নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

\"হারিয়ে যাওয়া মানুষ দ্বিতীয় বার হারায়না, হারিয়ে যেতে চাইলে তাকে ফিরে আসতে হবে। আমি বার বার ফিরে এসেছি, বার বার হারিয়ে যাওয়ার জন্য \" --- আমি

আরিয়ান রাইটিং

ভাল কিছু লেখার জন্য সময় দিতে হয়, অহেতুক তারাতারি করতে গেলে ভাল কিছু হারাতে হয় - আমি

আরিয়ান রাইটিং › বিস্তারিত পোস্টঃ

দীপ্তি

২৯ শে আগস্ট, ২০১৭ সকাল ১১:০৬


আমি রাস্তার পাশে দাড়িয়ে আছি। দিপক অনেক্ষণ আগে ফোন দিয়ে বলেছে সে আসছে। এখনো এসে পৌঁছতে পারলোনা। মেয়ে হয়ে এভাবে আর কতক্ষণ দাড়িয়ে থাকা যায়। সবাই এখন আমাকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। আশ্চর্য! একটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে,সেটা দেখার কি আছে? আমার এখন বিরক্ত লাগছে,ভীষণ বিরক্ত লাগছে।তার উপর শাড়ি পরে দাড়িয়ে আছি,বিরক্তির শেষ নেই।গাধাটা সবসময় দেরি করে।সময় জ্ঞান একটুও নেই। এদিকে বাসায় তারাতারি যাওয়া দরকার। দাদা ইদানিং আমাকে সন্দেহের চোখে দেখে, একমাত্র বোন থাকলে দাদারা যা করে আরকি। কবে জানি আমাকে এই গাধাটার সাথে দেখে ফেলে। তারপর বলবে "দীপ্তি শোন ! সামনের মাসেই তোর বিয়ে"। তখন দিপক বাবু তুমি বসে বসে আঙ্গুল কামড়িয়। গাধা একটা! সবকিছু আমাকেই সামাল দিতে হয়।

আমি হেন্ড বেগ থেকে ফোন বের করলাম। এটাই আমার শেষ ফোন কল,এর পর আমি আর অপেক্ষা করবোনা।ফোন কল দিতে যাবো তখনি দিপক সামনে এসে হাজির।একি মুখের হাল বানিয়েছে, ঘামে তার শার্ট ভিজে একাকার।এভাবে কেউ কারো কাছে আসে। এই অবস্থায় ওকে দেখে আমার কান্না পাচ্ছে। এই গরমে কেও ফুলহাতা শার্ট পরে? কতবার যে বলা হয়েছে টি-শার্ট পরার কথা। কিন্তু না,তার নাকি ফুল-শার্ট পছন্দ।

দিপক:- তুমি কি অনেকক্ষণ যাবত দাড়িয়ে আছ?

ইস্! অনেকক্ষণ যাবত দাড়িয়ে আছি কিনা জানতে চাচ্ছে।চেহারা দেখে কিচ্ছু বুঝেনা। এত কষ্ট করে শাড়ি পরে এসেছি, মাত্র একবার এদিকে তাকিয়ে এখন অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। কেমন দেখাচ্ছে আমাকে কিচ্ছু বললো না।

দীপ্তি:- না। শোনো আমার তারাতারি যেতে হবে।

দিপক:- সেকি,আসতে না আসতেই যাওয়ার কথা বলছো।তা তোমার বড় লোক বাবার গাড়ি ও তার ড্রাইভার কি তোমার জন্য অপেক্ষা করছে নাকি।

দীপ্তি:- না। আজ গাড়িও নেই ড্রাইভারও নেই। একাই এসেছি,রিক্সা করে। তোমার আসতে দেরি হল কেনো?

দিপক:- রিক্সা পাইনিতো তাই।

দীপ্তি:- রিক্সা পাওনি নাকি রিক্সায় উঠোনি,কোনটা?

দিপক:- দুটোই!

দীপ্তি:- দুটোই কি করে হয়,হুম? এক্সপ্লেইন মি।

দিপক:- রিক্সা পাইনি,তাই উঠিনি- সিম্পল। তাছাড়া হাটাহাটি করা ভাল।

দীপ্তি:- হ্যাঁ, তাতো দেখতেই পাচ্ছি। তোমার শার্ট তার প্রমান।

দিপক:- আবার শুরু হয়ে গেলে। তুমিকি আমাকে ডাকো শুধু ঝগড়া করার জন্য।

দীপ্তি:- ও আচ্ছা! আমি কিছু বললে সেটা ঝগড়া,তাইনা? তুমি যখন বলো তখন সেটা কি হয়? তখন তো দার্শনিক কথাবার্তা বলা শুরু করো - " দীর্ঘ দিনের সম্পর্কে কথা কাটাকাটি হওয়াটা সম্পর্কের জন্য স্বাস্থ্যকর ব্যাপার "। তো দার্শনিক সাহেব! এখন কি আপনার কাছে এটা অস্বাস্থ্যকর লাগছে।

দিপক:- হুম!

দিপক মুচকি হেসে দিলো।

দীপ্তি:- এই হাসবানা, আমি হাসির কিছু বলিনি।

দিপক:- ঠিকাছে হাসবোনা। চলো তোমার চাইনিজ রেস্টুরেন্টে যাই। এসির বাতাসে তোমার মাথা ঠান্ডা করা প্রয়োজন।

দীপ্তি:- আর এইযে,তোমার খোঁচা দিয়ে কথা বলা "তোমার চাইনিজ রেস্টুরেন্ট"।এর মানে কি?

দিপক:- কেনো তোমার না?

দীপ্তি:- তুমিকি আমার সাথে ফাইজলামি করতেছো?

দিপক:- কই নাতো! আমরা এত চাইনিজ রেস্টুরেন্টে যাই,তাই ভাবলাম হয়তো তোমারি হবে।

দীপ্তি:- কেনো, তুমি যে আমার সাথে যাও...

দিপক:- তুমি নিয়ে যাও বলেই যাই। আমিতো রাস্তার পাশে দাড়িয়ে চা স্টল দিয়েই কাজ চালিয়ে দেই।

দীপ্তি:- তুমি একটা ইম্পসিবল! জাস্ট ইম্পসিবল।

দিপক:- হ্যাঁ, তাতো জানি।সম্পর্ক হওয়ার পর যখন জানতে পারলাম তুমি একজন ম্যাম সাহেব তখন থেকেই জানি এটা ইম্পসিবল...

দীপ্তি:- শোনো, কথায় কথায় সম্পর্ক নষ্ট করার কথা বলবানা।

দিপক:- তুমি যে কেনো আমার পিছনে লেগে আছ সেটা বুঝে উঠতে পারিনা।

দীপ্তি:- ঠিকাছে,তোমার চা স্টল তাইনা। আজ তোমার চা স্টলে বসেই খাবো। চলো...

দিপক:- উহু, বসে না ম্যাডাম বসে না,দাড়িয়ে দাড়িয়ে...। তাতেকি চলবে...

দীপ্তি:- হুম, চলবে। ভাবকি আমাকে,হুম। আমিও চা পান করতে যানি...!
.
.
আমি চা স্টলের সামনে দাড়িয়ে আছি। চা বানানো দেখছি। ময়লা পানিতে কাপ চুবিয়ে উঠালো,তার পর সেই কাপেই চা বানানো শুরু করলো।ডায়রিয়া হওয়ার আগে কেও জানতে পারেনা যে তার ডায়রিয়া হবে। আজকে আমার ডায়রিয়া হবে,আর সেটা কেউ ঠেকাতে পারবেনা! নিশ্চিত!

দিপক:- কি, চাইনিজ রেস্টুরেন্ট...

দীপ্তি:- না। এখানেই খাবো।

দিপক:- হুম। ভাল।

দিপক আবার মুচকি হেসে দিলো। আসে পাশে মানুষ ছিল বলে কিছু বলতে পারলাম না।ছেলেটাকে চড়ানো দরকার।সব কথায় আমাকে বিদ্রূপ করে। চা হয়ে গেলে চা নিয়ে দু'জন একটু সামনে যেয়ে দাড়ালাম।আমার চোখ চায়ের কাপে আটকে গেলো।কাপটা অনেক ময়লা,মনে হচ্ছে অনেকদিন যাবত ভাল করে ধোয়া হয়না। দিপক চায়ে চুমুক দিচ্ছে আর সিগারেটে টান দিচ্ছে। কি অমৃত সুখ যে পাচ্ছে,চেহারায় তা ফুটে উঠছে।আমি কখনো এভাবে ওকে দেখিনি। রেস্টুরেন্টে বসলে কেমন যেনো ভদ্র ভদ্র হয়ে যায়,কেমন যেনো কৃত্রিম এক চরিত্র ভর করে। কিন্তু এখন দেখে মনে হচ্ছে দিপক ঘরে বসে পায়ে পা তুলে তৃপ্তি সহকারে চা পান করছে,কোনো লোক দেখানো কৃত্রিমতা নেই। ওর এই তৃপ্তি নিয়ে চা পান করাটা দেখে আমার কেমন যেনো ভাল লাগছে। আমি চায়ে একটু চুমুক দিলাম।চা টা একেবারেই অখাদ্য সেটা বলা যায়না।
এই গাধাটার জন্য আর কি কি যে করতে হবে কে জানে।এখন রাস্তায় দাড়িয়ে চা পান করছি আর সবাই সেটা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে দেখছে।শুধু যার তাকিয়ে দেখার কথা সেই দেখছেনা। শাড়ি পরতে পারতাম না,সেটা শিখতে হয়েছে। রাস্তায় অনেক হাটতে হয় বলে হাই-হিল পরা ছাড়তে হয়েছে।ফ্লেট জুতো পরি বলে আমাকে কেমন ছোট ছোট লাগে । গাধাটা মাঝে মধ্যে না খেয়ে থাকে বলে একটু একটু রান্না করাও শিখছি। রুটি আর আলু ভাজি তার পছন্দ।উফ্ রুটি গোল করা যে কি কষ্ট!

দিপক:- কি ম্যাডাম চা কেমন?

দীপ্তি:- ভাল।

দিপক:- হুম। চেহারা দেখেই বুঝতে পারছি!

দীপ্তি:- অতিরিক্ত বোঝার চেষ্টা করবেন না। তো দার্শনিক সাহেব,চা নিয়ে আপনার কোনো দার্শনিক কথা কি আছে...

দিপক:- আপনার কি আমার দার্শনিক কথাতে এলার্জি আছে। থাকলে বলতে পারেন।

দীপ্তি:- এলার্জি তো আছেই। প্রেমটা তো এলার্জির কারনেই।

দিপক:- দীপ্তি, মধ্যবিত্তদের ভালবাসা রাস্তার পাশে থাকা চায়ের দোকান গুলোর উষ্ণ চায়ের কাপে পাওয়া যায়, চাইনিজ রেস্টুরেন্টে না। আর এটা বুঝতে চাইলে তুমাকে এই ময়লা চায়ের কাপটা প্রতিদিন ধরতে হবে।

দিপক অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। আমি মানুষটার উদাসীন দৃষ্টিতে ভালবাসা খুঁজে যাচ্ছি। মানুষটার চেহারাটা বয়সের সাথে একদিন হারিয়ে যাবে,কিন্তু তার চিন্তা করার এই সুন্দর জগৎ টা থেকে যাবে। আমি যে ওর দৃষ্টিভঙ্গি আর এই পুরো চিন্তা জগৎকেই ভালবাসি...।

#ছোটগল্প
#দীপ্তি

#আরিয়ান_রাইটিং

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে আগস্ট, ২০১৭ সকাল ১১:২৪

বিজন রয় বলেছেন: শেষটা ভাল হয়েছে।

আপনি কি নিয়মিত লেখেন?

২৯ শে আগস্ট, ২০১৭ সকাল ১১:২৯

আরিয়ান রাইটিং বলেছেন: ধন্যবাদ।

নিয়মিত লেখার চেষ্টা করি। ব্যস্ততা থাকে বলে অনেক সময় হয়ে উঠেনা।

২| ২৯ শে আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৩:৪৪

নাঈম জাহাঙ্গীর নয়ন বলেছেন: ভালো কথোপকথন

শুভকামনা রইল

৩১ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ১২:২২

আরিয়ান রাইটিং বলেছেন: ধন্যবাদ। ভাল থাকুন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.