নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি হেরে যাওয়া বিভ্রান্ত পথিক,হাঁটছি অজানা দিগন্তে পথ হারিয়ে দিক-বেদিক॥॥

অর্নব কাঠের মানুষ

আমার নিজেস্ব কোন পরিচয় নেই, সহজাতই আমি মানুষের ফ্রেমে বন্দী এক অজ্ঞাতনামা✔

অর্নব কাঠের মানুষ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোট গল্প

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৪২

অমিমাংসিত রহস্য
………অর্নব(কাঠের মানুষ)
.
নিস্তব্ধ রাত, একটা তারা নিভু নিভু করছে। হয়তো আর কিছুক্ষণ পরেই ব্লাক হোল তাকে গিলে খাবে। তারপর আবার আগের মতোই সব নিয়মমাফিক। কেউ তারার এই হিসেব রাখে না। লক্ষ লক্ষ তারার মাঝে একটি হারিয়ে গেলে কারোও কোন ক্ষতি হবে না। শুধু কিছু উৎসুক চোখ দেখে আনন্দ পাবে। তাছাড়া আর কিইবা করার থাকে? একটু সমবেদনা প্রকাশ করা যায়? নয়তো দু-ফোঁটা অশ্রু? এরইবা সময় কোথায়? সবাই সবার কাজে ব্যস্ত। শুধু হাতেগুনা কিছু নৈশ-পাখি আছে যারা হাজারো ব্যস্ততা ভুলে একটু সময় দেয় রাত-কে, একাটু নিঃসঙ্গ চাঁদকে। সৌপ্তিক তাদের একজন যে নিঃসঙ্গ চাঁদের সাথে কাঁদে, তারার মৃত্যু হলে শোকে মিনিট কয়েক নিরবতা পালন করে। বৃষ্টির দিনে নিজেকে আড়াল করে দু-ফোঁটা অশ্রুও ফেলে।
.
অদূরে কতেক ঝিঁঝিপোকা প্রাণ খুলে কান্না করছে। এভাবে কান্না করার মানে কি? আজই কি তাদের মৃত্যু হবে? তাদের কি আর ভোরের আলো দেখা হবে না? মাঝেমধ্যে দুএকটি নিশাচর বাদুড় সেই কান্নার ব্যাঘাত ঘটিয়ে সাইক্লোনের বেগে ছুটে যায় উদ্দেশ্যহীনভাবে। তারপর আবার ক্ষণিক নিরবতা, এ এক চক্র খেলা। এই চক্রের কেন্দ্র কোথায়? পরম সৃষ্টিকর্তাই কি কেন্দ্রবিন্দু? সৌপ্তিক তারা গুনছে সে সব ভুলে। এইসব আধ্যাত্মিক ভাবনা ভাবার ক্ষমতা তার নেই। তার চিন্তা চেতনা জুড়ে এখন একটাই ভাবনা-আজ কি কোন তারা মৃত্যুবরণ করেছে? একশ এক, দুই, তিন…… নাহ, সন্ধ্যা তারাটি বোধহয় আজ ঘুমিয়ে পরেছে। এই একটি তারাই রাত জাগতে পারে না। ওর সাথে কতকথা জমে আছে, বলবো বলবো বলে এখনো বলা হয়ে উঠেনি। আজ বলার খুব ইচ্ছে ছিলো। চাঁদকে বলা যায়? নাহ, চাঁদ অন্যকে বলে দেবে। আজ নাহয় থাক, অন্য একদিন বলা যাবে।
.
সৌপ্তিক, জীর্ণশীর্ণ ম্লানমুখো রোগা যুবক। সোনালি ফ্রেমের চশমার আড়ালে গভীর কালো উৎসুক চোখ, কোঁকড়ানো চুলে হালকা তেল দেয়ায় চিকচিক করে, শুভ্রমেঘের মতো মায়াময় মুখাবয়ব। তবে এখন চোখের নিচে কালি পরতে শুরু করেছে। অতিরিক্ত রাত জাগার ফসল বইকি! ছাদের সার্সিতে বসে রাতের পর রাত জেগে শুকতারা দেখা তার রীতিমতো অভ্যাসে রূপ নিয়েছে। আজও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।
-আপনি কি রোজ চাঁদ দেখেন?
সৌপ্তিক ভয় পেয়ে যায়, এতো রাতে কে হতে পারে? নিশ্চই ইরিন টা হবে! এই বদ উল্লু'টার ভাই যেখানে যাবে সেখানেই যেতে হবে। তাই বলে এতো রাতে? সৌপ্তিক কৌতুহলী চোখে পিছনে ঘুরে তাকায়।
-কে?
সৌপ্তিক অবাক হয়ে যায়। এই মেয়েকে সে আগে কখনোই দেখেনি। হঠাৎ কোথা থেকে উদয় হলো?
-উত্তর আগে দেন, তারপর বলছি!!
কি অদ্ভুত মেয়েরে বাবা!!
-কি যেনো জিজ্ঞাসা করেছিলেন? ভুলে গেছি
-মনে করুন তাড়াতাড়ি
-কেনো বিরক্ত করছেন? আমি উত্তর দিতে বাধ্য নই। যান তো এখন…
-উত্তর পেলেই যাবো
-নইলে কি যাবেন না?
-নাহ…
-আগে আপনি উত্তরটা দেন, তারপর আমি দেবো
-কেনো?
-পরেই বলি?
-আমি শুভ্রা, এখন বলেন
-চোখ বন্ধ করুন, তারপর বলবো
-কেনো?
-করেই দেখেন
-আচ্ছা করলাম…
সৌপ্তিক পা টিপে টিপে নিচে নেমে যায়, ওর ঘরে। সব কৌতুহলই পূর্ণতা পাবার না। মেয়েটি কি যেনো নাম, শুভা না শুভ্রা? তারও না হয় কিছু কৌতুহল জমা থাকুক। বাতাসে বাতাসে মিশে যাবে অনুসন্ধানী চোখের নেশা। আবার একসময় সব আগের মতোই নিয়মমাফিক… এটাও এক চক্র। এর কেন্দ্রবিন্দুও কি এক? একি কেন্দ্রে দুটি আলাদা বৃত্ত? মেয়েটি একসময় সব ভুলে যাবে, প্রকৃতিই তাকে সব ভুলিয়ে দেবে। বড়'ই অদ্ভুত…
.
উত্তর দিকের শীতল বাতাস ছুঁয়ে যাচ্ছে কানের এপিঠ-ওপিঠ। মেঘলা আকাশ, বৃষ্টি হয়েছে সারাদিন। আবার নামবে বলেই মনে হচ্ছে। সাতদিন খোলা আকাশের নিচে আসা হয়নি। আজ সব নতুন নতুন লাগছে। তারারা কি অভিমান করলো শেষে? আজ একটি তারাও দেখা যাচ্ছে না। চাঁদটাও লুকিয়ে আছে। ছাদের কোণায় সোডিয়াম আলো ছাড়া অন্য কোন আলোর উৎস আজ নেই। মনটা খারাপ হয়ে গেলো সৌপ্তিকের। নিচে নেমে যাবে, পিছু ফিরেই মেয়েটি কি যেনো নাম… শু…শুভা? হয়তো! শুভাকে দেখে অবাক হয়ে যায়। সামান্য ভয়ও পেয়ে যায় বটে
-আরে শুভা?
-আমার নাম শুভ্রা!!
কথায় কাঠিন্য; রাগের ছাপ স্পষ্ট
-ও আচ্ছা, ভুল হয়ে গেলো
-সেদিন আমাকে ধপ দিয়ে বোকা বানালেন, আবার না বলেই চলেও গেলেন কেনো?
-পরে বলি? আগে আপনি বলেন কোথায় থাকেন?
-আজও? আগে আপনি বলেন। আর আজ আবার বোকা বানাতে পারবেন না আমাকে!!
মেয়েটিকে সোডিয়াম আলোয় বেশ সুন্দর লাগছে। থুতনির বাম পাশের তিলটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে সেই মৃদু আলোয়। লম্বা নাক, গল্প-উপন্যাসের নাইকাদের রূপ যেমনটি হয়, তেমন। কপালে ছোট্ট একটি টিপও পরেছে। রংটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না সেই মৃদু সোডিয়াম আলোতে। মুগ্ধ হয়ে চেয়ে থাকার মতোই রূপ মেয়েটির। আগের বার চোখে পরে নি কেনো?
-কি হলো?
-কৈ! কিছু না তো…
-হুম… এই সাত দিন এলেন না কেনো?
-কেন্দ্রবিন্দু খুঁজতে ব্যাস্ত ছিলাম!!
-মানে?
-বুঝবেন না
-আচ্ছা শুনুন, আপনি তুমি করেই বলতে পারেন!! ছোট'ই হবো…
-আচ্ছা.… মৃদু হাসে সৌপ্তিক
-আমি?
-আপনি কি?
-আবার? তুমি করেই বলতে বলেছি, আমি বলবো না?
-ও আচ্ছা বলতে পারো…
-ওহহো.. নামটাই তো জানা হলো না
-শুভা তুমি আমাকে চেনো, আমার সব তোমার জানা আছে, তবুও কেনো অভিনয় করছো?
-কই? নাতো!! আমি তোমাকে কিভাবে চিনবো? আর আমার নাম শুভা না, শুভ্রা…
-ঐ একই…। ইরিনের কাছ থেকে সব জেনে নাও নি?
-ও আপনাকে বলেছে?
-না, মেয়েরা অপরিচিতের সাথে সেধে কথা বলে না।
-হুম… নামটা রহস্যময়ী তবে!!
-তাই? কি রহস্য খুঁজে পেলে?
-সপ্তম কিছু…?
-মানে জানতে চাও?
-হুম
-তাহলে ঐ যে খুব ছোট্ট তারা দেখা যায় ঐ তারার দিকে আগে তাকাও…
-কেনো?
-ঐ তারার মাঝে যে রহস্য আছে আমার নামেও সেই রহস্য আছে তাই
মেয়েটির অনুসন্ধানী চোখ শূন্য আকাশে তারা খোঁজায় ব্যাস্ত…
-কোথায়, দেখতে তো পাচ্ছি না? কি হলো? সৌপ্তিক……
সৌপ্তিক ততক্ষণে চলে গেছে। মেয়েটি আজও বোকা হলো; বৃষ্টিধোয়া আকাশে তারা দেখা যায় কি? কিছু রহস্য মেয়েটির মাথায় ঢুকে গেছে। কিছুদিন সেই রহস্যের পিছু ছুটবে মেয়েটি, ছেলেটি এমন কেনো? নামটি এমন রাখা হলো কেনো? একসময় রহস্য উন্মোচন করতে না পারায় মন হার মেনে সব ভুলে যাবে। তারপর আবার নিয়মমাফিক চলবে সবি। এটাও কি একটা চক্র? এরও কি কেন্দ্রবিন্দু আছে? একি হতে পারে?
.
সৌপ্তিক চেয়ারে বসে নিঃসঙ্গ চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটিও কি আজ ছাদে বসে চাঁদ দেখছে? একলা চাঁদের পাশেই সন্ধ্যাতারা… আর কিছুক্ষণ পরেই চলে যাবে। নিভু নিভু করছে এখন।
এই ছাদে তেমন জোৎস্না পরে নাহ… চারিদিক বিশাল বিশাল গাছে ঘেরা। আগের বাড়ি পাল্টে নতুন বাড়ি নিয়েছে। কারণ মেয়েটির প্রতি সৌপ্তিক মায়ায় জড়িয়ে যাচ্ছিলো। মেয়েটিও তার জন্যও হয়তো… মায়া খুবই খারাপ জিনিস।
মেয়েটি হয়তো প্রতি রাতেই সৌপ্তিকের জন্য অপেক্ষা করবে নয়তো খোঁজ নিয়ে জেনে যাবে, সৌপ্তিক বাড়ি বদলে ফেলেছে। হয়তো ক্ষণিকের মন খারাপও হবে মেয়েটির। তাই কিছুরাত সৌপ্তিকের মতো জেগে তারা দেখবে! তারপর আবার ঠিক হয়ে যাবে সব। একটাও কি চক্রবর্তী প্রক্রিয়া? এর কেন্দ্রবিন্দু নিশ্চই রহস্য? প্রকৃতির এই রহস্য সমাধান করা কঠিন।
.
মেয়েটি সৌপ্তিক যেখানে বসে তারার দিকে একনজরে তাকিয়ে থাকতো, ঠকি সেখানে বসেই তারা দেখছে। একটি তারা নিভু নিভু করছে। হয়তো কিছুক্ষণ পরেই ব্লাক হোলে পরে যাবে। মেয়েটির মন খারাপ হয়ে গেলো; একটি তারা হারিয়ে যাবে? অথচ অন্য তারাগুলোর কোন বিকার নেই? তারা'রা কি ভালবাসতে পারে না? নাকি তাদের মন নামের কোমলমতি প্রজাপতিটা নেই? সৌপ্তিক থাকলে ভালো হতো… দুজনে শোক সময় পালন করতাম। ছেলেটি এমন কেনো? আচ্ছা সৌপ্তিক নাম রাখার কারণটা জানা হলো না। কি হতে পারে? সপ্তম কোন কিছু… নাহ!! ওর জন্ম কি সাত তারিখে? আচ্ছা ও তারা দেখতো কেনো? রাত জেগে তারা দেখার মানে কি?
কিছু রহস্য সমাধান না হয়ে গভীর থেকে গভীরে চলে যায়। কেউ কেউ রহস্যের বীজ বপন করে, আর কেউ কেউ সেই রহস্য ভেদ করে। তবুও কিছু রহস্য ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। এই রহস্যগুলোও নাহয় ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকুক। কিছু অজানা রহস্যের মাঝেও অমৃতের অতৃপ্ত-স্বাদ থাকে। শুভ্রা সেই স্বাদ পাবে সেটা দোষের কি? আচ্ছা সত্যিই'তো… সেই চক্রবর্তী প্রক্রিয়ার কেন্দ্রবিন্দু কোথায়? ভালবাসা? নাকি ঐশ্বরিক কোন শক্তি? নাহ…এই রহস্য নিয়ে ভাবানার আমাদের সময় নেই। আমরা আমাদের কাজে ব্যস্ত। কিছু না হয় অজানাই থাক, কিছু অমিমাংসিত…

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:১৪

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: ভালোই| প্রকৃতির অতিরিক্ত বর্ণনা বিরক্তির সৃষ্টি করছিল

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.