নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পারস্য,আনাতোলিয়া ও সাওয়াদ ব্যাপি বিস্তৃত ইল্খানাত,১২৫৮ সালে দুরাচার হালাগু খান এই রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন।মোঙ্গল বংশের মূল শাখা পিকিং-এর সম্রাটকে বলা হতো খাকান খান(মহান শাসক)।তাই তাদের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনার্থে এর শাসক ইল্খান/ছোট শাসক উপাধী ধারণ করেন।এই বংশের ৪র্থ শাসক।
ইলখান অরঘুন এর রাজত্বকালে তার বিশাল ইলখানাতের
প্রদেশে ১ পুত্র জন্ম জন্ম গ্রহণ করেন।তার নাম রাখা হয় "মুহাম্মাদ ইল্ইয়াস আস্-সিস্তানী",ইল্ইয়াস যার অর্থই বীরত্বব্যঞ্জক।তার পিতা মুহাম্মাদ সুলতান ছিলেন ইল্খানী সেনাবাহিনীর ১জন
কায়েদ, কায়েদ বলতে ১,০০০ সৈন্যের অধিনায়ক বোঝায়(বর্তমান কর্ণেলের সমতুল্য)।সুলতান ইল্খানী ফৌজের অশ্বারোহী বাহিনীতে ছিলেন।বিশাল এই সাম্রাজ্য ছিল পৌত্তলিক,কারণ মোঙ্গলদের মতো এই ইল্খান রাও ছিলেন সূর্য্য পূজারী।কিন্তু অরঘুনের পুত্র গাজানের শাসনামলে এই অবস্থার আমূল পরিবর্তন আসে।গাজান ১,০০,০০০ অনুচর সহ ইসলাম গ্রহণ করে
গাজান মাহ্মূদ নাম ধারণ করেন।এবং পিকিং এর খানের প্রতি আনুগত্যসুচক ইল্খান উপাধীর পরিবর্তে খান উপাধী ধারণ করেন।অর্থাৎ একই সাথে ইল্খানাতের স্বাধীনতা অর্জিত হয়।মুহাম্মাদ ইল্ইয়াস সিস্তানী অরঘুনের রাজত্বকালে জন্মগ্রহণ করেন ও গাজান মাহ্মূদের রাজত্বকালে তার প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন।ক্রমেই তিনি ধর্মের প্রতি অনুরক্ত হয়ে ওঠেন,কারণ গাজান মাহ্মূদের রাজত্বকাল(১২৯৫-১৩০৪) ছিল ইসলাম প্রাচারের সুবর্ণ যুগ
হাজ্জ্ব সম্পাদন
খুব সম্ভব ১৩০৮-১০ সালের মাঝে ইল্ইয়াস সিস্তানী হাজ্জ্বে গমন করেন।সে যুগে হাজ্জ্ব কোন সামান্য ব্যাপার ছিল না,ছিল না এখনকার মতো অর্থের ব্যাপারটিই।তখন মূলত প্রয়োজন ছিল শারীরিক সামর্থ,ইচ্ছা শক্তি ও অন্তত পক্ষে দু'টি ভরবাহী পশুর।ইল্খানাতভুক্ত সিস্তান থেকে হাজ্জ্বে যাওয়ার জন্য বহু দেশ পাড়ি দিতে হতো না।কারণ দেশ দু'টো ছিল পাশাপাশি ও বিশাল দেশ।মাক্কাহ্ মুকার্রমা,মাদীনাহ্ মুনাওয়ারা ও আল্-কুদছ্ আশ্-শারীফ তখন ছিল মামলূক সালতানাতভুক্ত।এশিয়া ও আফরিকা মহাদেশব্যপি বিস্তৃত সুবিশাল
বাহ্রী মামলূক সালতানাত। আর এই মামলূক সালতানাত ও ইল্খানাত ছিল পরস্পরের প্রাণের শত্রু রাষ্ট্র,তবে প্রত্যেক যুদ্ধে মামলূকরাই জয়লাভ করতো।
পাড়ি দিয়ে ইল্ইয়াস সিস্তানী হাজ্জ্ব সম্পাদন করে ফিরে আসেন।এসময় মামলূক সালতানাতের সুলতান ছিলেন
সুলতান আন্-নাছির, তৎকালে মানুষ বর্তমানের মতো হাজ্জ্ব করে নিজেই নিজের নামের শেষে হাজ্জ্বী/আল-হাজ্জ্ব শব্দটি যোগ করতেন না।তবে তাদের ১ নজর দেখেই চেনা যেতো,কারণ আবশ্যিক ভাবে মাথা কামানোর ফলে হাজ্জ্বীরা মাথায় ১টি সাদা ফেটি পড়তেন।যা দেখেই তাদের চেনা যেতো।মূলৎ এসময় থেকেই মুহাম্মাদ ইল্ইয়াস সিস্তানী নামটি চিরতরে হারিয়ে গেলো হাজ্জ্বী ইল্ইয়াস শব্দটির নিচে।মানুষ তাঁকে হাজ্জ্বী ইল্ইয়াস নামে ডাকতে শুরুকরে ও তিনি ক্রমশ হাজ্জ্বী ইল্ইয়াস নামে খ্যাত হয়ে উঠেন
হিন্দুস্তানে হিজরাত
১৩১৬ সালে
ইল্খান আবু-সাঈদ পারস্যের সিংহাসনে আরোহণ করেন।তিনি যোগ্যব্যক্তি ছিলেন,কিন্তু নিজেই নিজের সর্বনাশ করেন আমীর চুপাবের বিবাহিতা কন্যাকে বিয়ে করতে চেয়ে ও আমীর চুপান রাজী না হওয়ায় তার মতো যোগ্য মন্ত্রীকে হত্যা করে।ফলে দিন দিন ইল্খানাত পতনের দিকে ধাবিত হতে থাকে,শুধু
এশিয়া মাইনর ১৮টি গাঝী রাজ্যের অভ্যুদয় ঘটে।আবু-সাঈদের রাজত্বের শেষ দিকে ও তার মৃত্যুর পর একে একে ইয়াযদ্,আর্দেস্তান,মায়বুদে
মুজাফ্ফারীয়া, সাওয়াদে
জালায়েরী, সিজিস্তান-ফারাহ্তে
কুর্ত, দক্ষিণ খোরাসানে
সার-বা-দার, সিস্তান-কান্দাহারে
সিস্তান. কুর্দীস্তান ও হায়াস্তানে
কারা কুয়্যূনলু ও সাকারতেলোসে
সাকারতেলোস রাজ্য গড়ে ওঠে।পারস্যের যখন এই বেহাল দশা হিন্দুস্তানের অবস্থা তখন রমরমা।
সুলতান ফিরুয শাহ্ খাল্জী’র শাসনামল পর্যন্ত হিন্দুস্তান ভারতের শ্রেষ্ঠ শক্তি থাকলেও বিশ্বে তার কোন স্থান ছিল না-পরাশক্তির কাতারে।১জন ব্যক্তি সব বদলে দিলেন তাঁর নাম সুলতান আলা-উদ-দ্বীন মুহাম্মাদ শাহ্ খাল্জী
তিনি বিশ্বশক্তি তুর্কীস্তানের চাগতাই খানাতকে
১৬ বার যুদ্ধে পরাজিত-ই শুধু করেননি,উপরন্তু বহু বহু বছর পর তাঁদের হাঁত থেকে সিওয়াস্তান উদ্ধার করেন।কিন্তু এগুলোই সব ছিল না,তিনি
রামেশ্বরমের সেতুবন্ধ পর্যন্ত গোটা অঞ্চল অধিকার করে নিয়ে
হিন্দুস্তানকে বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তিতে পরিণত করেন চাগতাইদের পেছনে ফেলে।স্বদেশের দুরবস্থা ও প্রতিবেশী দেশের দিন দিন উন্নতী দেখে হাজ্জ্বী ইল্ইয়াস হিন্দুস্তানে হিজরাত করেন
হিন্দুস্তানে হাজ্জ্বী ইল্ইয়াস
রিয়াজ-উস-সালাতীন মতে হাজ্জ্বী ইল্ইয়াস ১৩২৫ সালে দিহ্লী ত্যাগ করেন।অতএব নিশ্চিত ভাবেই বলা যায় যে তিনি অন্তত ৪/৫ বছর আগেই হিন্দুস্তান এসেছিলেন।অর্থাৎ তুগলাক্ব বংশের প্রতিষ্ঠাতা
সুলতান গিয়াস-উদ-দ্বীন তুগলাক শাহ্’র রাজত্বকালের(১৩২০-২৫) প্রথম দিকে হাজ্জ্বী ইল্ইয়াস হিন্দুস্তানে আসেন।এরও আগে আসা সম্ভব নয়,কারণ তখন খুসরু শাহ্’র হিন্দু শাসন চলছিল।মানুষ হিজরাত করে তুলনামূলক ভালো দেশে যায়-মন্দ দেশে নয়।গাঝী মালিক তুগলাক্ব শাহ্ ক্ষমতায় এসে পরিস্থিতি শান্ত করেন।তবে হিন্দুস্তানের রাজধানী তখন ঠিক দিহ্লী নয়,ছিল
তুগলাকাবাদে আর হাজ্জ্বী ইল্ইয়াস এখানেই আসেন।কিন্তু দুধভাই আলী মুবারকের শত্রুতার দরুণ ৪/৫ বছর পর বঙ্গের রাজধানী সোনারগাঁও-এ চলে আসেন।এটা সেই সময়ের কথা যখন
সুলতান মুহাম্মাদ-ইবনে-তুগলাক শাহ্ হিন্দুস্তানের সিংহাসনে আরোহণ করেন ও বাহ্রাম খানকে “তাতার খান” উপাধী দিয়ে ১,০০ হাতী;১,০০০ ঘোড়া,১কোটি স্বর্ণমুদ্রা,রাজছত্র ও রাজদন্ড দিয়ে সাবেক বাল্বানী
সুলতান বাহাদূর শাহ্ ’র সাথে সোনারগাঁও-এ প্রেরণ করেন।বাহাদূর শাহ্কেও শর্ত সাপেক্ষে “সুলতান” উপাধী ধারণের,মুদ্রা অঙ্কনের ও খুতবা পাঠের অধিকার দিয়ে বঙ্গের যুগ্ন শাসক নিযুক্ত করা হয়।হাজ্জ্বী ইল্ইয়াস ১জন বিশাল দেহী সিস্তানী তাই আবেদন করা মাত্রই বাহাদূর শাহ্ তাঁকে নিজ বাহিনীতে নিয়োগ দিলেন
সোনার গাঁয়ের-সামরিক জীবণ
সেনারগাঁয়ে হাজ্জ্বী ইল্ইয়াস ১৩২৫-২৮ সাল পর্যন্ত ৩ বছর বসবাস করেন।পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে তিনি
সুলতান বাহাদূর শাহ্’র সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন,সোনার গাঁয়ের কাছে বিক্রমপুরের বজ্রযোগীনি গ্রামে ১ বাল্য বিধবার সাথে তার সাক্ষাৎ হয়।ব্রাক্ষণদের মাঝে সর্বোচ্চ স্তরের ব্রাক্ষণ ভট্টাচার্য বংশে তার জন্ম।বাবা-মা যথার্থই তার নাম দিয়েছিলেন পুষ্পবতী/ফুলমতী,তিনি ছিলেন অনিন্দ্য রুপসী।বিধবা বিধায় কেউ তাঁকে বিয়ে করতো না।কিন্তু জ্বালাতনে/কুপ্রস্তাব প্রদানে কেউ-ই পিছপা হতো না।উনি ১দিন ১লম্পটের হাঁত থেকে ফুলমতীকে উদ্ধার করে তাঁর ইজ্জত বাঁচান।কিন্তু সেকালের হিন্দু সমাজ,যবন উদ্ধার করেছে তাই তাঁকে অন্ত্যজ ঘোষণা করা হলো।কিন্তু ঐ লম্পটকে মোটেও ১ঘড়ে করে রাখা হলো না।হাজ্জ্বী ইল্ইয়াস উপস্থিত ব্রাক্ষণদের ভেতর কাউকে তাঁকে বিয়ে করার কথা বললে-বাল্য বৈধব্যতার কারণে সবাই তা প্রত্যাক্ষ্যান করে।এবারে ইল্ইয়াস বললেন “আমি নিজেই এই ফুলটাকে গ্রহণ করতে প্রস্তুত”।ফুলমতীর ততক্ষণে হিন্দু ধর্ম ও সমাজটাকে চেনা হয়ে গিয়েছিল,তাই তিনি সেখানেই হাজ্জ্বী ইল্ইয়াসের কাছে ইসলামে দীক্ষিত হন ও উভয়ে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন।হাজ্জ্বী ইল্ইয়াস তার নামকরণ করেন “ফুল্ওয়ারা বেগাম”-তিনি নামটিকে আরবীকে করণ করেন মাত্র,কারণ তখনই তিনি বাংলা কিছু কিছু জানতেন।আর বিয়ের পর বৌয়ের কাছে তার বঙ্গভাষা শিক্ষার হাঁতে খড়ি হয়,ফুলওয়ারার কাছেই তিনি বঙ্গভাষা শিক্ষা করেন।তাঁরা দু’জনেই সোনারগাঁ প্রত্যাবর্তন করেন ও সেখানেই বাস করতে থাকেন।আজও সোনার গাঁ’র মোগরাপাড়া’র ইল্ইয়াসদি নামের গ্রামটি তারই স্মৃতি চিহ্ন ধারণ করে চলেছে।ফার্সী দিহ্/দি অর্থ জলাশয়/পুকুর,২০১২ সালে এখানে ১টি শানবাঁধানো ঘাঁটের ধ্বংসাবশেষ ও সুলতানী আমলের কিছু রঙিন টালী মিলেছে।ক্রমান্বয়ে অসাধারণ সামরিক যোগ্যতাবলে হাজ্জ্বী ইল্ইয়াস
আমীর পদে উন্নীত হন ও আমীর ইল্ইয়াস আলাঈ(অস্ত্রধারী) নামে খ্যাত হয়ে উঠেন।আবার তাঁর উপাধী বদলে গেলো,হাজ্জ্বী ইল্ইয়াস এখন থেকে পরিচিত হয়ে উঠলেন ‘আমীর ইল্ইয়াস আলাঈ’ নামে।আলাঈ অর্থাৎ অস্ত্রধারী
গৌড়ে বাল্বানী বংশের পতন হিন্দুস্তানের উন্থান
সুলতান বাহাদূর শাহ্ বূর(অর্থ কালো)কে
সুলতান মুহাম্মাদ ৩টি শর্ত দিয়েছিলেন নবগঠিত বঙ্গের সুলতান হওয়ার জন্যেঃ ১/হিন্দুস্তানের সুলতানের নামে মুদ্রাঙ্কন,২/খুত্বা পাঠ ও ৩/শাহ্যাদা মুহাম্মাদ(বারবাত নামে বেশি পরিচিত)কে জামীন সরুপ রাজধানীতে পাঠাতে হবে।সুলতান বাহাদূর শাহ্ ১ম দু’টি শর্ত পালন করলেন ৩য় শর্তটি পূরণ করলেন না।কারণ সরুপ তিনি বললেন “বারবাত যেতে চাইছে না”,এসব ব্যাপারে যথেষ্ঠ বাক-বিতন্ডা চললো।অবশেষে সুলতান মুহাম্মাদের চাঁপের বিরুদ্ধে তিনি হিন্দুস্তানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করলেন ও স্বাধীনতা ঘোষণা করলেন বঙ্গের।এদিকে তাঁর বীর সেনাপতি আমীর ইল্ইয়াস আলাঈ নাজীর(রাজপ্রতিনিধি) বাহ্রাম খানকে সোনারগাঁ থেকে পরাজিত ও বিতাড়িত করলেন(১৩২৭ ঈঃ)।এ খবর শোনা মাত্র-ই সুলতান মুহাম্মাদ দুলজী-উত্-তাতারীকে সোনার গাঁও-এ প্রেরণ করলেন।সেই সাথে আদেশ দিলেন গৌড়ের প্রতিটি অংশে অবস্থানরত প্রতিটি মালিককে অভিযানে অংশগ্রহণ করারা জন্যে।রাঢ় থেকে মালিক আযম-উল-মূলক্ ইযয্-উদ-দ্বীন মুহাম্মাদ ইয়াহ্ইয়া খান,তুগলাক্বাবাদ হতে মালিক দুল্জী-উত-তাতারী,গৌড় হতে মালিক বিদার খাল্জী উরফে ক্বাদ্র খান মালিক তাতার খান উরফে বাহ্রামের খানের নেতৃত্বে সোনারগাঁ আক্রমণ করলেন।পূর্বেই বলা হয়েছে যে ১জন মালিকের অধীনে ১০,০০০ সৈন্য থাকে,সেহেতু এটা স্পষ্ট যে অন্তত ৪০,০০০ সৈন্য সোনার গাঁও আক্রমণ করেন।আমীর ইল্ইয়াস আলাঈ ক্ষুদ্র শক্তি নিয়েও হিন্দুস্তান বাহিনীর ডান কাতার ভেঙে দিতে সক্ষম হন।কিন্তু বিশাল হিন্দুস্তানী বাহিনী সম্মিলিত ভাবে আক্রমণ চালালে বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করার স্বত্তেও সুলতান বাহাদূর শাহ্ পরাজিত হন ও শীতলাক্ষ্যা নদীর দিকে পিছু হটে যান।এসময় তাঁর মনেপড়ে গেলো শিবিরে অবস্থানরত গোলাবী গাল বিশিষ্ট পত্নীর কথা।তিনি তাঁকে ঠিক ই আনলেন কিন্তু ফলশ্রুতিতে তুগ্লাক্ব বাহিনী তাঁর নাগাল পেয়ে গেলো।ঠিক এসময়েই তাঁর আহ্মাক ঘোঁড়া গাধার মতে কাঁদায় আটকে গেলে বাল্বানী বংশের শেষ সুলতান ধৃত হন,তাঁর মাথা কেটে রেকাবীতে করে তুগ্লাক্বাবাদ পাঠনো হয় ও তাঁর শরীর থেকে চাঁমড়া তুলে ফেলে সেটাও সুলতান মুহাম্মাদের কাছে পাঠানো হয়।উল্লেখ্য যে মানুষের শরীরের চামড়া পেঁয়াজের খোঁসার থেকেও পাতলা,তাই শুধু চামড়া কখনই ছাঁড়ানো যায় না।হাঁড় বাদে গোস্তসহ তুলে ফেলা হতো,এই চামড়ায় খড় ভরে মানুষের আকৃতি আনা হয়।আমীর ইল্ইয়াস আলাঈ ঐ হাঁড়গোড় একত্রিত করে কবর দিয়ে বিহার যাত্রা করেন।এভাবেই শেষহয় একদা শক্তিশালী
গৌড়ের বাল্বানী সালতানাত ও গড়ে ওঠে সুবিশাল
তুগলাক সালতানাত
চামড়া নিয়ে যুদ্ধ ও বিদ্রোহ
সুলতান বাহাদূর শাহ্’র চামড়া ও মাথা রেকাবীতে করে হিন্দুস্তানের সুলতান মুহাম্মাদ-ইবনে-তুগলাক্ব শাহ্’র সামনে আনা হলো।সুলতান তখন
দেবপালপুরে ছিলেন।তিনি বাহাদূর শাহ্’র চামড়া দেখে অত্যন্ত খুশী হলেন ও নাগরিকদের আনন্দ-উৎসব করতে হুকুম দিলেন।৩দিন ধরে উৎসব উদযাপন করা হলো সুলতান বাহাদূর শাহ্’র পতন উপলক্ষ্যে,আর একয়দিন সুলতানের আদেশে বাহাদূর শাহ্’র চামড়া খড় ও অন্যান্য বস্তুদ্বারা পূর্ণ করে তা বাহা-উদ-দ্বীন গুরস্আপের চামড়ার সাথে বিজয় গম্বুজে লটকে রাখা হলো।তাঁরপর সুলতানের আদেশে এই
সারা দেশব্যাপি ঘোরানোর উদ্দেশ্যে বেড় করা হলো।এই চামড়া
মূলতান পৌছুলে মূলতানের ওয়ালী বাহ্রাম আইবা উরফে কিসলু খান এই ব্যাপার দেখে অত্যন্ত বিরক্ত হলেন ও ১জন খাঁটি মুসলিমের মতো চামড়াটিকে দাফন করলেন।এই সংবাদ হিন্দুস্তানের উন্মাদ-অত্যাচারী সুলতান মুহাম্মাদের কানে পৌছুলেই সে এ ব্যাপারে বাহ্রাম আইবা’র কাছে কৈফিয়ত তলব করে।বাহ্রাম আইবা বলেন “শরীয়াহ্ অনুযায়ী আমি ঠিক কাজ-ই করেছি” এই উত্তরে উন্মাদ আরও উন্মত্ত হয়ে গেলো ও বাহ্রাম আইবা’র বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী পাঠালো।বাহ্রাম আইবাও এই জঘন্য অত্যাচারীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করলেন।আমীর ইল্ইয়াস আলাঈ ওদিকে বিহারের প্রাদেশিক সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছেন
বিহারে ইল্ইয়াস আলাঈ ও হিন্দুস্তানের পতনযুগের সূচনা
পূর্বেই বলা হয়েছে ১৩২৮ সালে বঙ্গ বিজয়ের মাধ্যমে হিন্দুস্তান তাঁর গৌরব-সম্বৃদ্ধি ও সীমানার শীর্ষ শিখরে আরোহণ করে।আর আমীর ইল্ইয়াস আলাঈ
বিহারের বাহিনীতে যোগদান করেন।এখানেও তিনি সমর নৈপুন্যের সাক্ষর রেখে চলেন,ওদিকে হিন্দুস্তানের সিংহাসনে ১উন্মাদ তখন সমাসীন;যার নাম মুহাম্মাদ-ইবনে-তুগ্লাক্ব শাহ্।অত্যাচার ছাড়াও তাঁর যে কাজগুলি তার সাম্রাজ্যের ভিত্তিমূলে কুঠারাঘাত করে তা হচ্ছে মূলত-কিছু ভুল মহাপরিকল্পনা।
১/উনি সাম্রাজ্যের কেন্দ্রস্থলে রাজধানী স্থাপন করার লক্ষ্যে দেবগিরিতে রাজধানী স্থানান্তর করেন ও এর নাম রাখেন “দাওলাতাবাদ”(সম্পদের শহ্র)।এটি অবশ্যই যৌক্তিক ছিল,কিন্তু তিনি ২ বছর(১৩২৭-২৯) বাদেই তাঁর মত পালটে ফেলে সবার ইচ্ছে অনুযায়ী
দাওলাতাবাদ ত্যাগ করেন।তিনি পিতার তৈরী রাজধানী
তুগলাক্বাবাদ পৌছে দেখলেন যে এই ক’বছরেই এটা বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠেছে।ফলে উনি দিহ্লীর আদূরেই নতুন আরেকটি রাজধানী স্থাপন করলেন,এর নাম হলো
“জাহাঁনপানাহ্”/বিশ্বের আশ্রয়স্থল।এভাবে বহু অর্থের অনর্থক অপচয় ঘটলো।
২/উনি ইলখানাতের কিছু পলাতক খোরাসানী বিদ্রোহীদের উস্কানীতে খোরাসান অধিকারের মহাপরিকল্পনা হাঁতে নিলেন।এ লক্ষ্যে তিনি ৩,৭০,০০০ অশ্বারোহী সৈন্যের বিশাল ১ বাহিনী গড়ে তুললেন ও ১বছরে আগ্রীম বেতনও দিয়ে দিলেন।কিন্তু তিনি জানতেন-ই না যে ,
খোরাসান ইলখানাতভুক্ত ও খোরাসানে যেতে গেলে আগে তাঁকে চাগতাই খানাতভুক্ত কাবুলীস্তান অধিকার করতে হবে।তদুপরি তিনি যখন শুনলেন যে চাগতাই ও ইল্খানদের মাঝে পুনরায় বন্ধুত্ব স্থাপিত হয়েছে।তখন তিনি আর খোরাসান অভিযানের সাহস পেলেন না-ফলে ২য় দফায় বিপুল পরিমাণ অর্থের অপচয় ঘটলো।তদুপরি ঐ সেনাদল ভেঙে দেওয়ায় তাঁরা ডাকাতদলে নাম লিখালো।
৩/এই অবস্থা থেকে মুক্তিকল্পে সুলতান মুহাম্মাদ
তাম্র মুদ্রার প্রচলন করলেন(১৩২৯-৩২)।কিন্তু নকল রোধক কোন ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিটি হিন্দুর ঘড় মুদ্রা তৈরীর টাকশালে পরিণত হলো।উপরন্তু বিদেশীরা তামার মুদ্রা নিতে অস্বীকার করায় সুলতান বাধ্য হয়ে সমস্থ তামার মুদ্রা তুলে নিয়ে তদস্থলে সোনা-রুপার মুদ্রা দিলেন।কিন্তু এর ফলে হিন্দুস্তানের ভীতে ঘুঁণ ধরে গেলো।
৪/সুলতানের আদেশে সেনাপতি খুসরু মালিক ৮০,০০০ সৈন্যসহ রাজপুত রাজ্য
কারাচিল অধিকারে অগ্রসর হলেন।রাজা যুদ্ধে পরাজিত হলো ও কারাচিল ও
কাংড়া তুগলাক্ব সাম্রাজ্যভুক্ত হলো।এই সাফল্যে উজ্জীবিত হয়ে নির্বোধ সেনাপতি তিব্বত আক্রমণ করেন ও পরাজিত হয়ে মাত্র ১,০০ সৈন্যসহ রাজধানীতে ফিরে আসেন।এতে হিন্দুস্তানের সম্মানে প্রচন্ড আঘাত লাগলো।
৫/এসব অর্থনৈতিক ধকল কাটিয়ে ওঠার জন্য সুলতান এবারে
দো-আব অঞ্চলে ২০ গুণ বেশি কর ধার্য করলেন।এতে প্রজাসাধারণ সুলতানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করলো।নির্বোধ সুলতান নিষ্ঠুর ভাবে এই বিদ্রোহ দমন করে প্রজাদের ঘড়-বাড়ী পর্যন্ত লুট করলেন!
আলা-উদ-দ্বীন খাল্জী নিজের সাহস,শক্তি ও বুদ্ধির জোরে যেই বিশাল হিন্দুস্তান গড়ে গিয়েছিলেন-তাঁর পতন ঘন্টা বাজিয়ে দিলেন উন্মাদ মুহাম্মাদ-ইবনে-তুগ্লাক্ব শাহ্
০৬ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৩:২১
আরব বেদুঈন বলেছেন: ইতিহাস আমারও খুব ভাল লাগে
©somewhere in net ltd.
১| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:২৩
মহা সমন্বয় বলেছেন: ইতিহাস ভাল লাগে।