![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শেফা আর তার বর বসে আছে সোফায় । শেফা আমাকে জড়িয়ে ধরে অঝোরে কেঁদে চলছে। অবশ্য আমার ও চোখ গড়িয়ে অশ্রু পড়ছে টুপ টুপ । তবে আমার কান্নার কোন শব্দ নাই। শেফার কান্নায় আমার ও কান্না পাচ্ছে , কান্নাটা শেফার কষ্টে আমি কষ্ট পাচ্ছি তা নয় ,আমি ও চেয়েছিলাম নোটন সুস্থ হোক । আর নোটনের জায়গায় শেফা হসপিটালের বিছানা থেকে কতরাতে কাতরাতে হারিয়ে যাক এ হাসপাতাল ঘর, এ শহর , এ পৃথিবী থেকে । আমি নোটনকে নিয়ে হাসবো হাসাব, সুখে ভাসবো ভাসাবো । নোটন সুস্থ হয়ে উঠুক। নোটনকে আমার খুব ভাল লাগে । নোটনের চোখগুলা খুব টানে আমায় । মনে হয় সারাদিন ও চোখে চেয়ে আমি সব হারাতে পারি । তবুও আমি আমাকে নিয়ন্ত্রণ করতে চেষ্টা করি চেষ্টা করি আমাকে বর্তমানে দাড় করিয়ে রাখতে । সমাজ সভ্যতার দিকে খেয়াল রাখতে । আমি জানি আমি যা ভাবছি তা হবার নয় , এটা অন্যায় আকাঙ্ক্ষা ।আমি প্রতিনিয়ত চেষ্টা করেছি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে, কোন না কোন ভাবে প্রতিটা মুহূর্তেই আমি নিজেকে ফিরিয়ে রেখেছি। জৈবিকতার আপন গহ্বরে। তবুও আদিম চেতনার বন্য রূপ। তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায় সহজ আদিমতায়। কত বাহানা সাজিয়েছি এটা করলে ওটা হবে, তাই এটা মন চাইলেও বাদ। কেন এতটা নিয়ন্ত্রণ করি নিজেকে ?
আমি শেফার বান্ধবীর চেয়ে বেশী কিছু। ছেলে বেলায় শেফাকে আমার সব খেলনার ভাগ আর কিছু বড় হবার পর শেফাকে আমার কসমেটিকস এর পুরো বক্স দিয়ে দিতে আমার খুব ভাল লাগতো। আমি ভাল থাকতাম। শেফার খুশি খুশি মুখ দেখে। যখন শেফা সেজে গুজে আমার দিকে চেয়ে লাজুক হাসি দিয়ে বলত, “কেন আমায় এমন সাজতে তুই জেদ ধরিস ? আমি কি তোর চেয়ে সুন্দর ?”
আমি কিছু বলতাম না। আমি আমার বন্ধুর সবচেয়ে সুন্দর মুখখানা দেখে তৃপ্ততা পেতাম। ও শুধু আমার বন্ধু তাই নয় আমার বোনের মতো। এক মাপের জামা কাপড় পড়তাম আমরা। আমাদের কোন নিয়ম ছিল না কোনটা কে কখন পড়ব। শুধু নিতান্ত কারণেই আমরা আমাদের বিশেষ সময়ের কাপড়টা ছাড়া আর কি আমরা ভাগ করে নিইনি ?
মনে হয় সেদিনের কথা তাও তো পার হয়ে গেছে ২০/২২ বছর। মেট্রিকের রেজাল্টের পর আমাদের আলাদা কলেজে পড়তে হবে বলে আমরা তিন দিন কেউ কিছু খাই নি (অবশ্য সেটা বাড়ির লোকদের দেখাতে যে, আমরা আমাদের কতটা ভালবাসি নিজেরা চুরি করে খেয়েছিলাম ঠিকই )। ফাস্ট ডিভিশনের শেফার সাথে সেকেন্ড ডিভিশনের আমাকে কলেজের প্রিন্সিপাল স্যার ভর্তি করতে বাধ্য হয়েছিলেন। অবশ্য আইএ তে শেফার চেয়ে আমিই ভাল রেজাল্ট করেছিলাম। কিন্তু বি.এ’র বেলায় দুজনে কাছা কাছি নম্বর নিয়ে বেরিয়ে এসেই শেফার স্কুলে চাকরী নিয়ে চলে গেল সিলেট। বিয়ে করলো সেখানেই। যেহেতু শেফা আমাদের কেবলই আশ্রিতাই হয়ে ছিল তাই তর প্রতি কেউ তেমন গরজ করেনি কেমন আছে বা কি করছে। যদি বাবা তখন বেঁচে থাকতেন তবে হয়তো শেফাকে এভাবে দুরে চলে যেতে হতো না। আমিও বাসিরের প্রেমে এমনই মেতে গেলাম আর খোঁজ নেয়া হয়নি, মানে হয়ে ওঠেনি শেফার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ। মাঝে মাঝে অনিয়মিত ভাবেই শেফা চিঠি লিখত কেমন আছি জানতে ? কবে বিয়ে করছি, কেন জলদি করছি না ? নতুবা নিজের কথা বলত -ওর বর ভাল আছে , বেশ কেয়ার করে , মজার ব্যাপার হল ওর বরও এতিম খানায় বড় হয়েছে। একই স্কুলে মাস্টারি করে। সে কারণে পারিবারিক ঝামেলাগুলো যেমন শেফাকে ছোয় না আবার প্রচণ্ড একাকীত্বেও পড়ে গিয়েছিল ওরা দুজনে । এ সন্তান সন্ততি হীন জীবনে কোন সমস্যা ছিল না ওদের । খেয়ে দেয়ে রাতে ঘুম আর দিনে কাজ। সপ্তাহ শেষে ঘুরতে যাওয়া ছিল ওদের দিন যাপন। তবুও ভাল আছে বলেছে বার বার। বার বার বেড়াতে যেতে বলেছে।
বাসির আমাকে ধোঁকা দিয়ে পাশের গ্রামের জবাকে বিয়ে করে সেও প্রায় বছর পাঁচেক হলো । আমি একাই আছি তারপর থেকে। আর বিয়ে করব না। ভাল লাগে না কোন ছেলেকে। মানে মাঝে মাঝে কারো চোখ যে ভালা লাগা তৈরি করে নি তা না। তবুও ভাল লাগায় হারাতে পারিনি বলে আর কারো গলায় মালা পরানো হয়ে ওঠেনি ।ইদানিং প্রায়ই আমাকে আত্মহত্যা খুব টানে . আমি নানা অজুহাতে তাকে এড়াই . কারন সেটা করার মত সৎ সাহস আমার নাই .. আবার ভাবি , কি উপায়ে মরতে পারি ওষুধ সেটাও আমি পরিমান মত না হলে কেউ টের পেয়ে পেট ওয়াশ করলে ঠিক হয়ে যাবে , আবার ভাবি রাস্তায় গাড়ীর নিচে পরব সেটাও সমস্যা যদি অধামরা হয়ে পড়ে থাকি। আবার বাসায় যদি এটা করি আমার মা টা শেষ .. ও বেচারি উন থেকে চুন খসলেই প্রেশা্র হই করে দৌড়া দৌড়ি লাগায় .. এমনই নানা অজুহাত জোগাড় কারে আমি নিত্য বেচে আছি ... তবে এটা আমি মানি যে মানুষ মন থেকে যা আশা করে তার কোন না কোন পথ ঠিক্বি বেরিয়ে যায় .. ভেবেছিলাম শরীরের কোথাও সিরিণ্জ সেট করে দিলে ক্রমাগত ব্লিডিং অবসেষে প্রেশার ফল ধীরে ধীরে দেন ডেথ। আমি খুব চেষ্টা করি আমার চারপাশকে বিশ্বাস করতে খুব ইচ্ছাও করে কিন্তু আমি পারিনা ।প্রেম বোধ নাই বোধয় তাই আর প্রেমে পড়ার জন্য অনেক চেষ্টা করেও পারছিনা। আর বিয়ে করব কি করে আমি যে আমাকেই বিশ্বাস করতে পারিনা তাকে কি দিয়ে সংসার করব ? কিছু অবিশ্বাস আর সন্দেহ নিয়ে?
হঠাৎ কেন মনে হল আজ এত কথা বুঝলাম না ।গত পরশু হঠাৎ একটা অজানা নাম্বার থেকে ফোন , - কে বীথি?আমি শেফা, চিনতে পারছিস?
- কে শেফা ? কিরে কোথা থেকে ? কেমন করে পেলি এ নাম্বার আমিতো তোদের অনেক খুঁজেছি । তোর ঠাকুরগাঁও বদলিটা শুনে সেখানের জেলা স্কুলে তোর নামে চিঠি দিয়েছিলাম । ফোন ও করেছিলাম ওরা কিছু বলতে পারেনি । যাক কোথা থেকে করেছিস কেমন আছিস বল ।
- আছি । ভাল নেই আমি
- -নোটনের শরীর খারাপ, ওর কিডনিতে স্টোন ধরা পড়েছে । এখানে ভাল ডাক্তার নাই , ওকে ঢাকায় আনবো । তুই তো জানিস আমাদের তোরা ছাড়া পৃথিবীতে কেউ নাই । মানে আমার দিক কার আত্মীয় বলতে তো তোরা ।
- আচ্ছা চলে আয় ।
এভাবেই চলে আসে শেফা আর ওর বর। বাসায় থেকে বেশ কিছুদিন ডাক্তার দেখানোর অবসরে নোটনের সাথে আমার বেশ ভাব হয় । বাসার কেউ ব্যাপারটাকে অন্য কোন ভাবে দেখেনি । অবশ্য দেখার অবকাশও নাই কারণ আমাকে সবাই অন্য ভাবে জানে । কোন ছেলের সাথে আমার ভাব হতে পারে। বাসিরের চলে যাওয়ার পর আমার জীবনে আর ছেলেদের কোন যায় গা নাই। শুধু আমি টের পাচ্ছিলাম বুকের ভেতর কোথাও দামামা বাজছে । যাক সামলে নিলাম সে অবস্থা । নোটন কে নিয়ে হাসপাতালে যাওয়া হল । নোটনের একটা কিডনির স্টোন অপারেশন করার কথা ছিল ,কিন্তু নোটনের অপারেশনের আগে টেস্ট এর রেজাল্টে জানা গেল ওর শুধু কিডনি থেকে স্টোন সরালেই হবে না কিডনিটাই ফেলে দেয়া লাগবে । সাথে অন্য কিডনিটা আরও আগে থেকেই প্রায় অকেজো হয়ে আছে সেটা কেউ জানতে পারেনি। যাক আমি বেশ সুখী লাগছে নিজেকে,। অসুস্থ হয়েও নোটন আমার কাছে এসেছে। নোটনকে দেখে মনে হয়েছে সে হল সেই পুরুষ যাকে আমি আজন্ম কাল ধরে চেয়ে এসেছি। যাকে সুদুর কৈশর থেকে দিবা স্বপ্নে লালন করে এসেছি । প্রতিটা সম্পর্কেরই একটা দহন থাকে , এ দহনের দায় হলো নিজেকে ক্রমাগত জ্বালিয়ে রাখা ।সে নিজে এবং তার সম্পর্কিত সবগুলি অধ্যায়কে ক্রমাগত জ্বলতে সাহায্য করা ই হচ্ছে এর একমাত্র উদ্দেশ্য।
নোটনের কিডনি বদল করতে হবে আর তা শেফাই দেবে । আমি চেয়েছিলাম শেফা অপারেশন টেবিলেই কোন জটিলতায় পড়ুক। আর নোটনের জায়গায় শেফা হসপিটালের বিছানা থেকে কতরাতে কাতরাতে হারিয়ে যাক এ হাসপাতাল ঘর, এ শহর , এ পৃথিবী থেকে।আর আমি নোটনকে নিয়ে হাসবো হাসাব, সুখে ভাসবো ভাসাবো। জীবনের প্রতিটা পাতা উল্টে প্রতিটা অক্ষর ছুঁয়ে জানব তার ব্যথার কথা । আজ ইচ্ছা হচ্ছে ভাল মন্দের প্রতিটা অক্ষর ছুঁয়ে ছুঁয়ে এগিয়ে যাই পরের পাতায়। পুরনো ডায়েরীতে জমা জীবনের যোগ-বিয়োগ গুন-ভাগের অঙ্কে বর্তমান ফলাফল দেখার সাহস আমি রাখি না। তবুও সেদিনের বেহিসাবে মিলিয়ে দেয়া অঙ্কে গড়মিলের লাইনটা কেন আজো খুঁজে পেতে ইচ্ছা করে। আবার করে ধারাপাত শিখে শুরু করতে মন চায় নতুন অঙ্ক।
পারলাম না অঙাকটা মেলাতে আবারো জীবনটা গড়মিল করে দিল সব।অপারেশনের পর দিন পনের পর শেফা তার বরকে নিয়ে বাসায় এলো ।আরো দিন পাঁচেক থাকলো যেনো নোটন বেঁচে উঠে শেফাকে নবজীবন দিয়েছে আর শেফা নোটনকে শরীরের একটা অংশ দিয়ে দুজন দুজনে জলে জল মিলে যাবার মত করেই মিলে গেছে। এ ধরনীর কারো সাধ্য নাই যে সে জল পৃথক করে ।
আজ শেফা তার বর কে নিয়ে প্রায় সুস্থ শরীরে তাদের নীড়ে ফিরে যাচ্ছে। আর আমি হিংসুক চোখে চেয়ে দেখছি আরও একবার আমার প্রচণ্ড সুখের পায়রাটা আমায় ছেড়ে চলে যাচ্ছে। আমি শেফাকে বলতে পারিনি, একসময় আমি তোকে অনেক দিয়েছি আজ তুই শুধু আমায় নোটনকে দিয়ে যা। বলতে পারিনি নোটনের চোখে চেয়ে “আমি তোমাকে ভালবাসি নোটন”। অব্যক্ত বাক্যের অন্তর্গত প্রতিটা অক্ষরই যখন এক একটা বাক্যে ব্যক্ত হবার জন্য প্রতীক্ষমাণ ,তখন অব্যক্ত অপেক্ষমাণ বাক্যটা স্ববিরোধী যুদ্ধে স্বীয় পরাজয়ে আত্মহননের আয়োজন করে
................তখন না বাঁচে কোন কথা না জন্ম হয় প্রেমের। যদি তোমায় তবে তোমাকে ভালবাসি বলে ফেলতে আমার কি হারাবার ভয়-যখন তুমি আমারই নও ?
শেফা তেমনি করেই কেঁদে চলছে। বুলু এসে খবর দিল “শেফা আফা তোমাগো রিকশা আইসে যাও জলদি ,টেরেস পাইবানা নইলে ”। শেফাও শেষবার বিদায়ালিঙ্গন করল ,আমি নোটনের দিকে তাকাতে পারছিলাম না ,নোটন যেনো আমাকে আমার সে ক্ষণজন্মা রংধনুর ওপার থেকে ডেকে আনল , বলল “যাই বিথি-তিথিকা ভাল থেকো বেড়াতে এসো আমাদের কুড়ে ঘরে যেখানে চাঁদের আলো বিনা দাওয়াতে অতিথি হয়। আমি মুচকি হেসে মাথা নেড়ে সায় দিলাম। ওরা একে অন্যেকে আশ্রয় করে চলে গেল
বিশাল আকাশে মিলিয়ে গেল আমার ক্ষণজন্মা সাত রঙা রংধনু ।আমি চেয়ে দেখলাম আমার মুহূর্তের ভালোলাগাকে ভালবাসায় ভাবতে কি অসম্ভব ভাবনাই না মনে মনে সাজিয়েছিলাম। জীবন আমার সাদা কাগজে দস্তখত নিয়ে আমাকে মুক্তি দিয়ে দিয়েছে,বিনিময়ে সে আমার অগোচরে আমার পৃথিবী দখল দিয়েছে,আজ আমি আমার নিখিল বন নন্দনে ততটাই স্বাধীন হয়ে গেলাম যতটা স্বাধীন অস্তিত্ব নিয়ে বাতাসে দুষিত বাতাস ঘুরে বেড়ায় ।
২| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৫৭
মাহমুদা আক্তার সুমা বলেছেন: খুব ভাল লাগল।
৩| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:৪৬
সুমন কর বলেছেন: ভালো হয়েছে।
৪| ১২ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:৫১
অনিন্দ নিন্দা বলেছেন: ধন্যবাদ ঠ্যঠা মফিজ ,মাহমুদা আক্তার সুমা, সুমন কর । নেতিবাচক দিকগুলি জানলে আমি আরো একটু গল্প গোছানের চেষ্টা করতাম ।
©somewhere in net ltd.
১|
১১ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৫৪
ঠ্যঠা মফিজ বলেছেন: সুন্দর গল্প ভালো লাগলো ।