নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

...

অর্ক

...

অর্ক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধারাবাহিক ভ্রমণ কাহিনীঃ যেমন দেখেছি মায়া নগরীকে

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ দুপুর ২:০৭

আমার তোলা মুম্বাইয়ের কিছু ছবি।














(পূর্ব প্রকাশের পর)

আমরাও পারি

মুম্বাইয়ে আমার প্রথম দিন। প্রায় তিন দিন কোলকাতা থেকে মুম্বাই মেইল'এ দীর্ঘ রেল ভ্রমণ শেষে মুম্বাই এসেছি কয়েক ঘন্টা আগে। সেটাই আমার প্রথম মায়া নগরী দর্শন। আমার নিজেরই তখন পু ঝিকঝিক অবস্থা! হা হা হা। এতো দীর্ঘ একটানা রেল ভ্রমণ এর আগে কোনওদিন করিনি। স্বাভাবিকভাবেই আমি তখন ভীষণ রকম ক্লান্ত ছিলাম। ট্রেনের সেই ঘোর তখনও বিদ্যমান। মাথা যেন টলছিল! অনেকটা ঘোরের মধ্যেই হাটছিলাম রাস্তায়।
তখন সকাল আনুমানিক ন'টা-সাড়ে ন'টা বেজে থাকবে। জায়গাটা হয়তো আন্ধেরি! হয়তো বলছি, কারণ মুম্বাইয়ে আমি অনেক জায়গায় গিয়েছিলাম, অসংখ্য সড়ক, হোটেল রেস্টুরেন্ট, রেল স্টেশন, প্লাটফর্মে আমার সময় অতিবাহিত হয়েছিল। প্রায় দিন পনের ছিলাম সেখানে। আমার কোনও নির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছিল না, বড্ড এলোমেলো বিরাট ও ব্যাপক মুম্বাই ভ্রমণ। তাই স্থানের নাম অনেক ক্ষেত্রেই আজ আমাকে অনুমান করতে হচ্ছে। এখানে যেমন বলছি আন্ধেরি, কিন্তু অন্য কোনও জায়গাও হতে পারে! মেট্রো, ট্রেন, বাসে চড়ে আমি মুম্বাইয়ের বহু জায়গায় গিয়েছিলাম। অনেক জায়গার নামধাম আজ আরা বিন্দুমাত্র মনে নেই, কেবল অনুমান করতে পারি! আমি মার্জনা চাইছি আমার এ অপারগতার জন্য। যাই হোক আনুমানিক সকাল ন'টা তখন। নির্জন পরিচ্ছন্ন একটি আবাসিক এলাকা, পরিপাটি সাজানো গোছানো সড়ক ও বহুতল আবাসিক ভবন। রাস্তার পাশে কৃষ্ণচূড়া গাছে লাল লাল কৃষ্ণচূড়া ফুটে আছে। আমি ধীর পা'য়ে হাঁটছিলাম সড়কে। হঠাৎ এক জায়গায় দেখলাম বেশকিছু মানুষ সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে। মোটামুটি বড়সড় একটি লাইন। রাস্তার পাশেই। শান্ত, সুশৃঙ্খলভাবে দাঁড়িয়ে আছে সবাই। এতো সকাল সকাল কীসের লাইন দিয়েছে মানুষগুলো! ভাবলাম। হয়তো ব্যাংক, ওরা হয়তো সরকারি কোনও বিলটিল প্রদান করতে এসেছে, কিংবা ডাকঘর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এরকম কিছু হয়ে থাকবে?
আমি সেদিকে যাচ্ছিলাম। নির্জন সড়কে হঠাৎ সেই সুনির্দিষ্ট স্থানে মানুষের এই বড়সড় ভিড় দেখে, ব্যাপারটা কি তা জানবার জন্য স্বভাবতই কৌতূহলী হয়ে উঠেছিলাম। হাঁটতে হাঁটতে আড়চোখে তাকিয়ে দেখছিলাম সারিবদ্ধ মানুষদের। এক পর্যায়ে তাদের কাছাকাছি চলে এলাম। আর কাছে আসা মাত্রই পুরো ব্যাপারটা পরিষ্কার বুঝতে পারলাম। আর বুঝতে পেরে আমার চোখ তখন একেবারে কপালে উঠে গেলো বিস্ময়ে! আসলে ওটা ছিল নিছকই একটি শৌচাগার। লোকজন প্রাকৃতিক কর্ম সারার জন্য আশ্চর্য রকম শান্ত, সুশৃঙ্খলভাবে লম্বা লাইন দিয়ে দাঁড়িয়েছিল সড়কের পাশে। দুজন তিনজন করে ভিতরে যাচ্ছে বেড়িয়ে আসছে, যাচ্ছে বেড়িয়ে আসছে। আরও নতুন নতুন মানুষ এসে দাঁড়াচ্ছে লাইনে। অভিভূত হয়ে পড়লাম! যারা লাইনে ছিল, তাদের অনেকেই ছিল অফিসগামী, হাতে কাগজপত্রের ফাইল, ব্যাগ, বেশভূষা পরিপাটি। অন্যান্য শ্রেণি পেষার লোকজনও ছিল। সবাই তখন সেখানে সেই আবাসিক এলাকার নির্জন সড়কে সুশৃঙ্খলভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে শৌচাগার ব্যবহার করছিল। দারুণ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন চারপাশ, কোথাও একটা পরিত্যক্ত কাগজের টুকরো পর্যন্ত পরে নেই!
আমার তখন আমার নিজের দেশের কথা মনে পড়ে গেলো। এখানে হলে দেখা যেতো রাস্তার পাশে খোলা ড্রেন, পরিত্যক্ত দেয়াল টেয়াল ইত্যাদি কোনও না কোনও জায়গাতে ঠিক ঠিক মানুষজন নিজেরাই নিজেদের মতো এ কর্ম সারার অসাধু ব্যবস্থা করে নিয়েছে! যদি অমন কোনও শৌচাগারের ব্যবস্থা থেকেও থাকতো, তারপরও দেখা যেতো তারা ওটার যথাযথ ব্যবহার না করে, বিকল্প অসাধু পন্থা অবলম্বন করছে। এতো সময় নিয়ে, এমন সুশৃঙ্খলভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করার মতো মন মানসিকতা আজও গড়ে ওঠেনি আমাদের দেশের মানুষদের। ব্যাপারটা সত্যি দুঃখজনক ও দুর্ভাগ্যজনকও। এসব ব্যাপারে আমরা মুম্বাইয়ের মানুষদের থেকে বেশ পিছিয়ে আছি। আমাদের মন মানসিকতা আজও ওদের মতো সভ্য ও আধুনিক হয়ে ওঠেনি।
দারুণ চমৎকৃত হয়েছিলাম সেদিন দৃশ্যটা দেখে। হয়তো বলে সেভাবে বোঝাতে পারছি না আর হয়তো বেশ খেলোও শোনাচ্ছে! কিন্তু বাংলাদেশ থেকে কেউ সেখানে যেয়ে, নিজের দেশের সাথে ওই ঘটনার তুলনা করলে, নিঃসন্দেহে আমার মতোই বিস্মিত ও অভিভূত হবে। ওই একটি ঘটনাই কেবল নয়, পরবর্তীতেও দেখেছি মুম্বাইয়ের মানুষ এপার বাংলা কিংবা ওপার বাংলা, দুই বাংলার মানুষদের থেকে যে কোনও বিচারেই অনেক সভ্য ও সুশৃঙ্খল। ওখানকার লোকাল ট্রেনের দ্বিতীয় শ্রেণির সাধারণ যাত্রীদের শৃঙ্খলাবদ্ধতা, কর্তব্যপরায়ণতাও আমাকে ভীষণ মুগ্ধ করেছে। ওদের কাছ থেকে আসলে আমাদের অনেককিছু শেখার আছে। সেদিন রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ভাবছিলাম, আমরা সবাই যদি সবসময় সরকার রাষ্ট্র প্রশাসন এসবের মুখাপেক্ষী না থেকে, নিজেরাই যদি কিছু ছোট ছোট ভালো অভ্যাস গড়ে তুলতে পারি, তাহলেই আমরা আমাদের এই শহর সমাজ ও রাষ্ট্রকে ছোটবড় নানান সমস্যা থেকে মুক্ত করতে পারি। আর কিছু না হোক, অন্তত সকলের সম্মিলিত আন্তরিক প্রচেষ্টায় আমাদের প্রিয় শহরটিকে, আমরা নিদেনপক্ষে আরও সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন করে তুলতে পারি। যেভাবে মুম্বাইয়ের সাধারণ মানুষ করেছে। এর জন্য শুধু আপামর মানুষের স্বদিচ্ছা ও সচেতনতা দরকার। মোটেও কঠিন কিছু নয়। কথাটা এপার বাংলা ওপার বাংলা, দুই বাংলার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। চাইলে আমরাও পারি!
(চলবে)

মন্তব্য ২২ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (২২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ দুপুর ২:৪৯

মোহাম্মদ মজিবর রহমান বলেছেন: কলকাতা থেকে মুম্বাই যাবার সবচেয়ে ভাল ট্রেন হল দুরন্ত বা গীতান্জলি।মুম্বাই মেল সম্ভবত ৩৬ ঘন্টা সময় নেয়।মুম্বাই ভারতের নানা জাতির মিলন মেলা।সেখানে আগত বাহিরের লোকজন মানে নন মারাঠিরা একটু আতংকেই থাকে কারন সেটা বাল ঠেক্রের দেশ।সারা মহারাষ্ট্রে দেখেছি গ্রামের নারী-পুরুষ রাস্তা-ঘাটেই শৌচকর্ম সেরে নেয়।অবশ্য এখন কিছু কিছু মারাঠি সভ্য হচ্ছে।তারপরও ভারতের অন্যান্য জাতি থেকে মারাঠিরা একটু সভ্য।

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:২২

অর্ক বলেছেন: আমাদের উচিৎ নিজের চর্কায় তেল দেয়া। আমরা নিজেরা কতোটা সভ্য হলাম তা নিয়ে মথা ঘামানো দরকার সবার! মুম্বাইয়ের মানুষদের থেকে একশত বছর পিছনে পড়ে আছি আমরা! যারা সভ্য, তারা সবখানেই সভ্য, গ্রাম শহরের কোনও ব্যাপার নেই এখানে। নির্ঘাত শহরের অনেক সুযোগ সুবিধা গ্রামে নেই। সেরকম পরিস্থিতিতে আমরাও বাধ্য হবো অনেককিছু অনিচ্ছাসত্ত্বেও মানিয়ে নিতে।
ধন্যবাদ।

২| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৩:১২

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: মায়ানগরী ভালো লিখেছেন ।+

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:২২

অর্ক বলেছেন: ধন্যবাদ।

৩| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৩:৩১

রাজীব নুর বলেছেন: ছবি এবং লেখা খুব ভালো লাগলো।

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:২২

অর্ক বলেছেন: খুব ধন্যবাদ।

৪| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:৫৬

তারেক ফাহিম বলেছেন: ভালো লিখেছেন

ছবিগুলোও দেখতে সুন্দর

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:২৪

অর্ক বলেছেন: সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ। ভালো কাটুক আপনার আগামী দিনগুলো। শুভকামনা সবসময়।

৫| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:১৬

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: ছবিগুলো অসাধারণ। ধারা বর্ণনা ভালো লেগেছে।

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:০৫

অর্ক বলেছেন: ধারা বর্ণনা! খেলা চলছে নাকি!
ধনবাদ।

৬| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১:১০

কাতিআশা বলেছেন: দারুন ফোটোগ্রাফি!..ভালো লাগলো!

২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ৯:৩২

অর্ক বলেছেন: ভালো।

৭| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ২:৪৮

ফেরদৌসা রুহী বলেছেন: ছবিগুলো ভালো লেগেছে।

২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ৯:৫৪

অর্ক বলেছেন: বলেছেন: আচ্ছা এটা তো একটা ভ্রমণ কাহিনী ব্লগ নাকি! মোটামুটি পোস্টে ৪০০-৫০০ শব্দ যেমন আছে, তেমনি শিরোনামেও পরিষ্কার লেখা আছে, ধারাবাহিক ভ্রমণ কাহিনীঃ যেমন দেখেছি মায়া নগরীকে ' লেখা ভালো না লাগলে না হয় মন্তব্য করা করা থেকেই বিরত থাকলেন! এটা তো একেবারে সাধারণ একটি সৌজন্যতা!!!

আপনাকে আমি একজন শিক্ষিত রুচিশীল সৃজনশীল ব্লগার হিসেবে জানি ব্লগে। তারপরও বলতে বাধ্য হচ্ছি যে, দয়া করে আগামীতে আমার কোনও লেখা না পড়ে কখনও মন্তব্য করবেন না! আমার পোস্ট মন্তব্য শূন্য পরে থাক, তাও ভালো, তবু এ ধরণের মন্তব্য চাই না।

শুভকামনা।

৮| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:০৬

হাতুরে গোয়েন্দা বলেছেন: ছবি গুলো ভাল তোলেছেন

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:০৯

অর্ক বলেছেন: ধন্য হলাম।

৯| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:১৭

ইমরান আশফাক বলেছেন: আগের পর্বগুলির লিন্কগুলি দিলে আমাদের অনেক সুবিধা হয়।

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:১১

অর্ক বলেছেন: ধন্যবাদ। ওগুলো পেতে আর্কাইভ ঘাটতে হবে আমাকেও। দেখি পরের কোনও লেখায়। যদি লিখি!

১০| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৩৬

আরজু পনি বলেছেন: কোথাও ঘুরতে গেলে জায়গার নামগুলো আমি মেসেজে বা মোবাইলের নোটে পর্যায়ক্রমে লিখে রাখি। এতে বর্ণনা করতে সুবিধে হয়। যদিও সেভাবে ভ্রমণ কাহিনি সাধারণত লিখা হয় না।
তবে আপনার ফটোগ্রাফির সাবজেক্ট পছন্দ হয়েছে আমার। আর এডিটিংটাও।
পাবলিক টয়লেট নিয়ে লিখেছিলাম কখনো এই ব্লগেই
আপনার চিন্তা ভাবনায় সাধুবাদ রইলো, অর্ক।
শুভকামনা রইলো।

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:০৫

অর্ক বলেছেন: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আপনার কথাগুলো আমার জন্য রীতিমতো সুপরামর্শ। নিঃসন্দেহে আগামীতে এরকম কোনও ভ্রমণে জায়গার নাম ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংরক্ষণ করবো। আসলে আমি তখন ভাবিনি, এসব নিয়ে কখনও লেখার উপলক্ষ্য ঘটবে। তখন ব্লগিংয়ে সক্রিয় ছিলাম না! আপনার গঠনমূলক মন্তব্যেও ভরপুর সাধুবাদ রইলো।
ভালো থাকবেন।

শুভকামনা।

১১| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:৫০

অলওয়েজ ড্রিম বলেছেন: আপনার ভ্রমণ কাহিনী আমার ভাল লাগে নাই। আর সবচেয়ে খারাপ লেগেছে ফেরদৌসা রুহীকে দেওয়া আপনার প্রতিমন্তব্য। বুঝতেই পারলাম না ছবির প্রশংসা করে তিনি কী অন্যায় করেছেন।

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:০৭

অর্ক বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.