নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সুলতান মুহাম্মাদ-ইবনে-তুগ্লাক্ব শাহ্’র ব্যর্থ মহাপরিকল্পনাসমূহ,অর্থক্ষয়,অত্যাচার ইত্যাদির কারণে বিশাল হিন্দুস্তান সালতানাতের করুণ দিকটি ধিরে ধিরে ফুটে উঠতে শুরু করে।আর এরই সুযোগে সালতানাতের বিভিন্ন অঞ্চলে বিদ্রোহ ছাড়িয়ে পরে।
১ম বিদ্রোহ শুরু করেন বঙ্গের নাজীর বাহ্রাম খানের সিলাহ্দার ফাখ্রা বিদ্রোহ ঘোষণা করেন,
এবং সুলতান ফাখ্র-উদ-দ্বীন মুবারক শাহ্ উপাধী ধারণ করেন।
মাবারের রাজপ্রতিনিধি সাইয়্যিদ জালাল-উদ-দ্বীন।সুলতান নিজে এই বিদ্রোহ দমনার্থে রাজধানী দাওলাতাবাদ থেকে আগ্রসর হন।কিন্তু বরঙ্গল পর্যন্ত পৌছুলে সুলতানী সেনাদলে মহামারী দেখা দেয়,এতে সুলতানও আক্রান্ত হন;তাই এই অভিযান পরিত্যক্ত হয়।
ওদিকে পাঞ্জাবের আমীর হালাযুন বিদ্রোহ ঘোষণা করেন।কোহ্রামের ভাট্টী রাজপুত ও সুনাম ও সামানাহ্’র জাঠরাও বিদ্রোহ ঘোষণা করে।ওয়াজির খা’জা জাহান এই বিদ্রোহগুলো দমন করেন।কিন্তু মা’বার(করমণ্ডলের আরবী নাম) ও বঙ্গ স্বাধীন থেকে যায়,সাইয়্যিদ জালাল-উদ-দ্বীন “সুলতান জালাল-উদ-দুন্ইয়া-ওয়াদ-দ্বীন আবুল মুজাফ্ফার আহ্সান শাহ্”
উপাধী ধারণ করেন। মাদুরায় তার রাজধানী স্থাপিত হয়।
ওদিকে অসাধারণ যোগ্যতাবলে আমীর ইল্ইয়াস আলাঈ “মালিক” পদে উন্নীত হন,এবং অচিরেই মালিক ইল্ইয়াস আলাঈ নামে খ্যাত হয়ে উঠেন।
বিহারের ক্ষমতায় আরোহণ
পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে সমস্থ বিদ্রোহ দমন করতে পারলেও সুলতান মুহাম্মাদ-ইবনে-তুগ্লাক্ব শাহ্ মা’বারের বিদ্রোহ দমনে যেতেই পারেনি-ফলে স্বাধীন থেকে যায় মা’বার।ওদিকে ১৩৩৭ সালে বিহারের নাজীর(রাজপ্রতিনিধি) মারা গেলেন।
নাজীর সবসময় মালিকদের(পূর্বের পর্ব দ্রঃ) ভেতর থেকে সবথেকে দক্ষ,রাজভক্ত ও সিনিয়র ব্যক্তিকেই নিয়োগ দেওয়া হতো।বিহারের নাজীরের মৃত্যুর পর বিহারের সবচাইতে মর্যাদাবান ব্যক্তি তখন রইলেন মালিক ইল্ইয়াস আলাঈ।তিনি মালিক(১০,০০০ সৈন্যের অধিনায়ক) শুধু বয়োজৈষ্ঠই ছিলেন না ছিলেন দক্ষও,তার সামনে এখন দু’টো পথ খোলা ছিলঃ ১/হিন্দুস্তানের অনুগত ব্যক্তির মতো নতুন নাজীর নিয়োগের জন্য আবেদন করে অপেক্ষা করা,২/নিজেই ক্ষমতা দখল করা।পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে মালিক ইল্ইয়াস আলাঈয়ের ১ম কর্ম জীবণ শুরু হয় হিন্দুস্তানের শত্রু বঙ্গের সুলতান বাহাদূর শাহ্’র অধীনে চাকরী দিয়ে।তিনি বাহাদূর শাহ্’র পক্ষে ১ম জীবণে যুদ্ধও করেন
-হিন্দুস্তানের বিরুদ্ধে।সেহেতু এটা স্পষ্ট যে তিনি হিন্দুস্তানের প্রতি খুব প্রসন্ন ছিলেন না।তাই তিনি বিহারের ক্ষমতা দখল করলেন,কিন্তু বিদ্রোহও করলেন না আবার স্বাধীনতাও ঘোষণা করলেন না।বিহার পরিণত হলো ইমারাত-ই-ইসতিলায় অর্থাৎ কোন ব্যক্তি যখন মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানের অনুমতি ছাড়াই কোন প্রদেশের শাসনভার করায়ত্ব করে ও সেই রাষ্ট্রের শাসকও তা মেনে নিতে(অর্থাৎ সৈন্য প্রেরণ না করলে)বাধ্য হন-ফিক্বাহ্’র পরিভাষায় সেই রাষ্ট্রকেই ইমারাত-ই-ইসতিলা বলে।মালিক ইল্ইয়াস আলাঈ হলেন বিহারের মুকুটহীন সুলতান,তিনি বিহারের রাজধানী বিহার শারীফ হতে স্থান্তরের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিলেন।বিহার শারীফ ও ত্রিহুতের নতুন রাজধানী তুগলাক্ব্পুর-তীরহুতের মাঝামাঝি স্থানে হিন্দুস্তান-গৌড় মহাসড়কে পাশে নতুন রাজধানী স্থাপনের কাজ শুরু হলো।প্রিয়তমা পত্নী “ফুলওয়ারা বেগাম” এর নামানুসারের এর নাম হলো “ফুলওয়ারী”,সামরিক ভাবে বিহার শারীফের থেকে ফুলওয়ারীর কৌশলগত সুবিধা বেশি-তাই ফুলওয়ারীতেই বসবাস করার মনোস্থির করলেন তিনি
বঙ্গে বিদ্রোহ
১৩৩৫ ঈসায়ী বঙ্গ হিন্দুস্তানের রাজপ্রতিনিধি বাহ্রাম খান ইন্তেকাল করেন।তাঁর সিলাহ্দার(বর্ম রক্ষক) ফাখ্রা ছিলেন ভূতপূর্ব বালবানী সুলতানদের আত্নীয়,তাই এই মওকায় তিনি হিন্দুস্তানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করলেন।হিন্দুস্তানের সুলতান ডিভাইড ইন্ড রুল পলিসির আওতায় বৃহত্তর গৌড়কে ৩ খন্ডে বিভক্ত করেছিলেন,তাই এবারের বিদ্রোহ প্রতিরোধে তাঁর এই নীতি অত্যন্ত সফল বলে প্রতীয়মান হলো।এই বিদ্রোহের সংবাদ পাওয়া মাত্রই গৌড়ের নাজীর ১/মালিক বেদার খাল্জী উরফে কাদ্র খান,২/মুসতাওফী-ই-মামালিক(রাজ্যের হিসাবরক্ষক) মালিক হিসাম-উদ-দ্বীন আবু-রিযা,৩/রাঢ়ের নাজীর মালিক ইযয্-উদ-দ্বীন মুহাম্মাদ ইয়াহ্ইয়া খান ও এদের সাহায্য করার জন্য কারাহ্’র আমীর জাদা ৪/মালিক নূসরাত খান-ইবনে-ফিরুয খান তাদের স্ব স্ব বাহিনী নিয়ে(৪x১০,০০০= ৪০,০০০) সোনার গাঁ আক্রমণ করেন।ফাখ্রা স্থলে ছিলেন দুর্বল তাই এত বড় বাহিনীর সাথে লড়াই না করে তিনি শাক্যমা রাজ্যভুক্ত চৈত্যগ্রামে আশ্রয় নিলেন।বিনা বাধায় হিন্দুস্তান বাহিনী সোনার গাঁ অধিকার করে নিলো।অভিযানের অধিনায়ক মালিক বেদার খাল্জী প্রভুত পরিমাণে রৌপ্যমুদ্রা পান,কিন্তু নিয়ম মাফিক সৈন্যদের মাঝেও বিতরণ করলেন না বা হিন্দুস্তানের দরবারেও প্রেরণ করলেন না-সৈন্যরা এতে তাঁর উপর অসন্তুষ্ঠ হয়ে উঠলো।শুধু তাই নয় কাদ্র খান নিজেকে গৌড় ও বঙ্গের “সুলতান” হিসাবে ঘোষণা দিয়ে বসলেন।তখন ছিল জৈষ্ঠমাস নদ-নদীর পানি শুকিয়ে যাচ্ছে-ফাখ্রা অসহায়ের মত অপেক্ষায় থাকলেন বর্ষাকালের আগমনের।ওদিকে মালিক নুসরাত খান বিহারের মুকুটহীন সুলতান মালিক ইল্ইয়াস আলাঈকেও বলেছিলেন(সোনার গাঁ অভিযানের প্রক্কালে) তাদের সাথে যেতে এই বিদ্রোহ দমনে।কিন্তু মালিক ইল্ইয়াস আলাঈ তার মুখের উপরেই “না” করে দেন।নূসরাত খান তাঁকে শাসিয়ে যান-ফিরে এসে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন।৩ বছর ১মাস পরেই অর্থাৎ ১৩৩৮ সালের অক্টোবর মাসে বর্ষাকাল এলো প্রবল ধারা নিয়ে নদ-নদী আবার ফুলে ফেঁপে উঠলো-ফাখ্রার নৌবহর আবার দুরন্ত হয়ে উঠলো।এইবার ফাখ্রা সোনারগাঁও প্রতিআক্রমণ করলেন,
মহানদী মেঘনার এই যুদ্ধে হিন্দুস্তানের যৌথবাহিনী পরাজিত ও বিতাড়িত হলো।
কাদ্র খান তার নিজ সৈন্যদের হাঁতে নিহত হলেন,নূসরাত খান মারাত্বক আহত অবস্থায় পলাতে সক্ষম হলেন,আবু-রিযা প্রাণ নিয়ে পালালেন ও মালিক ইয়াহ্ইয়াহ্ খান(রাঢ়ের নাজীর) যুদ্ধক্ষেত্রে জীবণ দিলেন।ফাখ্রা সুলতান ফাখ্র-উদ-দ্বীন আবুল মুজাহিদ মুহাম্মাদ মুবারক শাহ্” উপাধী ধারণ করে সোনারগাঁ’র সিংহাসনে উপনিবেশ করলেন।আর মালিক ইল্ইয়াস শাহ্ সসৈন্যে ছুটে গেলেন রাঢ়ের রাজধানী সাতগাঁও অভিমুখে
অবশেষে সুলতান হলেন মালিক ইল্ইয়াস
রাঢ়ের নাজীর মালিক ইযয্-উদ-দ্বীন মুহাম্মাদ ইয়াহ্ইয়া খান সোনার গাঁ অভিযানে মৃত্যুবরণ করার পর রাঢ় শাসকশূন্য হয়ে রইলো।সেই সুযোগে বিহারের মুকুটহীন সুলতান মালিক ইল্ইয়াস আলাঈ সসৈন্যে রাঢ়ে ১ অভিযান পরিচালনা করেন ও বিনাবাধায় রাঢ় অধিকার করে নেন।
তিনি “সুলতান শামস্-উদ-দুন্ইয়া-ওয়াদ-দ্বীন মুজাফ্ফার মুহাম্মাদ ইল্ইয়াস শাহ্”/ধর্ম ও বিশ্বের সূর্য্য সাফল্যের পিতা প্রসংশিত বীরত্বব্যঞ্জক রাজা উপাধীধারণ করে সাতগাঁও এর সিংহাসনে আরোহণ করেন।
ফুলওয়ারী হলো বিহারের রাজধানী,আর নতুন ইল্ইয়াস শাহী সালতানাতের
রাজধানী হলো সাতগাঁও(তৎকালে পরিচিত ছিল সাতনাও নামে)।বিশাল হিন্দুস্তান ভেঙে আরেকটি নতুন রাজ্যের অভ্যুদয় হলো।স্বনামে মুদ্রাজারীর সার্বভৌম ক্ষমতা পেলেন ইল্ইয়াস
০৬ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ৯:৪৪
আরব বেদুঈন বলেছেন: ইতিহাস আমারও খুব ভাল লাগে অতীতের মাধ্যেমে বাস্তবতা কে খুজে পাই
©somewhere in net ltd.
১| ০৬ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৩:৫১
আমিই মিসির আলী বলেছেন: ভালো লাগলো হিস্টোরি।
+