নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্য অন্বেষক

আরব বেদুঈন

আমি তো শুধু প্রাচারক মাত্র

আরব বেদুঈন › বিস্তারিত পোস্টঃ

আওরঙ্গজেব আলোমগীর

১০ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ১১:৫০

আওরঙ্গজেব আলমগীর
ফার্সি নাম اورنگ‌زیب।
ভারতবর্ষের ষষ্ঠ মোগল সম্রাট। তাঁর পূর্ণ নাম আল-সুলতান আল-আজম ওয়াল খাকান আল-মুকাররম আবুল মুজাফফর মুহি উদ-দিন মুহাম্মদ আওরঙ্গজেব বাহাদুর আলমগীর ।
১৬১৮ খ্রিষ্টাব্দের ৩ নভেম্বর গুজরাটের দাহোদ-এ জন্মগ্রহণ করেন। এর পিতা ছিলেন পঞ্চম মোগল সম্রাট শাহজাহান। মায়ের নাম মুমতাজ মহল। শাহজাহানের চার পুত্রের নাম দারা, সুজা, আওরঙ্গজেব ও মুরাদ।
১৬৩৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ মে অরাজকীয় একটা অনুষ্ঠান চলছিল।প্রচুর দর্শক উপস্থিত ছিল সেখানে।তো হঠ্যত একটা পাগলা হাতি আক্রমণ করে বসে জনগনকে।
হাতির হাত থেকে জনগণ কে রক্ষা করার জন্য তিনি সাহসিকতার সাথে দীর্ঘ গদা জাতীয় অস্ত্র দিয়ে হাতির শুঁড়ে আঘাত করেন। এই ঘটনার পর সম্রাট শাহজাহান তাঁকে বাহাদুর খেতাব দেন।
১৬৩৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ ডিসেম্বর আওরঙ্গজেব প্রথম যুদ্ধ পরিচালনা করেন বুন্দেলখণ্ডে। এই যুদ্ধের মূল পরিকলপনাকারী ছিলেন সম্রাট শাহজাহান। আওরঙ্গজেব এই যুদ্ধে একটি বাহিনী পরিচালনা করেছিলেন ্র। এই যুদ্ধের প্রতিপক্ষ ছিলেন রাজপুত নেতা জুঝার সিং। জুঝার সিং মোগল বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করলে, শাহজাহান তাঁকে জায়গির প্রদান করেছিলেন। কিন্তু পরে তিনি আবার বিদ্রোহ করলে, মোগলদের সাথে যুদ্ধে নিহত হন।
১৬৩৬ খ্রিষ্টাব্দে আওরঙ্গজেব দাক্ষিণাত্যের খান্দেশ, বেরার, তেলেঙ্গিনা ও দৌলতাবাদের শাসনকর্তা নিযুক্ত হন। নাসিকের নিকটবর্তী বাগ্‌লানার শাহকে পরাস্ত করে মোগল অধীকারে আনেন। ১৬৩৭ খ্রিষ্টাব্দে ইরানের সাফাভী রাজকন্যা দিলরাস বানু বেগমকে (অন্য নাম রাবিয়া-উদ্‌-দুররানি) বিবাহ করেন।
১৬৪৪ খ্রিষ্টাব্দে আওরঙ্গজেবের বোন জাহানার দুর্ঘটনাক্রমে অগ্নিদগ্ধ হন। এই সময় আওরঙ্গজেব আগ্রাতে আসেন। তখন ঝগড়া হই আওরঙ্গজেবের বড় ভাই এর সাথে।দ্বারা শুকাহ একটি প্রসাদ নির্মাণ করেন আর সেই প্রাসাদের পাতাল পুরিতে একটা কুঠিরি নির্মান করেন যার ঢোকা এবং বের হবার রাস্তা একটা।তো দারা শুকাহ শাহজাহানের সাথে আওরঙ্গজেব কেও সেখানে প্রবেশ করে কক্ষটি দেখতে বলে।আর আওরঙ্গজেব আগে থেকেই সে এই কক্ষসম্বন্ধে জানত।তাই তিনি সন্দেহবসত সেখানে ঢুকতে অস্বীকৃতি জানায়।এতে শাহ জাহান ক্ষুব্ধ হয়ে শাহজাহান তাঁকে বরখাস্ত করেন।
১৬৪৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি গুজরাটের প্রশাসকের দায়িত্ব পান। ১৬৪৭ খ্রিষ্টাব্দে তাঁকে গুজরাট থেকে বলখ অঞ্চলের প্রশাসক করে পাঠানো হয়। এখানে অবস্থিত মোগল সৈন্যদের ভেঙে পড়া মনোবলকে চাঙ্গা করে তিনি, স্থানীয় জনগণ এবং উজবেকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করেন। যুদ্ধে উজবেকরা শোচনীয়ভাবে পরাজয় বরণ করে। উজবেকদের নেতা আব্দুল আজিজ মোগলদের সাথে সন্ধি করে। এছাড়া তিনি তুর্কেমেনিয়ানদের আক্রমণের মোকাবেলা করেন এবং তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ এবং কৌশলের মাধ্যমে সাফল্য লাভ করেন। এরপর তিনি মুলতান এবং সিন্ধু অঞ্চলের প্রশাসক হন।
১৬৫৩ খ্রিষ্টাব্দে দ্বিতীয়বারের মতো দাক্ষিণাত্যের শাসনভার পান। ১৬৩৬ খ্রিষ্টাব্দের চুক্তি অনুসারে গোলকুণ্ডার সুলতান বাৎসরিক কর পরিশোধ করতে অস্বীকার করায় এবং রাজ্য বিস্তারের চেষ্টা করায়, আওরঙ্গজেব গোলকুণ্ডা আক্রমণ করেন। এই যুদ্ধে সাফল্য যখন প্রায় নিশ্চিত, সেই সময় দারাশিকোর প্ররোচনায় শাহজাহান যুদ্ধবিরতীর আদেশ দেন। ১৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দে গোলকুণ্ডার সাথে মোগলদের সন্ধি হয়। এই সময় গোলকুণ্ডার অংশবিশেষ মোগলদের অধীকারে আসে। এই সময় বিজাপুরের সুলতান আদিল শাহ মৃত্যুবরণ করলে, তাঁর নাবালক পুত্র দ্বিতীয় আলী সিংহাসনে আরোহণ করেন। আওরঙ্গজেব এই সুযোগে বিজাপুর আক্রমণ করেন। ১৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দের এই যুদ্ধে তিনি বিদর, কল্যাণী দখল করেন। কিন্তু বিজাপুরের সুলতানের সন্ধির প্রস্তাবে যুদ্ধ বন্ধ হয়ে যায়।
১৬৫৭ খ্রিষ্টাব্দে সম্রাট শাহজাহান গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। ৬ই সেপ্টেম্বর এই সংবাদ রাজ্যময় ছড়িয়ে পড়ে। এই সময় আওরঙ্গজেবের চার ভাইয়ের ভিতর সিংহাসন দখলের প্রতিযোগিতা শুরু হয়। এই সময় আগ্রাতে ছিলেন যুবরাজ দারাশিকো। শাহজাহান সবার সম্মুখে দারাকে সিংহাসনের উত্তরাধিকার করেন। এই সংবাদ শোনার পর মুরাদ, আওরঙ্গজেব এবং সুজা পৃথক পৃথকভাবে সিংহাসন দখলের জন্য প্রস্তুতি নেন। দারা রাজধানী থেকে বাংলার শাসনকর্তা সুজা, গুজরাটের শাসনকর্তা মুরাদ এবং দাক্ষিণাত্যের শাসক আওরঙ্গজেবের সাথে রাজধানীর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। তিনি ভলিকলে আওরঙ্গজেবের বাসভবন বাজেয়াপ্ত করেন। অন্যদিকে বিজাপুরের সাথে আওরঙ্গজেবের যুদ্ধের সময়, আওরঙ্গজেবের কর্মচারীদের রাজধানীতে ফিরে আসার আদেশ জারি করেন। শাহজাহান সুস্থ হয়ে উঠার পরও তিনি দারার হাতে শাসনক্ষমতা রেখে দেন। ফলে বাকি তিন যুবরাজ চূড়ান্তভাবে বিদ্রোহী পড়েন। এই অবস্থার ভিতরে, আওরঙ্গজেব তাঁর ছোট বোন রওশনারার কাছ থেকে রাজধানীর সকল সংবাদই সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি সুজা এবং মুরাদের সাথে যোগাযোগ করে স্থির করে করেন যে, এই বিরোধের সময় তিন ভাই একত্রে কাজ করবেন। ইতিমধ্যে সুজা নিজেকে বাংলার নবাব ঘোষণা দিয়ে আগ্রার পথে রওনা হন। অন্যদিকে মুরাদ নিজেকে গুজরাটের নবাব ঘোষণা করে অগ্রসর হন। আওরঙ্গজেব প্রকাশ্যে কোনো ঘোষণা না দিয়ে প্রতীক্ষার পথ বেছে নেন। সুজার সসৈন্যে অগ্রসর হওয়ার সংবাদ শোনার পর আওরঙ্গজেব দ্রুত নর্মদা নদী অতিক্রম করে উজ্জ্বয়িনীর কাছে মুরাদের সাথে মিলিত হন। উভয়ই দারা এবং সুজার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার প্রতীজ্ঞা করেন। জয়ের পর দুই ভাই রাজ্য সমানভাবে ভাগ করে নেবেন এমন সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়। দারা এই সংবাদ পেয়ে তাঁর পুত্র সুলেমানকে সুজাকে প্রতিহত করার জন্য পাঠান। বারণসীর কাছে বাহাদুরপুর নামক স্থানে উভয় বাহিনী মুখোমুখী হয়। ১৬৫৮ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত যুদ্ধে সুজা পরাজিত হয়ে বাংলাদেশে ফিরে যান।
অন্যদিকে মুরাদ ও আওরঙ্গজেবের বাহিনীকে প্রতিহত করার জন্য দারা− কাশিম খাঁ এবং যশোবন্ত সিংহকে পাঠান। আওরঙ্গজেবকে দারার বাহিনী বাধা দেন উজ্জয়িনীর নিকটবর্তী ধর্মটি নামক স্থানে। ১৬৫৮ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে উভয়বাহিনীর মধ্য যুদ্ধ হয়। দারার বাহিনীর কাশিমা খাঁ এবং যশোবন্ত সিংহের ভিতর মতানৈক্যের কারণে আওরঙ্গজেব যুদ্ধে জয়লাভ করেন। এরপর আওরঙ্গজেব ও মুরাদের বাহিনী আগ্রার পথে অগ্রসর হন। ১৬৫৮ খ্রিষ্টাব্দে জুন মাসের শুরুতেই উভয় বাহিনী আগ্রার আটমাইল দূরে সামুগড়ে উপস্থিত হন। এই সময় দারা'র অধীনে প্রায় ৫০ হাজার সৈন্য ছিল। এর সাথে রাজপুত যোদ্ধারা যোগ দিয়েছিল। ১৬৫৮ খ্রিষ্টাব্দের ৮ জুন দারার পক্ষের খলিল-উল্লাহের বিশ্বাঘাতকতায় আওরঙ্গজেব যুদ্ধে জয়লাভ করেন। এই সময় দারা পালিয়ে পাঞ্জাবে চলে যান। এরপর আওরঙ্গজেব রাজধানী প্রবেশ করেন এবং শাহজাহানকে গৃহবন্দি করে রাখেন। তিনি দিল্লীর সম্রাট হন। এরপর তাঁর সহযোগী মুরাদকে বন্দী করে গোয়ালিয়র কারাগারে বন্দী করে রাখেন। ১৬৬১ খ্রিষ্টাব্দের ৪ ডিসেম্বর আওরঙ্গজেবের আদেশে তাঁকে হত্যা করা হয় কারণ মুরাদ তার এক মন্ত্রি কে অন্যায় ভাবে হত্যা করে।তাকে আওরঙ্গজেব এই অপরাধে বন্দি করেন পরে সেই মন্ত্রির ভাই হত্যার বিচার চায় আওরঙ্গজেব তাকে রক্ত পূরণ দিতে চাইলেও নেইনা তাই ইসলামি আইন অনুসারে তাকে হত্যা করা হয়।
আওরঙ্গজেব দারাকে ধরার জন্য অগ্রসর হলে, তিনি তাঁর পুত্র সুলেমানকে সাথে নিয়ে লাহোর থেকে মুলতানে পালিয়ে যান। পরে সেখান থেকে আবার গুজরাটে পালিয়ে যান। এই সময় যোধপুরের রাজা যশোবন্ত সিংহ দারাকে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিলেও পরে তিনি বিশ্বাসঘাতকতা করেন। তারপরেও দারা দেওরাই গিরিবর্ত্মে আওরঙ্গজেবের সৈন্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন এবং পরাজিত হয়ে আহমাদেবাদে পালিয়ে যান। এরপর কান্দারহার হয়ে পারস্যের পথে পালিয়ে যাওয়ার সময় তিনি মালিক জিওয়ান খাঁ নামক এক আফগান সর্দারের ঘরে আশ্রয় নেন। উল্লেখ্য একসময় শাহাজাহান এই আফগান সর্দারকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন। সে সময় দারা তাঁকে রক্ষা করেছিলেন। ১৬৫৮ খ্রিষ্টাব্দে জিওয়ান খাঁ, দারার এই অসহায় অবস্থায় দুই পুত্র ও দুই কন্যাসহ বন্দী করে আওরঙ্গজেবের বাহিনীর হাতে তুলে দেন। শৃঙ্খলাবদ্ধ অবস্থায় তাঁকে দিল্লীর রাজপথ দিয়ে দরবারে আনা হয়। এরপর ১৬৫৯ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ আগষ্ট তাঁকে হত্যা করা হয় ততার ধর্ম দ্রোহীতারার জন্য।কারণ ইসলামে ধর্ম দ্রোহীতার শাস্তি মৃত্যু দন্ড।
এই বৎসরে আওঙ্গজেবের সম্রাট হিসেবে আনুষ্ঠানিক অভিষেক হয়। এই অনুষ্ঠানে আলমগীর পাদশাহগাজী উপাধি ধারণ করেন।
আওরঙ্গজেবের সময় বাংলাতে মহান শাসক পাঠান....
পূর্বভারতের অভিযান
বাংলার শাসক সুজার পরাজয়ের পর, আওরঙ্গজেবের আদেশে সেনাপতি মীরজুমলা সুজাকে ধরার জন্য অগ্রসর হয়। সুজা মীরজুমলাকে প্রতিহত করতে ব্যর্থ হয়ে আরাকানে পালিয়ে যান। ১৬৬০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মীরজুমলাকে বাংলার শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন। ইতিমধ্যে ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দে আওরঙ্গজেবের নির্দেশে বিহার প্রদেশের শাসনকর্তা দাউদ খাঁ পালমৌ অঞ্চল দখল করেন।
মীরজুমলা বাংলার রাজধানী রাজমহল থেকে ঢাকায় স্থানান্তর করেন। এরপর তিনি ঢাকা থেকে ১৬৬১ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসের দিকে কুচবিহার জয়ের জন্য অগ্রসর হন। কুচবিহারের রাজা যুদ্ধ না করে পালিয়ে যান। ফলে বিনাযুদ্ধে কুচবিহার মোগল সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। এইসময় কুচবিহারের নতুন নাম দেওয়া হয়েছিল আলমগীরনগর। এরপর মীরজুমলা আসাম দখলের জন্য অগ্রসর হন।
১৬৬২ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাসে আসাম রাজবাহিনীকে পরাজিত করে, রাজধানী গড়গাঁও দখল করেন। বর্ষা মৌসুমে আসামরাজ জয়ধ্বজ পার্বত্য অঞ্চলে চোরাগোপ্তা আক্রমণ করে, মোগলবাহিনীর প্রভূত ক্ষতি করে। ১৬৬৩ খ্রিষ্টাব্দের বর্ষা শেষে জয়ধ্বজ উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ক্ষতিপূরণ প্রদান দিয়ে মোগলবাহিনীর সাথে সন্ধি করে। আসাম থেকে ফেরার পথে মীরজুমলা অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। এরপর আসাম রাজ আবার বিদ্রোহ করে। এই সূত্রে আসাম এবং কুচবিহার পুনরায় স্বাধীন হয়ে যায়।
আওরঙ্গজেব মীরজুমলার মৃত্যুর পর বাংলার শাসনকর্তা হিসেবে শায়েস্তা খাঁকে নিয়োগ করেন ১৬৬৪ খ্রিষ্টাব্দে। সে সময়ে চট্টগ্রাম অঞ্চলে পর্তুগিজদের ঘাঁটি ছিল। ১৬৬৬ খ্রিষ্টাব্দে শায়েস্তা খাঁ আরাকানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে চট্টগ্রামকে মোগল সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন। আওরঙ্গজেবের নির্দেশে চট্টগ্রামের নামকরণ করা হয় ইসলামাবাদ। এরপর শায়েস্তা খাঁ পর্তুগিজ দস্যুদেরকে বিতারিত করে সন্দীপ দখল করে নেন। ১৬৮৬ খ্রিষ্টাব্দে শায়েস্তা খাঁ ইংরেজ কোম্পানির সাথে যুদ্ধে ইংরেজদের পরাজিত করেন। শায়েস্তা খাঁ যে একজন মহান শাসক ছিলেন এটা বলার অপেক্ষা রাখে না।

আফগান বিদ্রোহ
তাঁর শাসনামলে পাঞ্জাব ও কাশ্মীরের মধ্যবর্তী অঞ্চলে আফগান বিদ্রোহ হয়। ১৬৬৭ খ্রিষ্টাব্দে ইউসুফজাই গোষ্ঠী'র ভান্ড নামক একজন দলনেতা দিল্লী ও কাবুল এবং কাবুল ও কাশ্মীরের ভিতরের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দেয়। আওরঙ্গজেবের সেনাপতি মহম্মদ আমীর খাঁ এই বিদ্রোহ দমন করতে সক্ষম হন।
১৬৭২ খ্রিষ্টাব্দ আকমল খাঁ'র নেতৃত্বে আফ্রিদি গোষ্ঠী বিদ্রোহ ঘোষণা করে। আকমল খাঁ প্রথম দিকে যথেষ্ঠ সাফল্য লাভ করেন। তাঁর বাহিনী আলি মসজিদ নামক স্থানে মোগলদের পরাজিত করতে সক্ষম হয়। এই আফ্রিদি গোষ্ঠীর এই সাফল্য দেখে তাঁদের সাথে যোগ দেন 'খতক' নামক একটি গোষ্ঠীর মানুষ। এই দলের নেতৃত্বে ছিলেন কুশল খাঁ। ১৬৭৪ খ্রিষ্টাব্দে এই বিদ্রোহ দমনের জন্য আওরঙ্গজেব সুজাত খাঁর নেতৃত্বে একদল সৈন্য পাঠান। এই যুদ্ধ মোগলরা পরাজিত হন এবং সুজাত খাঁ নিহত হন। পরে আওরঙ্গজেব নিজেই এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি পেশোয়ারের কাছাকাছি হাসান নামক স্থানে সসৈন্যে উপস্থিত হয়ে কূটনীতির মাধ্যমে অনেক আফগান নেতাকে বশ করেন। কিন্তু খতক নেতা কুশল খাঁ যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকেন। এরপর তিনি কুশল খাঁকে পরাজিত ও বন্দী করে গোয়ালিয়র দুর্গে বন্দী করে রাখেন। এই বিদ্রোহ দমনের পর তিনি ১৬৭৫ খ্রিষ্টাব্দে রাজধানীতে ফিরে আসেন।
এর ভিতরে আওরঙ্গজেব ১৬৬৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি দাক্ষিণাত্যের সোলাপুর দখল করেন। এই সকল যুদ্ধের কারণে, আওরঙ্গজেব আর্থিক সমস্যায় পড়েন। এছাড়া এই যুদ্ধের পর নিহত সৈন্যদের স্থলে নতুন সৈন্য জোগার করতে ব্যর্থ হন।
আওরঙ্গজেব ছিলেন সুন্নি। তিনি খুবই ধর্ম প্রাণ মুসলিম ছিলেন তিনি দেশ শাসন করতে চাইতেন ইসলামী শরিয়া আইন দ্বারা তাই তার সাথে মুসলমানদের অন্যান্য গোষ্ঠী এবং হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রতি বৈরী ভাবাপন্ন তৈরি হয়েছিল। ১৬৬৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি সিয়া সম্প্রদায়ের মোহরমের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন(সুবহানআল্লাহ) । তিনি সঙ্গীতের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন(সুবহানআল্লাহ) ।তিনিই প্রথম মুঘল সম্রাট যিনি সংগীতের উপর নিষেধাজ্ঞা করেন।কারণ সংগীত ইসলামে হারাম!!! ইসলামী ফতোয়া জারির মধ্য দিয়ে তিনি মুসলমানদের দাড়ির দৈর্ঘ্যের পরিমাপ করে দিয়েছিলেন এবং মুসলমানদের কারুকার্য খচিত পোশাকের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন। ১৫৭৯ খ্রিষ্টাব্দে সম্রাট আকবর হিন্দুদের উপর জিজিয়া করা নিষিদ্ধ করে দিয়েছিলেন। আওরঙ্গজেব আবার তা চালু করেছিল।(আল্লাহুকবার) অনেক প্রদেশে হিন্দু উপসানালয় ধ্বংস করার আদেশ জারি করা হয়েছিল।কারণ ইসলাম এসেছে মূর্তি পুজা ধংস করতেই যেমন করে রাসূল মক্কা বিজয়ের পর মক্কার সকল মূর্তি ধংস করেছিলেন ঠিক তেমন ভাবে তিনি এই কাজ করেন।আর সেসব জায়গাই নির্মান করেন মসজিদ তারমধ্যে আলোমগীর মসজিদ অন্যতম। ১৬৬৮ খ্রিষ্টাব্দে হিন্দু ধর্মমেলাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। ১৬৭১ খ্রিষ্টাব্দ খালিশা অঞ্চলে বিভিন্ন পেশায় হিন্দুদের চাকরীতে নিয়োগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। গ্রামাঞ্চলে সরকারী নিয়ন্ত্রণে হোলী বা দেয়ালির মতো উৎসব হতো। কারণ প্রসাশনিক কাজে রাসূল সাঃ কখনওই কাফেরদের নিয়োগ দেন নি।তাহলে যেটি রাসূলের সুন্নার পরিপন্থী সেটা কেন করবেন?
শিখ ধর্মগুরু তেগ বাহাদুরকে তাঁর নির্দেশে হত্যা করা হয়েছিল।(এই সবের যথেষ্ট কারণ ছিল তার জীবনী পরলে পুরোটা বুঝবেন)
এই সব কারণে হিন্দু, শিখ এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের অনেকেই তাঁর প্রতি রুষ্ঠ হয়ে উঠেছিল।
ভাতৃবিরোধের মধ্য দিয়ে আওরঙ্গজেব শাসন ক্ষমতা লাভ করেছিলেন। পরিবারের বাইরে ভারতবর্ষের ভিতর প্রথম উল্লেখযোগ্য বিদ্রোহ হলো− জাঠ বিদ্রোহ।
জাঠ বিদ্রোহ
আগ্রা ও দিল্লী অঞ্চলে বসবাসকারী জাঠ সম্প্রদায়ের অধিকাংশ মানুষ ছিল কৃষিজীবী। এরা ভূমি রাজস্বের বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিল সম্রাট জাহাঙ্গীরের শাসনামলে। সে বিদ্রোহ দমনের পর দ্বিতীয়বার বিদ্রোহ করে সম্রাট শাহজাহানের সময়। এরা তৃতীয়বার বিদ্রোহ করে আওরঙ্গজেবের আমলে। ১৬৬৯ খ্রিষ্টাব্দে তিলপতি জাঠ জমিদার গোকলার নেতৃত্বে জাঠ কৃষকরা বিদ্রোহ করে। এই সময় আব্দ-উন নবি খান এই অঞ্চলের মোগল প্রশাসক ছিলেন। এরা নবি খানকে হত্যা করে এবং মথুরার আশপাশে লুটতরাজ চালায়। আওরঙ্গজেব এই বিদ্রোহকে খুব ভালোভাবেই দমন করেন। তিনি গোকলোকে হত্যা করেন এবং পরিবারের সদস্যদের জোরপূর্বক মুসলমান বানান(এটা সম্পূর্ন মিথ্যা কথা,কাফেররা আওরঙ্গজেবের নামে কুতসা রটনা করার জন্য এই অপবাদ দিয়েছেন। এই বিদ্রোহ দমনের পর ১৬৮৬ খ্রিষ্টাব্দে জাঠরা আবার বিদ্রোহ ঘোষণা করে। এবারের বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন রাজারাম। এরা আগ্রার নিকটবর্তী সিকন্দ্রায় অবস্থিত আকবরের সমাধি ধ্বংস করে। এরা গেরিলযুদ্ধের মাধ্যমে মোগল সৈন্যদের ব্যতিব্যস্ত করে রাখে। এই বিদ্রোহ দমনের জন্য আওরঙ্গজেব রাজপুত রাজা বিষণ সিংহকে নিয়োগ করেন। এই সময় আওরঙ্গজেব মধুরা অঞ্চলের জমিদারী প্রদান করেন রাজা বিষণ সিংহকে। ফলে জমিদারী অধিকার নিয়ে জাঠ এবং রাজপুতদের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়।(আওরঙ্গজেব কৌশলে এই কাজ করেন এবং যুদ্ধ এড়িয়ে যান) ১৬৯১ খ্রিষ্টাব্দে চূড়ামণির নেতৃত্বে জাঠরা ব্যাপক প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এই যুদ্ধ চূড়ামণি পরাজিত হন এবং তিনি আত্মসমর্পণ করেন। কিন্তু এরপরও জাঠরা চোরাগোপ্তা আক্রমণ অব্যাহত রাখে। আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর এরা আগ্রা ও দিল্লী অঞ্চলে ব্যাপক অরাজকতা সৃষ্টি করেছিল। শেষ পর্যন্ত এরা রাজপুতদের বিতারিত করে স্বাধীন রাজ্য স্থাপনে সক্ষম হয়েছিল।

বুন্দেলা বিদ্রোহ
বুন্দেল খণ্ডে বসবাসরত একদল রাজপুত এই বিদ্রোহ করে। ১৬০২ খ্রিষ্টাব্দে বীরসিংহদেব-এর নেতৃত্বে বুন্দেলরা প্রথম বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিল। এরা সে সময়ে বিদ্রোহী যুবরাজ সেলিমের পক্ষে যোগদান করেছিল। সে সময় সম্রাট আকবর বহু চেষ্টা করেও এই বিদ্রোহ দমন করতে পারেন নি। আওরঙ্গজেবের আমলে চম্পত রায়ের নেতৃত্বে রাজপুতরা মোগলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে থাকে। আওরঙ্গজেব এই বিদ্রোহ দমন করেন এবং চম্পত রায় এই যুদ্ধে পরাজিত হয়ে আত্মহত্যা করেন। চম্পতরায়ের পুত্র ছত্রশাল কিছুদিন মোগল রাজকর্মচারী হয়ে দাক্ষিণ্যাত্যে কাটান। পরে শিবাজীর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ১৬৭১ খ্রিষ্টাব্দে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। মোগলদের বিরুদ্ধে তিনি সফলভাবে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে সক্ষম হন। এবং ১৭৩১ খ্রিষ্টাব্দে ছত্রশাল যখন মৃত্যুবরণ করেন, তখন বুন্দেল খণ্ড মোগল শাসনের বাইরে স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছিল।

সৎনামী বিদ্রোহ
পাতিয়ালা এবং আলোয়ার অঞ্চলের 'সৎনামী নামক এক হিন্দু ভক্তসাধক গোষ্ঠীর একজন নিহত হলে, বিদ্রোহী হয়ে উঠে। ১৬৭২ খ্রিষ্টাব্দে আওরঙ্গজেব এই বিদ্রোহ দমন করে।

শিখ বিদ্রোহ
সম্রাট জাহাঙ্গীর এবং সম্রাট শাহজাহন-এর শাসনামলে শিখদের সাথে সম্পর্কের অবনতি ঘটেছিল। আওরঙ্গজেবের শাসনামলে তা তীব্র আকার ধারণ করে। ১৬৭৫ খ্রিষ্টাব্দে শিখগুরু তেগবাহাদুরকে বন্দী করে দিল্লীতে আনা হয়। আওরঙ্গজেব তাঁকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার নির্দেশ দিলে তিনি তা অস্বীকার করেন। যেহেতু ইসলাম ধর্ম গ্রহন করলে সব অপরাধ মাফ করে দেবার নিয়ম তাই তাকে এই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল।কিন্তু তার প্রত্যাখ্যানের কারণে তার অপরাধের জন্য আওরঙ্গজেবের নির্দেশে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এরপর তেগবাহাদুরের পুত্র গোবিন্দসিংহ গুরুপদে অধিষ্ঠীত হন। পিতৃহত্যার প্রতিশোধের জন্য গোবিন্দ সিংহ একটি সামরিক বাহিনী গড়ে তোলেন। তিনি পাঞ্জাবের পর্বতের পাদদেশে একটি সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করেন। এরপর স্থানীয় হিন্দু রাজাদের মোগলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু হিন্দুরাজাদের পারস্পরিক দ্বন্দ্বে সহায়তা করার জন্য, তাঁরা গোবিন্দ সিংহকে দলে টানার চেষ্টা করেন। গোবিন্দ সিংহ এই আবেদনে সাড়া না দিয়ে হিন্দু জমিদারদের দমন করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ফলে হিন্দু রাজারা আওরঙ্গজেবের সাহায্য প্রার্থনা করেন। এই অবস্থায় মোগলরা আনন্দপুর আক্রমণ করে। প্রথম যুদ্ধে শিখরা মোগলদের আক্রমণ প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়। দ্বিতীয় বারের আক্রমণে শিখরা পরাজিত হয় এবং গোবিন্দ সিংহ পলায়ন করে। মোগল বাহিনীর হাতে তাঁর দুই পুত্র বন্দী হয়। পরে মোগলরা এঁদের হত্যা করে যেহুতু বিদ্রোহী।
পরে আওরঙ্গজেব গোবিন্দ সিংহকে তাঁর দরবারে আমন্ত্রণ জানান। গোবিন্দ সিংহ মোগল দরবারে যাওয়ার পথে একজন আফগান আততায়ীর হাতে নিহত হন।

রাজপুত বিদ্রোহ
কাফের সম্রাট আকবরের উদারনীতির ফলে মোগলদের সাথে রাজপুতদের সখ্যতা স্থাপিত হয়েছিল। এর ফলে রাজপুতরা দীর্ঘদিন মোগলদের সহায়ক শক্তি হিসেবেই ছিল। আওরঙ্গজেবের রাজত্ব গ্রহণের প্রথম কুড়ি বৎসর উভয় শক্তির মধ্যে মিত্রতা বজায় ছিল। কিন্তু অনেক রাজপুত জমিদার আওরঙ্গজেবের অধীনস্থ থাকতে রাজি ছিলেন না। এই সময় মেবার ও মারওয়াড় আত্মদ্বন্দ্বের সূত্রে রাজপুতদের সাথে মোগলদের দ্বন্দ্ব চূড়ান্ত রূপ লাভ করেছিল। অম্বরের রাজা জয়সিংহ এবং মাড়ওয়াড়ের রাজা যশোবন্ত সিংহ ছিলেন মোগল সম্রাটের কর্মচারী। তিনি জয় সিংহকে মোগলদের শত্রু বিবেচনা করে এবং যশোবন্ত সিংহকে হত্যা করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ১৬৭৮ খ্রিষ্টাব্দে যশোবন্ত সিংহ জামরুদ নামক স্থানে মৃত্যবরণ করেন। ১৬৭৯ খ্রিষ্টাব্দে মোগলবাহিনী মারওয়াড় দখল করে নেয়। যশোবন্ত সিংহের এক আত্মীয় ইন্দ্রসিংহকে মারওয়াড়ের রাজা ঘোষণা করেন। এই সময় মারওয়াড়ের প্রশাসনে বিভিন্ন মুসলমান ব্যক্তিবর্গকে নিয়োগ দিয়ে, কার্যত মারওয়াড়কে মোগল শাসনের অধীনস্থ করেন। এই সময় যশোবন্ত সিংহের দুই বিধবা স্ত্রী এবং দুই পুত্রকে দিল্লীতে আনা হয়। এদের ভিতর যশোবন্ত সিংহের এক পুত্র মারা যায় এবং অপর পুত্র অজিত সিংহকে দিল্লীতে প্রতিপালিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এই সময় রাজপুতরা অজিত সিংহকে রাজা ঘোষণার দাবি উত্থাপন করে। কিন্তু আওরঙ্গজেব সে আবেদন নাকোচ করে দিলে, রাঠোর নেতা দুর্গাদাস (যশোবন্ত সিংহের মন্ত্রী) আকস্মিক হামলা করে, যশোবন্ত সিংহের দুই স্ত্রী এবং অজিত সিংহকে মুক্ত করে যোধপুরে চলে আসেন। এরপর আওরঙ্গজেব তাঁর তিন পুত্র মুয়াজ্জম, আজম এবং আকবরকে মারওয়াড়ে সসৈন্যে প্রেরণ করেন। মোগল বাহিনী মারওয়াড় দখল করতে সক্ষম হয়। অজিত সিংহের মা মেবারের রাজকন্যা ছিলেন। তিনি মেবারে সাহা্য্যের আবেদন করলে মেবারের রাজা রাজসিংহ মোগলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেন। কিন্তু আওরঙ্গজেব বিষয়টি বুঝতে পেরে মেবার আক্রমণ করে। মোগলবাহিনী উদয়পুর, চিতোর দখল করে নেয়। আকবরের উপর চিতর রক্ষার দায়িত্ব অর্পণ করে, আওরঙ্গজেব নিজে আজমীঢ় আক্রমণ করেন। ইতিমধ্যে মেবার ও মারওয়ারের রাজপুত যোদ্ধারা ১৬৮০ খ্রিষ্টাব্দে চিতোর থেকে আকবরকে বিতারিত করেন। আওরঙ্গজেব আকবরের স্থলে তাঁর অপর পুত্র আজমকে মেবারে অবস্থিত মোগল সেনাবাহিনীর প্রধান করেন। এর ফলে আকবর ক্ষুব্ধ হয়ে রাজপুতদের সাথে যোগ দেন। কিন্তু কূট কৌশলের দ্বারা আওরঙ্গজেব আকবরের সাথে রাজপুতদের ভিতরের সম্পর্ক ছিন্ন করতে সক্ষম হন। রাজপুতরা আকবরকে ত্যাগ করলে, আকবর পলায়ন করেন। রাঠোর নেতা দুর্গাদাস আওরঙ্গজেবের চাতুরী বুঝতে, আকবরকে পুনরায় দলে টানেন। পরে আকবরকে শিবাজীর পুত্র শম্ভুজীর কাছে প্রেরণ করেন। দীর্ঘদিন যুদ্ধের পর ১৬৮১ খ্রিষ্টাব্দে আওরঙ্গজেবের সাথে জয়সিংহের সন্ধি হয়। এই সন্ধির দ্বারা জিজিয়া কর প্রত্যাহার করা হয়। তবে কয়েকটি পরগণা মোগলদের হাতে অর্পণ করা হয়। মোগলরা মেবার ত্যাগ করলে, জয়সিংহ মেবারের মহারণা হন। অন্যদিকে দুর্গাদাস রাজপুত যোদ্ধাদের নিয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকেন। আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর ১৭০৯ খ্রিষ্টাব্দে সম্রাট বাহাদুর শাহ অজিত সিংহকে মারওয়াড়ের রাণা হিসেবে স্বীকৃতি দেন।
মারাঠা বিদ্রোহ
বিজাপুর ও গোলকুণ্ডায় জয়লাভের পর মারাঠাদের বিরুদ্ধে আওরঙ্গজেব সর্বশক্তি নিয়োগ করেন। ইতিমধ্যে শিবাজীর মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র শম্ভুজী সিংহাসনে বসেন। বাহারানপুর ও আওরঙ্গবাদ আক্রমণের সূত্রে মারাঠারা আওরঙ্গজেবের শত্রুতে পরিণত হয়েছিল। এছাড়া আওরঙ্গজেবের বিদ্রোহী পুত্র আকবরকে আশ্রয় দেওয়ার জন্যও তিনি মারাঠদের শায়েস্তা করাকে অপরিহার্য মনে করেছিলন। ইতিমধ্যে আকবরকে কেন্দ্র করে মোগল পরিবারের ভিতর অন্তর্দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয়েছিল। শম্ভুজী আকবরকে যথাযথ সাহায্য না করায় আকবর অসহায় বোধ করেন। এই অবস্থায় ১৮৮৬ খ্রিষ্টাব্দে মোগলদের বিরুদ্ধে তিনি যুদ্ধ করে পরাজিত হন। শেষপর্যন্ত আকবর ভারতবর্ষ থেকে পালিয়ে পারশ্যে চলে যান
মারাঠারাজ শম্ভুজী আমোদ-প্রমোদ ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলে হীনবল হয়ে পড়েছিলেন। এই অবস্থায় আওরঙ্গজেব ১৬৮৯ খ্রিষ্টাব্দে মারাঠদের আক্রমণ করেন। যুদ্ধে শম্ভুজী পরাজিত ও বন্দী হন। পরে আওরঙ্গজেবের আদেশে তাঁর মৃত্যদণ্ড কার্যকর হয়। এই হত্যার মধ্য দিয়ে মারাঠার ঘোরতর মোগলবিরোধী হয়ে পড়ে। এরা মোগল রাজ্যে হানা দিয়ে লুটতরাজ শুরু করে। শম্ভুজীর ছোট ভাই রাজারাম মারাঠা সিংহাসন অধিকার করে, মারাঠা শক্তিকে সংহত করে। আওরঙ্গজেব মারাঠাদের দমনের জন্য অভিযান চালালে রাজারাম জিঞ্জীতে আশ্রয় নেন। এই অবস্থায় আওরঙ্গজেব কর্ণাটক অধিকার করার উদ্যোগ নেন। কিন্তু রাজারাম ক্রমে শক্তিশালী হয়ে মোগলদের উপর ক্রমাগত আঘাত হানতে থাকে। ১৬৯০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৭০৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত রাজারাম যুদ্ধ চালিয়ে যায়। এই দীর্ঘ যুদ্ধে উভয় শক্তি ক্লান্ত হয়ে পড়ে। সৈন্যক্ষয় আর্থিক ক্ষতির কারণে উভয় পক্ষই অসহনীয় অবস্থার ভিতরে পড়ে। ১৭০৩ খ্রিষ্টাব্দে উভয় পক্ষ শান্তিচুক্তির পথে অগ্রসর হয়। এই সময় আওরঙ্গজেব শম্ভুজীর বন্দী পুত্র শাহু ও তাঁর মাকে মুক্তি দিতে সম্মত হন। একই সাথে তিনি শাহুকে সাত হাজরী মনসবদারী প্রদানে অঙ্গীকার করেন।

এই অবস্থায় ১৭০৭ খ্রিষ্টাব্দের ৩ মার্চ আহমেদ নগরে আওরঙ্গজেব মৃত্যবরণ করেন। প্রথম বাহাদুর শাহ দিল্লির সিংহাসনে বসেন।

বিবাহ :

প্রথমা স্ত্রী : রাজপুরী জারাল রাজপুত রাজকন্যা । নাম নবাব বাই বেগম।
দ্বিতীয়া স্ত্রী : ইরানের সাফাভী রাজকন্যা। নাম দিলরাস বানু বেগম।

সন্তানাদি

মুহাম্মদ সুলতান। মাতা নবাব বাই বেগম
বাহাদুর শাহ প্রথম। মাতা নবাব বাই বেগম
আজম শাহ। মাতা দিলরাস বানু বেগম
সুলতান মুহাম্মদ আকবর। দিলরাস বানু বেগম
মুহাম্মদ কাম বক্স। মাতা আওরঙ্গবাদী
জেব-উন-নেসা। মাতা দিলরাস বানু
বদর-উন-নেসা। মাতা নবাব বাই বেগম

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.