![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বিছানায় শুয়ে,টেবিলে বা মেঝেতে বসে,ডায়েরীতে যেটা লেখেন, সেটা নিজের জন্য ইচ্ছেমত লেখা। যখনই অন্যকে দেখাতে যাবেন,সেটা অন্যের জন্য লেখা, যেক্ষেত্রে অন্যের রুচিটাকে প্রাধান্য দিতে হয়।
১.
-নিশ্চয়ই পারবো । বাজি লাগবি?
- অবশ্যই। দু হাজার পাবি। হবে?
- মাত্র এটুকু? এই সামান্যের জন্য এতবড় রিস্ক নেওয়ার ইচ্ছে নেই।
- কত চাস বল।
- দশ হাজার।
- বেশী ডিমান্ড করেছিস। তবে যদি আরেকটা কাজ করিস,দেবো।
- কি সেটা?
- দশ প্যাকেট বেনসন ওখানে বসেই শেষ করবি।
- কেন? আবার এটা কেন?
- এটা আমার এক্সপেরিমেন্ট, আগে তোকে দিয়ে একটা ট্রায়াল দিতে হবে। এটুকুই।
- অসম্ভব। আমার বাবা মুয়াজ্জিন। জানাজানি হলে ইব্রাহিম (আ : ) এর মতো আমাকেও কুরবানী দিয়ে দেবে।
তানিম একটা সিগারেট ধরালো। দুটো টান দিয়ে ঠান্ডা গলায় বললো -
কল্পনা করে দেখ- ভরা পূর্ণিমা। চারিদিকে আলোর বন্যা, থইথই জ্যোৎস্না। এই পরিবেশে তুই সাতটা আগরবাতি জ্বালিয়ে গোরস্থানে বসে আছিস। সারারাত আগরবাতি জ্বলবে। জ্বিন বলে যদি কোনো বস্তু সত্যিই থাকে, তারা ব্যপারটাকে খেয়াল করবে। এই সময় সিগারেট জ্বালালে নিশ্বয়ই তারা একটা প্রতিক্রিয়া দেখাবে, কি বলিস?
- এটা কি তোর অরিজিনাল আইডিয়া?
- নিশ্চয়ই। এবং এটা আমি প্রয়োগ করবো। আগে তুই, তারপর আমি।
- মাফ করে দে ভাই। আমি ভীতু। অন্য কাউকে বলে দেখ।
- অপূর্ব সুযোগ হাতছাড়া করলি। যাহোক, ভেবে দেখিস।
২.
মাথার মধ্যে ব্যপারটা ঘুরপাক খাচ্ছে। টাকাটা খুবই দরকার। দিনে ১ বেলা খেয়ে পার করছি। হেন তেন শতেক ভেবে শেষে বিরক্ত হয়ে পরলাম। ভয় স্বত্বেও লোভে পরে বাজিটা নিলাম।
- হ্যালো তানিম?
- জানতাম তুই ফোন করবি, শোন একটা পরামর্শ দেই কাজটা করে ফেল।
- টাকা নিয়ে চিন্তা করিসনা। প্রস্ততি নিয়ে রাখ, আগরবাতি বেনসন সব খরচ আমার। তুই শুধু তৈরী থাক, ওকে?
জবাব না শুনেই ফোন কেটে দিলো, দুই মিনিট পর বিক্যাশ এ দশ হাজার পাঁচশ টাকা পেলাম। ব্যাটা কি জোর করেই পাঠাচ্ছে?
৩.
- আসেফ, বৃহস্পতিবার রাতে ফ্রি আছিস?
- না, আমি প্রতিদিন রাতে অত্যন্ত ব্যস্ত থাকি। খুবই গুরত্বপূর্ণ কাজে সময় দেই।
- কি কাজ?
- ঘুমাই।
- রসিকতা করিস না।
- আমি সিরিয়াস।
- তোর দরকার টা কি?
- না, মানে বলছিলাম, বৃহস্পতিবার রাতে একটু বাইরে ঘুরতাম, চা টা খেতাম, সারারাত ঘুরে ভোরে হেভী খাওয়াদাওয়া করে ঘুম।
- প্রশ্নই আসেনা। তোর পাগলামি টা সারেনি দেখছি। সাইকিয়াট্রিস্ট দেখা।
- এক হাজার পাবি, ভেবে দেখ।
আসেফের চোখ চকচক করছে। মুখ হাসি হাসি।
- সব খরচ কিন্ত তোর।
- অবশ্যই।
- ঠিক আছে, কোথায় ঘুরবি?
- গোরস্থান।
- সে কি! এতো অদ্ভুত চিন্তা! খুবই এক্সাইটিং। তাছাড়া সারা রাত হাঁটা সম্ভব না। রেস্ট নেওয়ার জন্য গোরস্থানই বেস্ট পসিবল প্লেস। কোন গোরস্থানে যাবি?
- সেটাতো জানিনা।
- আচ্ছা দেখি। গোদাগাড়িতে বিশাল গোরস্থান আছে বলে শুনেছি। অনিকের বাসা গোদাগাড়িতে। ওকে বলে ম্যানেজ করছি।
যাহোক একজন সঙ্গী পাওয়া গেলো। এক হাজার খসে গেলো এতে একটু কস্ট হচ্ছে। তবুও ছেলেটা সঙ্গে থাকুক। নির্জন জায়গা, নিশুতি রাত। জ্বিন ভূতের আছর না পড়লেও ছিনতাইকারীর কবলে পরার সম্ভাবনা আছে। পুলিশের হাতে পড়লে তো কথাই নেই। তাছাড়া গোরস্থানের এলাকা, গোদাগাড়ির লোকাল ছেলে অনিক কে তো আসেফই ম্যানেজ করলো। থাকুক , ও সঙ্গে থাকুক।
৪.
কাল রাতে যাবো, এই চিন্তাই আজকেই ঘুম আসছে না। শুয়ে শুয়ে রবীন্দ্রনাথের ক্ষুধিত পাষাণ এর পাতা উল্টাচ্ছি।
- এই তুষার, ওঠ।
ঝাকুনি দিয়ে আসেফ ঘুম ভাঙিয়ে দিলো।
- তোর জন্য এতো কিছু ম্যানেজ করলাম আর তুই অসময়ে বেঘোরে ঘুমাচ্ছিস?
ঘুম ঘুম চোখে তাকালাম।
- চল রাতের খাবার খেয়ে নেই। তারপর রওনা হওয়া যাবে গোদাগাড়ির গোরস্থানে।
- চল যাই।
- পাঞ্জাবি পরে ফেল। এতে সুবিধা হবে। কখন কোন সিচুয়েশন হয় বলা তো যায় না। কেউ জিজ্ঞেস করলে বলবি মামার কবর জিয়ারত করতে এসেছি।
ছেলেটা তো আসলেই চটপটে। এতোদিন ওর সাথে থেকেও আমার হাবাগোবা ভাবটা গেলো না। এটাই দুঃখ।
৫.
গোরস্থান এর শেষ প্রান্তে একটা কোণায় বসে আছি। চারদিকে সাতটা আগরবাতি জ্বলছে। বিকট গন্ধ, একদিক দিয়ে ভালোই, সিগারেট খেলেও গন্ধ আড়াল থাকবে।
গোরস্থানের আকার আসলেই বিকট। যতদূর চোখ যায় গাছ আর কবর। গোদাগাড়ির লোকাল ছেলে অনিক, গোরস্থানের পেছনের রাস্তা দিয়ে আমাদের ঢুকিয়ে দিয়েই হাওয়া হয়ে গেছে।
শুধু এটুকু বলেছে, সমস্যা হলে ফোন দিস।
চাঁদটা এক্কেবারে মাথার ওপর। সে আলো ছড়াচ্ছে প্রচণ্ডভাবেই, কিন্ত প্রকাণ্ড গাছদের ছায়ায় তৈরী অন্ধকারের সাথে সে পেরে উঠছে না। আলো আঁধারি খেলা চলছে। আসেফের মুখটাও পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছেনা।
- কিরে, সিগারেট লাগাবি? গা টা ছমছম করছে।
- তোর তো সিগারেটের অভ্যাস নেই।
- তবুও একটা দে। সামান্য নিকোটিন দরকার।
সিগারেট দিলাম একটা। লাইটার জ্বালানোর সঙ্গে সঙ্গে হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেলো। ঘটনার আকস্মিকতায় আমি অভিভূত। আসেফের হাত থেকে সিগারেট ও লাইটার দুটোই পরে গেছে। ও এখন স্ট্যাচু। একটু পর নিজেকে সামলে নিতেই বুঝলাম ব্যপারটা আসলে কিছুই না, দূর থেকে সমবেত আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। সম্ভবত কলেমা পড়ছে। অনেক দূর থেকে পায়জামা পাঞ্জাবী পরা একদল মানুষকে আবছাভাবে আসতে দেখা যাচ্ছে। আসেফের মুখ ভয়ে সাদা। সে বিড়বিড় করে দোয়া ইউনুস পড়তে লাগলো।
- দোস্ত, ওরা কারা আসছে?
- হয়তো মুর্দা দাফন করতে এসেছে একদল লোক।
- ওরা আস্তে আস্তে লম্বা হচ্ছে কেন?
- দূর থেকে কাছে আসছে এজন্যেই মনে হচ্ছে এমনটা।
- এতো রাতে মুর্দা দাফন করতে আসছে কেন?
- এতো রাতে দাফন করা কি হারাম? ঘাবড়াস না। চল। জানাজার নামাজ পড়ে ফেলি।
নামাজ শেষে পাশের মসজিদে ছোট্ট মিলাদ মাহফিল হয়ে গেলো। খিচুড়ি-মাংস। দারুণ হয়েছে, জীবনে খাওয়া সেরা বস্তু। খাওয়া শেষে আসেফকে বললাম, দোস্ত, একটু বিশ্রাম দরকার। সেও বললো তাহলে শুয়ে পর, মসজিদে শুলে সমস্যা নেই। তাবলীগ জামাতে মুসল্লীরা মসজিদেই শোয়।
৬.
ফোনের প্রচণ্ড চিৎকারে ঘুম ভাঙলো। তানিমের গলা।
- কিরে কি করছিস? গলা শুনে মনে হচ্ছে ঘুমোচ্ছিলি। যাহোক, আমি আসছি। আজ সারাদিন তোর সাথে কাটাবো। সরি ভুল বললাম, সারাদিন ও সারারাত। কারণ একটাই – চেঞ্জ অফ প্ল্যান। তুই ঠিকঠাক মতো কাজ করছিস কিনা এটা লক্ষ্য রাখা দরকার। তাছাড়া এমন অদ্ভুত উত্তেজনাময় ঘটনা থেকে নিজেকে বঞ্চিত করাটাও হবে মহা মূর্খামী।
২| ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ৯:৫৯
তারেক ফাহিম বলেছেন: কাভা ভাইয়ের পোস্টের লিংক ধরে আসা।
পড়লাম, ভয়তো পাইনি।
অন্য কোন দিন প্ল্যান করেন, আমিও ভুত দেখবো।
©somewhere in net ltd.
১|
০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১১:৪৫
যায়েদ আল হাসান বলেছেন: শুধুই আভাস মিলেছে লেখাটায়। কল্পনার সুযোগটা পাঠকের প্রাপ্য। কৃতিত্বের ভাগটাও।