নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Green_Bird of Jannah

“Surely in remembrance of Allah do hearts find rest\" [Al Quran-13:28]

আশালিনা আকীফাহ্‌

“The worldly comforts are not for me. I am like a traveler, who takes rest under a tree in the shade and then goes on his way.” –[Tirmidhi]

আশালিনা আকীফাহ্‌ › বিস্তারিত পোস্টঃ

"কখনও ঝরে যেও না ..." তারেক মেহান্না'র লেখা থেকে নেয়া

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:২৪

তারেক মেহান্না লিখিত Never Shed Your Leaves থেকে নেয়া এই লেখাটি পড়লে বুঝা যায় মহান আল্লাহ পাক তাকে কত সুন্দর দ্বীনের understanding দিয়েছেন। ইসলামের সাথে খুব স্বল্প সংখ্যক মানুষই পারে বাস্তবতাকে relate করে তুলতে, তারিক মেহান্না তাদের একজন। মহান আল্লাহ্‌ পাক আমাদের সকলকে ইসলামের বুঝ দান করুন।



মু'মিন ব্যাক্তির উদাহারণ হচ্ছে বৃক্ষের মত, যাকে সবসময় প্রবাহমান বাতাসের সাথে যুদ্ধ করে টিকে থাকতে হয়। আর এই ক্রম ধাবমান বাতাসের ঝাপটার মাঝে বেঁচে থাকতে হলে সে বৃক্ষটির কিছু গুণ থাকা চাই। যেমন, সুন্দরভাবে বেড়ে উঠতে হলে গাছটির বীজ অবশ্যই উর্বর মাটিতে বপন করতে হবে। কুর'আনে ঠিক এ কথাটাই বলা আছেঃ



" মুহাম্মদ আল্লাহর রসূল এবং তাঁর সহচরগণ ... তাওরাতে এবং ইঞ্জিলে তাদের বর্ণনা এরূপ যেমন একটি চারা গাছ যা থেকে নির্গত হয় কিশলয়, অতঃপর তা শক্ত ও মজবুত হয় এবং কাণ্ডের উপর দাঁড়ায় দৃঢ়ভাবে, চাষীকে আনন্দে অভিভুত করে, যেন আল্লাহ তাদের দ্বারা কাফেরদের অন্তর্জ্বালা সৃষ্টি করেন..." [সূরাহ আল-ফাতহঃ ২৯]





তাওরাতের যে বিবরণটির কথা এখানে বলা হয়েছে তা হল এইঃ



"কৃষক তার বীজ বুনতে বের হলো, এবং বীজ বপনের সময় কিছু পথের পাশে পড়ল, সেগুলো পায়ের নিচে পিষ্ট হল এবং পাখিরা সেগুলো খেয়ে ফেলল। কিছু বীজ পড়ল পাথুরে মাটিতে, আর সেগুলো বড় হতে হতেই শুকিয়ে গেলো আর্দ্রতার অভাবে। কিছু বীজ কাঁটার মাঝে পড়ল আর কাঁটাগুলোও সেগুলোর সাথে বেড়ে উঠে একসময় গাছগুলোকে মেরে ফেলল। বাকি বীজগুলো পড়ল উর্বর মাটিতে আর বেড়ে উঠল, আর বেড়ে উঠে শতগুণ বেশী শস্য উৎপাদন করল।



... এর তুলনা হল এইঃ বীজগুলো হল সৃষ্টিকর্তার বাণী। পথের পাশের গাছ গুলো হল তাদের তুলনা যারা শুনল আর তারপর শয়তান এসে সেই বাণীগুলো তাদের অন্তর থেকে মুছে দিল যার ফলে তারা বিশ্বাস করবেনা এবং রক্ষা পাবেনা।



পাথুরে মাটির গাছগুলো হল তারা - যারা শুনার সময় আগ্রহের সাথে শুনে কিন্ত এদের দৃঢ় কোন মূল নেই - এরা কিছু সময়ের জন্য বিশ্বাস করে কিন্তু প্রলোভন দেখালেই বিচ্যুত হয়ে পড়ে। যে বীজ গুলো কাঁটার মাঝে পড়েছিল, এরা হল তারা যারা সৃষ্টিকর্তার বাণী শুনেছে কিন্তু পথ চলার সাথে সাথে ভয় আর দুনিয়ার মোহে আটকে গিয়ে পূর্ণতা লাভ করতে ব্যর্থ হয়।



কিন্তু যেই বীজ গুলো উর্বর মাটিতে পড়েছিল, এরাই হল তারা যারা সৎ এবং শুদ্ধ হৃদয় নিয়ে সৃষ্টিকর্তার বাণী শুনেছিল, তা আঁকড়ে ধরেছিল এবং ধৈর্য্যের সাথে পরিশেষে ফল লাভ করেছিল।" (লুক ৮: ৫-১৫)



অর্থাৎ, হৃদয়কে এমন উর্বর মাটির সাথে তুলনা করা হয়েছে যেখানে বীজ বপন করা হয়। ইমাম ইবন আল-ক্বাইয়্যিম (রহিমাহুল্লাহ) আল-ফাওয়াইদ গ্রন্থে (পৃষ্ঠা ৭০) এভাবেই বলেছেন, "সবার হৃদয়ের স্বাভাবিক অবস্থাই হচ্ছে উর্বর, এতে যা বপন করা হয় তাই সহজে বেড়ে উঠে। যদি ঈমান এবং আল্লাহভীরুতা বা তাক্বওয়ার গাছ এতে রোপণ করা হয়, তবে তা এমন সুমিষ্ট ফল দান করবে যা হবে চিরন্তন। আর যদি অজ্ঞতা এবং কামনা-বাসনার চারা রোপণ করা হয় তাহলে তার ফলও হবে তিক্তএবং কটু।"



তাই তুমি যখন তোমার অন্তরকে ঈমানের বীজের জন্য উর্বর করে তুলবে, তখন সেই গাছটি সুন্দর ভাবে বেড়ে উঠবে এবং মিষ্টি ফল ধারণ করবে। হৃদয়কে উর্বর করার পন্থা সমূহ সামনে আলোচনা করা হবে।



যখন তোমার হৃদয়ে ঈমানের সুদৃঢ় বৃক্ষ গড়ে উঠেবে, একটা দমকা হাওয়া তোমার দিকে ধেয়ে আসবে। কারণ উপরে বর্ণিত আয়াত অনুযায়ী, আল্লাহ বলছেন শক্ত গাছটি 'কাফেরদের অন্তর্জ্বালা সৃষ্টি করে'। একজন দৃঢ় মুসলিম এর মত আর কোন কিছুই এই বাতাসকে এতটা ক্ষেপিয়ে তোলেনা। আর এটাই আদিকাল থেকে চলে আসা বাস্তবতা। যখন ফেরআউন মুসা (আলাইহিস সালাম) এবং তাঁর অনুসারীদের পিছনে মিশরের মরুভুমিতে ধাওয়া করছিল তখন সে সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ করেঃ



"নিশ্চয়ই এরা (বনী-ইসরাঈলরা) ক্ষুদ্র একটি দল। এবং তারা আমাদের ক্রোধের উদ্রেক করেছে। " [সূরা শুআরাঃ ৫৪-৫৫]



এই দমকা হাওয়া তোমাকে সমূলে উচ্ছেদ করে ফেলে দিতে চাইবে। তুমি হয়ত চারিদিকে তাকিয়ে অন্য কিছু গাছ দেখবে, সহজেই পড়ে যেতে - বাতাসের ধাক্কায় সমূলে উৎপাটিত হতে। এরা হল মুনাফিক্বেরা, যাদের দুর্বল মূল অবশেষে প্রকাশ হয়ে পড়েছেঃ



"এবং নোংরা বাক্যের উদাহরণ হলো নোংরা বৃক্ষ। একে মাটির উপর থেকে উপড়ে নেয়া হয়েছে। এর কোন স্থিতি নেই। " [সূরা ইব্রাহিমঃ ২৬]



এবং রাসূল মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিশেষভাবে মুনাফিক্বকে এমন গাছের সাথে তুলনা করেছেন যেটা বাতাসের সাথে সাথে নড়ে এবং কখনো বা পড়ে যায়। (দেখুন আল-লু'লু' ওয়াল মারজান, হাদিস#১৭৯১)। সুতরাং তুমি তাদের মত হবে না, তাদের যতজনই বাতাসের ধাক্কায় পড়ে যাক না কেন। বরং, তুমি তাদের প্রতি অনুকম্পা প্রদর্শন কর, আল্লাহকে ধন্যবাদ দাও যে তিনি তোমাকে তাদের পরিণতি থেকে রক্ষা করেছেন এবং তারপর এগিয়ে যাও। তাদের জন্য ইসলাম ছিল একটা শখ মাত্র।



যখন বাতাস বুঝতে পারবে যে তোমাকে এভাবে মাটি থেকে সরাসরি তুলে ফেলা সম্ভব নয়, তখন সে আরো সূক্ষ্ণ পন্থা অবলম্বন করবেঃ সে চেষ্টা করবে তোমার পাতাগুলো যেন ঝরে পড়ে। কিন্তু সে তোমাকে সবগুলোপাতা একসাথে ঝরাতে বলবে না। কারণ সেটা তার দুরভিসন্ধি প্রকাশ করে দেবে। বরং তখন সেই বাতাস মৃদুভাবে বইবে যাতে করে তোমার একটা পাতা ঝরাতে পারে, তারপর আরেকটা, তারপর আরেকটা - যতক্ষণ না তুমি পাতাহীন বৃক্ষে পরিণত হও। উস্তাদ সাইয়্যিদ কুতুব এটা সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করেছেনঃ



"... যারা কোন আদর্শের পক্ষে দাঁড়ায় তাদের প্রতি শাসকবর্গের আচরণ হয় এমন যে, তারা সবসময় কূটকৌশলের মাধ্যমে তাদেরকে তাদের দৃঢ় অবস্থান থেকে শুধু সামান্য বিচ্যুত করতে চায়। তারা এর মাধ্যমে একটা সমঝোতামূলক সমাধানে আসতে চায় যাতে করে কিছু পুরস্কারের বিনিময়ে তারা তাদেরকে বোকা বানাতে পারে। এমন অনেকেই রয়েছে যারা ভাবে যে তারা তাদের আদর্শের জন্য লড়ছে কিন্তু বস্তুত তাদেরকে তাদের আদর্শ থেকেই বিচ্যুত করে দেয়া হয়েছে কারণ তারা এই সমঝোতাগুলোকে বড় করে দেখেনা। তাই বিরোধীপক্ষও তাদেরকে আদর্শ ত্যাগ করতে বলেনা, বরং এদিকে সেদিকে হালকা পরিবর্তন করতে অনুরোধ করে যাতে উভয়পক্ষ মাঝখানে মিলিত হতে পারে।



যে মানুষটি আদর্শের পক্ষে লড়ছে শয়তান তাঁকে এই বলে ধোঁকা দেয় যে, কর্তৃপক্ষের সাথে সামান্য সমঝোতার মাধ্যমে তুমি তোমার আদর্শকে আরো সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে। কিন্তু পথের শুরুতে যে বিচ্যুতি ছিল খুব সামান্য, পথের শেষে তা-ই বিশাল হয়ে দেখা দেয়। আদর্শের সেই পতাকাবাহী, যে ক্ষুদ্র কোন বিষয়ে আপোষ করতে রাজি হয় সে আসলে সেখানেই থেমে যেতে পারেনা, কারণ এরপর যখনই সে এক পা পিছিয়ে যাবে তখনি সেটা ঠেকাতে তার সমঝোতায় আসার ইচ্ছা আরো বৃদ্ধি পাবে। তাই কর্তৃপক্ষ এই আদর্শবাদীদেরকে অতি সন্তপর্ণে এবং ক্রমান্বয়ে তাদের আদর্শ থেকে টলাতে থাকে..."



তাই এই ফাঁদে পা দেয়া যাবে না, বাতাসের মুখে একটা পাতাকেও ঝরতে দেবে না। যেভাবে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুনাফিক্বকে বাতাসের সাথে নুয়ে পড়া গাছের তুলনা দিয়েছেন তেমনি ভাবে মু'মিনকে খেজুর গাছের সাথে তুলনা করেছেন- কারণ খেজুর গাছের পাতা কখনো ঝরেনা। (দেখুন আল-লু'লু' ওয়াল মারজান, হাদিস#১৭৯২) বাতাস যতই তীব্র হোক না কেন তার সামনে মুসলিম শুধু দাড়িয়েই থাকে না, বরং একটা পাতাও ঝরতে দেয়না। বরং বাতাস যত তীব্র হবে তোমার পাতাকে আরো শক্ত করে আঁকড়ে ধরবে। আর এ জন্যই তো তোমার বিরুদ্ধে বাতাসের এত ক্ষোভ !



“আর তারা এদের প্রতি বিরূপ ছিল না এই ব্যতীত যে এরা মহাশক্তিশালী পরম প্রশংসিত আল্লাহ্‌র প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছিল," [সূরা বুরুজঃ ৮]



কিন্তু এই বাতাস তার ক্ষোভের পেছনে ভিন্ন কারণ দাঁড়া করিয়ে এই বাস্তবতাকে লুকিয়ে রাখতে চেষ্টা করবে। সে দাবী করবে এই রাগ উগ্রবাদ, জঙ্গিবাদ কিংবা অন্য কোনকিছুর বিরুদ্ধে। কিন্তু সত্য কথাটা হচ্ছে সে সেসব মুসলিমদেরকে ভারি অপছন্দ করে যাদেরকে সে সমূলে তুলে ফেলতে পারেনা, যাদেরকে তাদের আদর্শ থেকে এক বিন্দুও টলানো যায় না। আর যখন গাছটা একটা পাতাও ত্যাগ করতে অস্বীকার করে তখন সেই বাতাস আরো রেগে যায়। আর যখন এই বাতাস রাগতে থাকবে, তখন আল্লাহ্‌ তোমাকে পুরস্কৃত করবেনঃ



"...এবং তাদের এমন পদক্ষেপ যা কাফেরদের মনে ক্রোধের কারণ হয় আর শত্রুদের পক্ষ থেকে তারা যা কিছু প্রাপ্ত হয়- তার প্রত্যেকটির পরিবর্তে তাদের জন্য লিখিত হয়ে নেক আমল। নিঃসন্দেহে আল্লাহ সৎকর্মশীল লোকদের হক নষ্ট করেন না।” [সূরা আত-তওবাহঃ১২০]





তাই যখন প্রবল আক্রোশে বাতাস বইবে তখন ভয় পেওনা। বরং তার চোখে চোখ রাখো আরঃ

"...বল, তোমরা আক্রোশে মরতে থাক।” [সূরা আলে ইমরানঃ ১১৯]



ঐ পাতাগুলো হচ্ছে আল্লাহ্‌র তরফ থেকে তোমার প্রতি আমানত যা আল্লাহ্‌ তোমাকে রক্ষণাবেক্ষণ করতে দিয়েছেন। যদি তুমি তার খিয়ানত কর তবে তোমাকে তাদের দ্বারা পরিবর্তন করে দেয়া হবে যারা তা করবেনাঃ



হে মুমিনগণ, তোমাদের মধ্যে যে স্বীয় দ্বীন থেকে ফিরে যাবে, অচিরে আল্লাহ এমন সম্প্রদায় সৃষ্টি করবেন, যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন এবং তারা তাঁকে ভালবাসবে। তারা মুসলমানদের প্রতি বিনয়-নম্র হবে এবং কাফেরদের প্রতি কঠোর হবে। তারা আল্লাহর পথে জেহাদ করবে এবং কোন তিরস্কারকারীর তিরস্কারে ভীত হবে না। এটি আল্লাহর অনুগ্রহ-তিনি যাকে ইচ্ছা দান করেন।... [সূরা আলে ইমরানঃ৫৪]



এই আয়াতটি খুব সংক্ষিপ্ত ভাবে গাছ এবং পাতাগুলোর বর্ণণা দেয়। এটাকে বীজ এবং পাতায় বিশ্লেষণ করা যাক।



সম্পূর্ণ গাছটি হচ্ছে দ্বীন।



তোমার এবং আল্লাহর মধ্যে ভালবাসার সম্পর্ক হচ্ছে সেই বীজ যা থেকে গাছটি অংকুরিত হবে। ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) এর একটি সুন্দর প্রবন্ধ রয়েছে আত-তুহফাহ আল ইরাক্বিয়াহ নামে, যা মাজমু আল ফাতওয়া এর দশম খন্ডের শুরুতে পাওয়া যায়, যেখানে তিনি এই আয়াতে উল্লেখিত ভালবাসার কথা ব্যাখ্যা করছেন এইভাবে,



"আল্লাহ্‌ এবং তাঁর রসূলের জন্য ভালবাসা হচ্ছে ঈমানের সর্বোচ্চ বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে একটি এবং ঈমানের সর্বোচ্চ মূলনীতি। কার্যত এটিই দ্বীনের সকল আমলের মূল ভিত্তি... মুসা এবং ঈসা (আলাইহিমুস সালাম) এর বর্ণিত ভাষ্য অনুযায়ী, আমাদের পূর্ববর্তী দুটি জাতি, ইহুদি এবং খৃস্টানদের প্রতি রেখে যাওয়া সর্বোত্তম উপদেশ হচ্ছে হৃদয়, মন এবং সদিচ্ছা দ্বারা সর্বান্তকরণে আল্লাহকে ভালবাসা। এটাই ইব্রাহীমের (আলাইহিস সালাম) দ্বীনের আক্বীদার সারকথা যা তাওরাত, ইঞ্জীল এবং ক্বুরআনের আইনের নির্যাস।"



আল্লাহ্‌র জন্য ভালবাসাই হচ্ছে সেই বীজ যা থেকে প্রতিটি কাজ এবং বিশ্বাস - প্রতিটি পাতা এবং ফল- অঙ্কুরিত হয় আর এজন্যই এই ভালবাসাটাই এ আয়াতে সর্বপ্রথম উল্লেখ করা হয়েছে।



তারপর আমরা লাভ করব সেই বীজের প্রথম ফল, ওয়ালা’ এবং বারা' : "মুসলমানদের প্রতি বিনয়-নম্র হবে এবং কাফেরদের প্রতি কঠোর হবে। ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহ এ বিষয়ে বর্ণণা করেন,



"মানুষ যাকে ভালবাসে তার ভালবাসার মানুষকেও ভালবাসে , সে যা ঘৃণা করে তাও ঘৃণা করে, তার সহযোগীদের প্রতি বিশ্বস্ত থাকে, তার শত্রুদের প্রতি শত্রুভাব পোষণ করে... তাই এই বিষয়ে তারা উভয়েই এক"



সহজ ভাষায় বললে, বাতাসের প্রথম কাজ হচ্ছে তোমার এই পাতাটি ঝরিয়ে দেওয়া যাতে করে তোমার মনে শত্রু আর বন্ধুর মাঝে বিভাজন রেখাটা অস্পষ্ট হয়ে পড়ে। একবার যখন তুমি তোমার শত্রুকে বন্ধু ভাববে, তোমার শত্রুর কাজ তখনি সম্পন্ন হয়ে যাবে। তাই কখনো এই পাতাটি ঝরে যেতে দেবেনা। কখনো না!



এর পরের পাতাটি হচ্ছে জিহাদঃ "...তারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে..." স্পষ্টতই এটি সেই পাতা যা বাতাস অন্যগুলোর চেয়ে বেশী ঘৃণা করে। কেন তা বোঝার জন্য এইডস এর কথা ভাবো। এটা শরীরকে মেরে ফেলার জন্য কি করে? এটা কিন্তু সরাসরি শরীরকে আক্রমণ করেনা বরং এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে অর্থাৎ শরীরের ‘প্রতিরক্ষা বাহিনী’কে আক্রমণ করে যাতে করে অন্যান্য রোগ জীবাণু কোনরকম বাধা ছাড়াই আক্রমণ করতে পারে। এই শরীরটা হচ্ছে মুসলিম উম্মাহর মত, জিহাদ হচ্ছে এর রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা যার মাধ্যমে সে আক্রমণকারীদের থেকে নিজেকে রক্ষা করে। আর সেই বাতাস/সরকার হচ্ছে এইডসের মত যা প্রতিরোধের এই স্পৃহাটাকে মেরে ফেলার জন্য কাজ করে যাতে করে মুসলিম উম্মাহকে আক্রমণ এবং দখল করে নেওয়া সহজ হয়ে যায়। এই কারণেই সাইয়্যিদ কুতুব, আব্দুল্লাহ আযযাম, আয-যারক্বাওয়ী, শাইখ ওসামা (রহিমাকুমুল্লাহ) প্রমুখ দের মত লোকদের কে দানব রূপে চিত্রিত করা হয়- কারণ এরা প্রতিরোধের সেই চেতনাকে ধারণ করেন। আর তাই বাতাস সবচে জোরালো ভাবে বইতে থাকবে তখনি, যখন সে তোমার এই পাতাটি ঝরিয়ে দিতে চায়। এই ফাঁদে পা দিওনা। মনে রেখঃ এইডস!



পরিশেষে সুদৃঢ় বৃক্ষ সেটাই যা "কোন নিন্দাকারীর নিন্দায় ভীত হবে না।" অর্থাৎ, সেই বৃক্ষটি বস্তুত তিরস্কারে আক্রান্ত হবে, তবে সেভাবে নয়, যেমনটি আশা করা হয়েছিল! সেটা কেমন হবে ? যখন বাতাস তোমার পাতাগুলো ঝরিয়ে দিতে চায়- যখন সে তোমাকে আক্রমণ আর তিরস্কার করে 'ওয়ালা এবং বারা' আর জিহাদের ধারণাকে আঁকড়ে ধরে রাখার কারণে - ইমাম ইবন তাইমিয়্যাহ (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, "যার হৃদয় আল্লাহ্‌র জন্য ভালবাসায় পরিপূর্ণ সে অন্য কারো সমালোচনা বা তিরস্কারে দমে যায়না বরং এগুলো তাকে আরো শক্তভাবে দ্বীনকে আঁকড়ে ধরতে প্রেরণা যোগায়..."



সবশেষে এই আয়াত আমাদেরকে সেই গুরুত্বপূর্ণ তথ্যটি দেয় যে কুর’আনের এই শিক্ষাগুলোর প্রতি সৎ থাকতে পারা হলো, "আল্লাহর অনুগ্রহ-তিনি যাকে ইচ্ছা দান করেন"। বাতাসের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকতে পারাটা সম্পূর্ণভাবে আল্লাহ্‌র একটা অনুগ্রহ। একটা গাছকে সোজা হয়ে দাঁড় করিয়ে রাখতে বা ধুলায় মিশিয়ে দেয়ার ব্যাপারে আল্লাহই সর্বময় ক্ষমতার অধিকারীঃ



"তোমরা যে বীজ বপন কর, সে সম্পর্কে ভেবে দেখেছ কি? তোমরা তাকে উৎপন্ন কর, না আমি উৎপন্নকারী ?আমি ইচ্ছা করলে তাকে খড়কুটা করে দিতে পারি, অতঃপর হয়ে যাবে তোমরা বিস্ময়াবিষ্ট। "[সূরা ওয়াক্বিয়াহঃ ৬৩-৬৫]



এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে সতর্ক করেছেন যে শেষ জমানায় কারো বদলে যাওয়াটা খুব সহজ হয়ে পড়বে। মানুষ চাপে পড়ে এবং নিজেদের দুর্বলতার কারণে খুব দ্রুত সত্যকে ত্যাগ করবে।

তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ



"পুনরুত্থান দিবসের আগে, রাতের অন্ধকারের মত ফিতনা আসবে যার মাঝে একজন মানুষ মু'মিন হয়ে ঘুম থেকে উঠবে আর কাফির হয়ে ঘুমাতে যাবে, আবার মু'মিন হয়ে ঘুমাতে যাবে আর কাফির হিসাবে জেগে উঠবে।"



এই ধরণের ঘটনাগুলো হচ্ছে কিছু অজানা বা গায়েবী কারণের ফল যা আমরা মানুষেরা ঠিক উপলব্ধি করতে পারব না। তবে, ক্বুরআন এবং সুন্নাহ তে এমন কিছু ব্যবহারিক উপায় বলে দেয়া আছে যার সাহায্যে আমরা মানবজীবনের ইতিহাসের সত্যের পথে থাকতে পারি। এখানে আমরা শুধু দুটি উপায় আলোচনা করব এবং দুটিই একটি দৃঢ় বৃক্ষের সর্ব প্রথম শর্তটির উপর আলোকপাত করেঃ উর্বর জমিতে বপন- একটি সুস্থ হৃদয়।



* রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কায় যখন কঠিনতম পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন তাঁর প্রতি নাযিল কৃত সূরাসমূহের মূল বিষয় ছিল পূর্ববর্তী নবীদের কাহিনী। ইসলামের জন্য কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন যে তিনিই প্রথম নন, বরং যুগে যুগে এমন আরো অনেকেই ছিলেন, এটা বোঝানোই ছিল এর উদ্দেশ্য। একই সাথে আগের নবীরা কিভাবে এসব পরীক্ষার মোকাবিলা করেছিলেন তাঁকে সে শিক্ষাও দেয়া হচ্ছিল । মক্কার বিপদের ঘনঘটায় আচ্ছন্ন দিন গুলোতে এই ইতিহাসের গল্পগুলো রসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং সাহাবীদের মনোবল দৃঢ় করতে বিশাল ভূমিকা রেখেছিল। এই কথাটিই নিমোক্ত আয়াতে প্রতিফলিত হয়,



"আর আমি রসূলগণের সব বৃত্তান্তই তোমাকে বলছি, যদ্দ্বারা তোমার অন্তরকে মজবুত করছি। আর এভাবে তোমার নিকট মহাসত্য এবং ঈমানদারদের জন্য নসীহত ও স্বরণীয় বিষয়বস্তু এসেছে। " [সূরা হুদঃ১২০]



একই ভাবে প্রথম দিককার মুসলিমদের সেইসব কঠোর পরীক্ষার দিনগুলোর পাশাপাশি ইতিহাস, বিশেষভাবে সেই সকল মুসলিমদের ইতিহাস অধ্যয়ন করাটা উপকারী হতে পারে যারা ইতিহাসে কোন না কোন প্রকারের সাহসী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। অনেক সময় কোন একটা পরিস্থিতিতে আমাদের করণীয় বুঝে উঠতে আমরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে ফিক্বহের বই ঘাঁটি যেখানে শুধুমাত্র সৎকর্মশীলদের জীবনী পড়েই, আমরা তাদের ব্যক্তিত্বকে আত্মস্থ করার মধ্য দিয়ে আমাদের করণীয় সম্বন্ধে আরো ভাল দিকনির্দেশনা পেতে পারি। 'সাফাহাত মিন সবর আল উলামা '(আলেমদেরসবরের পাতা থেকে) নামক অসাধারণ বইটিতে লেখক বলেনঃ



"নিজের মধ্যে সৎগুণের বিকাশ ঘটাতে এবং মহৎ উদ্দেশ্যে কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকারের মানসিকতা তৈরী করার একটি ভাল উপায় হচ্ছে সেই সকল আলেমদের জীবনী পড়া যারা তাঁদের অর্জিত ইলমের উপর আ'মল করেছেন। এটা তাদেরকে অনুসরণ করতে সহায়তা করে যারা সেইসব উদ্দেশ্যের জন্য অধ্যবসায়ের সাথে ত্যাগ স্বীকার করে গিয়েছেন। বলা হয়ে থাকে এই কাহিনীগুলো হচ্ছে আল্লাহ্‌র সেই সকল সৈন্য যার মাধ্যমে আল্লাহ্‌ তাঁর মিত্রদের অন্তরকে সুস্থির রাখেন। ইমাম আবু হানিফা(রহিমাহুল্লাহ) বলেন,"আলেমদের জীবনী এবং তাঁদের গুণাবলী অধ্যয়ন আমার কাছে ইলমের চেয়ে বেশী প্রিয় কারণ এগুলো তাঁদের চরিত্র বর্ণনা করে।" "



তাই সৎকর্মশীলদের জীবনী অধ্যয়ন, তাঁদের ব্যক্তিত্ব এবং চরিত্রকে আপন করে নেয়া অন্তরকে শক্তিশালী এবং জীবন্ত করার একটি ভাল উপায় যা ঈমান এবং ইলমের বীজ বপনের জন্য অন্তরকে উর্বর করে তোলে। তাহলে কোথা থেকে শুরু করা উচিত ? শায়খ ইবনে আল জাওযী (রাহিমাহুল্লাহ), সাইদ আল খাতির গ্রন্থের ৬০ পৃষ্ঠায় বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃ) এবং তার সাহাবীদের জীবনী থেকেই সবচেয়ে বেশি উপকারী জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব।



* অন্তরকে দৃঢ় করার দ্বিতীয় উপায়টি আরো সহজঃ শুধু তোমার রব্ব এর কাছে চাও! উম্মে সালামাহ (রাদি'আল্লাহু আনহা) কে একবার জিজ্ঞেস করা হয়েছিল রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন দুআটি সবচেয়ে বেশী করতেন এবং তিনি উত্তর দেনঃ



"ওনার সবচেয়ে বেশী করা দুআটি ছিলঃ ও অন্তর সমূহের নিয়ন্ত্রণকারী, আমার অন্তরকে তোমার দ্বীনের উপর স্থির করে দাও। (ইয়া মুক্বাল্লিবাল ক্বুলুব, সাব্বিত ক্বলবি 'আলা দ্বীনিক)"



এই উপায়টি সবসময় সারাদিন অভ্যাস করা উচিৎ। কাজে যাওয়ার সময় কিংবা স্কুলের বারান্দা দিয়ে হাঁটার সময়, যখনি সুযোগ পাওয়া যায় তখনি এই সহজ দুআটি পুনরাবৃত্তি করার অভ্যাস করা উচিৎ। গুপ্তধনের মত এই দুআটিকে আঁকড়ে রাখা উচিৎ এবং সর্বদা এটিকে ঠোঁটের আগায় রেখে অন্তরকে ইসলামের সাথে সংযুক্ত করে রাখা উচিৎ। এটা খুবই সহজ হওয়া সত্ত্বেও এটা যাদের খুব প্রয়োজন এমন অনেকেই এটিকে অবহেলা করে।



তাই হৃদয়কে স্থির এবং সুস্থ রাখার মাধ্যমে, সেই জমিকে উর্বর রাখার মাধ্যমে তোমার শিকড়কে সুদৃঢ় করে রাখো। আর দৃঢ় শিকড় বিশিষ্ট গাছগুলোর শাখা-প্রশাখাই একদিন আকাশ ছোঁয়ঃ



"পবিত্র বাক্য হলো পবিত্র বৃক্ষের মত। তার শিকড় মজবুত এবং শাখা আকাশে উত্থিত।" [সূরা ইব্রাহিমঃ ২৪]



আর যখন তোমার শাখা-প্রশাখা আকাশ ছোঁবে, তখন কেউ তোমার পাতা পর্যন্ত পৌঁছুতে পারবেনা। তারা তোমাকে বন্দী করতে পারে, তোমাকে হত্যা করতে পারে কিন্তু তারা কখনো এ কথা বলতে পারবে না যে তারা তোমার পাতা ঝরাতে পেরেছিল...



লিখেছেনঃ তারেক মেহান্না

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে মার্চ, ২০১৫ দুপুর ২:৫৬

কসমিক- ট্রাভেলার বলেছেন:









+++++++++++++++

২৯ শে মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৫:১৫

আশালিনা আকীফাহ্‌ বলেছেন: জাযাক আল্লাহ্‌ খাইর।।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.