![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অন্য সব পরীক্ষার্থীদের মত আমিও একজন সাধারণ পরীক্ষার্থী । বিগত ৭ বছর ধরে আমি মাইলস্টোন কলেজে লেখাপড়া করছি এবং বিগত ৭ বছরেই আমি ফার্স্ট ক্লাস স্টুডেন্ট এর কাতার থেকে সরে আসতে আসতে এখন লাস্ট ক্লাস স্টুডেন্ট এর কাতারে চলে এসেছি। কি বিশ্বাস হয় না। নিচে আমার ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে এই পর্যন্ত সব বার্ষিক রেজাল্টগুলো দিলামঃ
Class 6 - Placed 3rd on the Final Exam
Class 7 - Placed 6th on the Final Exam
Class 8 - Placed 10th on the Final Exam
Class 10 - Got an "A" Grade
Class 11 - Placed 235 in the Final Exam
Class 12 - Place is unknown to the teachers & me
All of these are combined positions of the Final Exams
আশা করি এখন বিশ্বাস হইছে। যাই হোক আমার এই লেখাটার দ্বারা আমি শুধু কয়েকটা জিনিস আপনাদের বোঝানোর আপ্রাণ চেষ্টা করব।
সত্য অর্থে কক্ষনো সিরিয়াস ছিলাম না। পড়ালেখার যে দিকটা আমার সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে সেটা হল প্রতিদিন ই নতুন নতুন কিছু শিখি। আমি ২০০১ এ আমার শিক্ষাজীবন শুরু করেছি। প্লে এবং নার্সারি ক্লাস আমি ২০০১ এর জুন মাসে শেষ করি! জুলাই এ ক্লাস ১ এ ভর্তি হই এবং ডিসেম্বর এ পরীক্ষা দিয়ে ক্লাস ২ এ উত্তীর্ণ হই। ক্লাস ১-৫ পর্যন্ত আমার রেজাল্ট ছিল ১-৫ এর মধ্যে এবং এটা নিয়ে আমি কোন গর্ববোধ করতে পারি না। আমি যে ক্লাস ৫ এ এত ভাল রেজাল্ট করলাম তার আছে কোন প্রমাণ। অথচ এখন ৭-৮ বছরের বাচ্চার মুখে মুখে "পি.এস.সি তে এ+ পাইছি"। খুব খারাপ লাগে আমার এই কথাটা শুনলে কারণ আমার ছোটবোন ও এই জিনিসটা নিয়ে আমার কাছে পার্ট নেয় এবং আমি যে এস এস সি তে এ+ পেলাম না সেইটা নিয়ে সবাই কটাক্ষ করবে। যাই হোক, আগে বলে রাখি আমার বাবা-মা খুব বেশি পড়ালেখা করতে পারেননি কারণ তাদের আর্থিক সমস্যা ছিল এবং তাদের যে বয়সে লেখাপড়া করার কথা তখন দেশে যুদ্ধ চলছিল। আমার মায়ের খুব গর্ব যে তার মেয়ে পি এস সি তে এ+ পাইছে। শত হোক আমার ছোটবোন, তারপরও আমি কেন জানি ওর এই খুশিতে খুশি হতে পারিনা। হব কি করে? পরিবার ও সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি আমাকে হতে দেয় না।
আমার আম্মা তো এখনো আমাকে প্রতিদিন শত কথা বলে পড়ার টেবিলে বসাতে পারে না, আর ক্লাস ১-৫ এর অবস্থায় আমাকে শত কথা ব্লেও টেবিল থেকে উঠানো যেত না। তো আপনাদের প্রশ্ন থাকতে পারে, তাহলে কি আমি খারাপ? আমি কি তাহলে বাইরে বাইরে ঘুরি? আমি কি তাহলে অসৎ সঙ্গের সাথে আছি? প্রথম প্রশ্নের উত্তর- আমি খারাপ কি ভাল সেটা আমি জানি না। ইংরেজিতে একটা বাক্য আছে - A newborn has no sins. বাক্যটার অর্থ আপনারা সবাই জানেন। তো সবার মত আমিও জন্মের পর নিষ্পাপ ছিলাম। আরেকটা নীতি যেটার সাথে আমি একমত তা হল - Everything has good and bad sides, Nobody is Perfect. Perfect Never Lasts. আশা করি এই কথার অর্থটাও আপনারা বুঝছেন। আমি ভাল নাকি খারাপ সেটা আপনাদের বিবেচনার বিষয়।
২য় প্রশ্নের উত্তর - আমার দিনের প্রথম ৮ ঘণ্টা কাটে কলেজে, বাসায় আসি ২:৩০ এ, কোচিং এ যাই ৪টার দিকে, আবার বাসায় আসি রাত ৯ টায়। এই কোচিং আর ক্লাস করতে করতে দিন গেলে আমার ঘুরার টাইম কই?
৩য় প্রশ্নের উত্তর - এই পর্যন্ত এত মানুষের সাথে চলাফেরা করছি যে ১০০% বলতে পারবনা ভাল-সঙ্গের সাথে আছি। আমি আমার বন্ধুদের সাথে সময় পেলে ঘুরি। ওরা খারাপ হলে আমিও খারাপ, ওরা ভাল হইলে আমিও ভালো,এইরকমটাই সবাই ভাবে। তবে একটা কথা মনে রাখবেন- হাতে চাকু থাকলেই কেউ মাস্তান হতে পারে না। আমার কোন বন্ধু যদি খারাপ হয়েও থাকে তবে তার জন্য আমি খারাপ হয়ে যাব, এই ধারণাটা খুবই হাস্যকর।তবে আমার বিশ্বাস আমার বন্ধুরা খারাপ না বরং মহা শয়তান!
আমার আম্মা সারাদিন আমাকে বকা-ঝকা করে আমি পড়তে বসি না এইজন্য! আমার পরীক্ষার জন্য তাদের চিন্তার শেষ নাই। আমি কোন কথা বললে তিনি মানবেন না। কারণ আমি যুক্তিসঙ্গত কথা ছাড়া কথা বলি না আর মহিলা মানুষ যুক্তি মানে না। শুধু শুধু কি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন - "নারী জাতি মানেনা কোন যুক্তি হায়, সারাটা জীবন শুধু কাঁদিয়া জিতিতে চায়" যাক এতকিছু সত্ত্বেও আমি আমার মাকে ভালবাসি। এই কথা আমি কখনো আম্মু কে বলিনা কারণ এসব কথা আমার মুখে মানায় না!
এবার আমার আব্বার কথায় আসি। আব্বার কথা একটাই- এ+ চাই,নাইলে এলাকায় মুখ দেখানো যাবে না। আরও পরিষ্কার করে বলি- আমার আব্বার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস মনে হয় সোশ্যাল স্ট্যাটাস। তার কথা এই যে আমার বেঁচে থাকতে হলে তার সম্মান রক্ষা করে চলতে হবে।
এইবার আমার মতামতে আসি। আম্মুর কথার বিপক্ষে আমার কিছু বলার নাই, শুধু শুধু ব্রেইন খরচ কইরা লাভ নাই। হ্যাঁ! তবে আমার আব্বার কথার বিরুদ্ধে আমার কথার শেষ নাই। প্রথমত সোশ্যাল স্ট্যাটাস,সম্মান,ভালো গ্রেড এইগুলার কিছুই আমি খুব ভালো বুঝিনা,এবং কেউ যদি আমাকে বুঝাতে আসে আমি তার কথায় কান দেই না। সোজা কথা- আমি মানি না তোমার কথা । তুমি কে? স্টিফেন হকিংস নাকি যে তোমার কথাই কারেক্ট? তাই আপনার এ সম্বন্ধে ভালো জ্ঞান থাকলেও দয়া করে আমাকে জ্ঞান দিতে আসবেন না। দ্বিতীয়ত- সোশ্যাল স্ট্যাটাস আমার কাছে খুবই ভিত্তিহীন একটা বিষয়। কারণ কি? আমার জানা নেই! কেন জানা নেই তাও জানি না! শুধু জানি সোশ্যাল স্ট্যাটাস ধারণাটা আমি ঘৃণা করি আর এই ধারণা ভিত্তিহীন।তারপরও আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে আমি বাধ্য। তাই একটু ভেঙ্গে বলি- আমি আগেই আপনাদেরকে আমার রেজাল্ট সম্পর্কে বলেছি। ছোটবেলায় মনে করতাম প্রত্যেক বিষয়ে ৮০-৯০ করে পেলে আমার ভবিষ্যৎ উজ্জল,আমি মানুষের মত মানুষ হব। অবশ্য এই ধারণা আমার মাথায় এমনি এমনি আসে নাই, এই ধারণা আমার মাথায় আসছে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির কারণে।আস্তে আস্তে যখন উপরের ক্লাসে উঠলাম তখন আস্তে আস্তে বুঝলাম যে যারা পরীক্ষায় খারাপ করে তারা যে মূর্খ তা না,তাদেরও নিজস্ব ট্যালেন্ট রয়েছে।সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত আমার ধারণা ছিল যারা খারাপ মার্ক পায় তারা অনেক খারাপ। কিন্তু অষ্টম শ্রেণীতে উঠে আমার এই ধারণা ভাঙল যখন আমি বৃত্তির সেকশন থেকে “ডি” সেকশনে চলে এলাম। এই সেকশনে আমি প্রায় ৮ মাসের মত ক্লাস করেছি এবং বুঝলাম যে মার্কস খারাপ হলেই যে মানুষ খারাপ হবে তা না। ডি সেকশনে আমি যেমন সব মানুষের সাথে মিশেছি তাদের কথা বিশেষ করে তুর্যকে তো ভুলেও ভুলতে পারব না।যাই হোক,এই যে এতক্ষণ বক বক করলাম। এই সব বক বক করা কথাগুলো আমার মাথায় আসলো কোথা থেকে?মার্কস খারাপ হলে মানুষ খারাপ এই ধারণা আসলো কোথা থেকে? এই ধারনাগুলোই এসেছে সোশ্যাল স্ট্যাটাস এর ধারণা থেকে।কারণ আপনি যখন ভালো রেজাল্ট করেন, একটা A+ এর সার্টিফিকেট যখন আপনার হাতে থাকে তখন সমাজ আপনাকে মানুষ হয়ে উঠছেন বলে মানে,সমাজ আপনাকে সাধুবাদ জানায়,বাহবা দেয়। কিন্তু যদি কোন কারণে আপনার A+ টা মিস হয়,তাহলে এই সমাজের সবচেয়ে অপ্রয়োজনীয় মানুষ হিসেবে আপনাকে দেখা হয়। আরে সমাজের কথা বাদ ই দেই, নিজের পরিবারেই দেখেন না আপনার কি দশা করে ছারে। ব্যাপারটা অনেকটা এরকম – সমাজ যা আশা করে তা করে দেখাতে পারলেই আপনি ভালো,না পারলেই আপনি খারাপ। এইখানে আপনি কি করতে চান তা ব্যক্ত করার বিন্দুমাত্র প্রয়োজন নেই। যাই হোক সোশ্যাল স্ট্যাটাস ধারণাটাই এমন।
কিছু বুঝছেন কি না জানি না,তারপরও কিছু কথা বাকি আছে। গত কয়েক মাসে যেই উপদেশটা সবচেয়ে বেশি পেলাম সেটা হল- ভালো কইরা পড়,A+ পায়া জীবনটা উজ্জল কর। আর যে এই উপদেশ দিল তারেই আমি জিজ্ঞেস করি – ভাই! A+ টা কি? আর মনে মনে ভাবতাম – A+ পাওয়ার পড় চাকরি না পাইলে জীবনটা কি তোমার বাপে আইসা উজ্জল কইরা দিয়া যাইব। আমার খুব অবাক লাগে। পৃথিবীতে অনেক মানুষ ছিল যারা A+ ছাড়াই অনেক কিছু করে গেছে। এইরকম মানুষের কথা উঠলেই মাথায় আসে সক্রেটিস,এরিস্টটল,বিল গেটস এর কথা । এদের বয়সও এক কালে আমার মত ছিল। এরা তাহলে এমন কি করছে যে এরা এত্ত বিখ্যাত? উত্তর একটাই এদের যা করতে সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে তাই করছে। এদের জীবনী কিছুটা পড়ছি। এরা অনেক জ্ঞানী,বিশেষ করে প্রথম দুইজন। এদের উদাহরণ যখন কাউকে দেখাই তখন মানুষ হাসে। আমি ভাবি যে কিছু বেকুব হাসলে কি আসে যায়, এদের উপরও অনেক মানুষ হাসছে তাতে তো এদের কিছু আসে যায় নাই। যাই হোক বিল গেটস হওয়ার শখ বহুত থাকলেও ঐটা আমার বেলায় অসম্ভব। কারণটা খুব সহজ। কি ভাবতেছেন? আমার ঐ মেধা নাই? হে হে বিল গেটস এরও ছিল না। কারণটা হইল আমাদের এলাকায় ঘন ঘন কারেন্ট যায় আর বিল গেটস এর মত ডেইলি ১৬ ঘণ্টা করে কম্পিউটারে প্রোগ্রামিং নিয়া গুতাগুতি করার অনুমতি আমার নাই। শুধু শুধুই কি বিল গেটস বাড়ি থেকে পালাইছিল নাকি! যাকগে এইরকম অনেক কিছু বললেই আমি বিল গেটস হইয়া যামু না, আমি আমিই থাকব।
একটা জিনিস অনেক গার্ডিয়ান বুঝে না। সেইটা হইল তার সন্তান যখন এইসব বড় বড় এক একটা পরীক্ষা দেয় তখন তার মাথায় যে কি পরিমাণ টেনশন কাজ করে তার বিন্দুমাত্র ধারণা তাদের নাই। স্টুডেন্ট খারাপ ভালো যায় আসে না। সে যখন এইসব পরীক্ষা দেয় তখন আদা জল খেয়েই লাগে। আর পরীক্ষার আগে,পরীক্ষার সময় এবং পরীক্ষার পর কি ঘটছে না ঘটছে এইটা আপনার সন্তানের থেকে ভালো আর কেউ জানে না। কিন্তু এতকিছুর পরও দেখা যায় যে গার্ডিয়ান পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর তার সন্তানকে ঝারতেছে,বানান ভুল নাই, আসলেই ঝারতেছে। গার্ডিয়ান ই সারাদিন বক বক করে বাপ/মা ঠান্ডা মাথায় পরীক্ষা দিও অথচ পরীক্ষার হলে বাবা-মা’র চিন্তায় অনেক স্টুডেন্ট মাথা ঠান্ডাই রাখতে পারে না। বিশেষ করে মেয়েরা তো পুরাই অন্য প্রকৃতির। আমার তো আজও মনে পরে এস এস সি পরীক্ষার প্রথম দিন উত্তরা হাই স্কুলের গেটে এক পরীক্ষার্থী সেরকম কান্না জুড়ে দিসে। পরে জানলাম তার সিট অন্য কলেজের স্টুডেন্টদের সাথে পড়ছে তাই। বুঝেন তাহলে মেন্টাল প্রেশার জিনিসটা কত খারাপ। যে কাউকে কাঁদাইয়া ছাড়ে!
এতকিছু বললাম একটা কারণে যাতে গার্ডিয়ানরা তাদের সন্তানের পরিশ্রমের প্রতি একটু সহনশীল হয়। সব মানুষ সমান মেধা নিয়ে জন্মায় না, আবার অনেক মেধা নিয়ে জন্মিয়েও অনেক মানুষ জীবনে কিছুই করতে পারেনা। এর পিছনে অনেক বড় কারণ হল বাবা-মা’র অসহযোগিতা বা অসহনশীলতা। প্রত্যেকটা গার্ডিয়ান যদি তার সন্তানের প্রতি সহনশীল হতে পারে তাহলে তার সন্তান নিজ থেকেই তাদের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করার চেষ্টা করে।
সন্তান আপনার,তাই তাকে নিয়ে মাথাব্যাথাটাও আপনার। কিন্তু এই মাথাব্যাথা শুধু নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখুন,এই মাথাব্যাথা সন্তানের সাথে শেয়ার না করাটাই ভালো। তাকে সবসময় নিজের দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে সবকিছু দেখার ও বুঝে নেয়ার সুযোগ দেয়ার চেষ্টা করুন। তাকে তার মত করে জীবন গড়তে দিন। মনে রাখবেন সন্তান আপনার হলেও ভবিষ্যৎটা কিন্তু আপনার না বরং তারই গড়তে হবে। তাই নিজের সন্তানের উপর কিছুটা বিশ্বাস রাখার চেষ্টা করুন।
আশা করি কিছুটা হলেও বুঝেছেন!
বিঃদ্রঃ- এই লেখাটা লিখেছি বিশেষত গার্ডিয়ানদের উদ্দেশ্য করে তবে অন্য কেউ পড়লেও সমস্যা নেই
২৬ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ৯:৩০
অজ্ঞাত লেখক বলেছেন: আজকে প্রথম পোস্ট করলাম! এতদিন ফালায় রাখছিলাম!
©somewhere in net ltd.
১|
২৬ শে মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫৮
খায়ালামু বলেছেন: ব্লগ লিখেছেন: ১ বছর ২ মাস
কিরে.। এখন সেফ হসনাই?????