নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আব্দুল্লাহর বাবা মারা গেছে যুদ্ধে।তার মা এসেছে ওমর মোখতারের কাছে।
ঃআমার স্বামি কই?
ঠিক সেই সময় আব্দুল্লাহ মায়ের কোল থেকে নেমে ওমরের কাছে গেল।
ওমর বললঃতোমার নাম কি?
ঃআব্দুল্লাহ।
ঃতুমি আমার দোস্ত হবে?
ঃহুম।
ঠিক আছে দোস্ত,আজ থেকে তুমি আমার দোস্ত!এই বলে ওমর তাকে কোলে নিল।আব্দুল্লাহ এবার ওমরের চসমা টা খুলে নিয়ে পরার চেষ্টা করলে শেষে ওমর মিষ্টি করে হেসে চসমা টা পরিয়ে দিলেন
আর বললঃতোমার মাকে বলল "তোমামার বাবা আল্লাহর কাছে গেছেন"।
15 ই সেপ্টেম্বর ১৯৩১ সাল মঙ্গল বার।
লিবিয়ার মহান স্বাধীনতাকামী নেতা ওমর মোখতার ধরা পড়েছেন ইতালীয়দের কাছে।আজ তার বিচার হবে কারণ সে ইতালীর মহান রাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে, লিবিয়ার স্বাধানতা চেয়েছে,মা বোনদের ইজ্জতের বদলা নিতে চেয়েছে,ঘর হারাদের ঘর ফিরিয়ে দিতে চেয়েছে,জাতির পক্ষে কথা বলেছে।এটাই তার অপরাধ।
কাঠগড়াই দাড়ানো বৃদ্ধ একটা লোক বয়স ৭০ হবে, মুখ ভরতি সাদা দাড়ি আর চোখে মলীন চসমা দেখেই বোঝ যাচ্ছে বয়সের ভারে নুজ্জমান।নাটকিয় বিচার শুরু হল
ঃনাম?
ঃওমর মুখতার
ঃবয়স?
ঃ৭০
ঃমহামান্য ইতালি সরকারের বিরুদ্ধে আপনি আন্দোলনে নেমেছেন?
ঃহ্যা
ঃআপনি কি দুইজন বৈমানিক কে হত্যা করেছেন?
ঃআমি তাদের বন্দি করেছি মাত্র।কিন্তু যুদ্ধের পর তাদের মৃত দেখি।আমি জানি না কারা তাদের হত্যা করেছে।
ঃআপনার এরপরও কিছু বলার আছে?
ঃনা(শান্ত ভাবে উত্তর দিলেন এই মহান নেতা)
ঃআমার প্রশ্ন করা শেষ ইউর অনার।ওমর মুখতার একজন যুদ্ধ অপরাধী। সে ইতালি সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে।দেশে(লিবিয়া) শান্তি শৃঙ্খলা নষ্ট করেছে আর সে একজন খুনি!(সেই সময় ইতালীয়রা লিবিয়ার যে প্রদেশ দখল করত সেখানেই চালাত নির্বিচারে হত্যা লুট আর ধর্ষণ এই গুলো কোন অপরাধ না অপরাধ হল এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা)।তাই আমি মহামান্য আদালতে তার ফাসি দাবি করছি।
এবার ওমরের পক্ষ থেকে কথা বলার জন্য ক্যাপ্টেন লুন উঠে দাড়াল(এই ক্যাপ্টেন লুন কেই ওমর যুদ্ধে বাঁচিয়েছিলেন এবং নিঃশর্তে মুক্তি দেন)।তিনি অনেক কথাই বললেন,সাথে সাথে তিনি ইতালীর লিবিয়া দুঃশাসনের কথাও তুলে ধরলেন।আর সেই সাথে আদালতে চাপা গুঞ্জন আর অট্টহাসি।সবার মুখে একই কথা ক্যাপ্টেন লুনের মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটছে তানা হলে ইতালীর সবচেয়ে বড় শক্রু লিবিয়ার এই কুত্তাটার পক্ষ নেবে কেন?
আদালত শুনল না সে কথা কারণ ফলাফল আগেই ঠিক হয়ে আছে এটা তো শুধু ফর্মালিটি।
নাটকিয় এই বিচারকার্য শেষ হল তখন ৬ টা বাজে ১৫ মিনিটস ব্রেকের পর রায় ঘোষণা করল বিচারক " ওমর মুক্তারের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সমূহ সবই সত্য এবং প্রামাণিত।তাই আদালত সুবিবেচনায় ওমর মুখতাত কে ফাসির নির্দেশ দিচ্ছে ।
রায় ঘোষণা শুনে ওমর মুখতার শব্দ করে পাঠ করলেন "ইন্না লিল্লহি ওয়া ইন্না ইলাহী ওয়া রাজিউন"।এই শব্দ শুনে বিচারক দোভাষী কে জিজ্ঞেস করল কি বলল উনি?
দোভাষী বলল: এটা কুরানের আয়াত।
ঃঅর্থ কি?
ঃজানাব যারা ধর্মের কাজ করে তারা যখন বিপদের সম্মুখীন হই,তাদের উপর যখন মহাবিপদ ও কষ্ট নেমে আসে তখন তারা বলে "নিশ্চিত আমরা আল্লাহর জন্য এবং আমরা তার দিকেই প্রত্যাবর্তনকারি"।
এই কথা শুনে বিচারক বাকরুদ্ধ হয়ে হয়ে গেল এবং উপস্থিত সবাই বিমূড় হয়ে গেল।আসলে তারা সবাই জানত এই রায় অবৈধ তাই এই কথা সবার বিবেকেই বিদ্ধ করল।
১৬ই সেপ্টেম্বর সকাল ৯ টা।
মাঞ্চে দাঁড়িয়ে আসে চসমা চোখে একলোক।৭০ এর উর্ধে বয়স, চোখ কটরের মধ্যে ঢুকে গেছে কিন্তু জাতি সত্ত্ব তখনও জল জল করছে।সামনে তার দড়ি ঝুলছে আর তার সামনে উপস্থিত আছে প্রায় বিশ হাজার লোক!ইতিহাসে এই প্রথম কোন প্রনপ্রিয় নেতা কে জনগণের সামনে ফাসি দেওয়া হবে।সবার বুক ফেটে যাচ্ছে অন্তরে ওমর মোখতার! ওমর মোখতার বলে চিতকার করছে কিন্তু মুখে কথা বের হচ্ছে না।সবার চোখে আশ্রু কারণ তাদের মুক্তির দূত আজ তাদের কাছ থেকে বিদায় নেবে।সেই দরিদ্র স্কুল শিক্ষক আজ বিদায় নেবে যিনি কিনা যুদ্ধে 'য' বুঝতেন না অথচ তিনি প্রতিটি যুদ্ধে সফল।প্রশিক্ষিত ইতালীয় সৈণ্যদের তিনি নাকানিচুবানি খাইয়েছেন বহুবার।যার আল্লাহর উপর বিশ্বাস ছিল অটুট।শত বিপদেও তিনি কখনো আল্লাহর উপর থেকে বিশ্বাস হারান নি।
নেতার হাত খুলে দেওয়া হল।মঞ্চে এসে দাঁড়ালেন তিনি।সামনের নির্যাতিত জনগনের উদ্দেশ্যে বললেন-
"আমরা কখনো আত্নসমর্পন করব না।আমাদের পরবর্তী বংশধরেরাও কখনো মাথা নত করবে না।বীরের ন্যায় মৃত্যু বরণ করা অনেক উত্তম পরাধীনতার থেকে"।
এরপর ফাসির বেড়ি পরিয়ে দেওয়া হল তাকে পাঠ করলেন সেই আমর শুধা "আশহাদু আল্লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলহু!"
পুরা আকাশ কম্পিত হল আল্লাহুকবার তাকবীরে, ভূপৃষ্ঠ ভিজে গেল অজস্র মানুষের চোখের পানিতে। মাঠ খালি হয়ে এসেছে।শাতিলার কোল থেকে আব্দুল্লাহ নেমে মঞ্চের কাছে গেল ওমরের ফাসি দেওয়ার সময় যে চসমাটা পড়ে গিয়েছিল সেটা চোখে দিয়ে শাতিলাকে বলল মা দেখ তো আমাকে ওমর মোখতারের মত লাগছে নাকি?
ঃহ্যা বাবা তোকে ওমর মোখতার মতই লাগছে তুই হবি আমাদের এ যুগোর ওমর মোখতার।
০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:২৫
আরব বেদুঈন বলেছেন: দুঃখিত ভুল টাইপ করেছি শেষের অংশে গিয়ে আবার ঠিক লিখেছি
©somewhere in net ltd.
১| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:৫০
তট রেখা বলেছেন: ওনার নাম ওমর আখতার নয়, ঊমর মুখতার।