![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
চোখ খোলার পর যে দৃশ্য আগে দেখলাম তা অনেকটা এমন, আমি শুয়ে আছি মেঝেতে পাশে এক মধ্য বয়সী লোক হা করে ঘুমোচ্ছে ।সম্ভবত অঘোরে ঘুমুচ্ছে বলেই মুখটা বোয়াল মাছের মত দেখাচ্ছে । অদ্ভুত কোন কারনে তার পশে বসা মহিলা ঠিক তার মুখের মধ্যে হাত পাখা দিয়ে বাতাস করে যাচ্ছে ।সাথে ৩-৪ বয়সী মেয়ে থালা বাসন খেলছে ।নিম্মবিত্ত মানুষ হওয়ার এই একটা সুবিধা যে কোন স্থানকে তারা নিজেদের মত করে নিতে পারে ।নাক সিটকায় না ।আসপাশ দেখে যা বুজলাম তাতে আমি কোন হসপিটালের বারান্দায় আছি ।
ভাইজান ও ভাইজান চেতন আইছে আফনার ?
জি মনেতো হয়, পেছন ফিরে দেখি এক তরুণী ।তার দুই পা ই প্লাস্টার করা ।
জিজ্ঞেস করলাম আপনার পায়ে কি হয়েছে, উত্তরে মেয়েটা যে হাসি দিল তাতে মনে হলো আমি তাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছি !
মেয়েটার সাথে থাকা ছোট একটা ছেলে বলল , এরে এর দামান পিটাইয়া পা ভাইঙ্গা দিসে ।
কি সাংঘাতিক ! আর এই মেয়ে হাসছে ?
মেয়েটা বললো স্বামীর হাতে মাইর খাওয়ান ভালা , তেলের মত বেহেস্তে যাওন যায় ।আফনার মাতার কি খবর ?
মেয়েটা বলায় মাথায় হাত দিলাম ,এতক্ষন টেরই পাইনি ।
মাথার পুরোটা ব্যান্ডেজ এ মোরা , মেয়েটা মনে করিয়ে দেয়ার কারণে কিনা জানি না মাথায় প্রচন্ড ব্যাথা শুরু হল সাথে মনে হচ্ছে মাথার মধ্যে কেউ ইট ভাঙার মেশিন সেট করে দিয়েছে ।
মেয়েটার কাছ থেকে যতটুকু জানতে পারলাম , আমাকে রক্তাক্ত অবস্থায় ধরা ধরি করে ২ জন রিক্সাওয়ালা এখানে রেখে গিয়েছে ,দায়বদ্ধতা নাকি সবার চাপে এখানে রেখে গেছে কিনা জানি না, কারণ তার আগেই আমি জ্ঞান হারাই, শুধু মনে আছে তাদের মারামারি ঠেকাতে গিয়ে বাঁশের বারিটা আমি খাই ।
প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকালাম মোবাইল ,মানিব্যাগ কিছুই নাই । অপর পকেটে মিতুর দেয়া চিঠি খানা আছে ।
ভদ্রতা করে চিঠিটা রেখে গেছে , ভদ্রতা এখনো উঠে যায় নাই । গতকাল মিতু নিজে মেসে এসে চিঠিটা টেবিলে রেখে গেছে । বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কোন বিষয় জানানোর মিতুর বিশেষ নিয়ম এইটা ।
মিতুর সাথে পরিচয় ২ বছর আগে ।কোন এক সন্ধ্যায় আমি টিএসসি তে এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবি মহাদেব সাহার একটি কবিতা আবৃতি করেছিলাম :
"তোমাদের কথায় কথায় এতো ব্যকরণ
তোমাদের উঠতে বসতে এতো অভিধান,
কিন্তু চঞ্চল ঝর্ণার কোনো ব্যাকরণ নেই
আকাশের কোনো অভিধান নেই, সমুদ্রের নেই।
ভালোবাসা ব্যাকরণ মানে না কখনো
হৃদয়ের চেয়ে বড়ো কোনো সংবিধান নেই
হৃদয় যা পারে তা জাতিসঙ্ঘ পারে না"
আবৃতি শেষে যখন নিচে এসে দাঁড়ালাম, মিতু আমার সামনে এসে এক পলকের ও অল্প সময়ের মধ্যে শুধু বললো "আপনি খুব ভালো আবৃতি করেন "
তারপর মিশে গেল জনঅরণ্যে । আমি শুধু তাকিয়ে রইলাম ।সবুজ শাড়িতে শ্যামা বরণ মিতুকে মনে হচ্ছিলো যেন ধরিত্রী তার নিজ হাতে তার মৃত্তিকা আর সবুজ রং দিয়ে সহস্র বছর সময় নিয়ে তাকে গড়ে তুলেছে ।
তাকিয়ে তার চলে যাওয়া দেখা ছাড়া যেন আর কোন কিছু করার ক্ষমতা প্রকৃতি আমাকে দেয়নি ।
তার প্রায় ২ মাস পরে একদিন মোবাইল -এ অপরিচিত নম্বর থেকে কল । ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে প্রায় ধমকের সুরে " ফোন ধরতে এত সময় লাগে ?"
আমি ভয় এবং সংশয় নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম "কে "?
আমি মিতু
জি কোন মিতু?
কতগুলো মিতু আপনার কবিতা আবৃতির প্রশংসা করে ?
অল্প সময়ের জন্য বুকটা ধক করে উঠলো, ধরিত্রী আজ যেন নিজে আমার কাছে ধরা দিয়েছে ।
জিজ্ঞেস করলাম, আপনি আমার নম্বর পেলেন কোথায়?
গোয়েন্দাদের মত এত প্রশ্ন করেন কেন?কোথায় পেয়েছি আপনার জানা লাগবে না ।আপনি চট জলদি রেডি হয়ে কাঁটাবনে চলে আসুন তো ।
আমি বললাম, কেন?
উফফ প্রশ্ন করা কি আপনার রোগ নাকি ? আসতে বলেছি তাই আসবেন ।আমি একটি বিড়ালের বাচ্চা কিনবো আর সেটা আপনি সিলেক্ট করে দিবেন ।ঠিক দুটোর সময় থাকবেন ।
এখন রাখি বাই।
মিতুর সাথে পথ চলার শুরুটা এভাবেই ।বড়োলোক পিতার একমাত্র মেয়ে ।প্রথম দিকে ভেবেছিলাম আবেগ অথবা খামখেয়ালি থেকেই হয়তো আমাকে ভালোবেসে ফেলেছে । আমার মত ছা পোষা একজন বাংলা লেকচারারকে বড়জোর সে মায়া করতে পারে । কিন্তু মিতুর সাথে পরিচয়ের দেড় বছর পরে একদিন সন্ধ্যায় মিতু আমার সাথে এক ভয়ংকর কান্ড করে বসে।
মিতুর চিঠিটা বের করে পড়া শুরু করলাম পরিচিত গোছানো হাতের লেখা ।যদিও তার লেখায় রোমান্টিকতার বালাই থাকে না । তার চিঠি হয় টেলিগ্রামের মত ।
" ১৭ই মার্চ, ২০১৫
মঙ্গলবার
বিয়ে ।ব্যাবসায়ী সেই সুদর্শন ছেলের সাথে ।
পুনশ্চ ১ : রাত ৮ টায় মগবাজার কাজী অফিসের গলিতে থাকবে ।
পুনশ্চ ২ : দেরি হলে আসার দরকার নাই ।"
৮ টা মানে ৮ টা । এখুনি বের হয়ে যেতে হবে । এপ্রোন পড়া লোকজন খুঁজতে লাগলাম ।না বলে গেলে অভদ্রতা দেখায়। কিন্তু কাউ কেই তেমন দেখছি না, শুধু একটা মেয়েকে দেখছি কাটা চামচ দিয়ে মিষ্টি খাবার মত রোগীদের সুই ফুটিয়ে যাচ্ছে । দেখার মত দৃশ্য । এই হসপিটালে মনে হয় সাদা এপ্রোন পড়তে হয় না , তাকে কয়েকবার ডাকার পর বেশ বিরক্তি নিয়ে আমার দিকে তাকালো , হাসি হাসি মুখ নিয়ে বললাম "চলে যেতে চাচ্ছি"
মহাজাগতিক সকল কষ্ট নিয়ে মেয়েটা আমাকে বললো " আপনাকে কে আটকিয়ে রেখেছে ? যেতে চাইলে যান" কয়টা বাজে জিজ্ঞেস করার আর সাহস হলো না , পাশ থেকে জানলাম এখন বাজে ৬:৫৩ আমি আছি শাহবাগের আসেপাশের এক হসপিটালে ।
বাইরে বেরোতেই দেখি গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি । আপাতত আমার ছাতার কাজ মাথার ব্যান্ডেজ ই করবে বলে মনে হচ্ছে । তবে বৃষ্টির কারণে সময়মতো পৌঁছাতে পারবো কিনা জানি না , সবটুকু শক্তি নিয়ে হাঁটা শুরু করলাম নাটোরের বনলতার খোঁজে …………..(চলবে )
©somewhere in net ltd.
১|
০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:৪০
পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: শুভ ব্লগিং ।