![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ভারতের আগ্রায় অবস্থিত তাজমহলকে সারা বিশ্বে প্রেমের প্রতীক হিসাবে অনেকেই বর্ণনা করে থাকেন ।
কিন্তু এই জানা এবং সর্বজন বিদিত তাজমহলের ইতিহাসকে চ্যালেঞ্জ করে বসেন প্রফেসর পি.এন. অক (Professor P.N. Oak– Taj Mahal: The True Story বই এর লেখক) তার
একটি গবেষণাধর্মী বইতে ।
এতদিন যাবত আমরা তাজমহল সম্পর্কে যা জেনে এসেছি তা অনেক বড় ভূল বলে তিনি দেখিয়েছেন । তিনি তাজমহলে নামকরন নিয়েই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন । তার মতে তাজমহল কোন ভাবেই মমতাজের নাম থেকে আসেনি । নামটি এসেছে "তেজ মহলয়" থেকে । তিনি দাবী করেন যে তাজমহল বেগম মমতাজ মহলের সম্মানে নির্মিত প্রেমের সমাধিস্থল নয়; বরং এটা প্রাচীন দেবতা শিব (যাকে আগে বলা হত “তেজ মহালয়”) এর মন্দির যেখানে আগ্রার রাতপুতরা পূজা অর্চনা করতেন। পরে মোঘল সম্রাট আকবরের দৌহিত্র সম্রাট শাহজাহান একে তাঁর মৃত স্ত্রীর স্মরণে স্মৃতিশালা হিসেবে গড়ে তোলেন।
রাজপরিবারের অধীনে থাকায় সাধারন মানুষের কাছে এ মন্দিরটি ছিল অচেনা। পরবর্তীতে মমতাজ মারা গেলে তাকে এখানে সমাহিত করা হয় এবং সাধারনের সামনে চলে আসে মন্দিরটি । আর তখনই মানুষের মুখে মুখে মমতাজ শাজাহানের প্রেম কাহিনী প্রচারিত হয় ।
ইতিহাস অনুসন্ধানে তিনি দেখতে পান যে শিব মন্দিরটি সম্রাট শাহজাহান অন্যায়ভাবে জয়পুরের মহারাজার (জয় সিং) কাছ থেকে দখল করেন । সম্রাট শাহজাহান নিজেই তাঁর নিজস্ব দিনপঞ্জীতেও (বাদশাহনামা) উল্লেখ করে গেছেন যে, জয় সিং এর কাছ থেকে আগ্রার এক চমৎকার প্রাসাদোপম ভবন মমতাজ মহলের সমাধিস্থলের জন্য বেছে নেয়া হয় এবং এর জন্য জয় সিংকে অনত্র জমিও দেয়া হয় সম্রাট শাহজাহানের পক্ষ থেকে ।
“তাজমহল” নাম নিয়েও প্রফেসর অক সংশয় প্রকাশ করেন । তিনি বলেন, মোগল আমল এমনকি খোদ সম্রাট শাহজাহানের আমলেও দলিলাদি ও কোর্টের নথিপত্রে কোথাও “তাজমহল” নাম উল্লেখ নাই । আর তাছাড়া সে সময়ে কোন মুসলিম দেশে মুসলিম শাসনামলে কোন প্রাসাদ বা ভবনের নাম “মহল” রাখার প্রচলন ছিল না ।
এছাড়া “তাজমহল” নামটি এসেছে ‘মমতাজ মহল’ থেকে এ বিষয়টি তাঁর কাছে যুক্তিযুক্ত মনে হয়নি । তিনি এর পেছনে দুটি কারণ উল্লেখ করেন ।
প্রথমতঃ তাঁর প্রকৃত নাম কখনোই ‘মমতাজ মহল’ ছিল না বরং তাঁর নাম আরজুমান্দ বানু বেগম ।
দ্বিতীয়তঃ সাইকোলজিক্যাললি
কেউ কারও নামে কোন প্রাসাদের নামকরন করতে চাইলে তার নামের প্রথম দুই অক্ষর বাদ দিয়ে (অর্থাৎ মমতাজ থেকে “মম” বাদ দিয়ে তাজ) নাম রাখবেন– এটাও সহজে মেনে নেয়া যায়না । এটা মানব স্বভাবের মধ্যে পড়ে না ।
প্রফেসর পিএন অক দেখিয়েছেন
যে এ রকম প্রেম কাহিনী সে সময়ের কোথাও লিপিবদ্ধ নেই তাই এ কাহিনী লোকমুখে প্রচারিত (ধারণা প্রসূত মাত্র)।
তিনি আরো বলেন, মমতাজ আর শাহজাহানের ভালবাসার গল্প মুলতঃ রূপকথা যা ওই সময়ের লোকদের মুখ থেকে সৃষ্ট; কারন ওই সময়কার কোন সরকারী নথিপত্রে বা গ্রন্থে মমতাজ-শাহজাহানের প্রেমের কথা উল্লেখ নেই।
পাশাপশি প্রফেসর অক কিছু ডকুমেন্টরি উপস্থাপন করেন যা প্রমাণ করে তাজমহল কখনোই সম্রাট শাহজাহান শাসনামলের নয় । সেগুলো হল,
১। নিউ ইয়র্কের আর্কিওলজিস্ট মারভিন মিলার (Marvin Miller) যমুনা নদীর তীর সংলগ্ন তাজমহলের দেয়ালের নমুনা পরীক্ষা করেন । তিনি এর কার্বন টেস্ট করে যে তথ্য পান, তাতে যে কার্বন পাওয়া যায় তা সম্রাট শাহজাহানের শাসনামলের চেয়েও ৩০০ বছরের বেশি পুরনো !
২। এছাড়া আরেকটি ব্যাপার হল এক ইউরোপিয়ান পর্যটক যিনি ১৬৩৮ সালে আগ্রা ভ্রমন করেন । সময়টি শাহজাহান স্ত্রী মমতাজের মারা যাওয়ার মাত্র ৭ বছর পর । কিন্তু তিনি তার লিখিত ভারতবর্ষ ভ্রমণ গ্রন্থে তাজমহল নামক প্রাসাদের কোন কথাই উল্লেখ করেননি ।
প্রফেসর অক তাজমহলের স্থাপত্য শৈলীর কিছু অসামঞ্জস্যতার কথা উল্লেখ করে বলেন যে তাজমহল মুলতঃ হিন্দু শিব মন্দির ছাড়া আর কিছুই নয় ।
তিনি আরও যুক্তি দেখান, তাজমহলের অনেক কামরাই সম্রাট শাহজাহানের আমল থেকেই তালবদ্ধ করে রাখা হয়েছে যা এখনও জনসাধারণের অজানা রয়ে গেছে । তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে দাবি করেন যে ওই সব কামরাগুলোর একটাতেই আছে দেবতা শিবের মস্তকবিহীন মূর্তি অর্থাৎ শিব লিঙ্গ যা হিন্দুদের শিব মন্দিরে সচরাচর দেখতে পাওয়া যায় ।
বিখ্যাত তাজমহল নিয়ে প্রফেসর অকের এ উল্টো বক্তব্য ও ইতিহাস তিনি তার যে বইতে লিখেছিলেন তৎকালীন ভারতের ইন্দিরা গান্ধী সরকার বইটি ব্যান্ড করে দেয় ও সবগুলো কপি বাজার হতে উঠিয়ে নেয় এবং ভারতে এর দ্বিতীয় কোন কপি প্রকাশ করাও বন্ধ করে দেয় ।
সেখানে কারণ দেখানো হয়, যদি এ বই প্রকাশ করা হয় তাহলে ভারতে হিন্দু ও মুসলিমদের মাঝে ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক সংঘাত বা রায়োট বেঁধে যাওয়ার শংকা রয়েছে ।
পরে প্রফেসর অকের প্রচলিত ইতিহাস বিরোধী বক্তব্য এবং তার বই বিশ্লেষণে গবেষকরা এতটুকু মত দিতে পেরেছেন, তাজমহলের মার্বেল পাথর, ইসলামিক সংস্কৃতি, আল কোরানের আয়াত ক্যালিওগ্রাফি এবং সৌন্দর্যমণ্ডিত গম্বুজের কারুকাজ এসব কিছুই সম্রাট শাহজাহানের সময়ে হয়ে থাকলেও তাজমহলের প্রাথমিক স্থাপনা শাহজাহান কর্তৃক না হয়েও থাকতে পারে ।
তবে তাজমহল তৈরির আসল ইতিহাস যতই বিতর্কিত হয়ে থাকুক, তবু তাজমহল মুঘল মুসলিম স্থাপত্য কীর্তিগুলোর মধ্যে গৌরবান্বিত অলঙ্কার, একটি অনন্য কীর্তি ।
সপ্তাশ্চর্যের এক আশ্চর্য।
©somewhere in net ltd.