। রোজার প্রথম সপ্তাহে গর্ভকালিন শারীরিক সমস্যা গুলো মেয়েটির মাঝে দেখা দিতে লাগলো, তখনও তার স্বামী উদাসীন তার ব্যাপারে। এক পর্যায়ে বেশি হয়েগেলে মেয়েটিকে ডাক্তারের কাছে নেয়া হয়। ডাক্তার বলে সে প্রেগনেন্ট। টেস্টে দেখা গেল বাচ্চার বয়স ২ মাস ২০ দিন। স্বামী খুশি না। কারন এত তারাতারি তার সন্তান দরকার নাই।

এখানে একটি কথা বলে রাখি, মেয়েটির বিয়ে হয়েছে তার মামাত ভাইয়ের সাথে। দুজন দুজনকে পছন্দ করত। যে মানুষটাকে ভরসা করে নিজের পরিবারকে বুঝিয়ে বিয়েতে রাজি করিয়েছে সেই মানুষটাই বিয়ের দিন থেকে মেয়েটিকে কোন ধরনের সহযোগিতা করেনি !! যাই হোক, শুরুতেই আমি হিসাব দিয়েছি ডাক্তাররা কিভাবে শিশুর গর্ভকালিন সময় নির্ধারন করে থাকে। সেই হিসাবে ঠিকই আছে মেয়েটির পেটে আড়াই মাসের শিশু আছে। কিন্তু শাশুড়ি আর ননদ মিলে হিসাব করছে ওই বাচ্চার নাকি ৩ মাস বয়স !! বিয়ে হয়েছে ২ মাস, বাচ্চা পেটে ৩ মাসের তাই তাদের খুব চিন্তার বিষয়, সবাইকে কি জবাব দিবে। তাদের কথা আর ২ মাস পরে হলেও সবাই কে কিছু বলা যেত, সবাই বলবে এই শিশু বিয়ের আগেই পেটে এসেছে, ছিঃ ছিঃ কি লজ্জা !! .................. ইত্যাদি চিন্তায় তাদের মাথা কাটা যাচ্ছে ! সেই সময়ও মেয়েটির স্বামী চুপ, কোন কথা বলছে না ! কিন্তু সে ভাল করেই জানে ওই সন্তান তার, এবং বিয়ের পরেই মেয়েটির গর্ভে এসেছে।

মেয়েটি তখন সবার ওই নোংরা কথা আর নোংরা ইঙ্গিত আর স্বামীর নিরব ভুমিকা দেখে পুরোপুরি ভেঙ্গে পরল ! স্বামীকে প্রস্তাব দিল, এবরশন করানোর। স্বামী তাকে পাঠাল শাশুড়ির কাছে, বলে "আম্মা কি বলে তাই শোন" ।
মেয়েটি তার শাশুড়ির কাছে গেল অনুমতি চাইতে, শাশুড়ির উত্তরঃ "যা ঘটাইছ তা তো সবাই জেনেই গেছে, এখন আর আজাইরা সমাধান কি করতে চাও? যাও আমার সামনে থেকে।"
.
.
.

******* অপমান, কষ্ট, দুঃখ, অভিমান সব একসাথে ২২ বছরের মেয়েটিকে ঘিরে ধরল ! তার নিজের মা এর কথা খুব মনে পরতে লাগল তখন, সেখানেও মেয়েটি কষ্ট পেল, এই মা তাকে কতবার নিষেধ করেছে বিয়ে করতে, মেয়েটি শোনেনি, কেমন করে শোনবে সে যে কথা দিয়েছে একজনকে, সে কেমন করে তার ওয়াদা ভঙ্গ করবে, মা কে বুঝিয়ে উল্টা রাজি করিয়েছে বিয়ের জন্য। হায়...... কপাল ! এই বিয়ে তার জন্য বয়ে নিয়ে এসেছে কষ্টের এক সমুদ্র !

মায়ের কাছে শুনেছিল রমজান মাসের ইফতারিতে প্রতিদিন আল্লাহ রোজাদারদের দোয়া কবুল করেন। মনের মাঝে প্রচন্ড অভিমান পুষে নিয়ে কাউকে কিছু না বলে সে আল্লাহর কাছে হাত তুলল। ৭ রোজা থেকে ২৭ রোজা পর্যন্ত তার একটাই প্রার্থনা ছিল আল্লাহর কাছে ...... " আল্লাহ তুমি তো ওয়াদা ভঙ্গ কর না, তাহলে আমার একটা চাওয়া পুরন কর, যে সন্তান দুনিয়াতে আসার আগেই তাকে নোংরা ইঙ্গিত করা হচ্ছে তাকে তুমি তোমার কাছে তুলে নাও, আমি পরকালে তাকে কোলে তুলে নিব। যেদিন থেকে ও আমার গর্ভে সেদিন থেকে আমি ওর মা, আমি চাইনা এই নোংরা পৃথিবীর আলো ওর গায়ে লাগুক। নিয়ে যাও তুমি ওকে তোমার কাছে। "

চলতে থাকল একই প্রার্থনা প্রতি নামাজে, মনে মনে, ইফতারিতে, ফজরের পর। আল্লাহ মেয়েটির কথা শোনল ২৭শে রমজান রাতে। শেষ রাতে প্রচন্ড ব্যথায় ঘুম ভেঙ্গে গেল মেয়েটির, রক্তে ভেসে যাচ্ছে বিছানা, সেই সাথে বমি ! একেই বলে প্রসব বেদনা। জ্ঞান হারানোর মত অবস্থা মেয়েটির। থেকে থেকে আকাশ-পাতাল ব্যথা ! কোন কথা বলল না সে, চোখ দিয়ে পানি পরছে আর মনে মনে আল্লাহর অস্তিত্ব নিজের মাঝে অনুভব করছে। যখন ব্যাথা কমে যেতে থাকল তখন সে নিজের নষ্ট হয়ে যাওয়া কাপড় বমি সব পরিস্কার করল নিজের হাতে। ঘরের কেউ তাকে সাহায্য করল না, স্বামী বাইরে গেল সি এন জি ডাকতে, মেয়েটিকে হাসপাতালে নিতে হবে। ওই সময়ও শাশুড়ি ননদ তাকে দোষারুপ করে যাচ্ছে।

ভোর ৫টায় হাসপাতালে ভর্তি করা হল, ডাক্তার আসল সকাল ১০টায়। মেয়েটির জরায়ু পরিষ্কার করে দিলেন ডাক্তার। তখন মেয়েটির বুক ভেঙ্গে কান্না আসছিল। মনে মনে আল্লাহকে বলল "আমার প্রথম সন্তান তোমার কাছে রাখলাম আল্লাহ, শেষ বিচারের দিন ওকে তুমি আমার কোলে দিও।"
মেয়েটি কাঁদছে, ডাক্তার জিজ্ঞাস করছে তুমি কি ব্যাথা পাচ্ছো? চিন্তা কর না একদিনের মাঝেই ব্যথা কমে যাবে। তোমাকে ঔষধ দিয়ে দেয়া হচ্ছে। কিন্তু মেয়েটি জানে এই ব্যথা সারবার নয়। যে রক্তক্ষরণ তার শরীর থেকে হয়েছে, তার চাইতেও দিগুন রক্তক্ষরণ তার বুকের মাঝে হয়েছে।

খবর পেয়ে মেয়েটির বাবা গ্রামের বাড়ি থেকে এক কাপড়ে ছুটে আসে তার মেয়ের কাছে। ততক্ষনে মেয়েটিকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কিছুক্ষন মেয়ের পাশে বসে থেকে চলেগেলেন। এক কাপ চা ও জুটল না তার মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে। মেয়েটির সাথে তার বাবার সম্পর্ক অনেকটা হৈমন্তি গল্পের বাবা- মেয়ে সম্পর্কের মত। মেয়ের মাথায় হাত রেখে শুধু বলেছিল......"আমার ঘরের দরজা তোর জন্য সব সময় খোলা থাকে, তুই যখন ইচ্ছা চলে আসিস, আমরা সবাই তোর অপেক্ষায় আছি, থাকব সারা জীবন।"

পরে কি হল আরেকদিন বলব। লিখতে যেয়ে চোখ ভিজে গেছে............

~~ আনন্দধারা

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ১০:৩০

পাতা ঝরার দিনে বলেছেন: অনুভব করতে পারছি। স্বামীর আচরণ বুঝতে পারছি না !!

২| ০৭ ই আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৪:৪৬

আপনার আপন বলেছেন: pls continue

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.