![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ভাল কিছু লেখার জন্য সময় দিতে হয়, অহেতুক তারাতারি করতে গেলে ভাল কিছু হারাতে হয় - আমি
ভার্সিটির প্রথম ক্লাস করতে যেয়ে একটু ভয়ে ছিলাম।ক্লাসে যাওয়ার আগে অনেক্ষন বাইরেও বসেছিলাম।ক্লাসে প্রবেশ করার আগে মনে মনে প্রেক্টিস করতে লাগলাম- কিভাবে কথা বলবো,কিভাবে হাসবো,কিভাবে স্যারদের সাথে কথা বলবো। প্রথম ক্লাসে একটু পরিপাটি,একটু গুড লুকিং ধরনের বিষয় আছে না!
তথ্যগুলো পেয়েছি এক পরিচিত একাউন্টিং ডিপার্টমেন্টের সাগর ভাইয়ের কাছ থেকে। আমাকে একদিন ডেকে বলে "শোন রাফি! যা টিপস্ দেই সেইগুলা খালি মেনে চলবি বুঝলি,বাকিটা সে সামলে নিবে"। বাকিটা ঠিক কে সামলে নিবে বুঝতে না পেরে প্রশ্ন করলাম - "ভাই, কে সামলে নিবে? "
সাগর ভাই প্রশ্ন শুনে কিছুখন আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো।তারপর বিড়বিড় করে বলল "একে দিয়ে কিচ্ছু হবেনা"। এটা শুনে জানতে ইচ্ছে হলো ঠিক কি হবেনা। কেন জানি আর প্রশ্ন করা হয়নি। সাগর ভাই আরো অনেক কিছু বলল- "মেয়েদের সাথে কথা বলার সময় তাদেরকে প্রায়রিটি দিতে হবে,হাসির কথা বললে সুন্দর করে হাসতে হবে তার পর...ব্লাব্লা"
সাগর ভাইয়ের কথা থামিয়ে প্রশ্ন করলাম "ভাই প্রায়রিটি কিভাবে দেয়?" সাগর ভাই আবারো আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। আমার প্রশ্ন শুনে সাগর ভাইয়ের রুমমেট ফিক করে হেসে দিলো। নিজেকে নিজেই বলতে লাগলাম, এটা কিছু হইল! আমিতো কিছুই বুঝতেছিনা। তাহলেকি প্রশ্ন করবোনা? আমার আবার একটু একটু কান্নার ভাব হচ্ছে কিছু বুঝতে পারছিনা বলে! সাগর ভাই আমার চোখে সাগরের নোনা জলের আভাস দেখতে পেলো! ভাই ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে বলল- "ধর তোকে কোনো মেয়ে কিছু বলছে,তখন তুই সেই কথাটা মনোযোগ দিয়ে তার চোখের দিকে তাকিয়ে শুনছিস,এটাই প্রায়রিটি দেয়া বুঝছিস্? " আরো অনেক কিছু বলল কিন্তু এত কিছু কি মনে থাকে।আমি রীতিমত টেনশনে পরে গেলাম এই ভেবে ভার্সিটিতে পড়ার জন্য এসেছি নাকি মেয়েদের সাথে কথা বলতে এসেছি!! মুখ ফসকে বলে ফেললাম,
--বুঝতে আসলে সমস্যা হচ্ছে!
পাশে বসা হলুদ জামা পরা মেয়েটা বলল- "কি সমস্যা?"
আমি ভেবলার মত ডানে তাকিয়ে ভাবতে লাগলাম এই মেয়ে কখন পাশে এসে বসলো।সে আবারো জানতে চাইলো "কোনো সমস্যা?" আমি বললাম "কোনো সমস্যা নেই,এমনি একটা কথা ভাবছিলাম,সেটা মুখ দিয়ে বেরহয়ে গেছে!"। সে আমাকে আগা পাঁচতলা দেখে আবার তার বান্ধবির সাথে কথা বলতে লাগলো। আমি তার দিকে তাকিয়ে আছি,তার চুলগুলো কি সুন্দর।হাতটাও কি সুন্দর এদিকওদিক ছুড়ে দিয়ে কথা বলছে! মেয়েটা আবার আমার দিকে তাকালো,কিন্তু আমি সেটা খেয়াল করিনি। মেয়েটা এবার বলল-
-- কি ব্যাপার! কি সমস্যা আপনার?
-- জ্বি! কোনো সমস্যা নেই।
-- তাহলে তাকিয়ে আছেন কেনো?
-- জ্বি! স্যরি।
--নতুন নাকি?
--জ্বি!
--এত জ্বি জ্বি কর কেনো?!
--জ্বি?!
এ পর্যায়ে মেয়েটির পাশে বসা বান্ধবি আমাকে খুব আদর করে ডাকলো,
--এদিকে এসো ভাইইইয়া...!
এমন আদরের ডাক আমার মা-বাবাও কোনোদিন ডাকেনাই !কেমন জানি সন্দেহ হচ্ছিল তখন! আমি বসা থেকে উঠে দাঁড়ালাম। তার বান্ধবি মোবাইল টিপতে টিপতে বলল,
--জানো? এই আপুটা কে?
--না!
--আইরিন আপু! থার্ড ইয়ারের।
--ওহ,আচ্ছা!
--তোমার এই আপুকে একটা গান শুনাও!
আমি মেয়েটার দিকে ভেবলা হয়ে তাকিয়ে রইলাম!
--কি হইছে? গান কর!
--আমিতো গান পারিনা আপু!
--ওলেলে..! গান পারনা! তাহলে কি পারো?
আমি চুপ করে আছি,কি করবো বুঝতে পারছিনা। হুটকরেই দেখি আইরিন আপুর বান্ধবিটা ধমক দিয়ে বলল,
--গান কর!!!
ধমক খেয়ে আমি ফটকরে আইয়ুব বাচ্চুর "সেই তুমি" গান গাইতে শুরু করলাম।আমি জীবনে কোনোদিন কারো সামনে গান গাইনাই,কিন্তু এখন গাচ্ছি! প্রথম লাইন গাইলাম ভাঙা গলায়,তারপর দ্বিতীয় লাইনটা যখন গাইতে ছিলাম "সেই আমি কেন তোমাকে দুঃখ দিলেম" তখন কি মনেকরে যেন আমি আইরিন আপুর চোখের দিকে তাকালাম। এরপর আর একলাইনো গাইতে পারিনি! আইরিন আপু দেখি কিভাবে জানি আমার দিকে তাকিয়ে আছে। একটা কোমল কন্ঠে আমাকে বলল,
--আর গাইতে হবেনা,তুমি যাও!
আমি বড় বড় পা ফেলে ভার্সিটি থেকে অনেক দূর চলে আসলাম। একবার পিছনে তাকিয়ে ছিলাম,দেখি আইরিন আপু তখনো আমার দিকে তাকিয়ে আছে। এটা দেখে পরে দৌড় হাটা দেয়া শুরু করলাম। চোখের চশমা ঘোলা দেখে খুলে দেখি চোখের পানিতে ভিজে গেছে। আমি বুঝিও নাই যে গান গাওয়ার সময় থেকে আমি কেঁদে যাচ্ছি!
অনেক দূর এসে রাস্তার পাশে বসার জায়গা পেলাম।সেখানে অনেক্ষন বসে ছিলাম। নিজেকে নিজেই অনেক প্রশ্ন করতে লাগলাম,এত ইমোশনাল কেনো আমি?
আর এভাবেই আমার ভার্সিটির প্রথম ক্লাসটা আর করা হয়নি। প্রথম ক্লাস বললে ভুল হবে,প্রথম সাত-আট্টা ক্লাস করা হয়নি। মা জানতে চাইতো ক্লাসে কেনো যাইনা ? আমি একটা কিছু বলে দিতাম।আমি এত ইমোশনাল দেখে ঠিক করেছিলা ক্লাস আর করবোনা।কিছুটা নিজের উপর রাগ করেই সিদ্ধান্ত নেয়া।
তারপর হঠাৎ একদিন মা আমার রুমে এসে বলে,
--তোর ভার্সিটির এক বান্ধবি আসছে। ভার্সিটিতে গেলি একদিন আর একদিনেই তোর বান্ধবি!!বাবারে বাবা! ড্রয়িংরুমে বসে আছে,দেখা কর!
মার কথা শুনে আমি থ খেয়ে গেলাম। বান্ধবি... মানে কি?!বান্ধবি কোথা থেকে টপকালো?
বিছানা থেকে লাফিয়ে উঠলাম,একটা টি-শার্ট গায়ে দিয়ে ড্রয়িংরুমে গেলাম। তারপর যা দেখলাম তা বিশ্বাস করি কি করে। এটা কোনো বান্ধবি না,এটা সেই আইরিন আপু!! এ তো খুবি ডেনজারাস দেখছি!বাসা জানলো কি করে? আমি আবার ভেবলার মত তারদিকে তাকিয়ে আছি! আমাকে দেখে আইরিন আপু বলল,
--কি, তুমি ক্লাসে যাওনা কেনো?এদিকে এসো!
আমি আস্তে আস্তে কাছে গেলাম।আমার হাতে একটা চিরকুট দিয়ে বলল,
--কালকে থেকে ক্লাসে যাবে,ঠিকাছে?
আমি চুপ করে আছি,কিছুই বলতে পারতেছিনা।
--কি?কালকে আসবেতো?
--জ্বী আসবো।
তারপর আইরিন আপু চলেযাবে বলে উঠে পরলো। মা বলল নাস্তা করে যেতে,কিন্তু শুনলোনা।আইরিন আপু চলে যাবার পর মা জিজ্ঞাসা করলো,
--তোর এই বান্ধবিকে একটু বড় বড় মনে হয়না?
আমি মার দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকালাম। মা আর কিছু না বলে তার রুমে চলে গেল। আমি হাতের চিরকুট খুললাম। গোটাগোটা অক্ষরে সেখানে আইয়ুব বাচ্চুর গানের কথা লেখা,
"তুমি কেন বোঝনা তোমাকে ছাড়া আমি অসহায়,
আমার সবটুকু ভালবাসা তোমায় ঘিরে,
আমার অপরাধ ছিল যতটুকু তোমার কাছে
তুমি ক্ষমা করে দিও আমায়।"
এর পর কি হয়েছে আপনারা সেটা জানেন!
আমার চশমাটা আবার খুলতে হয়েছে ,কারন সেটা আবার ঘোলা দেখাচ্ছিল!
.
#ছোট_গল্প
#আরিয়ান_রাইটিং
১৫ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ৮:৫০
আরিয়ান রাইটিং বলেছেন: ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
২| ১৫ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১০:০০
রাজীব নুর বলেছেন: আমি তো ভেবেছিলাম আপনি আপনার জীবনের কথাই লিখেছেন।
শেষে দেখি এটা গল্প। অথচ আমি আপনার জীবন কাহিনী ভেবে পড়েছি।
১৬ ই এপ্রিল, ২০১৯ দুপুর ১:০৩
আরিয়ান রাইটিং বলেছেন: হাহা, মন্তব্যটা পড়ে কিছুক্ষণ হাসলাম। যেভাবেই ভেবে পড়েন না কেনো,আপনার ভাললাগলে সেটাই আমার প্রাপ্য। ধন্যবাদ।
৩| ১৫ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১০:৫৫
মাহমুদুর রহমান বলেছেন: ছোট গল্পে অজস্র ভালো লাগা।
১৬ ই এপ্রিল, ২০১৯ দুপুর ১:০৮
আরিয়ান রাইটিং বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ।
৪| ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৯ বিকাল ৫:০৬
পবিত্র হোসাইন বলেছেন: প্রচুর কান্না করতে হবে
১৭ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১১:৫৪
আরিয়ান রাইটিং বলেছেন: মন্তব্য পড়ে কান্না আসতেছে!
৫| ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৪৯
আর্কিওপটেরিক্স বলেছেন: উঙা উঙা
১৭ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১১:৫৬
আরিয়ান রাইটিং বলেছেন: হাহাহা
©somewhere in net ltd.
১|
১৫ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ৮:৩০
আফসানা মারিয়া বলেছেন: onek sundor