নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

...

অর্ক

...

অর্ক › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রিয় পুলিশবাহিনী

২৫ শে আগস্ট, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:২০




ঢাকার গুলশান এক থেকে দুইয়ের দিকে গেছে যে প্রধান সড়ক, সেউ সড়কে, গুলশান একের মোড়ের কাছে দেখলাম, কয়েকজন পুলিশ আর মানুষের মোটামুটি বড়সড় একটি জটলা একটি কারকে ঘিরে। কাছে গেলাম। মোটরবাইক আরোহী পুলিশের একজন কর্মকর্তা রাস্তার পাশে কারটি অবৈধভাবে দীর্ঘক্ষণ দাঁড় করিয়ে রাখবার কারণে আটক করেছে। অভিযোগ। ব্যাপারটা তেমন বড় কিছু মনে হলো না আমার কাছে। বেশ প্রশস্ত রাস্তা। একটা গাড়ি দাঁড় করালে তেমন কিছুই হবে না, চলন্ত গাড়িগুলো দিব্যি ওটাকে পাশ কেটে যেতে পারবে। তেমন ভিড়ভাট্টাও ছিল না তখন, সেই পড়ন্ত বিকেলে। চাইলে উপেক্ষা করা যেতো বৈকি! তবে ব্যাপারটা অবশ্যই বেআইনি। একেবারে মেইন রোডে ওভাবে একটি গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখার কোনও মানেই হয় না। দেখে আমিও বিরক্ত হয়েছিলাম। দোষ সম্পূর্ণরূপে সেই গাড়িচালকের। যথারীতি তাকেই কাঁচুমাচু মুখ করে বারবার হাতে ধরে অনুনয় বিনয় করতে হচ্ছিল, 'দয়া করে মামলা দিবেন না স্যর, ভুল হয়ে গেছে, পাঁচ মিনিট মাত্র দাঁড় করানো ছিল কারটা ওখানে, আর কোনদিন এরকম হবে না, এবারের মতো ক্ষমা করে দিন' ইত্যাদি বলে। অনেকটাই সেখানে কেঁদে ফেলবার মতো অবস্থা বেচারার। মধ্য বয়স্ক একজন কেতাদুরস্ত পোষাক পরিহিত শেতাঙ্গ ভদ্রমহিলাকে দেখলাম, হাতে একটা পাঁচশ' টাকার কড়কড়ে নোট নিয়ে নির্বোধের মতো ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে দেখছে চারপাশের দৃশ্যাবলী।
সেই পুলিশ কর্মকর্তা মটরবাইক থেকে নেমে কাগজপত্র বের করে কাগজে মামলা লিখি লিখি করছে। ড্রাইভার হাত দিয়ে কাগজ কলম ধরে রেখে, কোনরকমভাবে ঠেকিয়ে রেখেছে তাকে। বলছে, 'স্যর প্লিজ আল্লার দোহাই লাগে, মামলা দিয়েন না। আর কোনদিন এরকম হবে না। পাঁচ মিনিটও হয় নাই। আজকের মতো ছেড়ে দিন।' এসময় শুরু হলো আসল খেলা, যার জন্য আজকে আমার এই পোস্টের অবতারণা। এসময় দেখলাম, সেই মধ্য বয়সী বিদেশী ভদ্রমহিলা পাঁচশ' টাকার নোটটা ঘুস হিসেবে সবার সামনেই অফার করে বসলো পুলিশ অফিসারটিকে। নোটটা বাড়িয়ে ধরলো অফিসারের সামনে। এসময় শরীরের কাছে কুকুর বিড়াল চলে এলে মানুষ যেভাবে 'দূর দূর ছেই ছেই' করে তাড়ায়, অনেকটা ওরকমই অঙ্গভঙ্গি করে 'ধুত ধুত' বলে বিড়বিড় করে চরম বিরক্তি প্রকাশ করলো পুলিশ অফিসারটি। প্রচণ্ড বিরক্তিতে দু'কদম সরিয়ে নিল নিজেকে। আশা করি সবাই বুঝতে পেরেছেন ব্যাপারটা, পাঁচশ টাকা অফার করাতে, দারুণ 'গোসসা' হয়েছে স্যরের! এভাবে ভদ্রমহিলা পাঁচশ' টাকার নোট হাতে, ড্রাইভার হাত জোর করে, পুলিশ অফিসার মামলার কাগজ কলম হাতে 'ধ্যাত ধ্যাত' করে ঘুরতে লাগলো কারের চারপাশে। দারুণ মজার ছিল দৃশ্যটা আমার কাছে, নির্ঘাত বাকিদের কাছেও। ভাবছিলাম, সেই বিদেশী ভদ্রমহিলাকে চোখ টিপে ইশারা করে বোঝাই যে, ওই একটা পাঁচশ' টাকার নোটে তার গাড়ি কিছুতেই ছাড়বে না পুলিশ কর্মকর্তা, উল্টো আরও তাকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যাবে! ওভাবে পিছনে পিছনে ঘুরে লাভ নেই। বিপদ এড়ানোর জন্য ওরকম আরও একাধিক পাচশো টাকার নোট বের করা লাগবে, নইলে খাও মামলা! আমি নিজেও লজ্জা পাচ্ছিলাম, ওরকম একজন বড় পদবির মোটরবাইকআলা পুলিশ অফিসারকে মাত্র পাঁচশ' টাকা ঘুস অফার করা দেখে, যা সেখানে আশেপাশের ক্যাফেগুলোতে মোটামুটি দুকাপ কফির দাম। আশি, নব্বই'র দশক হলেও না হয় একটা ব্যাপার ছিল! কিন্তু আজকে... উহু, ভদ্রমহিলা নির্ঘাত কোনও যুদ্ধ বিদ্ধস্ত দরিদ্র আফ্রিকান দেশ থেকে বাংলাদেশে এসেছিলো, এন. জি. ও টিও তে কাজটাজ করে থাকবে। ঢাকা সম্পর্কে তেমন কোনও ধারণা নেই। নইলে গুলশানের মতো একটি অভিজাত এলাকায়, ওরকম একটা লাক্সারি কার হাকিয়ে, ঘুস মাত্র পাঁচশ' টাকা...
যথারীতি সেকি গোসসা সেখানে সেই পুলিশ কর্মকর্তার, হৈ হৈ করে গরু তাড়ানোর মতো করে খেদাতে লাগলো দুজনকেই! সারা মুখে চরম বিরক্তি। আমরা বেশ কয়েকজন তখন সেখানে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম। সবাই বেশ বুঝতে পারছি, সমস্যাটা কোথায়, সমাধানও সবারই জানা। কিন্তু কিছু করতে পারছি না কেউ। এসব নিয়ে খোলামেলা বলাও যায় না কিছু। না পারছি ভদ্রমহিলাকে বুঝিয়ে বলতে যে, আপনার মতো একজন ধনাঢ্য মহিলার কাছ থেকে মাত্র পাঁচশ' টাকা ঘুস অফার করাতে দারুণ অসম্মানিত হয়েছেন পুলিশ অফিসার। হয় আরও কিছু নোট বাড়িয়ে দিন নইলে মামলা খেয়ে থানায় থানায় ঘোরাঘুরি করার প্রস্তুতি নিন। এছাড়া রাস্তায় এভাবে নাটক করে লাভ নেই। কিচ্ছু হবে না! আর সেই পুলিশ অফিসারকে তো আমাদের কারও কিছু বলার কোনও প্রশ্নই আসে না। কতো সৎ, করিতকর্মা একজন পুলিশ কর্মকর্তা! আহা, কীভাবে হাতেনাতে ধরেছে রাস্তায় অবৈধ কার পার্কিং! নেহায়েত আরেক দেশের একজন ভদ্রমহিলার সম্মান রক্ষার্থে একটু আধটু অসাধুতা করতে বাধ্য হয়ে পড়েছেন, নইলে কিছুতেই মামলা না দিয়ে ছাড়তেন না তিনি! কে বলে বাংলাদেশের পুলিশ সব অসাধু, দুর্নীতিবাজ! এসে দেখে যাক তারা এই মহান দেবতুল্য ভদ্রলোককে!
সেই পুলিশ অফিসারটির হয়তো ইংরেজিতে মোটেই ভালো দখল ছিল না। পুরো সময়টায় একবারও তাকে ভদ্রমহিলার সাথে একটি কথাও বলতে দেখিনি। সেই ভিনদেশী ভদ্রমহিলা বারবার 'Why?', I want to know.' What we've done here?" ইত্যাদি বলে পুলিশ অফিসারের সাথে কথা বলার যথেষ্ট চেষ্টা করেছিলো, কিন্তু ওদিক থেকে কোনও সাড়া পাননি। অফিসার তার দিকে বলতে গেলে, তাকাচ্ছিলই না! আসলে মাত্র পাঁচশ' টাকা ঘুস অফার করাতে সেই পুলিশ অফিসার তখন ভিতরে ভিতরে রেগেমেগে একেবারে আগুন। কালো চেহারা দেখলাম, বিরক্তি ও অপমানে কেমন যেন লাল হয়ে উঠেছে! যাই হোক এভাবে বেশ কিছুটা সময় দুপক্ষের মৃদু বাদানুবাদে কেটে গেল। ভদ্রমহিলাও বোধহয় ততক্ষণে বুঝতে শুরু করেছিল পুলিশ অফিসারের গোসসার কারণ। কিন্তু পরবর্তীতে সেখানে ঠিক কী ঘটেছিল, তা জানা নেই আমার। আমি চলে এসেছিলাম সেখান থেকে। আরও দুজন পুলিশ সদস্য সেখানে পথচারীদের আর দাঁড়াতে দিচ্ছিল না। বারবার সবাইকে যার যার কাজে যাবার জন্য জোর ধমক দিচ্ছিলো। আমরা থাকাতে আসলে তাদের ড্রাইভারকে জনসম্মুখে খোলামেলাভাবে বলাও সম্ভব হচ্ছিল না যে, আরও কিছু পাঁচশ' টাকার নোট ছাড়তে হবে মামলা থেকে বাঁচতে চাইলে। তারপর আমি ঘটনাস্থল ত্যাগ করি। তবে সবকিছু অতো স্বচক্ষে দেখা লাগে না! অনেকটাই নিশ্চিত আমি যে, সেদিন গাড়িচালককে আড়ালে নিয়ে যেয়ে আরও কিছু টাকা দেবার জন্য বলা হয়েছিল পুলিশদের দিক থেকে। সেই ভিনদেশি ভদ্রমহিলাও নির্ঘাত পার্স খুলে আরও কিছু নোট বের করে সেদিন সেই পুলিশ সদস্যদের খুশী করেছিল। ব্যস শুভ যবনিকাপাত নাটকের। ও হ্যা আরেকটা কথা, ওখানে ওই উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তাসহ বাকি দুজন পুলিশের কারই সামান্য ইংরেজিও জানা ছিল না। যা বিস্ময়কর লেগেছিল; বিশেষ করে সেই পুলিশ কর্মকর্তার ইংরাজি না জানা! ভদ্রমহিলাকে তাদের কোনরকম সৌজন্যমূলক হাই হ্যালোও করতে দেখিনি সেখানে। যদিও সে বারবার কথা বলবার চেষ্টা করছিল। ব্যাপরটা নিয়ে অল্পস্বল্প হলেও কিছু আলোচনা করার জন্য খুব আগ্রহী ছিল সে। কিন্তু পুলিশ সদস্যদের এব্যাপারে মুখে যেন একেবারে কুলুপ আঁটা; "No English!"

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে আগস্ট, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৪০

চাঁদগাজী বলেছেন:


" পরবর্তীতে সেখানে ঠিক কী ঘটেছিল, তা আমার জানা নেই। আমি চলে এসেছিলাম সেখান থেকে। আরও দুজন পুলিশ সদস্য সেখানে পথচারীদের আর দাঁড়াতে দিচ্ছিল না। বারবার সবাইকে যারযার কাজে যাবার জন্য ধমক দিচ্ছিলো। আমরা থাকাতে আসলে তাদের ড্রাইভারকে জনসম্মুখে খোলামেলাভাবে বলাও সম্ভব হচ্ছিল না যে, আরও কিছু পাঁচশ' টাকার নোট ছাড়তে হবে মামলা থেকে বাঁচতে চাইলে। যাই হোক পরবর্তীতে সেখানে ঠিক কী ঘটেছিল, তা আমার জানা নেই। আমি চলে এসেছিলাম। "

-কয়বার লিখেছেন, "পরবর্তীতে সেখানে ঠিক কী ঘটেছিল, তা আমার জানা নেই। আমি চলে এসেছিলাম"?
দুর্বল লেখা

২৫ শে আগস্ট, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৫০

অর্ক বলেছেন: ঠিক করেছি। ধন্যবাদ চাঁদগাজী ভাই। বেশ বড়, প্রায় হাজার শব্দের লেখা। ঝটপট লিখে প্রকাশ করা, ভুলত্রুটি থেকে যায়, সংশোধন করি সাধ্যমতো। দুর্বল হলে হবে। কী আর করা! চেষ্টা করবে আগামীতে ভালো লেখার।

২৫ শে আগস্ট, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:২৭

অর্ক বলেছেন: আমি সমাজের অসঙ্গতি নিয়ে, হাস্যরস যুক্ত করে একটি স্যাটায়ার লিখতে চেয়েছি।

২| ২৫ শে আগস্ট, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:২৮

খন্দকার সানাউল ইসলাম তিতাস বলেছেন: ভাই চাঁদগাজী, বেশিরভাগ সময় আপনার যে কমেন্টগুলো চোখে পরে, আপনি শুধু লেখককেই ইনসাল্ট করেন। চালিয়ে যান!

২৫ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ৮:২৭

অর্ক বলেছেন: না, ঠিক আ্ছে, এখানে আপত্তিকর তেমন কিছু বলেননি। ধন্যবাদ।

৩| ২৫ শে আগস্ট, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩৩

নতুন বলেছেন: এখন মোবাইল আছে সবার হাতে...

এইরকমে ঘটনা ভিডিও করা উচিত এবং তা মিডিয়াতে আসলে যদি আমাদের প্রিয় পুলিশবাহিনীর হুস হয়।

২৫ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ৮:৩০

অর্ক বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে। পুলিশ ভিডিও করতে ধরে ফেললে তো পরিস্থিতি জটিল হয়ে যাবে!

৪| ২৫ শে আগস্ট, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫৪

হিমাংসু বিপ্লব বলেছেন: মিডিয়ার দৌর দেখেই আমি বিস্মিত হয়ে থো খায়ে আছি মিডিয়ার ষড়যন্ত্রে আপনার মুল কত টুক ?

২৫ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ৮:৩০

অর্ক বলেছেন: ধন্যবাদ ও শুভকামনা।

৫| ২৫ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ৮:৩৬

সুমন কর বলেছেন: প্রতিদিনের ঘটনা। X((

২৫ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ৯:৪৮

অর্ক বলেছেন: ধন্যবাদ ধন্যবাদ।

৬| ২৫ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ১০:০৪

নুর ইসলাম রফিক বলেছেন: মন্তব্য গেল কই?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.