ছুড়ে ফেলা ভালোবাসা | আরিফ রুমি

০৬ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:০৮

-দেখ রিফাত তনয়াকে খুব সুন্দর লাগছে না..
-তাই নাকি সুন্দর লাগছে বুজি, কিরে সজিব প্রেমে পইরা গেলি নাকি..
-সেই কপাল কি আর আমার আছে, তনয়া তো তোকে পছন্দ করে..
-ধুর..
-রিফাত আজ তো আমাদের স্কুল লাইফের শেষ দিন, তুই তো জানিস তনয়া সেই কবে থেকে তোকে পছন্দ করে..
-বাদ দে তো..
-দেখ তনয়া আমাকে তর কাছে পাঠিয়েছে..
-সজিব আর কিছু বলার আগেই রিফাত বলে উঠল, দেখ সজিব আমি তনয়াকে পছন্দ করি না, আর ওর ভিতরে এমন কিছু নাই যাতে আমার মত একটা ছেলে ওকে লাইক করবে.. ও কালো, ব্যাকডেটেড..
-তনয়া কালো কি বলিস, ও তো উজ্জল শ্যাম..
-দুস্ত তনয়া বিশ্ব সুন্দরী, তর মন চাইলে তুই প্রেম কর কিন্তু আমাকে মাফ কর..
মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেল সজিবের রিফাতের সামনেই থাকতে আর মন চাচ্ছে না, তাই পা বাড়াল, দরজার ওপাশে যেতেই তনয়ার মুখোমুখি হয়ে গেল.., তনয়ার চোখ দিয়ে পানি ঝড়ছিল, বুঝার বাকি ছিল না সব কিছুই তনয়া শুনে ফেলেছে.. দ্রুত তনয়া সেখান থেকে চলে যাচ্ছে, আমিও তনয়ার পিছু ছুটলাম....

#পাঁচ_বছর_পর...
হঠাৎ করেই তিথী রিফাতের জীবন থেকে চলে গেল, শুধু মাত্র একটা sms করেই বলে দিল,
"রিফাত আমি আমার বাবা-মার পছন্দের ছেলেকেই বিয়ে করবো আজ থেকে আমাদের পথ আলাদা"
খুব সহজেই সব কিছু শেষ করে দিল, আমাকে কিছু বলার সুযোগ পযন্ত দিল না। ৩ টা বছর আমরা একে অপরকে যে এত ভালোবাসলাম তার ছিটেফোটা দেখলাম না ওর sms-এ, নাম্বারটা ও আর খোলা পেলাম না .. প্রায় ১ মাসের মত যেতে চলছে কিন্তু তিথী আর যোগাযোগ করেনি, দিন রাত গুলো অনিদ্রায় কেটে যাচ্ছিল... বিশ্বাস নামের জিনিসটাকেই অবিশ্বাস হতে লাগলো... সজিবটা ও আজ কাল তেমন একটা আসে না এদিকটায়..
ঠিক সেই সময় গুলোতেই একটা আননোন নাম্বার থেকে প্রায় প্রতিদিন ফোন আসতে লাগলো.. ভালো লাগতো না, আজে বাজে কথা বলি তাও ফোন করে.. না আজ ফোন দিলে জানতে হবে কেন ফোন করে..
-হ্যালো..
-হ্যালো..
-আপনাকে এত আজে বাজে কথা বলি তাও ফোন করেন কেন? কি চান..
-আপনার আজে বাজে কথা শুনতে ভালো লাগে.. তাই
-মানে.. দেখুন আমার মন মানসিক অবস্থা ভাল না..
-কেন..কি হয়েছে আপনার?
-আজিবতো আপনাকে কেন বলতে যাব.. রাখছি বলেই ফোনটা কেটে দিল রিফাত..
কিন্তু আননোন নাম্বারটা থেকে ফোন আসাটা আর বন্ধ হয় না। একটা সময় রিফাতের সাথে আননোন মেয়েটার বন্ধুত্বা হয়ে যায়.. সেই সুবাধে জানতে পারে মেয়েটার নাম আনিতা, রিফাত তার সকল কষ্টের কথা গুলো আনিতার কাছে শেয়ার করে, আনিতা ও সব শুনে খুব সহানুভূতি দেখায়..
-জানো রিফাত, সত্যিকার ভালবাসা মানেই না পাওয়ার কষ্ট..খুব দূর থেকে পথ চেয়ে থাকা।
-হুম..
-কি ব্যাপার চুপসে গেলে কেন?
-কিছুনা, আনিতা আমরা কি দেখা করতে পারি না..
-কেন দেখা করে কি হবে, আমি দেখতে বিশ্রি কালো.. দেখা হওয়ার পর হয়ত বন্ধুত্বটাই আর থাকবে না.. হা হা হা
-তুমি দেখতে যেমনি হও আমি তোমার সাথে দেখা করতে চাই..
-আনিতা এভোয়েট করতে চাচ্ছে বিষয়টা, তাই বল্ল এখন তাহলে রাখছি রিফাত..
-ওকে..
এভাবে অনেক গুলো দিন কেটে গেল। রিফাত এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। আনিতার সাথে দেখা করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠল।কিন্তু আনিতা কিছুতেই দেখা করবে না.. এগুলা নিয়ে ওদের মাঝে ঝামেলা শুরু হতে থাকলো... একটা সময় আনিতা sorry লিখে sms করে হারিয়ে গেল...
-কিরে তর এই রকম দেবদাসের মত অবস্থা কেন?
-মুচকি একটা হাসি দেয় রিফাত.. সেই হাসির মাঝেই অনেক ব্যাঁদনা লুকানো..
-কি রে কি হইছে..
-জানিস আনিতা হারিয়ে গেছে..
-আনিতা কে? ও বুঝছি ঐ যে তোর আননোন নাম্বারের মেয়েটা..
-হ্যা.. খুব খারাপ লাগতেছেরে.. ওকে আমার খুজে পেতেই হবে..
-রিফাত তনয়ার কথা মনে আছে তর..
-কোন তনয়া..
-আমাদের স্কুলের তনয়া..
-হ্যাঁ..
-মেয়েটা সেদিন খুব কষ্ট পেয়েছিল জানিস, তর আর আমার সব কথাই শুনে ফেলেছিল, অনেক কেঁদে ছিল.. আর একটা কথা বলে ছিল.. সত্যিকার ভালবাসা মানেই নাকি, না পাওয়ার কষ্ট..খুব দূর থেকে পথ চেয়ে থাকা।
- থমকে যায় রিফাত, কি বল্লি তুই কথাটা.. এটা তয়না বলেছে?
- হ্যাঁ.. কেন কি হইছে..
-দুস্ত আমাকে একবার তয়নার সাথে দেখা করাই দে.. বলেই হু হু করে কেঁদে উঠে..
-মানে..
-মানে আনিতাই তনয়া..
-কি বলছিস..
-সত্যি বলছি... দুস্ত আমাকে একবার # তনয়ারকাছে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ করে দে.. আমি আজই ওর সাথে দেখা করতে চাই..
-কিন্তু ওরা তো এখন ঢাকাতে নাই..
-তাহলে কোথায় আছে..
-ওর আব্বু সিলেট বদলি হয়ে গেছে..
-সিলেট... আমি আজই রওনা দেব সিলেটের পথে, তুই দেখা করার ব্যাবস্থা করে দে..
-ওকে.. ওকে
-দুস্ত আমার কথা এখনি তনয়াকে কিছু বলিস না.. আমি সামনা সামনি হয়ে যা বলার বলবো..
-আচ্ছা..
পাঁচ বছর আগে যে ভালবাসাটাকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছি, একটা মানুষের নিষ্পাপ ভালবাসাকে হত্যা করেছি, জানিনা সেই মানুষটা আমাকে ক্ষমা করবে কিনা.. কিন্তু আজ যে তাকেই আমার খুব প্রয়োজন... তাই সেই পথেই ছুটে চললো.....

___ আরিফ রুমি ।

০ টি +০/-০