নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যান্ত্রিক সব খোলা চিঠি

অপ্রয়োজনে অনেক কথা বলে যাই, কিন্তু বলা হয়না আরো অনেক বেশী কথা- অনেক আপন মানুষদেরকে। তাইতো, এই খোলা চিঠি। হয়তো কারোর চোখে পরবে কোনদিন, যখন আমি থাকবোনা.....

আনন্দক্ষন

মানুষ হয়ে জন্মে যখন ফেলেছি, তাই নিরুপায় হয়ে মৃত্যুকে বরন করতেই হবে। পৃথিবীতে এসেছিলাম একা, জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে চলতে হয় একা, মরতেও হবে একা। তাই তো নিজের খুশি মতো বাচবার চেষ্টা করে চলেছি, আনন্দের সাথে। জন্ম নেবার সময় মাকে কষ্ট দিয়ে ছিলাম আর কিছু অক্ষমতার জন্য চলার পথে ইচ্ছে না থাকা সত্বেও কষ্ট দিয়েছি ভালোলাগা মানুষগুলোকে। তাই হয়তো পৃথিবীটা ছাড়বার সময় এদেরকেই আবার কষ্ট দিতে হবে ! তাই তো কেবল ভালোলাগার- ভালোবাসার এই মানুষগুলোকে গুরুত্ব দেই। সমাজ নামক জঞ্জালটাকে এড়িয়ে চলি আর প্রতিটা নিঃশ্বাসের জন্য কৃতজ্ঞতা জানাই সৃষ্টিকর্তাকে।

আনন্দক্ষন › বিস্তারিত পোস্টঃ

আবার দেখা হবে। রেলষ্টেশনে.......২য়পর্ব

১২ ই নভেম্বর, ২০১২ সকাল ৮:৫৩

আবার দেখা হবে। রেলষ্টেশনে.. আগের টুকু



বিয়ে ভাংগাটা কিন্তু কঠিন কাজ না। ভেজাল হলো, পরে। যদি ছেলেটা মা নেওটা- মেরুদন্ডহীন হয়, আর মায়ের কাছে গিয়ে মেঁও-মেঁও করে সব দেয় বলে। আর তাহলেই হলো। ঘটক, "সফলভাবে বিবাহ সম্পন্ন করতে না পারার দায়টা" যতটুকু পারে মেয়েটার ঘাড়ে চাঁপাবার বিন্দু মাত্র চেষ্টাকে ব্যর্থ না করে, পরবর্তি বারের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যায়। আর মেয়েটার প্রান পরবর্তি কয়েকটা দিনের জন্য ওষ্ঠাগত করে ছাড়ে পরিবার-পরিজন । এবার আনন্দের ক্ষেত্রে অবশ্য, খালা একাই সর্বেসর্বা। খবর করে ছাড়তে না পারলেও, ভেজাল করবে।



আনন্দ এখনও বুঝতে পারছেনা, এবারকার ঘটনায় তার কতটুকু বকা শুনতে হবে। অবশ্য এ ব্যপারে এখন সে বেশ অভিজ্ঞ। হ্যা, অভিজ্ঞ বলাই যায়, সে যে এর মাঝে তিনটা বিয়েতে ভেজাল বাধাতে সফলভাবে কৃতকার্য হয়েছে।



কিন্তু এই ঠোলা কি মা নেওটা- মেরুদন্ডহীন ছিল কিনা না বুঝেই কাজটা করে ফেলেছে আনন্দ। আর এখনও ঠিক লোকটার মতি-গতির ঠিকানার সন্ধান করে উঠতে পারেনি সে। একলা মেয়ে দেখলে খোচাঁতে আসে- আবার কিনা বিয়ে করবে, সে শখও আছে। আবার সেদিন বার বার জানতে চাচ্ছিল, আনন্দের মতামত কি? বিয়ে করবো কি, করবো না? সেদিক থেকে লোকটার মতলব ভালো ছিলনা বলেই মনে হয়েছে আনন্দের কাছে।



তবে লোকটার সম্পর্কে একটা ভুল ধারনা নিতেও আনন্দের ইচ্ছে করছেনা। বিয়েতে আনন্দের মতামতটা স্পষ্টভাবে জানার জন্যও ভদ্রলোক আগ্রহ থেকে প্রশ্নগুলো করতে পারে। আর প্রথমবার সুরমার পাড়েও, কেবল ভালোমন্দই জানতে চাইছিল। সেটা হতে পারে, সাহায্য করবার ইচ্ছা থেকেই। নদীর পাড়-একা মেয়ে। অথবা সামান্য পুলিশ-পুলিশ ভাব নিতে চেয়েছিল এক সুন্দরীর সামনে।



সুন্দরী! হ্যা, আনন্দকে তো সুন্দর বলা যায় অনায়াসে। হতে পারে, পাঁচ ফুট পাঁচ ইঞ্চি লম্বা না, তাতে কি? উজ্জল শ্যামবর্ণ, চেহারাটা মায়াবী, দোহারা গড়ন। বিশেষভাবে সুন্দর বচন ভঙ্গি আর স্বভাবশুলভ বুদ্ধিদীপ্ত-চটপটে আচরন খুব সহজে আকৃষ্ট করে উপস্থিত সবাইকে।



কারোর সাথে আলোচনা করতে পারলে একটা কিছু বের হয়ে আসতো, কিন্তু এখন তো সে নানাবাড়িতে। তবে, লোকটা ভালো হোক আর নাই হোক, SSC Fail Theory যদি ফাঁস করেই দেয়, তবে তার শাস্তি ঠিক করে ফেলেছে আনন্দ। বিয়ে করা হচ্ছে সবচেয়ে বড় শাস্তি, একটা লোককে শায়েস্তা করবার জন্য। বিয়েটা তখন হবেই হবে।



আবার লোকটা যদি সব বলেই দেয় তবে তো "মা নেওটা- মেরুদন্ডহীন" ছেলে হয়ে গেল। তা কি আনন্দের পচ্ছন্দ? একদিক দিয়ে হ্যা। বিয়ের আগে থাকে "মা নেওটা- মেরুদন্ডহীন"- আর বিয়ের পর "বৌ আচঁল ধরা - কোমড় ভাংগা"।



সেদিন আনন্দ নিজেকে ল্যাংরা- খোড়ার Theory যতই দিকনা কেন, ও নিজেও জানে লোকটা ভালো। কেবল সমস্যা তার নিজের। বিয়ের নাম শুনতেই সামনে বসা লোকটাকে খারাপ বলতে ভালো লাগে, এমনকি তখন ঘটককেও আনন্দের শত্রু বলে মনে হয়। যেমন এই মুহুর্তে তার খালাকে দুই চোখে দেখতে মন চাইছেনা।



যত যাই বলুক। মনে মনে আনন্দ, লোকটাকে বিয়ে করলে লাভ ছাড়া কোন লোকশান দেখতে পাচ্ছেনা। "ঠোলা" - জামাই। খারাপ না? আর এটা তো সত্যি, ছেলেটা বন্ধু-বন্ধু ভাব নিয়ে কথা বলছিল। পুলিশ হলেই বা কি? পুলিশ কি আর বন্ধু হয়না? যেমন রুবালটাও তো গুন্ডা, তাই বলে কি ভালো বন্ধু না? এই ঠোলা শব্দটাও রুবেলের কাছ থেকেই শেখা। রুবেলটার সাথে গল্পগুলো বলার জন্য পেটের ভেতর গুরগুর করছে যেন।



তবে সেবার এমনি হাজারো প্রশ্ন, উত্তরের মাঝে কেটেছে আনন্দের বেশ কটা দিন। নিজের মনে ভাবতো অনেক কিছু। বার বার দোষারোপ করতো আবার কেমন যেন দোষারোপ করতে খারাপও লাগতো। মোটের উপর বড় যে বিষয় তা হচ্ছে, তাকে নিয়ে ভাবা। ভালোও লাগতো আনন্দের ভাবতে।



কিন্তু বেশ কিছুদিন টেনশানে কাটবার পর আনন্দ শুনেছিল সম্বন্ধটা ভেঙ্গে গেছে। ছেলের মায়েরই নাকি মত নাই, পাত্রী স্বল্প শিক্ষিত হওয়ায়। শোনার পর আনন্দের ভদ্রলোকের জন্য খারাপ লেগেছিল।আনন্দকে বাচিয়ে দেবার জন্য, যে এই অযুহাত, তা বুঝতে বেগ পোহাতে হয়নি। কিন্তু বেচারি "ঠোলা" তার মান-সম্মানের তো তেরটা বাজায়নি, বলে মনে মনে কৃতজ্ঞ ছিল। উপরওয়ালার কাছে তার মঙ্গল কামনা করে প্রার্থনা করাটাই তখনকার মতো শেষ কাজ ছিল, আনন্দের জন্য।



***************************



: নাহ্‌। আজ আপনার কাছ থেকে একটা কথা জানবার আছে। অবশ্য যদি আপত্তি না থাকে।

: বলুন দেখি।



: আপনার সাথে আমার ঢাকায় একবার দেখা হয়েছিল, মানে আমি আপনাক দেখেছিলাম, কিন্তু কথা হয়নি। আপনি আপনার এক বন্ধুকে ছাড়াতে থানায় গিয়েছিলেন। মনে পরে? খারাপ পাড়া, থানা, আর পুলিশের বাজে ইংগিত.......।



:ও হ্যা।



সেটা অনেক দিন আগের কথা। ইন্টার পরীক্ষার পর পর, রেজাল্ট তখনও হয়নি। আমার এক বন্ধু রুবেলের জন্য একটা কাজ করার কথা ছিল। মনে পরে গেল সেই দিনটা।



: না আমি একা না, আমার সাথে আমার বন্ধু আনন্দ আছে। আসলে আমি ওর সাথেই এসেছি।

: ও তার মানে সংগীও আছে? তা নাম কি?

: আমান, মানে আমানউল্লাহ।

: এখানে কেন?

: এখানে এক মহিলার সম্বন্ধে খোজ নিতে এসেছিলাম।

: এখানে সবাই মহিলাদের সম্বন্ধেই খবর ণিতে আসে। কিন্তু এতো কম বয়েসে আসে, জানা ছিলনা।



বলেই লোকটা আমানের কলার ধরে টান দিল। বুঝে উঠবার আগে দেখলাম, আমানকে একটা ভ্যানে ঢেলে দেয়া হলো। আমি বের হবো ঠিক এই সময় আমার হাত ধরে একটান দিয়ে জেসমিন বসিয়ে দিয়েছিল। হ্যা, এবার বলি- জেসমিনই হচ্ছে সেই মহিলা যার সাথে দেখা করতেই আমি সেখানে গিয়েছিলাম, যার আসল নাম সম্ভবত হাওয়া। আর তার আরেকটা পরিচয় - রুবেলের মা।



জায়গাটা স্টেশন রোডের দিকে হওয়ায় আমি খুবভালো চিনতামনা, তারপর আবার অলিগলির মারপ্যাচ, তাই রুবেলের কথাতেই এই বেকুব আমানকে সাথে নিয়ে ছিলাম। বেকুবটা ঠিক মতো কথাও বলতে পারেনা তাতো আর জানতামনা, আগে কোনদিন দেখাও হয়নি, সেদিনই প্রথম কথা হয়েছিল।



ভাবতেই দেখি, জেসমিন মানে হাওয়া আমার হাত ধরে একটানে বাসার ভিতরে নিয়ে গেলো। ভদ্রমহিলার আচরন আসলেই কেমন যেন ছিল। এর আগ পর্যন্ত বাসার ভেতরেই ঢুকতে দিচ্ছিলিনা, কথাই শুনতে চাচ্ছিলনা , আর এরপর একেবারে ভেতরের ঘরে নিয়ে গেলো। তবে তখনও কোন কথা শুনতে রাজি ছিলেননা উনি।



: তোমার কথা শোনার সময় আমার নেই। তুমি আমার একটা কথা শোন, আজকের পর আর কোনদিন এখানে আসবেনা। আর শোন, দেখতেই তো পেলে তোমার বন্ধুকে পুলিশ তুলে নিয়ে যাচ্ছে, আর তোমাকে পেলে তোমার সর্বনাশ হয়ে যাবে। সুতরাং এই ঘরে কিছুক্ষন থাকো, আমি বলার পর চলে যেয়ো। আর তোমার সাথের ছেলেটাকে আমি ছাড়াবার চেষ্টা করছি।



কথাগুলো বলেই চলে গিয়ে ছিল ঘর থেকে। প্রথমে যদিও ভয় হচ্ছিল, কিন্তু তখন আর ভয় কাজ করছিলনা। ভদ্রমহিলা আসলে খারাপ না, এই ধারনা ছিল খুব প্রবলভাবে । বেশ কিছুক্ষন পর সুন্দর করে একটা মেয়ে আমাকে এসে নিয়ে গেল, বের হবার সময় আমার মাথায় ভালো ভাবে ঘোমটা টেনে দিল, যেন পথই দেখতে পাচ্ছিলাম না।



বড় রাস্তার মোড়ে আসার পর, গাধা আমানটার কথা মনে পরায় আগ-পিছ না ভেবেই সামনের রিক্সাটা নিয়ে কাছের থানাতে যেতে বলেছিলাম। ছেলেটা যত বড় বেকুব মনে হচ্ছিল, তাতে কি বলতে কি বলে বসে সেই চিন্তায় ছিল মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড়। বিশেষ করে নিজের পরিচয় ফাঁস হয়ে যাবার ভয়ই সবচেয়ে বেশি ছিল।



জীবনে প্রথম বার থানায়। হাসপাতাল গুলোর যেমন একটা আলাদা পরিবেশ থাকে, থানার যেন একটা অদ্ভুত আচরন ছিল সবার। আশপাশের সবাই কেন জানি বার বার তাকাচ্ছিল, আরো মজার ব্যাপার কেউই একা ছিল না। তারপরও সবাই কেমন যেন ভয় ভয় ভাব নিয়ে বসে ছিল। এরই মাঝে শুনছিলাম সব চুরি-ছিনতাই, কাজের লোক পালিয়ে যাবার কাহিনী।



এরই মাঝে, এক পুলিশের সাথে খাতির জমিয়ে জানতে পেরেছিলাম, ফুলবাড়িয়া স্টেশন রোড থেকে টহল পুলিশের একটা ভ্যান একটা ছেলেকে তুলে এনেছে। খবরটা পাবার পর, অন্তত আমি ঠিক জায়গাতেই আছি ভেবে একটু আস্বস্ত হওয়া গেলেও দুঃশ্চিন্তা হচ্ছিল। কিন্তু সেদিন তো যতদুর মনে পরে আমি নিজেই ঝামেলাটা মেটাতে পেরেছিলাম, আবার একথা আজ পর্যন্ত কেউই জানেনা।



পুরোনো ধুলাজমা স্মৃতির খাতার পাতা উল্টাতে উল্টাতে, ভুলেই গিয়ে ছিল আনন্দ বর্তমানকে। তাই হঠাৎ যেন স্মৃতির সেই ডাইরীকেই জিঞ্জেস করলো-



:কিন্তু আহমেদ সাহেব, আপনার সাথে কি সেদিন দেখা হয়েছিল?



: বহু দিন আগের কথা না? আমি পাশের ঘরেই ছিলাম। আমি আর আমার এক বন্ধুর দেখা করতে গিয়েছিলাম, সেদিন। আসলে, সচরাচর থানা অথবা কোর্টে মহিলারা কেমন যেন ভয়ে ভয়ে থাকে, পরলে না আসার চেষ্টা করে, আর যদি আসেও কথা বলেই না। তাই কোন মহিলার এতো জোরে কথার কারনে প্রায় সবাই কাজ বন্ধ করে তাকিয়ে ছিল। সত্যি কথা বলতে আমিও একারনেই আমার বন্ধুর পেছন পেছন বের হবার জন্য উঠে দাড়াতেই , শুনলাম কেমন যেন পরিচিত একটা নাম। আর আপনার সেই সু্উচ্চ বাকবিতন্ডা।



: আপনার নাম?

: আনন্দ চৌধুরী।

: বাবারটা না আপনারটা জানতে চাচ্ছি? আর সব কথা এবারেই বলে ফেলুন। বার বার জানতে চাইতে পারবোনা। বুঝতেই পারছেন সময় কম।

: আপনার সময় কম, তাতো মনে হচ্ছেনা। বার বার অহেতুক প্রশ্ন করছেন। কিন্তু আমার বন্ধুকে কিভাবে ছাড়ানো যাবে সেটা বলছেন না।

আমি কি আপনার বস্ এর সাথে কথা বলতে পারি?


: না, পারেন না।







: এমন সময় আমি আবিস্কার করলাম - এতো সেই মেয়ে? সুরমার ঘাটে যে কিনা আমার গনধোলাইয়ের ব্যবস্থা করে ছিল, আর যাকে আমার মা ছেলের বৌ না বানাতে পারার কষ্টে তখন পর্যন্ত দোষারোপ করতেন। তাই তারাতারি আমি , আমার বন্ধুকে সব বললাম, আর আপনার বাবার পরিচয়টাও দিলাম । সাথে আরো বললাম যেন আমার কথা আপনাকে না বলে। আর আড়ালে দাড়িয়ে শুনলাম সব কথা।



বেশ আগের কথা, তবু বেশ স্পষ্ট মনে পরলো সেই কথোপকথনগুলো .....



: আপনার নাম?

: আমার নাম দিয়ে আসলে আপনার কোন দরকার নেই। আমি জানতে চাচ্ছি, কোন লোককে রাস্তার মাঝখান থেকে বিনা কারনে উঠিয়ে আনার পর তাকে কিভাবে ছাড়াতে হয়?



: আগে জানতে হবে, লোকটিকে টহল পুলিশ কেন উঠিয়ে আনলো, কি তার অপরাধ। তাহলে বলা যাবে ছাড়াবার কি ব্যবস্থা আপনাকে নিতে হবে।

: আমার বন্ধুর কোন অপরাধ করেনি, সে রাস্তায় দাড়িয়ে ছিল।



: আপনি কি নিশ্চিত?

: হ্যা, আমি ওর সামনেই দাড়িয়ে ছিলাম। আমি একটা জায়গা চিনতাম না , তাই ও আমার সাথে গিয়েছিল।



: আশ্চর্য, ব্যাপারটা যদি এতো সাধারন হয় তাহলে আমাদের টিম কেন আপনার বন্ধুকে কেবল তুলে আনবে? সাথে আপনাকেও তুলে আনার কথা।

: আমাকে আপনাদের টীম দেখতে পায়নি, সেসময় একজন আমাকে আড়াল করে দিয়েছিল। আর আপনিও তো দেখছি ঐ সাব-ইন্সপেক্টটার সাহেবের মতই কথা বলছেন।



: শুনুন, আপনার সাথে আমি অথবা "সাব-ইন্সপেক্ট সাহেব" এভাবে কথা বলছি কেননা আপনার বন্ধু যেখানে ছিলেন সেখানে আপনার যাবার কথা না। আমরা বুঝতে পারছি, আপনি আপনার বন্ধুকে বাচাবার চেষ্টা করছেন এবং মিথ্যা বলছেন। এবার বলুন, আপনি কি জানেন আপনার বন্ধুটি কোথায় গিয়ে ছিল।

: হ্যা, জানি। আমরা ষ্টেশন রোডের ভেতরের ঐ গলিতে গিয়ে ছিলাম, ওটা খারাপ পাড়া। আমি ওকে মেইন রোডের মাথায় দাড় করিয়ে , নিজে একটা ঘরের খোজ করছিলাম, একটা ভদ্রমহিলাকে খুজতে।



: মানে? আপনি সত্যিই সেখানে গিয়েছিলেন?

: তাই তো বলছি, ছেলেটা ওখানে গিয়েছিল শুধু মাত্র আমার গাইড হয়ে। আর ও বেশ অস্বস্থি করছিল বলেই আমি ওকে আমার সাথে নেইনি। এবার বোঝা গেছে?



: কিছু মনে করবেন না, এটা আমাদের জানার বিষয় না তবে, আপনি কেন গিয়েছিলেন সেখানে? ঐ মহিলার সাথে দেখা করার কি দরকার আপনার?

: আমার এক বন্ধুর জন্য। আমার বন্ধুর মা সেখানে থাকে। তাই যাবার দরকার হয়েছিল। তবে হ্যা, আপনি ভালো ভাবে জানতে চাইছেন তাই বলছি এসব।



: আপনাকে তো দেখে মনে হচ্ছে, আপনি ভালো পরিবারের মেয়ে। আপনার এমন বন্ধু থাকাটা তো স্বাভাবিক না। তা আপনার বন্ধুটির নাম কি? কি করেন তিনি?

: আমার বন্ধুর নাম বলা যাবেনা। আপনারা চিনে ফেলবেন। ও ছিচ্‌কে টাইপের মাস্তান, এই ছোট খাটো ছিনতাই-টিনতাই করে আর কি।



: আপনার বন্ধু? আমি আসলেই ভাবতে পারিছিনা। আপনার বাবা-মা এসব জানেন কি? উনারা জানতে পারলে কি বলবেন।

: এর মাঝে আবার আমার বাবাকে টানছেন কেন? এটা আমার ব্যাপার।



: হ্যা, তা বুঝতে পারছি। তবে আজ আপনি যদি কোনভাবে টহল পুলিশের চোখে পরতেন, তাহলে সেটা আপনার বাবা পর্যন্ত গড়াতো। তবে এখন কেবল, আপনার কথা আর ঐ ছেলেটার বয়ান মিলিয়ে দেখা হবে। যদি সব ঠিক থাকে , তাহলে আপনাকে কোন কিছু করতে হবেনা। ওকে আমরা ছেড়ে দেব। আর এতটুকু শুনুন, আপনি হয়তো বয়সটা কম বলে বুঝতে পারছেননা - আপনি কি করতে যাচ্ছেন। একটু ভাবে পথ চলবেন।





--------------

: ওও..তাহলে সেদিন আপনার কারনে আমি বেশ ভালো একটা ঝামেলা থেকে বেচে গিয়ে ছিলাম। জানতাম না। তবে এখন যখন জানলাম, তাই ধন্যবাদ।



: আজ কিন্তু আমি আপনার ধন্যবাদ পাবার জন্য, একথা তুলিনি?

: তবে?



: আজ বলবেন কি ঠিক কি কারনে আপনি সেদিন ঐ জায়গায় গিয়েছিলেন? সেদিন থেকে এক অজানা আগ্রহ ছিল। তবে যদি বলতে না অসুবিধা থাকে।

: না , বলতে কোন অসুবিধা নেই। আমার এক বন্ধুর মা, ওখানটায় থাকতেন। উনার সাথে কথা বলতেই যাওয়া। আমার বন্ধুটা এই ব্যাপারটা নিয়ে খুব কষ্ট পেত। ছোট মানুষ ছিলাম, কিন্তু এতটুকু বুঝতাম, বিনা কারনে একটা মহিলা এরকম কাজ করতে পারেনা। তাই জানার চেষ্টা করতেই গিয়ে ছিলাম- ঘটনাটা কি? বিশেষ করে ছেলেটা আর ওর মায়ের সম্বন্ধের মাঝে অশ্রদ্ধাটা আমার ভালো লাগতোনা।



: জানতে পারিকি ? এমন একটা ছেলে আপনার বন্ধু হলো কেন করে?

: ছেলেটা আমার এক বান্ধবীকে ভালোবাসতো, তাই একদিন ওকে বোঝাতে গিয়ে পরিচয়, কথা বললাম, একটা সময় পর দেখলাম, সে আমার বেশ ভালো বন্ধু হয়ে গেল। এই আর কি।



: এতো টুকুই? তার জন্য আপনি এতো বড় কাজ করতে চলে গিয়েছিলেন?

: ছেলেটা মাস্তান ছিল। কিন্তু তার পরও ওর সাথে ছিল আমার এক অন্য রকম বন্ধুত্ব। ছেলেটা মানুষ হিসেবে ছিল অসাধারন। আমি ছিলাম ওর বোন। চোর-ছেচ্চর বন্ধুদের একজন। কখোনবা পরিবার । সব মিলিয়ে একটা নতুন সম্পর্ক। যা বোঝার ক্ষমতা আমাদেরও হয়তো ছিলনা।



: আপনি? আপনাকে বোঝা আসলেই কঠিন। তা এখন সে কোথায়?

: ইতালীতে থেকে। কোন একটা খুনের কেসে বেচারী , আটকে গিয়েছিল বলে পালাতে বাধ্য হয়েছিল। পরে চলে যায় সুডেনে।



: এখন কি বন্ধুত্বটা টিকে আছে?



হেসে দিয়ে আনন্দ বললো,

: বুঝতে পারছি, আপনার ইংগিতটা কোন দিকে। না, যোগাযোগটা ঠিক তেমন ভাবে নেই। প্রায় সময়ই ফোন করতো, কিন্তু পরে যখন আমি হোষ্টেলে চলে গেলাম, আমার বোনটা বলতো ও নাকি ফোন করে আমাকে চাইতো, কিন্তু তখন তো আর মোবাইল বা ইমেইল ছিলনা। তাই একটা সময় পর আর যোগাযোগ রইলনা। তবে বন্ধুত্বটা হারিয়ে যায়নি, তাই তো নামটা মনে পরতেই শুভ কামনা আপনা থেকেই চলে আসে।





: ওরে বাবা, আপনার তো তাহলে এখন মাফিয়া লীডারদের সাথে খাতির থাকার কথা? কি বলেন?

: হ্যা, তা তো ঠিক। আর তা যে নেই, সেটা কে বললো?





পরেরটুকু পড়টে চাইলে - আবার দেখা হবে। রেলষ্টেশনে.......৩য়পর্ব

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই নভেম্বর, ২০১২ সকাল ১০:১৫

রবিউল ৮১ বলেছেন: হুম!!মেয়েটা যথেষ্ট স্মার্ট।সেটা প্রথম পর্ব পড়েই বুজ়েছি।হয়তো মেয়েটাই গল্পের প্রধান আকর্ষন হতে যাচ্ছে কিন্তু এখানে আসলে পুলিশ অফিসারের সাথে বাব বার দেখা হওয়া আর কথা বলার কারণে তার অনেক ঘটনা বেরিয়ে আসছে কিন্তু গল্পের নায়ক কিন্তু আপাতত পুলিশ অফসারকেই মনে হচ্ছে এবং পুলিশ অফিসারের কৌতুহলের কারণেই ফোকাসটা বার বার মেয়েটার দিকে চলে যাচ্ছে তাই পুলিশ অফিসারের চিন্তাধারা আমরা নরমালি আশা করি কিন্তু হঠাত হঠাত মেয়েটার নিজস্ব চিন্তাধারা গল্পের ভিতর ঢুকে যাওয়ার কারণেই প্যাচ লেগে যায় যে আসলে কথাগুলো কে ভাবছে।

১৪ ই নভেম্বর, ২০১২ সকাল ১০:৪০

আনন্দক্ষন বলেছেন: হমম, আপনি তো খুবই মনোযোগী critic। মনে হচ্ছে এখন থেকে বেশ সাবধানতার সাথে লিখতে হবে। বিশেষ করে ফোকাস এবং মনের কথা-বাস্তবের মিশেল বানালে চলবেনা।

এখন তো মনে হয় এই পর্বটা আগের চেয়ে better। যদি তাই হয় তবে, কৃতীত্বটা আপনার।
অসংখ্য ধন্যবাদ।

২| ১৭ ই নভেম্বর, ২০১২ সকাল ১০:৫৩

আসাদুজ্জামান আসাদ বলেছেন: ভাল লাগলো।

১৭ ই নভেম্বর, ২০১২ সকাল ১০:৫৬

আনন্দক্ষন বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.