![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
হাই! আমি আসিফ আমান, বাসা যশোর। পড়াশোনা ওঠাবসা সব যশোরেই। নিজের কিছু ভাবনা শেয়ার করার উদ্দেশ্য নিয়ে ব্লগ লেখা শুরু করছি।
ইতিপূর্বে যশোর সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লেখালেখি করলেও বেশ ভাটা পড়েছিলো বিগত কয়াক বছরে। কথায় আছে দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা বুঝতে হয়। সময়ক্ষেপনে অভাবে হয় স্বভাব নষ্ট। বোধহয় সেটা হয়েছে। আজ যশোর ছেড়ে ফের যশোর নিয়ে লিখতে বসলাম ৪ বছর পর। ধন্যবাদ আফিক ভাই সবসময় লেখায় অনুপ্রেরনা দেওয়ার জন্য।
যশোরে অনেকে আসেন চাকরিসূত্রে বা পড়াশোনা এসেই যে সমস্যা তৈরি হয় কোথায় কি পাওয়া যায় তা না জানা। আজ এ লেখায় সে সমস্যা কিছুটা লাঘবের চেষ্টা করবো। আশা করি সময় নিয়ে পড়বেন।
আজ লিখছি যশোরের কোথায় আপনারা কি কি কিনতে পারবেন। অর্থাৎ কোন পণ্য কোথায় কম ও বেশি, ব্র্যান্ড বা ননব্র্যান্ড যেটা প্রয়োজন কিনতে পারবেন তা আজকের লেখায় তুলে ধরার চেষ্টা থাকবে।
খাদ্য পণ্যঃ মানুষের যেকোন প্রয়োজনের প্রথমে যার অবস্থান তা হলো খাবার। কম বেশি মুদি বা নিত্যপণ্য, কাঁচা তরকারি সবখানে আছে, তবে যশোরে বড়বাজার হলো সবথেকে বড় মুদির বাজার, কাঁচাবাজার বা পাইকারি খাদ্যপণ্যের বাজার।
যশোর মিউনিসিপালিটির মধ্যে কঁচাবাজারের অবস্থান…
বড়বাজার কাঠেরপুল, জামতলা বাজার হাইকোর্ট মোড়, বাবলাতলা বাজার বেলতলা, বৌ-বাজার বেলতলা, রেলবাজার রেলওয়ে স্টেশন, পালবাড়ি, খয়েরতলাবাজার ক্যান্টনমেন্ট, আরবপুর বাজার, ধর্মতলা, পোলেরহাট, নীলগঞ্জ বাজার ঝুমঝুমপুর উল্লেখযোগ্য।
গুড়ঃ এটি যশোরের আইকনিক একটি খাদ্য উপকরন। বড়বাজারের আগে এইচ এম এম রোডে শহরের মধ্যেই আপনারা পেয়ে যাবেন এই উপকরণটি। এই এলাকা পার করার সময় স্মেল সেন্স সজাগ থাকলেই বুঝতে পারবেন কোন দিকে যেতে হবে।
ফলঃ ফলের দেখা শহরে ঘুরলে যেখানে সেখানে পাবেন তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে চৌরাস্তা থেকে কিনতে সাচ্ছন্দ্যবোধ করি। এছাড়া দড়াটানা যাকে এশহরের কেন্দ্রবিন্দু বলা হয় বা হাসপাতাল এলাকা এককথায়, এইচ এম এম রোড, নিউমার্কেট, মনিহারে পাবেন।
বেকারীঃ বেকারী পুরো শহরে বিভিন্ন জায়গাতে থাকলেও সিদ্দিক, সাকো, খুলনা বেকারী ছাড়াও দড়াটানা থেকে এইচ এম এম রোডের বেকেরীগুলো বিখ্যাত।
এছাড়া চৌরাস্তায় বেশ কিছু নাম করা বেকারী আছে।
মিষ্টিঃ জলোযোগ, দেবু সুইটস, গনেশ ইত্যাদি চৌরাস্তায় অবস্থিত।
ক্রোকারিজঃ
ক্রোকারিজ পণ্যের দোকান এইচ এম এম রোডে অবস্থিত। বিশেষ করে বান্না স্টোর, জব্বার সুপারশপের দুটি দোকান ছাড়াও আরো ছোট বড় দোকান আছে। সবখান থেকেই বিশেষ দামাদামি না করে কিনলে ঠকে যেতে পারেন।
পোষাক বা কাপড় ও জুতাঃ
সিট কাপড়ের জন্য এইচ এম এম রোডের দোকান গুলো নাম করা। এদের মধ্যে থেকে মতিন বস্ত্রালয়, যশোর ক্লথ স্টোর ইত্যাদি নাম করা। এছাড়া কাপুড়িয়া পট্টিতে কাপড়, ফোম, পর্দা ও এজাতিয় পণ্য পাওয়া যায়।
তবে রেডি গার্মেন্টস ও কম ঘোরাঘুরির মধ্যে সাধ্যের মধ্যের মার্কেটিং করলে কালেক্ট্রেট মার্কেটের বিকল্প নেই।
তবে একটা ট্রিক বলে দেই নিক্সন মার্কেট বা গাড়িখানা রোডে সামনে পেয়ে যাবেন এক্সপোর্টের জামাকাপড়। দেখে কিনতে হবে সেক্ষেত্রে।
সিটিপ্লাজা বা জেসটাওয়ার আমার ব্যক্তিগত রেকমেন্ডেশন না তবু কেউ নতুন হলে দেখে আসতে পারেন।
এছাড়া দেশের প্রায় সব রকম ব্র্যান্ড শপ পাবেন মুজিব সড়ক ও চৌরাস্তা এর আশেপাশে।
এইচ এম এম রোডে আছে জুতা, সম্রাট, লিবার্টি, জনতা, বিউটি লোকাল নাম করা সহ বাটা, এ্যাপেক্স, ওয়াকার, কো-ওয়াক সহ আরো অনেক জুতার বড় বড় শোরুম।
ইন্ডিয়ান জুতাও আপনারা চাইলে পাবেন এখানেই ভেতরের দোকানগুলোতে।
ইলেক্ট্রিকঃ এ পণ্য গুলো যখন থাকে না তখন বোঝা যায় কতো জ্বালা। যাইহোক এগুলো সবখানে পাওয়া যায় তবে যা কোথাও পাবেন না তা পাবেন মাইক পট্টিতে। এখানের নামের সাথে জড়িত মাইক সার্ভিসও আপনারা পাবেন এখানেই।
ইলেক্ট্রনিক্সঃ নিরালা মোড় থেকে শুরু করে চৌরাস্তার আগ পর্যন্ত আপনারা ঘড়ি, ফোন ও ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য গুলোর দোকান পাবেন। এর মধ্যে সাজিদ ওয়াচ, ওয়ার্ল্ডটেক, নূহাতারা এরা সব নামি ব্র্যান্ডের ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য বিক্রি করে। তবে এক্সেসরিজ এর ক্ষেত্রে ইডেন মার্কেট বা ব্র্যান্ডের যেমন অ্যাপল বা ওয়ানপ্লাস, স্যামস্যাং এর পণ্য এখানে না থাকলে সিটিপ্লাজার তিন তলায় দেখতে পারেন।
এক্ষেত্রে ইডেন মার্কেট বা যেকোন স্থান থেকে আসল পণ্য বেছে নেওয়াটা সম্পূর্ন আপনার চিনে নেওয়ার দক্ষতার উপর।
কপম্পিউটার এর খোঁজ করতে আপনার তীর্থস্থান হবে জেসটাওয়ারের ৪র্থ ও ৫ম তলা এখানেই সব পাবেন তবে একটু সাবধানে ডিল করতে হবে নয়তো মুরগী হয়ে বাড়ি ফিরবেন। এছাড়া সিটি প্লাজা ও ছড়িয়ে থাকা দোকান তো শহরে আছেই।
চশমা বা আই ওয়ারঃ
পেয়ে যাবেন অপটিক্যাল সব দোকান এইচ এম এম রোডের দুই পাশে এখানে কিছু কিছু দোকানে নাম করা ডাক্তারও বসেন একবারে দেখিয়ে নিতে পারেন।
বইঃ এ শহরে যারা বেশিরভাগ আসেন তারা পড়াশোনা করতে আসেন। তো এটার খোঁজ না দিলেই নয়। আগের সব বইয়ের দোকানগুলোর স্থান পরিবর্তনের পর বেশকিছুদিন নির্দিষ্ট স্থান নিয়ে জটিলতা ছিলো।
তবে বর্তমানে মিনিসিপালিটি থেকে বরাদ্দকৃত স্থানে বসেছে বইয়ের দোকানগুলো। এ জায়গাটি হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধা রোড বা তরুনরা এ রোডটিকে প্যারিস রোড নামেও ডাকে। বই কিনতে কিনতে ক্ষুধা লাগলে সে ব্যাবস্থা ও করা হয়েছে। সন্ধ্যার পর এ জায়গাটি টিএসসির মতো সরগরম থাকে।
ওষুধঃ
দড়াটানাতে সব ওষুধ পাওয়া যায় তবে আমি বলবো বঙ্গবাজার, নিরালা মোড় থেকে কিনলেই ভালো পাইকারি ওষুধ পাবেন।
হোমিও ও আয়ুর্বেদ পাবেন চৌরাস্তায় ও ঝালাইপট্টীর পাশে পাবেন হোমিও পাইকারি।
টুলস ও ম্যাশিনারিজঃ
ছোট সব টুলস পাবেন লোহাপট্টিতে আর বৃহৎ ম্যাশিনারিজ খুজতে যেতে হবে আর এন রোড।
মটর পার্টসঃ
এ অঞ্চলের সব রকমের গাড়ির পণ্য পেতে আপনাকে যেতে হবে আর এন রোড থেকে মনিহার পর্যন্ত গড়ে ওঠা দোকান গুলোতে। এখানে আপনাকে নিজেই খুঁজে নিতে হবে আপনার স্পেসিফিক কোন মডেলের গাড়ির পণ্য কোন দোকানে পাওয়া যায়।
ফার্ণিচারঃ
ফার্ণিচারের রকম ভেদে দোকান বিস্তার ভিন্ন ভিন্ন শহরে। তবে সনাতনী কাঠের কাজ করাতে নিউমার্কেট ও গরীব শাহ যেতে হবে ও রেডিমেড ফায়ারসার্ভিস, জেলরোড ও আর এন রোডের আশে পাশে ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে আছে।
ঘর সাজাবার উপকরন পাবেনঃ এইচ এম এম রোড ও পাইকারী মার্কেটে বিভিন্ন দোকানে।
স্টুডেন্ট হওয়ার সুবাদে জানি যারা এশহরে পড়তে আসে তারা বেশিরভাগই মেসে থাকে। এদের ব্যাবহার্য ফার্নিচার বলতে চৌকি আর খাট যেগুলো খুব ভালো কাঠের হয় না বা দাম ৫০০-১০০০ বা তার কাছাকাছি হয়। ইচ্ছে করলেই বাদ দেওয়া যায়। এগুলো পাওয়া যায় টাউন হল ময়দানের সামনে ও রেল রোডের ধারে।
কসমেটিক্স ও অর্নামেন্টসঃ
বড়বাজারটি এইচ এম এম রোড থেকে বেশ বিস্তৃত এর মধ্যে পাইকারি ফেন্সি মার্কেট ও ভেতরে কসমেটিক্স ও মেয়েদের যাবতীয় পণ্য এখানে পাইকারি পাওয়া যায়। এর মধ্যে আসল চিনলে জিতছেন না চিনলে আপনার লোকসান।
এছাড়া সোনা ও ক্রিস্টাল পাবেন চুড়িপট্টিতে আর আর্টিফিসিয়াল সিটিগোল্ডও এখেনেই পেয়ে যাবেন।
খেলাধুলাঃ
এইচ এম এম রোডে ঢুকতেই খেলা ঘর সহ অনেক দোকানের দেখা পাবেন এখানে খেলাধুলা ও জিমের পণ্য পাওয়া যায়। এছাড়া পাইকারি কিনতে যেতে হবে পাইকারি মার্কেট যা আগেই বলেছি ফেন্সি মার্কেট বা চুড়িপট্টিও লোকে বলে।
এবার আসা যাক যশোরের পট্টি পরিচিতি পর্বে…
এ শহর এক কথায় অনেক বাজার বা পট্টির সমন্বয়ে তৈরী। আমি মনে থাকা নাম গুলো লিখছি আর নামের সাথে মিল বা অমিল কি কি আছে তা উল্লেখ করছি।
(১) কাপুড়িয়া পট্টি, বড়বাজার (রেডি গার্মেন্টস, ফোম, পর্দা, সিট কাপড়)
(২) চুড়ি পট্টি, বড়বাজার (অর্নামেন্টস)
(৩) আলু পট্টি, বড়বাজার (আলু, পেয়াজ, রসুন)
(৪) মাইক পট্টি, ল্যাবস্ক্যান মোড় (ইলেক্ট্রিক, লাইট, ফ্যান, মাইক বা সাউন্ডসিস্টেম)
(৫) পাইপ পট্টি, ল্যাবস্ক্যান মোড় (পাইপ ও সোয়ারেজ, ব্যাগ যদিও ব্যাগ ফেন্সি মার্কেটেও পাইকারী বিক্রি করে )
(৬) ব্যাটারী পট্টি, মণিহার (গাড়ির ব্যাটারী)
(৭) ইজিবাইক পট্টি, নিউমার্কেট (ইজিবাইক মার্কেট ও শোরুম)
(৮) লোহাপট্টি, বড়বাজার (লোহার জিনিস যেমন টুলস, বটি, খুন্তি, ঝাড়ু, )
(৯) ঝালাই পট্টি , বড়বাজার (নামের সাথে মিল রেখে ঝালাই এর কাজ করা হয় এখানে)
(১০) বস্তাপট্টি, চৌরাস্তা (বস্তা জাতিয় পণ্য)
যারা আপনারা সুপারশপ থেকে কিনতে চান শহরের ভেতরে থাকা
ওরিয়েন্ট এর দুটি শাখা এইচ এম এম রোড ও চৌরাস্তা, স্বপ্ন যশোর রাসেল চত্তর, ফেস্টিভ কাঠেরপুল, হাটবাজার চৌরাস্তা ইত্যাদি জায়গায় খাদ্যপণ্য বাদেও অনেক রকম পণ্য পেয়ে যাবেন।
অনলাইন সার্ভিস বর্তমানেঃ
দারাজের ডেলিভারি পয়েন্টের অবস্থান মনিহারে বিসমিল্লাহ কমিউনিটি সেন্টারের নিচতলায়।
সকল ইকমার্সের পণ্য ডেলিভারি আপনারা পেয়ে যাবেন তবে নিত্যপণ্য সরবারহ পাতে অনলাইনে তিনটি সার্ভিস বর্তমানে সক্রিয় আছে।
১) চালডাল, ডেলিভারি টাইম দিনে সর্বচ্চ ১ ঘন্টা।
২) ফুডপান্ডা, ডেলিভারি টাইম ৩০ মিনিট।
৩) হাংগ্রিনাকি, ডেলিভারি টাইম ৩০-৪০ মিনিট তবে সার্ভিস ভালো পাইনি।
এছাড়া স্থানিয় কিছু অনলাইন সার্ভিস আছে
যেমন ফুডমামা এর নাম এই মূহুর্তে মনে আছে।
এখানে লেখা ডেলিভারি টাইম আমার অভিজ্ঞতা থেকে লেখা কম বা বেশিও হতে পারে আপনার অবস্থান ভেদে।
এর পর সময় পেলে আরো একটি পর্বে বাকিগুলো লেখার চেষ্টা থাকবে। এবং এর পর লিখবো কোথায় কি সার্ভিস পাওয়া যায়।
ধন্যবাদ সময় নিয়ে লেখাটি পড়ার জন্য।
©somewhere in net ltd.